প্রেমে সব বদলায়
মেয়েটাকে দেখেই আমার কেমন জানি করে উঠল।আমার পুরো শরীর একটা কাঁপানো দিয়ে শীতল হয়ে গেল।প্রচন্ড গরমে ও আমার কাছে ঠান্ডা লাগছে।আচ্ছা আমি কি আমার মাঝে আছি?নাকি হারিয়ে যাচ্ছি তার মাঝে?অদ্ভুত ব্যাপার তো,আচ্ছা আমার মত একটা আনস্মার্ট ছেলের জীবনে ও কি প্রেম আসবে?যে কিনা বন্ধুদের কাছে মুল্যহীন তার জীবনে কি প্রেম আসাটা মানায়? এইমাত্র শিহাব আমাকে ড্রেনে ফেলে পালিয়েছে। আমি তাকেই খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম।কিন্তু তাকে নিয়ে আমার এখন বিন্দুমাত্র রাগ নেই। আচ্ছা কি নাম মেয়েটির?মেয়েটিকে কেবল সবুজ জামাতেই পরী পরী লাগে?আমার তো মনে হয় কালো আর টকটকে লাল জামায় তাকে লাগবে চাঁদের মত।আচ্ছা চাঁদের মত সুন্দর মানে কি?আরে!এসব বাজে কথা চিন্তা করার টাইম তো এটা না। আচ্ছা সত্যি যদি মেয়েটি আমার ভালোবাসা মেনে নেয় তবে কি হবে?তবে যা হবে তা হবে প্রচন্ড রকমের ভয়াবহ ব্যাপার।কারণ আমি যখন চাঁদের কণাটাকে নিয়ে হাঁটবো তখন জাহিদ শাকিলরা আমাকে ঢিল মারবে,তারা তো কাউকে কেয়ার করে না।শিহাব-রাতুলরা কোন কারণ ছাড়াই আমার সাথে মারা মারি করবে এই বয়সেও। ফুসকা দোকানে মেয়েটিকে নিয়ে গেলে কেউ যদি বাজে নজরে চাঁদের কণার দিকে তাকায় আমি তো কিছু করার ক্ষমতা রাখি না।আমি স্থানীয় ছেলে হয়ে ও আমি মুল্যহীন,কত যে অন্য এলাকার মানুষ আমার এলাকায় ঢুকে আমাকে থাপ্পড় দিয়ে গেল!!আমাকে এত মুল্যহীন করে বানিয়েছেন কেন সৃষ্টিকর্তা? আমার মুল্য না আছে বন্ধু-বড় ভাইদের কাছে,না আছে বাসায় আর না আছে এলাকায়। মেয়েটির স্কুল ড্রেস দেখে কোন স্কুলে পড়ে তা বুঝার চেষ্টা করছি।এমন সময় রফিক ভাই আমাকে ডাক দিয়ে তার দিকে ডাকলো।আমি তার দিকে তাকাচ্ছি না দেখে সে থ হয়ে বসে আছে।যে রফিক ভাইয়ের এক কথায় চেয়ারম্যানও উঠা বসা করে,আর তার কথা আজ এলাকার সবছেয়ে বলদ ছেলে শুনলো না?মোবাইলটা বের করে কাকে জানি কল দিচ্ছেন তিনি।আমার চোখ দুটো ওই মেয়ের দিকেই আটকে আছে এখনো।
# মেয়েটির স্কুল ড্রেস তো সবুজ,তার মানে সে সিলেট কলি গালর্স স্কুলের ছাত্রী।মেয়েটি রিক্সা পেয়ে চলে গেল।আমার মনে অনেক অনেক খুশি।এত খুশির কারণ কি!প্রেম তো দুরের কথা মেয়েটার নাম ই তো জানা হলো না এখনও।তবু মনে হচ্ছে আমি প্রেমের সাগরে ডুবে গেছি।রফিক ভাইয়া আবার ডাক দিলো,কি রে ইভান তোকে ডাক দিলাম কথা কি কানে যাচ্ছে না?কাছে গেলাম রফিক ভাইয়ার।কিছুক্ষনের মাঝে শরীফ ভাই আর আমার ক্লাসমেট রিয়াদ বাইক থেকে নেমে আসলো।কিছু বুঝে উঠার আগেই রিয়াদ দিলো আমাকে একটা থাপ্পড়। আজ থাপ্পড় খেয়ে কোন গালি দিচ্ছি না,কান্না ভাবটাও আজ নেই।আমার এভনরমাল আচরণ দেখে রিয়াদ অবাক হয়ে যাচ্ছে আমি স্পস্ট বুঝতে পারছি। রফিক ভাইয়ের চোখে চোখ রেখে বললাম,ভাইয়া স্যরি।তিনি অনেক অবাক হয়ে গেলেন।আচ্ছা এতে অবাক হওয়ার কি আছে?যে ছেলেটা রফিক ভাইয়ের সামনে আসতে ভয় পেত,তার সামনে গিয়ে মাটির দিকে তাকিয়ে থাকতো সে কি তার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারে না?অবশ্যই পারে,পারবে না কেন?এই ত আমি তো পারছি।রিয়াদ আমার কলারে ধরে বলল অই ইভান তোর কি সমস্যা বল তো।তুই রফিক ভাইয়ের সামনে দাঁড়িয়ে এভাবে কথা বলতেছিস কেন?তুই তো জানস এমপি সাহেব ও ভাইয়ের কাছে আইসা বসে থাকে।রফিক ভাইয়া বিচার করলেন আমাকে ২-৪ টা থাপ্পড় মেরে ছেড়ে দিতে।রফিক ভাইয়া চলে গেলেন। আচ্ছা রফিক ভাইয়ার বিচারটা কি ঠিক হইছে?না অবশ্য ই ভুল বিচার।রিয়াদ আমাকে প্রশ্ন করল কিরে রফিক ভাইয়ের সাথে বেয়াদবি করলি কেন?উওরে বলে দিলাম আরে দোস্ত আর হবে না।থ হয়ে রিয়াদ আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আচ্ছা এখানে থ হওয়ার মত আমি কি কিছু বললাম?আমার ক্লাসমেটকে তুই করে বলাটা কি অপরাধ?না একদম অপরাধ নয়।তবে ছোট কাল থেকেই একই ক্লাসে পড়ার পরও তাকে ভাই করে বলতাম।কেউ আমাকে কিছু করলে রিয়াদের কাছে বিচার দেই।সেই সব বিচার করে।আমাদের ক্লাসমেটদের সব সমস্যায় সমাধান দেয় রিয়াদ আর মেহেদী।তাদের কথার বাইরে কথা বলার সুযোগ নেই। তারা রাজনীতির সাথে জড়িত।রিয়াদ থ হয়ে বসেই আছে আর শরীফ ভাই বিষয়টা বুঝার চেষ্টা করছে।মানুষ পাল্টাতেই পারে,কিন্তু এ কেমন ব্যাপার।১ মিনিটের ভিতর মানুষ কেমন পাল্টে যায়।আমার কাছে ও কেমন কেমন লাগছে।এত সাহস কোথা থেকে আসলো?২ জনকে চুপ দেখে আমি চলে যাচ্ছি,তারা পিছু ডাকলো না কিংবা আমাকে নিয়ে মজা ও নিলো না আজ।পৃথিবীটা সত্যি ই বড় রকমের অদ্ভুত।নিজেকেই নিজের আজ অপরিচিত লাগছে। বাসায় আসার পর থেকেই আমাদের বাসায় আজ নিস্তব্ধতা।আমার প্রতিটি কথা আর কাজ তাদের নিস্তব্দ করে দিলো।তারা নিস্তব্দ ই থাক।আমি একটা লম্বা ঘুম দেই।#
আমার পৃথিবী ছোট হয়ে এল,অনেক ছোট।সারা দিন মেয়েটার স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকি,স্কুল ছুটি দিলে ওর পেছন পেছন ওর বাড়ি পর্যন্ত যাই।ওহ্ বলায় হয়নি মেয়েটির নাম।ওর নাম মেঘলা।ওর নাম মেঘলা কেন তা ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না।ওর নাম রৌদেলা হওয়া উচিৎ ছিল।কারণ আমার পৃথিবীটাকে ওই আলো দিয়ে যাচ্ছে।আমি অনেক বদলে গেছি,স্পস্ট ভাবেই তা দেখা যাচ্ছে।প্রতিদিন ২-৩ টা টাইগার-স্পীড না খেয়ে ইদানীং টাকা জমিয়ে ড্রেসের দিকে মন দিয়েছি।কোন ভাবেই আমি এখন আর আনস্মাট মানুষ নই।প্রতিদিন স্বপ্নে তার নিত্য আসা যাওয়া।আর বাস্তবে কেবলই তার পিছু গুর গুর করা।কখন ও বলা হয় নি তাকে আমি ভালবাসি খুব।কখনও বলা হবে কিনা তাও আমি ঠিক বলতে পারছি না।ONE SIDED LOVE হলো পবিত্র প্রেম।আমি কখনও এই প্রেমকে অপবিত্র করবো না।***ভালো থাকুক সকল মেঘলারা আর ভাল থাকুক ওই সব ছেলেরা যাদের মেঘলারা বদলে দিয়েছে।সত্যি ই প্রেম সব পারে।প্রেমে সব বদলায়*
0 মন্তব্যসমূহ