রোবট বউ

রোবট বউ

- ক্যার্লিফোনিয়া থেকে পড়াশোনা শেষ করে গবেষণার কাজ শুরু করেছিল শিশির। সময় পেলেই অনেক দেশ ঘুরতে যেত সে।কারন জানা অজানা রহস্য গুলো শিশিরকে ঘিরে ফেলতো। কিন্তুু একসময় এগুলোতে একঘেয়েমি মনোভাব এসে পড়ে। নিজেকে আবদ্ধ রাখতে চায় কোনো ভালো লাগার উপর। তাই ও বাংলাদেশে এসে পড়ল। যদিও এখানে ওর পরিবার নেই। কাছের আত্মীয়স্বজনরাই থাকে। যারা একসময় ওর উপর বিরক্ত হয়ে বাইরে কোনোমতো পড়াশোনার জন্য পাঠিয়ে দেয়। দেশে আসার পর ওকে সবাই বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। কিন্তুু ও মনে করে জীবনের অধিকাংশ সময় অনেক কিছু করে ব্যয় করে ফেলছে। ওর হিসেবে এই ৩৫ বছর অনেক কিছু। আর এই বিয়ের উপর ওর কোনো ইচ্ছেই নেই। সময় কাটানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক পদে নিয়োগ হলো। কিন্তুু ওর জীবনটা ওর কাছে অপূর্ণ হয়েই রইলো। তাই বাসায় এসে নিজেকে ঘুমে অথবা সাহিত্যে নিয়োজিত রাখত।তবু ও এই জীবনযাত্রা তার কাছে অসহনীয় হয়ে উঠলো। ওর মনে হচ্ছিলো এমন কিছুর প্রয়োজন যেটা ওর সব ভাবনা জগৎ আলাদা করে ফেলবে।ওর মনে হলো কোনো সংবেদনশীল রোবটের সাহচর্য পেতে। যে ভাবা সেই কাজ। পরেরদিন গবেষক পদকে বিদায় জানিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে আমেরিকার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমালো। সেখানে একটি ট্রেনিং সেন্টার থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পুর্ন রোবট কিভাবে তৈরি করে খুব কাছ থেকে দেখল। নিজেও শিখে ফেলল। অবশেষে শিশির নিজে নিজে যান্ত্রিক রোবটও বানাতে সক্ষম হলো। তারপর শিশির সংবেদনশীল রোবট নিয়ে কিছু বিজ্ঞানীদের সাথে কথা বলল। তারা জানাল পৃথিবী তে এরকম রোবটও বানানো হয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ কথা বলতে পারে, নিজের অনুভুতি প্রকাশ করতে পারে, হাসি কান্নার শব্দ করতে পারে।একজন বিজ্ঞানী জানালো আমেরিকায় কিছু রিসার্চ সেন্টার ও সংস্থা আছে। যারা এইরকম অনুভূতিসম্পুর্ন রোবট নিয়ে কাজ করে। বিজ্ঞানীটি শিশিরকে একটি কার্ড দিলো পরিচিত একটি সেন্টারে যাওয়ার জন্য। শিশির সেই রিসার্চ সেন্টারে যাওয়ার পর বেশ অবাক হলো। ও যে রোবটের দুনিয়ায় এসে পরছে ভাবতেই পারছে না। কারন এইগুলা দেখতে হুবুহু মানুষের মতো। একটি মেয়ে রোবট ওকে দেখে মিস্টি হাসি দিলো। ভালো করে না দেখলে বুঝাই যেতো না এটা কি ছিল। ও সিড়ি বেয়ে উপরে উঠার সময় একটি ছেলে রোবট ওর সাথে হাত মিলালো। তারপর ও অফিস রুমে গেলো। এখানে সিকিউরিটি অনেক কড়া। ওকে কিছুক্ষন পর পর চেক, করা হচ্ছে। অফিস রুমে গিয়ে সেখানকার বিজ্ঞানীদের সাথে কুশল বিনিময় করল। আর সরাসরি বলল ও এরকম রোবট বানাতে চায়। তারা তখন চুক্তি করল শিশিরের সাথে।কারন অনেক টাকা না দিলে এবং গোপন না রাখলে কাজটা হবে না। তাই শিশির চুক্তি অনুসারে সব শর্ত মানতে রাজি হলো। কিন্তুু তারা বলল পরিপূর্ণ মানুষের মতো চরিত্রের রোবট বানানো হয়নি তবে আংশিক ভাবে মানব আচরণ ক্ষমতা সম্পুর্ন রোবট বানাতে সক্ষম হয়েছে। তাতে শিশিরের একটু মন খারাপ হলেও রাজি হয়ে গেলো। ২মাস অক্লান্ত পরিশ্রম ও মনোযোগ শিখে নিচ্ছিল। আসলে ওর নেশা পেয়ে বসেছে। যেন এর শেষ না দেখে ও যাবেনা। অবশেষে ও মুটামুটি সন্তুষ্টচিত্তে কিছু যন্ত্রপাতি নিয়ে বাংলাদেশে ফিরল। এইখানে এসে ও কিছু কপোট্রন কিনল। যদি লাগে এই ভেবে। সেন্টার থেকেও কিছু কপোট্রনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে আসছে। যেগুলা একেক রকম অনুভুতিসম্পূর্ন। শিশির বুঝতে পারছিল না কোন ধরনের কপোট্রন ওর মানবীয় গুন সম্পন্ন রোবটের জন্য প্রযোজ্য। ও এসব ভেবে চিন্তেই কাজটা শুরু করলো। হঠাৎ করে ওর মনে হলো সবগুলোর সমন্বয়ে যদি রোবটটার কপোট্রন বানায়। কোনগুলো কি কাজ করে, কিরকম অনুভুতি সবকিছু তালিকা করে কপোট্রনের ছক এঁকে ফেললো। সেই ছক অনুযায়ী শিশির কপোট্রন বানানো শুরু করে দিলো।রোবটের মস্তিষ্কের মধ্যে একটি মেইন মেমোরি আর একটি এক্সট্রা মেমোরিও বানালো। শিশির চেয়েছিল রোবটটির মধ্যে সব ধরনের অনুভুতি প্রকাশ পায়। ওর আত্মবিশ্বাস ছিল রোবটটি ওর ভাবনা থেকে ভিন্ন হবে না।এরপর রোবট বডির কাজ শুরু করলো। এটা বানাতে ওর অনেক কষ্ট হচ্ছিল। সৌন্দর্য মন ভালো বুঝলেও ওর হাত বুঝতে চাইছিল না। তারপরও হতাশ হলো না। শেষপর্যন্ত সফল হলো। একটার সাথে আরেকটার বডির এডজয়েন করলো। দেখা গেলো রোবটটা ওর থেকে একটু খাটোই হয়েছে। শিশিরের, এটা দেখে হাসি পেলো এটা তো মানবীয় গুণসম্পন্ন মানবী রোবট। শিশির বিশেষ! ধরনের তন্তুু দিয়ে একটা আবরণ দিয়ে দিলো। এর উপর স্পঞ্জের মতো সেটা আবরণের ওপর লাগিয়ে দিলো।স্পঞ্জের উপর স্কিন কালারের স্থিতিস্থাপক তন্তুু বসিয়ে দিলো। এগুলো সবই রিসার্চ সেন্টার থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। তারপর উপরে চুল বসানো শুরু করলো। এটা করতে করতে ওর মধ্যে ঝিমুনি ভাব এসে পড়ল। কখন রোবটটিকে চালু করবে। ভয়েস শুনার জন্য ও পাগল হয়ে আছে। কিন্তুু ওর ভালো লাগার চুল না লাগিয়ে অপরিপূর্ণভাবে একদমই দেখবে না। সেজন্য ধৈর্য্যসহকারে চুল মেশিনের সাহায্যে বসালো। রোবটের কাজ শেষ হওয়ার পর ও দেখতে লাগল কেমন হয়েছে। মুখমণ্ডলের দিকে তাকিয়ে দেখে ছোটখাটো একটা "মিষ্টিকুমড়া"। নিজে বানিয়ে নিজেই হাসতে লাগলো। এই প্রথম কোনো কিছু করে সন্তুষ্টিবোধ করল। রোবটটিকে চার্জ দিতে হয়! নাহলে সরাসরি বৈদ্যুতিক সংযোগ দিতে হতো। বাংলাদেশে কোনো খারাপ সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে ভেবে চার্জ সিস্টেমেই রেখেছে।তাই ও রোবটটিকে চার্জ দিয়ে রাখল।চার্জ দেওয়ার সময়ে চোখের কাছটা লাল আলোর মতো জ্বলে টুট টুট একটা শব্দ করলো।এরমানে চার্জ হচ্ছে। শিশির খুবই বিস্ময় ও অবাক হলো। অবশেষে ও সফল হয়েই গেলো। যদিও ব্যাপারটা গোপনীয়। আর ভাবতে লাগলো এই ড্রিম রোবট গার্লের কি নাম দেওয়া যায়। অনেক ভাবতে ভাবতে ঠিক করে ফেললো। চার্জ যখন সম্পন্ন হলো বাম হাতের নিচে পাওয়ার সুইচটি অন করলো। আস্তে আস্তে চোখ খুলল। নীল ও সবুজ আলোর মিশ্রন চোখে খেলা করছিল। শিশিরের মনে হলো রোবট গার্লটির মাত্র ঘুম ভেঙেছে। শিশির বলল, তোমার নাম কী জানো? রোবট গার্ল,'না'।
শিশির :তোমাকে মারিয়া বলে ডাকবো।রোবট গার্ল:আচ্ছা। শিশির :এইবার বলো তোমার নাম কী? রোবট গার্লঃমারিয়া।
শিশির : 'আর আমার নাম শিশির আহমেদ'। রোবট গার্লঃ হুম।শিশির :আমার সাথে কথা কম বলা যাবে না বুঝতে পারছো? মারিয়া:জ্বি পেরেছি।
-শিশির .....
রোবট প্রেম ..
পর্ব : ২
লেখক : শিশির আহমেদ (নীল)
- তারপর আস্তে আস্তে শিশির মারিয়াকে সব কিছু চিনিয়ে দিচ্ছিলো। কোন কাজটা কিভাবে করতে হবে! কখন কি করা উচিত। কোন কাজ গুলা করতে পারবে না। ২-১ দিনে মারিয়াকে সব বলতে গেলে শিখিয়ে দিলো। আর শিশির দেখলো মারিয়া এত্তো প্রশ্ন করে যে না হেসে পারলো না। প্রথমে তো কথাই বলতো না। সব কিছু শিখে নেয়ার পর মারিয়া কাজগুলো নিজেই করা শুরু করে দিলো। যদিও সব ঠিক ভাবে হয় না। শিশিরকে কফি বানিয়ে দেয়!অগুছালো কোনো কিছু গুছিয়ে রাখে। ইলেকট্রনিক এর সাহায্যে রান্না করতে পারে আর শিশিরকে তো প্রশ্নের বিরক্তিতে রাখেই। কিন্তুু এগুলোতে শিশিরের বিরক্তি লাগে না। অদ্ভুত প্রশ্নগুলা শিশিরের নিংসঙ্গতা দূর করে। এর মাঝে শিশিরের কাছে চিঠি আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক পদটি নিতে রাজি আছে কি না। সিদ্ধান্ত নিতে পারে না শিশির। ও সারাদিন মারিয়াকে নিয়েই পরে থাকতে চায়। কিন্তুু একেবারে কিছু না করলে ও হয় না। এদিক দিয়ে মারিয়া কে প্রতিদিন অনেক কিছু শুনায়। এই পৃথিবী, পৃথিবীর সৃষ্টির রহস্য, পৃথিবীর মানুষ এমনকি ওর নিজের কথা। মারিয়া ও মনযোগী শ্রোতার মতো শুনতে থাকে। একদিন মারিয়া ওর নিজের সমন্ধে অদ্ভুত প্রশ্ন করে ফেলে। শিশির ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে বলে 'তুমি হচ্ছো অন্য সবার থেকে ভিন্ন। আর এসব নিয়ে না প্রশ্ন করলেই বেশি খুশি হবো। মারিয়া মন খারাপ হয়ে যাওয়ার মতো করে থাকে। শিশির তখন রেগেমেগে, চিৎকার করে বলে 'বললাম না তুমি ভিন্ন, আমার কাছে সবচেয়ে সুন্দর, এখানে মন খারাপের কি হলো!! একথা শুনে মারিয়া হেসে দেয়ার মতো শব্দ করলো। শিশির : আচ্ছা তোমার মন খারাপ যখন হয় তখন কেমন লাগে? মারিয়া : মনে হয় আমার মাথায় কি জানি উঠানামা করছে!! শিশির : হুম,জানতাম। আর হাসির ব্যাপারটা? মারিয়া : আমার ভিতরে তরঙ্গ সঞ্চার হচ্ছে মনে হয় তখনি আমার হাসতে ইচ্ছে হয়। শিশির: একটু বেশি তোমার মধ্যে তরঙ্গ সঞ্চারিত হয়। আর কান্নার ভয়েস মানে কান্না করার সময় কি মনে হয়? মারিয়া : তখন ভিতরে অসহ্য....একটা চাপ অনুভব হয়। শিশির: এর মানে হচ্ছে তোমার মস্তিষ্কে একটা কম্পন অনুভব করো,আর তখনি তোমার মনে হয় তুমি অনেক কষ্ট পাচ্ছো। মারিয়া: আমার কেন এমন হয়? শিশির: কি বলো এইগুলা তো অনুভূতি, এসব তোমার আমার সবারই হবে। মারিয়া : ওহ বুঝতে পারছি।
শিশির কিছুদিনের মধ্যে গবেষক এর কাজটি করতে রাজি হয়ে যায়। সেটা মারিয়াকে ও জানায়। তখন অবাক হওয়ার মতো করে বলে: কেনো করবে? শিশির: বেঁচে থাকার জন্য তো আমার কিছু না কিছু করতে হবে।
মারিয়া : না করলে কি মরে যাবা? শিশির : দূর বোকা মেয়ে!! কিছু বুঝে না! আমি বলতে চেয়েছি এই যে তুমি আর আমি যে একসাথে থাকছি আমি যদি কিছু না করি আমার টাকা তো সব শেষ হয়ে যাবে। তখন তো আমার পথে বসতে হবে। মারিয়া: এখন বুঝতে পারলাম। শিশির: আর তুমি মারা যাওয়া নিয়ে জানলে কি করে? মারিয়া : সেদিন দেখেছি। শিশির: দেখেছো মানে? তারপর মারিয়া একটা বই বের করে দেখালো। শিশির: এটা দেখা না তুমি বই পড়েছো সেটা বলবা। মারিয়া : ওহ হ্যা! আমি বইতে পড়েছি। শিশির: আর কি কি বই পড়ো আমাকে তো কিছুই বলো না। এত পঁচা কিভাবে হলে তুমি!! মারিয়া: আমি পঁচা না, আচ্ছা দেখাচ্ছি আমি কি কি বই পরেছি।
- তারপর মারিয়া একটা বই খুলে শিশিরকে একটা অদ্ভুত জিনিস দেখালো আর বললো , শুধু তোমার মরার বিষয়টা না আমার মৃত্যুর বিষয়ে ও সব জানি আমি। শিশির, লক্ষ্য করে দেখলো মারিয়ার দেখানো বইটা হলো, রোবট তৈরীর জন্য বিভিন্ন উপাদান সমূহ এবং কিভাবে নষ্ট করা হয় ঐ ছবিগুলোকে উদ্দেশ্যে করছে মারিয়া। তার চোঁখে মুখে হঠাৎ হতাশার ছাঁয়া নেমে আসলো। শিশির বুঝে উঠতে পারছিলো না কি বলা উচিত তাঁর। তারপর হঠাৎ, মারিয়া তাঁর হাতটা ধরে শিশিরের সামনে বসে যায়। যন্ত্র মানবী সেইজন্য হয়তো চোঁখ থেকে পানি ঝরছেনা কিন্তু শিশির ঠিকই বুঝতে পেরেছে কষ্টকর কিছু বলতে চলেছে।
মারিয়া : আমি যদি তোমার কোন প্রয়োজনে না লাগি আমাকে মেরে ফেলবে না তো?
শিশির কথাটা শুনে অবাক হলো! মারিয়ার বুদ্ধিমত্তার উন্নতি দেখে। একটু হেঁসে বলল, নাহ সেটা কখনো করবোনা ভয় পেয়োনা। কথাটা শুনার পর, মারিয়া উঠে দাড়িয়ে শিশিরকে কিছু বলতে যাবে তখনি একটা ওয়ার্নিংয়ের সাথে সাথে কথা বলা বন্ধ হয়ে গেলো। তারপর, শিশির মারিয়ার প্রব্লেমটা খুজতে গিয়ে দেখে মেমোরিটা একটু...
- বাসার সব কাজের ভার মারিয়া কে দিয়ে শিশির ইউনিভার্সিটি তে চলে যেতো। আর বাসায় এসে যতটুকু সময় পেতো মারিয়ার সাথে সময় কাটাতো। শিশির ভুলে যেতো মারিয়া একটি রোবট। ওর সব ভাবনা,চিন্তা , ভবিষ্যৎ যেনো মারিয়াকে সাথে নিয়েই হচ্ছে। শিশিরের বাসায় একটি লাইব্রেরি রুম আছে। শিশির সেখানে অনেক ধরনের বই সংগ্রহ করে রাখছে। শিশির যখন বাসায় না থাকে তখন মারিয়া লাইব্রেরি রুমে বই পড়ে। বইগুলো সবই শিশিরের সাজেস্ট করা। আর লাইব্রেরীর প্রায় সব বই বলতে গেলে শিশির লক করে রাখে। কারণ শিশির চায় না মারিয়া কোনো science সম্পর্কে জানুক। শিশির কখনোই বলতে চায় না মারিয়াকে ও একটি রোবট। ও অন্য সবার থেকে আলাদা এই পর্যন্তই জানবে। আর সেজন্যই বিজ্ঞান সমন্ধে কোনো জ্ঞান যাতে না হয় এবং ওর মধ্যে যতটুকু আছে সেগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ যেন থাকে শিশির সেই চেষ্টাই সবসময় করে। তাই ও যে বইগুলা পড়তে বলবে সেগুলোর বাইরে মারিয়া বই পরতে পারবে না। তাহলে শিশির রাগ করবে সেটা ওকে বলে দেয়া হয়েছে। মারিয়া নিদ্বিধায় সব মেনে নেয়। শিশির ও এগুলাতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। ওর নিজের বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে, একটা রোবটের সাথে ওর সবকিছুর ভাগ করে দিচ্ছে।
- মানুষ কত অদ্ভুত কিছুই করে। মন থেকে চাইলে নাকি সৃষ্টিকর্তা কে দেখা যায়। শিশির সেই মন থেকে চেয়ে এমন উপহার পেয়ে গেলো তার জীবনধারাই পাল্টে গেলো। নিজের তৈরি করা রোবটটির প্রেমে যেনো সারাদিন মগ্ন হয়ে থাকে। শিশির সবসময় মারিয়াকে নতুন কিছু শিখানোর মধ্যে ব্যস্ত হয়ে থাকে। ইদানিং ভাবছে মারিয়া না থাকলে ও কতটা অসুখী হয়ে পড়ত। মারিয়া পাশে থাকলে নিজেকে কেনো জানি অনেক বেশি সুখী ভাবতেই ইচ্ছে হয় ওর। ও চায় এই ভাবনাগুলো মারিয়ার মধ্যে একটু হলেও আসুক। শিশির: আচ্ছা মারিয়া, ভালোবাসা কি বলো তো? মারিয়া : এটা তো এক ধরনের chemical reaction! কারো যদি ব্রেইনে হরমোন ...শিশির: তোমার কি উল্টাপাল্টা কথা না বললে ভালো লাগে না মনটাই খারাপ করে দিলো। মারিয়া : তাহলে কি হবে? শিশির: চুপ, আর যদি দেখছি আমাকে আজাইরা জ্ঞান দিয়েছো ধাক্কা দিয়ে উপর থেকে নিচে ফেলে দিবো। মারিয়া : আচ্ছা আর দিবনা।শিশির: হুম, আর এখন থেকে আমাকে ভালোবাসবে নাহলে প্রতিদিন থাপ্পড় খাবা। মারিয়া : কিহহ!!? না না,আমি থাপ্পড় খেতে চাই না শিশির: হু...জেনে ও না জানার ভান করে, কি যে অবুঝ সাধুনী!! মারিয়া: তুমি আমাকে এসব কি বলতাছো?? শিশির: আচ্ছা যাও,আমি সব শিখিয়ে দিব! তারপরও কুয়ারা করবা না। মারিয়া :আচ্ছা শিখিয়ে দিও..।
প্রতিদিন শিশির মারিয়া কে বারান্দায় অথবা ছাদে নিয়ে যেত। একসাথে চাঁদ দেখতো। আর যেদিন চাঁদ দেখা যেত না সেদিন অনেক গল্প করতো ওরা। শিশির গল্পের মধ্যেই মারিয়া কে অনেক দূরের কোথাও ঘুরতে নিয়ে যেত। তবে বেশিক্ষন রাত জাগতো না। মাঝে মাঝে মারিয়া বারান্দায় দিয়ে দেখা আশেপাশের মানুষদের প্রতি জানার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করতো। কিন্তুু শিশির বেশি উত্তর দিত না আর নাহলে রাগ দেখাতো। মারিয়া : ওইখানে কি হচ্ছে,শিশির? শিশিরঃ ওরা ওদের কাজ করতাছে। আর তোমাকে ওইসব দেখতে বলেছি? মারিয়া : নাহ,বলো নি তো। শিশির: তাহলে দেখছো কেনো? না করেছি না?? মারিয়া : সরি, আর দেখবো না। শিশির : সরি রাখো, বেশি দেখতে ইচ্ছে হলে ঔইখানে দিয়ে আসব। না না দিয়ে আসবো না। একদম এখান থেকে নিচে ফেলে দিবো,তখন বুঝবা কেমন লাগে!! মারিয়া : এহহ,একদম না। এই তুমি রাগ করলে..আর বলব না বলছি তো....ভালবাসি শি...শি...র। শিশির:'ঘুমাবো এখন'। মারিয়াঃ ঘুম কি!,কিসের জন্য.. এত ঘুমাতে কেনো হয়!!? এই অর্থহীন প্রক্রিয়ার জন্য আমাকে রেখে চলে যাবে!!? শিশির: আহা!!, ঘুম মনে হয় আমি একাই ঘুমাই, উনি মনে হয় ঘুমায় না,আর তোমার ও এখন ঘুমের সময়!! মারিয়া : কিইই!!আমি কবে ঘুমাইছি!! আমি একদম ই ঘুৃম... আর তখনি মারিয়ার চোখে লাল আলো টি টি শব্দ করে জ্বলছে। তারমানে ওর চার্জ প্রায় শেষ। মারিয়া : আমার মনে হচ্ছে আমি ক্লান্ত!! শিশিরঃআমার থেকে বেশি ঘুমায় আর বলে 'আমি ঘুমাই না '...এখন তারাতারি উঠো, 'তোমার ঘুম যেতে হবে নাহলে আমি ভালো করে ভালবাসি শুনতে পারব না'। এই বলে মারিয়াকে নিয়ে গেলো রুমের ভিতর। শিশির চার্জ কানেক্ট করতে করতে বলছে:–ভালোবাসি বলতে থাকো আমি তোমায় ঘুম পাড়িয়ে দেই। মারিয়া বলছে তো বলছে এর মধ্যে শিশির চার্জ দিয়ে পাওয়ার বাটন অফ করে দিলো। আর তখনি মারিয়া একদমই নিস্ক্রিয় হয়ে গেলো। শিশির ও ভালবাসি বলে একটু হেসে ঘুমাতে গেলো..
.রোবট প্রেম ..
পর্ব : ৪
লেখক : শিশির আহমেদ (নীল)
- পরের দিন শিশির ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে মারিয়ার পাওয়ার বাটন অন করে দিল। এরপর শিশির বিশ্ববিদ্যালয়ের শিট তৈরি করার জন্য লিখতে বসে গেলো। এরমধ্যে মারিয়া শিশিরের জন্য ব্রেকফাস্ট বানিয়ে ফেলল। শিশির খেয়ে মারিয়ার কখন কি করতে হবে সেগুলা বুঝিয়ে দিয়ে ইউনিভার্সিটি তে চলে গেলো। সেখানে সব কাজ শেষ করতে ওর একটু দেরি হয়ে গেলো। মারিয়া চিন্তা করছে নাকি করছে না এসব ভাবতে ভাবতে ও গাড়ি তে উঠলো। একটু দূর যাওয়ার পর ভালই জ্যামে আটকালো। এই জ্যাম ওকে বিরক্তির শেষ পর্যায়ে নিজে যাচ্ছে। বিরক্ত কাটানোর জন্য ও বাইরের দৃশ্য দেখতে লাগল। ও দেখছে বাইরের ব্যস্ত মানুষগুলো কে , দুই-একটা পথচারী নিঃশব্দে হাটছে! বিক্রেতা ঝালমুড়ি নিয়ে বসে আছে। এগুলো দেখে ওর মনে হচ্ছে সবকিছু যেনো নিদিষ্ট একটা গতিতে থমকে আছে। দেখতে দেখতে ওর দৃষ্টিটাও থমকে গেলো। দূরের ছোট্ট একটা মেয়ে কে দেখে। তিন কিংবা চার বছর হবে। একা একা মেয়েটা কাঁদছে। মেয়েটার আশেপাশে কেউই নেই। শিশির বুঝার চেষ্টা করল কেন কাঁদছে। মেয়েটা কি তাহলে হারিয়ে ফেলছে ওর বাবা-মাকে!!শিশি
রের যেতে ইচ্ছে করছিল আবার মনে একটু দ্বিধাও করল। অনেক ভেবে চিন্তে শেষ পর্যন্ত মেয়েটার কাছে গেলো। শিশির কি বলবে না বলবে ভেবে পাচ্ছিলো না।অনেকক্ষন পর বলল,'তুমি কাঁদছ কেনো? তোমার আব্বু-আম্মু কোথায়?.... তোমার সাথে কে এসেছে? 'মেয়েটি কিছুই বলল না। আবার জিজ্ঞেস করল 'তোমার নাম কি বাবু?'মেয়েটি ওর দিকে তাকালো আর বলল 'জানি না' এই বলে ভেঁউ ভেঁউ করে কান্না শুরু করলো। ও এবার মহা সমস্যায় পড়ল। কি করবে বুঝতে পারছিল না। মেয়েটিকে নিয়ে ও ঝালমুড়ি বিক্রেতার কাছে গেলো।"আচ্ছা মামা,এই বাচ্চাটা কে এবং কে নিয়ে আসছে বলতে পারেন। কিছুই বলতে পারছে না। একা একা কান্না করছে”। বিক্রেতা:কি জানি স্যার,সকাল থেকেই দেখতাসি এখানে ঔইখানে ঘুরতাসে। আমিও কিছু বলিনি। কার না কার বাচ্চা ফেলে রেখে গেছে। শিশির: কি বলেন, ফেলে রেখে যাবে কেনো? বিক্রেতা: তাহলে মনে হয় হারিয়ে গেছে, এজন্যই কানতাসে। শিশির: সেরকমই হতে পারে। বিক্রেতা: আপনি এক কাজ করেন,বাচ্চাটারে আপাতত নিয়ে যান,এই রাস্তাঘাট নিরাপদ না,কখন কি হয়ে যায় বলা যাইত না। শিশির চিন্তায় পড়ে গেলো ও এই বাচ্চা মেয়েকে নিয়ে কি করবে। হটাৎ মনে হলো পুলিশের হেফাজতে দিয়ে আসা যেতে পারে। তারাই যা করার করবে। এসব ঝামেলা যত এড়ানো যায় তত ভালো ওর জন্য। আর এদিক দিয়ে জ্যাম ও ছেড়ে দিচ্ছে। ও মেয়েটিকে অনেক গুলো চকোলেট কিনে মেয়েটাকে সাথে করে গাড়ি তে উঠে গেলো। ড্রাইভার মেয়েটাকে দেখে ফিক করে হেসে বলল : 'স্যার এই বাচ্চা আবার কই থেকে নিয়ে আসলেন? 'শিশির ধমকে উঠে বলল : ''এই বেশি কথা না বলে গাড়ি চালাও। আর থানার দিকে যাও। ড্রাইভার আর কথা না বলে কাছের একটা পুলিশ স্টেশনে নিয়ে গেলো। শিশির ভেতরে ঢুকার আগে বাসার ফোনে একটা মেসেজ দিলো। মারিয়া দেখবে কিনা কে জানে ।
- ও থানায় গিয়ে একটা জেনারেল ডায়েরি করলো। একটা পুলিশ অফিসার বলল: আমরা যদি মেয়েটার পরিচয় না পাই তাহলে নার্সিং হোমে দিয়ে আসতে হবে। শিশির :“আচ্ছা যেটাই করেন, আমাকে ইনফর্ম করবেন। কারন বাচ্চা টাকে আমি খুজে পেয়েছি। ” আসলে বাচ্চা মেয়েটার উপর অল্প সময়ের মধ্যে মায়া জন্মে গেছে। মেয়েটা চকোলেট খাওয়া মুখটা নিয়ে শিশিরের দিকে শুন্য দৃষ্টিতে তাকালো। বাচ্চাটাকে প্রয়োজনীয় কিছু কিনে দিয়ে বাসার উদ্দেশ্য রওনা হলো। বাসায় যেতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। যেতে যেতে ভাবছিল মারিয়ার কথা। বাসায় গিয়ে ওকে কি অবস্থায় পাবে কে জানে। এত দেরী কোনো দিন ও হয় নি। দরজা লক খোলার পরই দেখে মারিয়া কিছুদূরে দাড়িয়ে আছে। ফাইটিং একটা ভাব বুঝাই যাচ্ছে। শিশির কখন আসবে দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেই অপেক্ষা করছিল বোধহয়। শিশির কোনো কথা না বলে বেডরুমে যেতে নিয়েছিলো। মারিয়া অনেক জোরে বললঃ এত দেরি করে আসতে হলো!!শিশির : একটু কাজ ছিল। মারিয়া : কি এমন কাজ যে দেরী হলো!? শিশির :আগে ফ্রেশ হই,খাওয়াদাওয়া করি,তারপর বলি। মারিয়া : এখন বলতে বলছি এখনি বলতে হবে। শিশির: এই না,আমি সেই সকালে খেয়েছি,এখন আমি ক্ষুধায় শেষ। প্লিজ তুমি খাবার নিয়ে আসো। মারিয়া :না বলা পর্যন্ত কোনো খাবার না,এমনকি ফ্রেশ হতেও পারবে না। আমি কিছু করতে দিব না। শিশির : না খেলে যদি কিছু হয়ে যায় আমার তখন কি করবা? হা করে বসা ছাড়া তোমার কোনো উপায় থাকবে না। মারিয়া চলে গেলো। শিশির তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিলো। খাবার রুমে গেলে দেখলো কোন খাবার নেই। মারিয়াকে বলল: এই খাবার কই?? মারিয়া : বলছি না একবার...না বলা পর্যন্ত কোনো খাবার আনব না। শিশির: এইগুলা কিন্তুু ভালো হচ্ছে না। মারিয়া : তোমার জন্য এইগুলাই ঠিক আছে। শিশির : এখন কি তুমি আমার জন্য খাবার নিয়ে আসবা নাকি বাইরে গিয়ে খেয়ে নিব? মারিয়া : এই না না,তোমার জন্য স্পেশাল খাবার রান্না করছি। তুমি যেটা একদমই মিস করতে পারবে না। শিশির :কি এমন স্পেশাল রান্না করেছো? মারিয়া : এই তো টিকটিকি ভুনা,পিপড়ার ডিম ভাজা, তেলাপোকার ঝোল,মাকড়সা ফ্রাই..। শিশির : ঔই তুমি থামবা..ইয়াক..এগুলা কি বলতাছো.. বাসায় তো কোনো প্রাণীই রাখো নি। মারিয়া হেসে খাবার নিয়ে আসতে গেলো। নিয়ে আসার পর শিশির বলল: এহ হে সব শাকসবজি সিদ্ধ করে রাখছে। মারিয়া : কোথায়! কত সুন্দর করে রান্না করছি। শিশির : তা তোমার ঔই খাবার কোথায়?? মারিয়া: কোন খাবার? শিশিরঃ ঔই যে পিপড়া ফ্রাই,তেলাপোকার ডিম..না কিসব!! মারিয়া : মজা করে বলছিলাম। শিশিরঃ তোমার উপর বিশ্বাস নেই এই খাবারগুলার মধ্যেও দিয়ে রাখতে পারো। মারিয়া : কি বললা,!!বিশ্বাস করো না!! ঠিক আছে... তোমার খেতে হবে না..যাও বাইরে গিয়ে খেয়ে নাও। শিশির : আরে আমি সেটা বুঝিয়েছি নাকি..আমিও মজা করেছি। মারিয়া : কিসের মজা!!তোমার খেতে হবে না। শিশিরঃ না না খাবো।..রাগ করে না.. তোমাকে আমি কত ভালোবাসি..তোমার রান্না আমি আরো বেশি ভালোবাসি...। মারিয়া : উম,আচ্ছা খাও। শিশির এসব কারনে মারিয়ার উপর বেশি প্রভাবিত হচ্ছে। কারন অন্যসব রোবটের শব্দকোষ নিদিষ্ট থাকে ও নির্দেশনা দেয়া হয়ে থাকে। কিন্তুু মারিয়াকে সেসব কিছুই দেয়া হয় নি। ও নিজের মতো করে শব্দ বানিয়ে বুঝিয়ে বলতে পারে। এটাই শিশিরকে বেশি অবাক করে। নিজে যে ওকে বানিয়েছে বিশ্বাস হয় না। এসব ভাবনার অবকাশ হলো মারিয়ার কথা শুনে।'এই তুমি খাচ্ছো না কেনো? খাওয়ার অনুমতি তো দিয়ে দিয়েছি'। শিশির :ওহ হ্যা, খাচ্ছি। খেয়ে দেখে লবণ একদমই হয় নি।-'বাসায় কি লবন নেই? '। মারিয়া : এগুলো আমি দিতে পারি না, বেশি কম হয় বলে আমি দেই নি। শিশির : হায়রে তুমি যদি বুঝতে কেমন লাগে খেতে। তাহলে এরকম করতে না। মারিয়া: আমি না দিতে পারলে আমার কি দোষ!! শিশির : আমি শিখিয়ে দিবো। মারিয়াঃবললে না কেন দেরী করছো? তারপর সারাদিনের ঘটনা গুলো বলল শিশির। মারিয়া: তারপর?? শিশির : তারপর আর কি!!বেবি টা ঔইখানে থাকবে। মারিয়া : আমি দেখতাম। শিশির: তুমি দেখে কি করবে? মারিয়া : কখনো বেবি দেখি নি তো। শিশির : ওহ বেবিটার আম্মু আব্বু কে খুজে পেলে দেখানোর চেষ্টা করব। তারপর শিশির নিজের কিছু কাজ করে মারিয়া কে নিয়ে বারান্দায় গেলো। আজকের চাঁদ টা ভালো করে দেখা যাচ্ছিল না। তাই শিশির অন্য কিছু তে মনোযোগী হলো। মারিয়ার চুলের ঘ্রান নিচ্ছিল,চুল গুলো আলতো করে টান দিয়ে দিল,কিছুক্ষন পর পর আকা বাকা পথে বিনুনি করছিল। মারিয়া ও অবুঝের মতো সেগুলো দেখছিল। হয়তো শিশিরের মতো করে উপস্থাপন করবে নিজেকে।
-পরের দিন শিশির ঘুম থেকে উঠতে উঠতে দেরি করে ফেলল। সব আলসেমি যেন ওকে ঘিরে ধরল।। তারপর সব জড়তা নিয়ে রেডি হয়ে ইউনিভার্সিটি তে চলে গেলো। ওর মনে হচ্ছিলো কিছুদিন ছুটি নিয়ে মারিয়ার সাথে অবকাশ যাপন করা যায়। তাই ও পাঁচ দিনের ছুটি নিয়ে নিল। সারাটাক্ষন ভাবছিলো কোথায় ঘুরতে যেতে পারে, মারিয়া কে নিয়ে কি কি করবে। এরকম হাজারটা প্লান ওর মধ্যে ভিড় করল। বাসায় যাওয়ার আগে সেই ছোট্ট মেয়েটার খোজ নিল। মেয়েটা একটি নার্সিংহোমে আছে। এখনও কোন কিছু জানার চেষ্টা করে নি পুলিশেরা। তবে তারা আশ্বাস দিল ওকে তাড়াতাড়ি খোঁজখবর নেয়ার চেষ্টা করবে। ও বাসায় এসে পড়ল। ওর মধ্যে যাওয়ার একটা আনন্দ প্রকাশ করছে। মারিয়া ওর ছটফটানি দেখে বলল: কি হয়েছে? খরগোশ এর মতো এমন করতাছো কেনো? শিশির : কি খরগোশ!! খরগোশ কখনও দেখছো? মারিয়া : না দেখেনি
শিশির : হুম, এবার দেখাবো।
মারিয়া : তুমি আমাকে খরগোশ দেখাবা????
শিশির : হুম, ইউনিভার্সিটি থেকে পাঁচ দিনের ছুটি নিয়েছি। মারিয়া : কি!! তুমি খরগোশ দেখার জন্য এত দিন ছুটি নিয়েছো!!!???
শিশির : আরে না,এই ছুটিতে চিন্তা করছি তোমাকে নিয়ে যেদিকে চোখ যায় সেদিকে চলে যাবো। মারিয়া : তারপর এখানে আবার আসতে পারবো তো? শিশির : হুম পারবো..কেনো এই বাসা ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করে না? মারিয়া : না তুমি যেখানে নিয়ে যাবা সেখানেই যাবো। কিন্তুু এইখানে ও অনেক ভালো লাগে।
শিশির : আসলে আমরা সিলেট যাবো। আর সেখানে গেলে সেটাই তোমার ভালো লাগবে। আসতেই চাইবে না।
মারিয়া :‘না আসবো ..’এরপর মারিয়া কে শিশির বুঝাতেই পারছে না সিলেট কী!!ও এটার মানে কি সেটা জানতে চায়। ও কিছুই বুঝতে পারছে না ।
-শিশির : তোমার আর বুঝা লাগবে না। তোমাকে যেই লিস্ট দিব সেই অনুযায়ী আমার সব কিছু গুছিয়ে দিবা। মারিয়া : নিজে পারো না?? শিশির: না পারি না, আপনার গুলা তো আমি গুছিয়ে দিবো। এই বলে শিশির নিজের রুমে চলে গেলো। আসলে সব কিছু সহজ ভাবে ভাবলেও ব্যাপার একদমই সহজ না। কারন সেখানে মারিয়ার চার্জে সমস্যা হবে। তাই ওর জন্য একটা সেভিংস চার্জার বানাতে হবে। যেটার কার্যক্ষমতা অনেকক্ষন থাকবে। যেকোনো সময় ওটার সাহায্যে মারিয়া কে চার্জ করা যাবে। ও সারা দিন ভেবে চিন্তে রাতে কাজ শুরু করে দিলো। ও একটু কাজ শেষ করার পর দেখতে গেলো মারিয়া কি করছে। শিশির মারিয়ার পিছনে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগল ওর কাজকর্ম। মারিয়া লিস্ট দেখে এটা সেটা নেয় আবার রাখে আবার নেয়। বিরতিহীন ভাবে এরকম করছে। ওর এমন অবস্থা দেখে শিশিরের অনেক হাসি পেলো। বলে দিলো কিভাবে রাখবে এবং গুছাবে। মারিয়া সেভাবেই করা শেষ করল। পরের দিন শিশির সেভিংস চার্জারের বাকি কাজ শেষ করে ফেলল। এখান থেকেই শিশির বাংলোর ব্যবস্থা করে ফেলছে। আর সেখানে ইনফর্ম করে দিল যে ওরা আজ রাতের মধ্যে সেখানে পৌছাবে। আর মারিয়ার জন্য বাংলো সবচেয়ে ভালো জায়গা। কারন শিশিরের গোপনীয় প্রেম তো।
- এরপর মারিয়ার প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র শিশির গুছিয়ে নিলো। দুপুরের খাওয়াদাওয়া করেই শিশির ওর গাড়িতে সব ব্যাগ-ট্যাগ উঠালো। ও নিজেই ড্রাইভ করবে। এরপর মারিয়াকে নিয়ে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।
শিশির : অবশেষে আমরা যাচ্ছি। যাওয়ার পর সেখানে দুষ্টামি করবানা। মারিয়া : আমি দুষ্টুমি করি!! আর সেটা আমি জানি না!!
শিশির : তুমি জানবা কি করে, তুমি তো পিচ্চি, কিছুই জানো না। মারিয়া : নিজে যে শিশু সেটা কে বলবে।!!? আর তুমিই বেশি দুষ্টুমি করো..তুমিই বেশি সব কাজে দেরি করো। শিশির : এখন সব আমার দোষ। দেখা যাবে কে বেশি দুষ্টামি করে!! মারিয়া : আমিই জিতবো.. কারন তুমি অনেক দুষ্ট.. পচা। শিশির : হুম..আর এই ঘুরতে যাওয়ার সময়ে আমরা ঝগড়া করতাছি। এই বলে দুজনেই হেসে দিলো। তারপর...
রোবট প্রেম ...
পর্ব : ৬
লেখক : শিশির আহমেদ ( নীল)
- সিলেট যাওয়ার সময় হঠাৎ, করে ওদের গাড়ি টা নষ্ট হয়ে গেলো। শিশির মারিয়া কে বলল, তুমিও উল্টাপাল্টা কথা বলো!! এখন গাড়ি টা ও উল্টাপাল্টা আচরণ শুরু করছে। মারিয়া গাড়ি থেকে বের হয়ে বলল, এটার আবার কি হলো??
শিশির : কি জানি কি হয়েছে, বুঝতে পারছি না। ওর অনেক বিরক্ত লাগছে.. কিছুক্ষন পর মারিয়া চিৎকার করে বলল,“ওয়াও কি সুন্দর জায়গা ”।
শিশির : এজন্য এমন করতে হয়, উফফ কানে শুনতাছি না। মারিয়া : ওহ, আমি এখানে থাকবো।
শিশির : হুম, তোমাকে এখানে রেখে যাবো।
মারিয়া : তোমাকেও থাকতে হবে। শিশির দেখলো জায়গাটা গ্রাম্য প্রকৃতির। আশেপাশে অনেক জমি, এগুলোর পাশে গাছপালা,অনেক দুরে বাড়িঘর। এসবে মারিয়াকে উচ্ছ্বসিত হতে দেখে শিশির অবাক হলো। তারমানে ,, এগুলোর উপর ওর ভালোলাগা অনুভূতি হয়েছে। বাইরের পরিবেশ এর উপর ওর বিরূপ মনোভাব হতে পারত। কিন্তুু সেরকম কিছুই হয় নি। শিশির ওর এসব আচরন বুঝে না কখন কিভাবে ও নিজেকে প্রকাশ করবে। এসব ভেবে নিজের কাজে মনোযোগ দিলো। মারিয়া আশেপাশে সবকিছু এক নজরে পর্যবেক্ষন করছে এমন ভাব করলো। কিছুক্ষন পর শিশির গাড়ি ঠিক করে ফেলল।যেতে যেতে ওদের সন্ধ্যা হয়ে গেলো। বাংলোয় পৌঁছে বেছে বেছে একটি ভালো রুম ঠিক করলো। আর সেখানেই মারিয়াকে রাখার ব্যবস্থা করল। বলা যায় না কখন কি বিপদ হয়ে যেতে পারে। যদিও এখানকার মানুষগুলো বোকাসোকা, নিরীহ প্রকৃতির। তারপরও শিশির এদের বিশ্বাস করতে পারে না। তাই নিজের রুমেই মারিয়ার সব কিছু রাখল। মারিয়াও টুকিটাকি সব জিনিসপত্র গুছিয়ে ফেলল। বাংলোতে একটি লোক থাকে। যে এখানকার রান্নাবান্না ও দেখা শোনা করে।
- বাংলোর পাশেই তার পরিবার থাকে। রাতের খাবার খেয়ে শিশির ঘুমাতে যাবে তখনি মারিয়া হাতে একটি কাগজ নিয়ে বলল, এসব জায়গায় আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবা না??
শিশির : হ্যা, যাবো তো। মারিয়া : তাহলে চলো, দেরি করতাছো কেনো?
শিশির : এখন কেনো?? ঘুরতে তো যাবো কালকে... এখন ঘুমানোর সময়!!। একথা শুনে মারিয়া মন খারাপ করে সোফায় বসে পরল। শিশির বুঝতে পেরে বলল, ‘তুমি মন খারাপ করলে কেনো???
মারিয়া : কোথায় করলাম?
শিশির : প্লিজ মন খারাপ করে না, এখন গেলে কিছুই করা যাবে না। মারিয়া : হুম.....। শিশির : এখন ঘুরার সময় না তো যখন সময় হবে তখন তো নিয়ে যাবো। মারিয়া : আচ্ছা বুঝলাম। শিশির : তাহলে একটা হাসি দিয়ে ভালোবাসি বলো।
মারিয়া : হবে না এখন।
শিশির : চেষ্টা করলেই হবে।
মারিয়া বলার পর পাওয়ার অফ করে শিশির ঘুমাতে গেলো ।
- পরের দিন শিশির সকালবেলা মারিয়া কে নিয়ে চা বাগানে ঘুরতে নিয়ে গেলো। সকালবেলার চা বাগানের দৃশ্যটাই অন্যরকম। চা শ্রমিকেরা যখন চায়ের পাতা ছিড়ছিল, মারিয়া ও সেটা দেখে ওইভাবে করার চেষ্টা করছিল। ফলস্বরূপ ও গাছগুলোই উঠিয়ে ফেলছিল। এটা দেখে শিশির ওকে বলল,‘পাতা ছিড়তে হবে না শুধু দেখো কিভাবে কি করে’। এরপর শিশির সিলেটের বিখ্যাত সাত রঙের চা কিনে মারিয়াকে দেখালো। শিশির বিস্ময় প্রকাশ করতেই মারিয়া বলল : এটা আমিও পারবো বানাতে।
শিশির : সত্যি!! কিভাবে??
মারিয়া : একটা মগে স্পেশাল ভাবে বানিয়ে দিলেই হবে।
শিশির : বুঝলাম না!! কেমন স্পেশাল??
মারিয়া : দেখো এই চায়ে সাতটা ধাপ, তারমানে মগে ছয়টা সেল দিতে হবে। এটার মতো করে প্রতিটা সেলে আলাদা ভাবে উপাদান দিতে হবে। শিশির হেসে বলল, ‘হয় নি,এতই সোজা বানানো। এখানে কোনো সেল টেল দেয় নি
মারিয়া : তাহলে কিভাবে?
শিশির : ওনাদে র বিশেষ কৌশল আছ! তবে, তোমার আইডিয়াটা ভালো ছিলো!
মারিয়া : আমি এভাবেই বানিয়ে দিবো তোমাকে। সেজন্য আমাকে ওইরকম স্পেশাল মগ গিফট করতে হবে। শিশির: চেষ্টা করব।
এই বলে শিশির চা খেতে লাগলো। ওর চা খাওয়া দেখে মারিয়া বলল,‘তুমি এত মজা করে চা খাচ্ছো!!
শিশির : হিহিহি কেনো তোমার খেতে ইচ্ছে করছে?
মারিয়া : হুম,আমি এমনই ভিন্ন যে খেতে পারছি না। সেই ইচ্ছে কখনোই ছিলো না, কিন্তুু এখন হচ্ছে। একথা শুনে শিশির আশ্চর্য সাথে মন খারাপ হয়ে গেলো। আসলেই শিশির মারিয়ার সামনে খায়, বাসাও মারিয়া রান্না করে। অথচ শিশির কখনোই মারিয়াকে খাইয়ে দিতে পারে না। ওর এখন খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো ওকে খাইয়ে দিতে। যেটা কখনোই সম্ভব হবে না। মারিয়া রোবট না হয়ে মানুষ হলে হয়তো আজকে এই মন খারাপের ইচ্ছে টা থাকত না। তখন হয়তো সবসময় শিশির খাইয়ে দিতো। কিন্তুু এই ইচ্ছেগুলো ওদের জন্য অপূর্ণ থাকবে। সব ইচ্ছে তো আর পূর্ণ হয় না। তারপর ..
.রোবট প্রেম ..
পর্ব : ৭
লেখক : শিশির আহমেদ ( নীল)
- মারিয়া কে নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে বিকেল হয়ে গেলো। ঘুরার সময়ও শিশির যতটা সম্ভব মানুষজনের ভীড়ে কম নেয়ার চেষ্টা করছে। যদিও মারিয়া কে দেখলে রোবট একদমই মনে হয় না। বাহ্যিক গঠন,চলাফেরা, ড্রেসআপ অবিকল অন্য সব সাধারণ মেয়ের মতোই লাগে। পরের দিন মারিয়া কে নিয়ে বিশেষ কোথাও ঘুরতে গেলো না। কারণ রাতে ওর জন্য শিশির সারপ্রাইজ রেখে দিয়েছে। ওরা যে বাংলোয় থাকে বলা যায় সেটা কোনো বনের পাশে। আশেপাশের বাড়ি গুলো একটু দূরে।
- রাতে শিশির মারিয়া কে বলল : আরেকটু পর আমরা বাইরে যাবো।
- মারিয়া : না রাতে কোনো বাইরে ঘুরা যাবে না।
শিশির : কেনো? আর আমরা বাইরে ঘুরবো না তো। এই বাংলোটার একটু সামনেই যাবো।
মারিয়া : না,কোথাও যাওয়া হবে না।রাগ করেছি তোমার সাথে।
শিশিরঃ কেনো?? আমি আবার কি করলাম?
মারিয়া : তুমি তো সেদিন আমাকে রাতে ঘুরতে নিয়ে যাও নি। আজকে ও তো কোথাও ঘুরতে নিয়ে গেলে না।
শিশির : সেজন্য....।
মারিয়া : সেজন্য যাবো না
শিশির : তাহলে আর কি করা!? সারপ্রাইজ দিতাম,তা আর হলো না। আশেপাশে যারা আছে তারা সব নিয়ে যাবে।
মারিয়া : সারপ্রাইজ!!!!!! কই আমার সারপ্রাইজ????
মলিন মুখে শিশির বলল : তুমি তো আর যাবা না দেখিয়ে কি হবে!!!
মারিয়া : না,না যাবো। তখন এমনি বলছিলাম।
শিশির : না যাওয়া লাগবে না
মারিয়া : প্লিজ নিয়ে যাবা.. এখন..।
শিশির : তাহলে একটা কন্ডিশন। মারিয়া : কি সেটা?
শিশির : তুমি আমার সামনে থাকবে কিন্তুু আমাকে দেখে দেখে হাটতে হবে।
মারিয়া : কিভাবে হাটবো তোমার দিকে তাকিয়ে থাকলে?
শিশির : উল্টা করে হাটবে। আর আমার হাত ধরে রাখবে।
বাইরে গিয়ে মারিয়া শিশিরের হাত ধরে ওর দিকে তাকিয়ে হাটছে।কিছুদূর যাওয়ার পর শিশির এক হাত ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল।
মারিয়া : হাত ছেড়ে দিলে কেনো?
শিশির : ঘুরে সামনের দিকে তাকাও।
এরপর শিশির নিজেই মারিয়ার হাত ধরে ঘুরিয়ে দিলো। মারিয়া সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো। চারিদিকে হালকা আলোর বাতি। চাঁদের আলো আর এই আলো মিলে ছিমছিমে আভায় আলোকিত হয়ে আছে। দুই পাশে সারি সারি করে অনেক বেলুন রাখা আছে। মারিয়া : আউ বেলুন'স!!!!ও অবাক হয়ে শিশিরের দিকে তাকিয়ে আছে।
শিশির : আরো সারপ্রাইজ আছে।
- সামনে একটি ছোট টেবিল। মারিয়াকে নিয়ে সেই টেবিলের পাশে বসলো। শিশির অনেকগুলো মোমবাতি ধরালো। চারদিকে মোমবাতির আলোয় ভরে উঠলো। এরপর ছোট একটা কেক বের করল।
মারিয়া : শিশির তুমি এত কিছু কিভাবে করলে??
শিশির : যখন তোমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছি তখন করেছি।
মারিয়া: সব কিছু এত সুন্দর হয়েছে!!!
শিশির : তোমার জন্যই! এই আজকে তো আমাদের বার্থডে না তাহলে কি বলবো!!!???
মারিয়া : কি বলবো জানি না তো।
শিশির : আচ্ছা কেক কাটা শুরু করো।
মারিয়া: আমি একা কাটবো??
শিশির : না আমি সাথে আছি তো।
তারপর শিশির মারিয়ার হাত ধরে কাটা শুরু করলো।
শিশির : হ্যাপি ট্রাভেলস ডে!!
মারিয়া : হিহি, তুমি খাও
শিশির : না, তোমাকে ও খেতে হবে
মারিয়া : কিভাবে!!?? আমি তো খেতে পারি না।
শিশির : ইমাজিন করে খেতে হবে, আমি খাইয়ে দিব তোমাকে। তোমার সেটার পারফেক্ট ইমাজিন করে খেতে হবে।
মারিয়া : ওহ আচ্ছা।
শিশির : হা করো। মারিয়া : হা!!
শিশির : এই নাও, কেমন লাগলো??
মারিয়া : কেমন!!! ভালো না।
শিশির : দুষ্টামী করতাছো কেন? ভালো করে বলো!!?
মারিয়া : হুম,অনেক মজা, সফট একটা কেক ছিলো!!
শিশির : হুম হয়েছে। তারপর শিশির সেই টুকরাটা নিজে খেয়ে ফেললো।
মারিয়া : এটা না তুমি আমাকে খাইয়ে দিলে, এখন সেটা নিজে খাচ্ছো কেন?
শিশির : আমার খাওয়া আর তোমার খাওয়া একই।
মারিয়া : হুম বুঝেছি, আমাকে ইমাজিন করিয়ে সব তুমি খাবে
শিশির : হুম সেটাই ছাড়া আর কি করার আছে।
মারিয়া : হিহি,কিন্তুু কেকটা অনেক মজা ছিলো,আরেকটু খাবো!!
শিশির : সবগুলো তোমাকেই খাওয়াবো। এরপর কেক নিয়ে ওরা অনেক মজা করল। শিশির : ওয়েট,আর একটা সারপ্রাইজ ছিল। বলতে পারো কি সেটা??.
মারিয়া : বাইরে বসে চাঁদ দেখাবা?
শিশির : সেটা তো সারপ্রাইজের মধ্যে পড়ে না। এই বলে শিশির ফানুস বের করে দেখালো। মারিয়া একপাশে ও শিশির আরেকপাশে ধরলো। তারপর দুজন একসাথে ছেড়ে দিলো। শিশির মারিয়া কে জরিয়ে ধরে বলল : ভালোবাসি মারিয়া।
মারিয়া : আমিও ভালোবাসি।
চাঁদ দেখতে দেখতে ওরা বাংলোতে ফিরে আসলো ...
রোবট প্রেম ..
পর্ব : ৮
লেখক : শিশির আহমেদ ( নীল)
- সেদিন রাতে শিশির ঘুমাতে অনেক দেরি করে ফেলল। কিন্তুু পরের দিন সকালে উঠে গেলো তাড়াতাড়ি। তাছারা এর পরের দিন ওর সিলেট থেকে চলে যাবার প্লান। আজকের মধ্যেই ওর সব ঘুরা ও গোছগাছ শেষ করে ফেলতে হবে। সেজন্য শিশির রুমে নিজের প্রয়োজনীয় সব কিছু ঠিক করছে।
মারিয়া : কালকে কি আমরা সত্যি সত্যি চলে যাচ্ছিল??? শিশির : হুম যাচ্ছি। মারিয়া আর কিনা বললো না। চুপ করে বসে রইলো।
শিশির : কি কিছু বলবা?
মারিয়া : না গেলে হয় না...!!
শিশির : তোমার থাকতে ইচ্ছে করতাছে?
মারিয়া : হুম অনেক..!
শিশির : সেটা একদমই সম্ভব না। কিন্তুু তুমি যে এরকম করবা সেটা আগেই বুঝতে পারছি।
মারিয়া : আমার এজায়গাটা ভালো লেগেছে। এই বাড়িটায় আমার থাকতে ইচ্ছে করছে।
শিশির : আচ্ছা, কোনো এক সময় সবকিছু থেকে অবসর নিয়ে এরকম একটা বনের মধ্যে বাড়ি করবো। সেখানে তুমি আর আমি থাকবো।
মারিয়া : জানি সেটা অনেক দেরি!!
শিশির : আচ্ছা, আজকে কোথাও ঘুরতে যেতে চাইলে নিয়ে যেতে পারি।
মারিয়া : না যাবো না, সারাদিন এই বাড়িটা দেখবো।
শিশির : আচ্ছা দেখো।
কোথাও যেতে হবে না দেখে শিশির বই পড়া শুরু করলো। রাতে না ঘুমানোর ফলে ওর ঝিমুনি এসে পরলো। বই পড়া অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ পর ও ধড়মড়িয়ে উঠে গেলো। চারদিকে তাকালো কিন্তুু মারিয়া কে দেখতে পেল না। ও চিন্তায় পড়ে গেলো। কারণ ও পাওয়ার অফ না করে ঘুমিয়ে পড়েছে। বাংলোর সব জায়গায় খুঁজলো। কিন্তুু কোথাও পেলো না। দেখাশোনা করা সেই লোকটাকে জিজ্ঞেস করল। সে ও বলতে পারলো না। ও কি করবে কিছুই বুঝতে পারছিল না। দিশেহারা হয়ে আশেপাশে খুজতে লাগলো। হটাৎ ও দেখলো একটা গাছের ডালে মারিয়ার ছোট হিজাব ওরনাটা আটকে আছে। ও সেটা নিয়ে সামনের দিকে যেতে থাকলো। কিছুদূর যাওয়ার পর মারিয়া কে দেখতে পেল। উপরের দিকে তাকিয়ে কি যেন দেখার চেষ্টা করছে। মারিয়া কে দেখে শিশিরের চোখে পানি এসে গেলো। এরপর দৌড়িয়ে গেলো মারিয়ার কাছে।
‘তুমি এখানে, আর আমি তোমাকে কোথায় কোথায় খুঁজতাছি, তোমার কিছু হয় নি তো, কিভাবে আসলে!?
বিষন্ন কন্ঠে মারিয়া বলল : দেখোনা,একটা বাটারফ্লাই.... কোথায় গেলো? খুঁজে পাচ্ছি না!!
শিশির : তুমি এই বাটারফ্লাই এর জন্য আমাকে না বলে এখানে এসে পরছো!!?
মারিয়া : হুম, তোমাকে ডাকলে দেরি হয়ে যেতো কিন্তুু এখন খুঁজেই পাচ্ছি না!!
শিশির : আসো ফালতু মেয়ে!! আমাকে না বলে বের হয়েছে তাও হিজাব ছাড়া!! আজকেই চলে যাব
মারিয়া : আমার বাটারফ্লাই!!
শিশির : রাখো তোমার বাটারফ্লাই, এখন যদি তোমার কোনো বিপদ হয়ে যেতো, তোমাকে যদি খুঁজে না পেতাম তখন আমার কি হতো ভাবতে পারছো!!!
মারিয়া: বিপদ!!! কিসের বিপদ!!??
শিশির : তোমার জন্য আশেপাশের সব কিছু খারাপ, আমি তোমার পাশে যতখন আছি ততক্ষণ তুমি সেইফ। বাট একা হলে সত্যি কেউ যদি বুঝতে পারে তুমি কি তাহলে ফলাফল খুব খারাপ হবে। এই বলে ওকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলো।
মারিয়া : আর এরকম হবে না। আমি একা কোথাও কিছু করব না। কিন্তুু আমি আজকে যাব না প্লিজ!!??
শিশির : কোনো কথা না, আজকেই চলে যাবো। এদিকে থেকে আমি কোনো বিপদ আনতে চাই না। আমি আর এক মুহূর্তের জন্য অন্য কারো কাছে হারাতে দিব না। বাংলোতে গিয়ে সবকিছু গোছগাছ করে গাড়িতে উঠালো। যাওয়ার সময় মারিয়া কোনো কথা বলে নি। শুধু বাংলোটার দিকে অনেকক্ষন তাকিয়ে ছিলো। শিশির যাওয়ার পথে মারিয়া কে খরগোশ দেখালো। কিন্তুু মারিয়ার এসবে কোনো আগ্রহ ছিলোই না কিছুক্ষন পর বলল : আমার বাটারফ্লাই তো রেখে আসলাম ঔইখানে।
শিশির : ওইটা তুমি কি করে ধরতে বলো?.
মারিয়া : আমি ধরতাম না শুধু দেখতাম। আমাকে একটা বাটারফ্লাই এনে দিবা?
- শিশির : আচ্ছা দিবো।
বাসায় আসার পর ও মারিয়ার এই চিন্তা গেলো না। পরের দিন শিশির সেই বাচ্চাটার খোঁজ নিতে গেলো। ও ভাবছিল হয়তো এতদিনে বাচ্চাটার আসল ঠিকানা উদ্ধার করা গেছে। কিন্তু না হতাশ হতে হলো। কোনোভাবে পুলিশ খুজতে পারে নি। তবে কিছু ইনফরমেশন বের করা গেছে। বাচ্চা মেয়েটির নাম মাইশা। কেউ একজন ওকে রাস্তায় রেখে গেছে ও চিনে না। ও ওর বাবা মায়ের ব্যাপারে কোনো কিছু বলতে পারে নি। ও সবসময় ওর সমবয়সী অনেক বাচ্চাদের সাথে খেলত এবং ওদের সাথেই থাকতো। শিশিরের এগুলো শুনে অনেক মন খারাপ হয়ে গেছে। বাসায় এসে মারিয়া কে সব খুলে বলল।
মারিয়া : মাইশা কে নিয়ে আসো না। শিশির - তারপর???....
মারিয়া : আমাদের সাথে থাকবে
শিশির : কি ইন্টেলিজেন্ট রে!!হাহহ!!!
মারিয়া : এমন করো কেন?
শিশির : হুম নিয়ে আসি, তারপর তুমি বাচ্চা নিয়ে বিজি থাকো আমাকে আর কেয়ার করবা না। আমাকে অবহেলা করবা, আমাকে তুমি আর টাইম ই দিবা না
মারিয়া : না দিবো তো,তোমার কেয়ার করব, তোমাদের দুজনকেই করবো।
শিশির : আমাকে বেশি দিতে হবে। আর আমিও চিন্তা করছি মাইশা কে বাসায় নিয়ে আসব।
মারিয়া : হ্যা,তুমি তো আমার কথা শুনছো না!!
শিশির : এহহহ,আমি তোমার আগে থেকে চিন্তা করছি, এমনি মজা করছি।
মারিয়া : এটা আবার কেমন মজা!!
শিশির : অন্যরকম মজা!! আর তারপর কি হবে আমরাই ওর বাবা-মা হবো,আর এটাই ঠিক হবে।
মারিয়া : হুম যাও এবার নিয়ে আসো।
শিশির : যাচ্ছি!!! ...
- সেদিন সন্ধ্যায় শিশির মাইশা কে আনতে যায়। মাইশা দেখে ও অবাক হয়ে যায়। চেহারাটা শুকনা হয়ে একদম ছোট হয়ে গেছে।
মাইশা কে বাসায় আনার পর মারিয়া একভাবে তাকিয়ে থাকে। কিছুক্ষন পর ও মাইশার গাল আর হাত ধরা টানাটানি শুরু করলো।
শিশির : এই কি করো!! ও ব্যাথা পাবে তো!!
মারিয়া : পাবে না । আমি তো ওকে আদর করতাছি।
শিশির : পরে আদর করবা। এখন ওকে খাওয়াতে হবে।
মারিয়া : ওহ!!আচ্ছা । আমি খাইয়ে দিবো?
শিশির : না তুমি পারবে না, আমি দিবো।
মারিয়া : কিন্তু আমি গল্পে পড়েছি, সবসময় আম্মুরা খাইয়ে দেয়। তো আমি তো ওর আম্মু, আমিই খাইয়ে দিব।
শিশির : মাঝে মাঝে বাবারা ও খাইয়ে দেয়। আর আমি জানি তুমি পারবে না, তবে পরে শিখে নিবে।
মারিয়া : তাহলে তুমিই দাও, আমি দেখি কিভাবে খাওয়াতে হয়।
- পরের দিন শিশির মাইশা কে ঘুরতে নিয়ে গেলো। আসার সময় মাইশার জন্য জামাকাপড়, জুতো কিনে দিলো। বাসায় আনার পর মারিয়া এসবে বেশি তদারকি করছে। মারিয়া জামা ঠিক করে পরিয়ে দিলেও জুতো উল্টো করে পরিয়ে দিয়েছে। শিশির ঠিক করে পরালেও মারিয়া আবার উল্টো করে পরিয়ে দেয়। ওদের এরকম কাজকর্মে মাইশা হা করে দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে।
- মারিয়া অনেক চেষ্টা করে মাইশা কে খাইয়ে দিতে। কিন্তুু ওর চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ও একদমই পারে না। তখন মাইশা ওকে অনেক ভয় পায়। কিন্তু সারাদিন ওর সাথে দুষ্টামি করে। এসব দেখে শিশির চিন্তা করে ওর ইউনিভার্সিটির টাইমে একজন পরিচারিকা রাখবে। যে মাইশাকে এসে দুপুরে খাবার খাইয়ে দিবে আর গোসল করিয়ে দিবে। মারিয়াকে বলায় এই ব্যাপারে কিছুই বলল না। অবশেষে একটা পরিচারিকা রেখেই ফেলল। পরিচারিকাটার নাম আয়রা। এখনো পড়াশোনা শেষ হয় নি আয়রার। শিশির ওকে বলে দিল প্রতিদিন মাইশা কে ২-৩ ঘন্টা সময় দিবে। আর নির্দেশনা অনুযায়ী সব কাজ করবে। তবে মারিয়া কে যাতে কাছ থেকে যাতে না দেখে শিশির সেই ব্যবস্থা করে রেখেছে।
কিছুদিন পর মারিয়া আয়রা মেয়েটিকে একদমই সহ্য করতে পারে না। ও সবসময় এই ব্যাপারে শিশিরের উপর বিরক্ত হয়ে থাকে। মারিয়া : এই মেয়েটাকে রাখার কি দরকার ছিলো!!???
শিশির : কেনো?.. কিছু হয়েছে??....
মারিয়া : না,এই মেয়ে টাকে আমার ভালো লাগে না।
শিশির : কেনো লাগে না??..!!
মারিয়া : জানি না, তবে সহ্য করতে পারছি না।
শিশির : তাহলে কি করবো?
মারিয়া : সেটাও জানি না ... মাইশা আমার সাথে সময় কাটাবে...!! আর তুমি ওই মেয়েটার সাথে কথা বলো কেনো ??
শিশির : আচ্ছা কথা বলব না আর বাদ দিয়ে দিব!! শিশির বুঝতে পারছে ওর মধ্যে একটা হিংসা মনোভাব তৈরি হয়েছে যার জন্য আয়রা মেয়েটাকে দেখতে পারে না।
মারিয়া : সত্যি!! কবে বাদ দিবে? কালকেই দিলে ভালো হয়!!
শিশির : না,কিছুদিন পর।....মাইশা নিজের কাজগুলো টুকটাক শিখুক তারপর...।
মারিয়া : এখন বাদ দিলে কি হয়???
শিশির : আমরা মাইশাকে শিখাতে পারছি না কোন কাজ সেজন্য রাখছি।
মারিয়া : তারমানে ততদিন মেয়েটাকে আমার সহ্য করতে হবে।
শিশির : প্রমিস, আমি অনেক তাড়াতাড়ি মেয়েটাকে বিদায় করব।
মারিয়া : দেরি হলে আমিই থাপ্পড় দিয়ে বাইরে ফেলে দিব।
শিশির : হাহাহা, গুড আইডিয়া। কিন্তু ভুলে ও এরকম করতে যেয়ো না।
মারিয়া : হুহ করলাম না
- শিশির বুঝতে পারে মারিয়ার এসব আচরনগুলা। কিন্তু ওর কিছু করার ছিলো না বলে বাধ্য হয়ে পরিচারিকা রেখেছে। দিন যত বাড়তে থাকে মারিয়া তত বেশি অসহনীয় মনে করতে লাগলো আয়রা কে। মাইশা যদি আয়রার ব্যাপারে কিছু বলে মারিয়া সবসময় রেগে যেতো।
মারিয়া : তুমি খেয়েছো, মাইশা???
মাইশাঃ জানো আজকে আয়রা মিসি আমাকে অনেকগুলা করে খাইয়ে দিছে।
মারিয়া : খাইয়ে দিলেই কি আর না দিলেই কি!!?? বিড়বিড় করে বলছে -“মেয়েটা অসভ্য,বেয়াদব। জংলীদের মতো থাকে। একটা আফ্রিকান বাঁদর গলায় ঝুলিয়ে রাখা উচিত। শেওড়া গাছের ডাইনী একটা। আসে প্রতিদিন চেহারা দেখাতে। ”
মাইশা: আম্মু কি বলছো একা একা!!??...
মারিয়া : কিছু না বেবি,কাজ করছি।
মাইশা : আম্মু আমি এখন চকোলেট খাবো।
মারিয়া : ওই মেয়েটা থাকতে বলো নি কেনো?
মাইশা: তখন তো ইচ্ছে করে নি। আর চকোলেট তো তোমার কাছেই।
মারিয়া : হুম আসো দিচ্ছি, একা একা খেতে পারবে?
মাইশা: হ্যা পারব।
মারিয়া চকোলেট দিয়ে বলল- এই নাও.. আর শিশির আসলে বিচার দিতে হবে ওই মেয়েটার নামে। ও তোমাকে চকোলেট না খাইয়ে চলে গেছে। ওর থাকা আর না থাকা এক রকম।
মাইশা: আম্মু আমিও বিচার দিব বাবার কাছে। আমাকে জোর করে খাইয়েছে আর বকা দিয়েছে।
মাইশা এখন শিশির ও মারিয়া কে আব্বু-আম্মু বলে ডাকে। আর শিশির বাসায় আসলেই দুজনেই বিচারের ঝুড়ি নিয়ে বসেছে। শিশির ও খেতে খেতে সেসব কথা কথা শুনতে থাকে।
রোবট প্রেম ..
পর্ব : ১০
লেখক : শিশির আহমেদ ( নীল)
- একদিন শিশিরের কিছু আত্মীয়স্বজন বাসায় আসলো। যদিও শিশির এই ব্যাপারে কিছু জানত না। তারা কিভাবে যেনো জানতে পেরেছিল শিশির একটা ছোট মেয়েকে খুজে পেয়েছে। সেটা দেখার জন্যই ওর বাসায় আসছে। শিশিরের সাথে না দেখা করে চলে গেলো। মারিয়া শিশিরকে কল দিয়ে সব জানিয়ে দিয়েছে।এবাসায় এসে তো শিশির রেগেমেগে আগুন। এসেই মারিয়াকে বকা দিতে লাগল। কেনো দরজা খুলেছে, আসতে দেয়া হলো কেনো।
মারিয়া : আমি তো খুলি নি। আর যারা আসছে তারা অনেক পচাঁ ছিলো।
শিশির : কি তোমাকে দেখেছে!!!
মারিয়া : হুম উনারা সব রুমে গিয়েছে বলতে গেলে। আমি তখন লাইব্রেরি রুমে ছিলাম।
শিশির : উনাদের কে ভিতরে আসতে দিয়েছে!!?
মাইশা : আয়রা মিসি আসতে দিয়েছে
শিশির : মেজাজটা এতো খারাপ হচ্ছে। এতবড় সাহস কী করে হয়!!
ওর রাগ দেখে মারিয়াও আর কিছু বলল না। পরের দিন শিশির আয়রা কে আগে আসতে বলে। আসার পর শিশির বলল: আপনার সাহসের প্রশংসা করতে হয়।
আয়রা: কেনো?
শিশির : কালকে যে কাজটা করেছেন সেটা করার অধিকার কোথায় পেলেন? আপনাকে এসবের জন্যে রেখেছি!!????
আয়রা: আমি এমন কিছু করেনি যেটা খারাপ কিছুর মধ্যে পরে।
শিশির : আপনাকে ভালো খারাপ বুঝানোর দরকার নেই আমার। আপনার পেমেন্ট দিয়ে দিচ্ছি। আপনি আর আসছেন না। আয়রা : কিন্তু আমি কি করেছি??
শিশির : আমার প্রাইভেসি নষ্ট করেছেন।
আয়রা: ওহ,আপনার রোবট দেখে ফেলছে আপনার গেস্টরা.. সেজন্য আপনি আমার সাথে এমন করলেন!??
শিশির : চুপ থাকেন। আমার অনুমতি ছাড়া আপনি কাজ করছেন। আপনার সাথে ভালোভাবে কথা বলছি এই বেশি। আর রোবট!!অন্যের কথা কান না দিয়ে নিজের কাজে মনোযোগী হোন। নেক্সট ম্যানার শিখে কাজে জয়েন করবেন।
সেদিনই আয়রার কাহিনি শেষ হয়ে যায়। এতে মারিয়ার খুশি হওয়ারই কথা। কিন্তু ও সবসময় মনমরার মতো চুপ করে থাকে। শিশির জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেয় না। একদিন শিশির ওকে ডাকছিল কিন্তু ও শুনে ও কিছু বলছে না।
শিশির. : কি হলো?... তোমার কি হয়েছে?.... মন খারাপ?....
মারিয়া : না আমার আবার কিসের মন খারাপ হবে!!
শিশির : কেনো হতে পারে না?
মারিয়া : আমি তো রোবট, আমার কেনো মন খারাপ হবে?
শিশির : কে বলেছে তুমি রোবট?
মারিয়া : সেদিন তো অনেকেই আসলো তারাই বলেছে।
শিশির : আজাইরা কথা বলছে। যে বলছে তাকে থাপ্পড় দেয়া উচিত। জানেই না, রোবট কী!!?..
মারিয়া : কিন্তু আমি জানি শিশির রোবট কী!!!
শিশির : কী সেটা!!?..
কান্না করার মতো করে মারিয়া বলল: একটা সক্রিয় যন্ত্র। ইলেকট্রনিক সার্কিট কতৃক নিয়ন্ত্রিত মানুষের তৈরি যন্ত্র। আমিও সেরকম। আমাকেও প্রোগ্রাম অনুসারে সব কাজ করতে হয়। আমার মস্তিষ্ক কে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। যেগুলো তুমি আমাকে কখনো বলো নি।
শিশির দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলল: এগুলো বলার মতো কোন কথা ছিল না, তাই বলি নি। খুব ভালো করে রোবটের সংজ্ঞা দিলে,সেটার সাথে নিজেকে তুলনা করে ফেললে। আমার কথা একবার ও ভাবলে না।
মারিয়া : আমি কি করেছি!! আমাকে তুমি নিয়ন্ত্রণ করো না বলো?
শিশির : আমি তোমাকে নিয়ন্ত্রণ করলে তুমি আজকে আমাকে এগুলো বলার সুযোগ পেতে না। আর তোমাকে যে মেমোরি দেয়া হয়েছে এর উপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তোমার সব আচরণ আগেই সেটআপ দেওয়া হয়েছে। তুমি আমার সাথে কখন কী বলো অথবা কী করো তোমার কাজগুলো আমি কিছু জানি না আর বুঝিও না।
মারিয়া : ওহ তাহলে আমি নিজেকে কি মনে করব?
শিশির : রোবট কে কম্পিউটার দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। স্পেশাল রোবট একটি ক্যারেক্টার মধ্যে থাকে। যা রোবটের বৈশিষ্ট্য কে পরিচালনা করা হয়।এনির্দেশনার বাইরে কোনো কিছু করার ক্ষমতা থাকে না। কিন্তু তোমার মধ্যে অনেক ক্যারেক্টার দিয়েছি। যেগুলো একজন মানুষের মধ্যেই থাকে। তুমি নিজেই অনেক ভাবেই নিজেকে উপস্থাপন করো। আমার মতো হয়তো রক্ত-মাংস তোমার মধ্যে নেই। কিন্তু ভাব আচরণ এক। এজন্য তোমাকে আমি ভিন্ন বলি।জানি বিশ্বাস করছো না।
মারিয়া : না, আমি বিশ্বাস করছি।
রোবট প্রেম ...
পর্ব : ১১ (শেষপর্ব) ...
লেখক : শিশির আহমেদ ( নীল)
-শিশির : তাহলে, কেনো এমন করছো? তুমি জানো আমি তোমাকে কত ভালোবাসি। তুমিই বলো রোবট কে কেউ এভাবে ভালোবাসে। নিজের প্রয়োজনে রোবট রাখে। কিন্তু আমি সেরকম কিছু করেছি বলো। আমি কি এক শখের বশে বানিয়েছিলাম তোমাকে। - হঠাৎ করে মনে হয়েছে অনেক ভালোবাসি। আমার এগুলো তুমি বুঝো না!!একেনো নিজেকে এমন তুলনা করছো বলো?
মারিয়া : জানি না আমি, অনেক খারাপ লাগছে মনে হয়।... আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি। কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে অনেক কিছু নিয়ে।
শিশির : কেনো তুমি কি ভাবছো আমি তোমাকে নিয়ে অন্য কিছু ভাবি। তুমি কেনো বুঝতে পারছো না.. আমি তোমাকে কেন অন্য সবার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখি। আমি তোমাকে ভাবি শুধু আমার জন্য। অন্য কারো জন্য না। সেরকম দিন আসার আগেই আমি সব শেষ করে দিব।
মারিয়া : বুঝতে পারছি শিশির।
শিশির : তুমি এখনো কান্নার মতোই করছো। নিজেকে এখানো রোবট ভাবছো। আচ্ছা রোবট তো কখনো আম্মু হতে পারে না। তুমি তো মাইশার আম্মু। রোবট কি এতকিছু বুঝে। কাউকে এত আপন করে ভালোবাসে!! আমার মতো কাউকে ভাবনার জগৎ তৈরি করে দিয়েছে।
মারিয়া : না পারে না,তুমি কি আমাকে নিয়ে ভাবো!আমি কি সত্যি মাইশার আম্মু তাহলে!??শিশির : হুম আমার সব ভাবনায় তুমি। আর তুমিই তো ওর আম্মু।
মারিয়া : আসলে অন্যদের কথা শুনে আমার মন খারাপ লাগছিলো। আর কখনোই এরকম হবে না।
ওদের সময়গুলো এভাবেই যাচ্ছিলো। শিশির জানতো মারিয়া কে ছাড়া ওর একসময় একা থাকতে হবে। সেই দিন টা যেকোনো সময় উপস্থিত হয়ে যাবে। একদিন ওর ইউনিভার্সিটি তে সেমিনার হলো। যেখানে ওকে নিয়েই আলোচনা করা। সবাই বলছিল শিশির রোবোটিক্স সম্পর্কে বিস্তর জ্ঞান আছে সেগুলার কিছু প্রমান পাওয়া গেছে। শিশির বিশেষ ধরনের রোবট বানাতে সক্ষম সেসব ও ধারণা করছে। শিশির সরাসরি না করে দিলো। বাসায় এসে দুশ্চিন্তা মনে মারিয়া কে সব বলল।
মারিয়া : আমাকে সবার সামনে প্রকাশ করলে যতটা কষ্ট পাবো তারচেয়ে বেশি খুশি হবো আমাকে নিশ্চিহ্ন করে দিলে।
শিশির :সেরকম যদি করি আমি তোমাকে ছাড়া থাকবো কি করে!?আবার আমি মরে গেলেও তো তোমাকে কোনোভাবেই প্রকাশ করবো না।
মারিয়া : আমি থাকবোনা কিন্তু আমার সব কিছু তো থাকবে তোমার সাথে।
কিছু দিন পর শিশির জানতে পারলো ও যে আমেরিকায় রোবোটিক্স নিয়ে ট্রেনিং নিয়েছে সে কাগজপত্র গুলো কিভাবে যেনো বের করে ফেলছে। প্রশাসন ওকে জানালো যদি কোন রোবট তৈরি করে থাকে সেটা যেন উনাদের কাছে প্রদর্শন করে। অথবা রোবট তৈরি ডাটা দেখায়। ও বুঝতে পারলো মারিয়া কে যত দ্রুত সম্ভব একদম নিজের মধ্যে লুকিয়ে ফেলতে হবে।
শিশির : মারিয়া, প্রিপারেশন নাও,এটাই তোমার জন্য শেষ দেখা আমার সাথে। আমি সব কিছু ঠিক করছি।
মারিয়া ওর দিকে নিষ্প্রানভাবে তাকালো। আর বলল: হুম। খুব কষ্ট লাগবে, শিশির?
-‘কিছু টের পাবে না’ ফিসফিস করে জবাব দিলো শিশির। ওর সারা শরীরে ঠান্ডা ঘাম নামছে। অনেক বেশি মারিয়া কে ভালোবেসে ফেলছে। নিজ হাতে তাকে শেষ করতে যাচ্ছে কিছু না দেখা শত্রুদের জন্য। ও ইচ্ছে করলে মারিয়া কে বাচিয়ে রাখতে পারে। কিন্তু সেটার জন্য সবাইকে দেখিয়ে বেড়াতে হবে। ও চায় না মারিয়াকে নিয়ে এসব লাঞ্চনার শিকার হতে। হাত কাপছে ওর এসব শেষ করতে। সবকিছু শেষ হওয়ার আগে মারিয়া বলছিল : ভালোবাসি অনেক। শিশিরের চোখ দিয়ে পানি পড়লো ওর শেষ ভয়েসটা শুনে। কিছু হ্রিংস্র মানুষদের জন্য ওর অবুঝ ভালোবাসাকে ধ্বংসস্তুপ বানাতে হলো
মারিয়া কে ছাড়া ওর অনেকগুলা বছর চলে গেছে। মাইশা ও স্কুল শেষ করে কলেজে উঠেছে। শিশির প্রতিদিনকার মতো আকাশের তারাগুলো দেখে আর মারিয়া সাথে কাটানো সময়গুলোর কথা ভাবে। তারাগুলো মনে হয় নিভু নিভু হয়ে আসছে। শিশিরের মনে হয় ওর জীবনটা ও এরকম নিভু নিভু হয়ে যাচ্ছে। পার্থিব জীবনে মারিয়ার অপার্থিব সপ্ন দেখে বেঁচে আছে। হঠাৎ করে ওর ভাবনার অবসান হলো মাইশার ডাকে।
'বাবা তুমি খাবে না, এখানো বসে আছো। '
'পরে খাবো'।
' হুম বসে বসে এখনো আমার রোবট আম্মুর কথা ভাবছো। তাড়াতাড়ি আসো, খাবার ঠান্ডা হয়ে যাবে।
'তুই যা আমি আসছি...।'
সত্যিকারের ভালোবাসা কখনো সময়ের সাথে শেষ হয় না। বরং বেড়ে যায়। সেটা যেরকমই হোক। পাশে থাকুক বা নাই থাকুক। ভালোবাসা অবিরাম।
।সমাপ্ত।





#অধিকার_নেই গল্পের সব পার্ট 
অধিকার নেই পার্ট:01
অধিকার নেই পার্ট:02
অধিকার নেই পার্ট,03
অধিকার নেই পার্ট,04
অধিকার নেই পার্ট,05
অধিকার নেই পার্ট,06
অধিকার নেই পার্ট,07(সমাপ্তি)

Reactions

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ