অধিকার নেই পার্ট,06


অধিকার নেই
W:আফসানা মিমি
পার্ট,06
তোমার ব্ল্যাংকেট এ তোমার ঘ্রান মেখে আছে আমার নেশা লাগছে এ ঘ্রানে।
অর্ক ঘুমিয়ে পরে।নীড়ের রূমে একটা ব্ল্যাংকেট ছিল।দুই জনে জড়িয়ে নেয়।
সকালে
অর্ক চোখ মেলে নীড়কে দেখছে।ইচ্ছে হচ্ছে হাত দিয়ে মুখে আসা চুল গুলো সরিয়ে দিতে।বুকের সাথে জাপটে ধরতে কিন্তু এ স্বপ্ন পূরণ হওয়ার নয়।
ঠক ঠক।নীড় দরজার নক শুনে উঠে বসে।অর্ক তাকায় নীড় অর্ককে দেখে মুচকি হেঁসে গেট ফাঁকা করে দেখে ভাইয়া।
:::তুমি চলে এলে ভাইয়া
;হ্যাঁ তোর ভাবি আর বেবি ঠিক আছে তাই ছেড়ে দিল।শুন আমি বের হচ্ছি খেয়াল রাখিস।আর নাস্তা কিনে রেখে গেছি।
;;;ভাবি
;ওকে সুপ করে খাইয়ে দিযে গেলাম।
;;;আমাকে ডাকতে আমি করে দিতাম ।
;থাক ,তুই ঘুম শেষ করে পরে একটু দেখিস ভাবি কি লাগবে না লাগবে।আর আমি কিছু পেঁয়াজ আগে কেটে বক্স করে ফ্রিজের ভেতর রেখেছি।তুই শুধু রান্না টা করে নিস।
;;;;এতো ভালো কেন তুমি
;যা পাগল আসি।
;;;সাবধানে যেও ভাইয়া।
অর্ক উঠে বসে ।
;;;গুড মর্নিং
;গুড মর্নিং
;;;;কি খুঁজো
;আমি কি বেলকনি দিয়ে যাবো না কি তুমি আমাকে গেট দিয়ে বের করে দিবা।
;;;যেখানে দিয়ে এসেছো সেখান দিয়ে যাবা।আমি কেনো হেল্প করবো
;হেল্প না করলে আমি যাবো কি করে
;;;যেতে বলেছে কে থেকে যাও
;বেমানান কথা বলতে এসো না
;;;আচ্ছা বসো আমি নাস্তা নিয়ে আসি।
;আমি বাইরে করে নিব ।আমাকে যাবার ব্যবস্তা করে দেও আমি এখন চোরের মত বেলকনি বেয়ে নামতে পারবো (নীড় অর্ক মুখ চেপে ধরে।পায়ের নপুরের শব্দ ।নীড়ের ভাবি নুপুর পড়ে পায়ে।নীড় এবার নিয়ে এসেছে ভাবীর জন্য।)
;;;;নীড় নীড় কি বেপার মনে হয় উঠেনি।
নীড় অর্ক মুখে থেকে হাত নামিয়ে ব্ল্যাংকেট মুখের কাছে নিয়ে ;জী ভাবি কিছু লাগবে দাঁড়াও আসি।
;;;;নাহ লাগবে না তুই উঠলে তোর সাথে একটু ফল খেতাম।
;একাই খাও আমি খাবো না
;;;মাইর খাবি ,শরীরে শক্তি দরকার ।ফ্রেশ হয়ে আয় তোর জন্য সবুজ আপেল এনেছি।আয় আমি অপেক্ষা করছি।
অর্ক;ভাবির যত্ন তোমার নেওয়া উচিত ।আর সে জায়গায় সে তোমার যত্ন নিচ্ছে।
;;;আমি এমনি যত্নবান পাবলিক হিহিহি(হেঁসে দীর্ঘ নিঃস্বাস ফেলে)
;এতো জোড়ে নিঃস্বাস ছাড়লে যে
;;;বিয়ের পর আজ হয়তো মন খুলে হাঁসলাম।এর আগে কবে একটু শব্দ করে হেসেছি মনে পড়ে না ।
;অর্ক প্রসঙ্গ পাল্টাতে ;আমি ফ্রেশ হবো
;;;আমার রুমে কোন ওয়াশরুম নেই।ভাবীর রূমে একটা আর সবার জন্য বাইরে একটা।
;এখন
;;;রনি ভাইয়া একটার আগে উঠে না।ভাবি হয়তো কিচেনে।আমি ভাবীকে নিয়ে তার রুমে ফল খাই তুমি বাইরে টায় যাও।
অর্ক ওয়াশরুমে যায়।নীড় ভাবীকে নিয়ে রূমে যায়।রনি আজ আগে উঠে।ওয়াশরুমে যেতে গেলে নীড় বলে।
;;;রনি ভাইয়া আমি যাই আপনি ভাবীর ওয়াশরুমে যান।
ভাবি;তুই আমার টায় যা রনি ঐটায় যাক।
নাহ ভাবি আমি ঐটায় যাই।অর্ক সব শুনছে ভেতরে থেকে।নীড় ভয় পাচ্ছিল দরজা খুলে কি করে ভেতরে যাবে।দেখে দরজা হালকা ফাঁকা হয়ে গেল নীড় ভেতরে ঢুকে যায় গেট লাগিয়ে দেয়।রনি চলে যায়।অর্ক মুখে পানির ফোঁটা টপ টপ করে পরছে।অর্ক কোন কথা না বলে নীড়ের ওড়নার এক অংশ নিয়ে মুখ মুছে নেয়।
নীড় সেই ভেজা অংশ নিয়ে খুশীতে হেঁসে ফিস ফিস করে বলে;এ ওড়না আমি জীবনেও ধুব না।
অর্ক নীড়ের থেকে ওড়না নিয়ে বালটিতে চুবিয়ে ধুয়ে নীড়কে দিয়ে কানের কাছে গিয়ে বলে ;তুমি নোংরামি করবে তা কি আমি বসে বসে দেখবো নেও ধুয়ে দিলাম।
নীড় মুখ ঘোমরা করে:এতো মাতব্বরি কে করতে বলেছে তোমাকে
;আমি বের হবো বের করো
::::দাঁড়াও
নীড় অর্ককে বের করে রূমে ঢুকিয়ে দেয়।নীড় ভাবীর রূমে যায়।রনি তখনো ওয়াশরুমে।অর্ক আস্তে আস্তে বের হয়ে আসে নীড়কে হাতের ইসারায় বায় বলে।নীড় খামাখা ভাবীকে জড়িয়ে ধরে অর্ককে উদ্দেশ্য করে বলে;যাবা না বল্লাম না যাবা না প্লিজ যেও না।অর্ক চলে গেল।ভাবী কিছুই বুঝলো না নীড় কেনো এমন করছে?।নীড় ভাবীকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় কেঁদে দেয়।
ভাবি;কাঁদিস কেন কে যাবে না ?
নীড় কোন কথা না বলে রূমে চলে যায়।অর্ক যে জায়গায় শুয়ে ছিল ঐ যায়গায় শুয়ে কান্না করে।আজ খুব ইচ্ছে ছিল এক সাথে নাস্তা করবে ,লাঞ্চ করবে তা কিছুই হলো না ।সারা দিন নীড়ের মন খারাপ ছিল বারবার ভাবীকে খাইয়ে নিজের রুমে মন মরা হয়ে পরে ছিল।
রাতে নীড়ের রুমের বারান্দার দরজা সব সময় খোলা থাকে।শীতের ঠান্ডা বাতাস আসে তার পরও খুলে রাখে যদি অর্ক আসে।
ভাবী; নীড়
;বসো ভাবি কিছু লাগবে?
;;;নাহ তোর সাথে কিছু কথা বলতে এসেছি
;বলো
;;;রনির সাথে আমরা তোর
;প্লিজ ভাবি এ বেপারে কোন কথা বলতে চাই না।
;;;শুনতে হবে একটু শোন,আব্বু বাবার সাথে তোর আর রনির বিয়ে নিযে কথা বলেছে।বাবা রাজি।দেখ আজ হোক কাল হোক তোকে বিয়ে করতে হবে।তোকে এভাবে বসিয়ে রাখবে না।
নীড় কান্না করছে
;নীড় একটা কথা হয়তো তুই জানিস না।তোর ভাইয়া রাজি না এ বিয়েতে ।দেখ নীড় তুই আমার ভাই এর কাছে ভালো থাকবি।
নীড় তারপর কান্না করেই যাচ্ছে।
;যেহেতু বাবা বলেছে তোকে রনির কাছে বিয়ে দিবে।এতে কোন সন্দেহ নেই যে বিয়ে কেও আটকাবে।বাবা যেহেতু এক কথার মানুষ।সে কারো কথা শুনে না।তাই তোকে একটা কথা বলে রাখি।নীড় রনির আগে একটা বিয়ে করেছিল।মেয়েটা সুইজারল্যান্ড এর ছিল প্রেম অতঃপর লিভিং রিলেশন। বিয়ের তিন বছর এর মাথায় ওদের কোন বাচ্চা হচ্ছিল না টেস্ট করে দেখে রনির প্রব্লেম।তাই ও চলে যায় রনিকে ছেড়ে।এরপর থেকে রনি এসব ছাই পাস খাওয়া শুরু করে।ওদের ছাড়াছাড়ি হয়েছে প্রায় তিন বছর।ও বিয়ে করেছে সে খবর আমরা পাই ওর বিয়ের দুই বছর পর ।(ভাবী নীড়ের হাত মুঠো করে ধরে।)আমার ভাইকে বিয়ে করেনে আমি আমার বেবি তোকে দিয়ে দিব।তোর ভাইয়া তোকে দিলে কিছু বলবে না মেনে নিবে।কিন্তু অন্য কাউকে সে দিবে না।প্লিজ নীড় একটু ভেবে দেখ।(নীড় বাকরুদ্ধ হয়ে বসে রইলো।ভাবি কিছুক্ষন চুপ চাপ বসে থেকে উঠে চলে গেল)
অর্ক নীড়কে সকালে মন খারাপ করে রেখে গেছে তাই এখন এসেছে।ভাবীকে দেখে সে ভেতরে আসে না পাশে থেকে কথা শুনে।স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।দীর্ঘ নিঃস্বাস ছাড়ে ঠিক তখন নীড় ধুপ করে অর্কে জড়িয়ে ধরে অর্ক দুই পা পিছনে চলে যায়।হিঁচকি পেরে কান্না করে নীড়।
নীড়; আমাকে নিয়ে চলো তোমার সাথে আমাকে নিয়ে চলো ।
ভাইয়া;নীড় দরজা খোল
নীড় অর্ককে ছেড়ে দেয়।নীড় চোখ মুছে দরজা খোলে ।
ভাইয়া;আবার কান্না করিস।ইসস তোর চোখের পানি শেষ হয় না।চল পায়ের আর হাতের প্লাস্টার খুলে দেই।
ভাইয়া কত কথা বলে ।নীড়ের সেই দিকে কোন হুদীস নেই।ভাইয়া যাবার পর বারান্দায় যায় অর্ক ততক্ষণে চলে গেছে।
দুই দিন পর ভাবীর ডেলিভারি হয় ।মেয়ে বাবু হয়।রনির সাথে অর্ক আসে। এ দুই দিন অর্ক আসেনি।।নীড় কোলে নিতে চাইছে সাহস পায়নি।ভাইয়া ভাবীর জন্য কিছু মেডিসিন আনতে যায়।রনি হয়তো সিগারেট টানতে বাইরে যায়।ভাবী ঘুম ।নীড় বাবুর হাত নিয়ে চুম খাচ্ছে আদর করছে।অর্ক দেখছে।কিছু ভেবে দীর্ঘ নিঃস্বাস ছেড়ে নীড়ের কাছে যায়।কোলে নেও না কেনো?
:::ডান হাতে এখনো মোটা মুটি ব্যথা তাই সাহস পাচ্ছি না । অর্ক নিজে কোলে নিয়ে নীড়কে বলে ;নেও কোলে
;;;আমি পারবো না
অর্ক; ডান হাত আমার থাকুক বাহাত তোমার হোক ।নীড় অর্ক মিলে কোলে নেয়।নীড়ের চোখ ছল ছল করছে।দুই ফোটা পানি গড়িয়ে পরে।অর্ক বাহাত দিয়ে মুছে দেয়।
প্রায় পনের দিন অর্ক নীড়ের কোন যোগাযোগ হয়নি।আজ বাবুকে দেখতে ইতালিতে থাকা কিছু আত্মীয়দের আসার কথা।নীড়ের বড় বোন ,জামাই ,মেয়ে,ভাবীর ফুফু,ফুপা,ভাই,ভাবি, রনির কিছু বন্ধু,হাসানের কিছু বন্ধু, অর্ককে ও আসতে বলে রনি।অর্ক রনির সাথে খুব মেলা মেসা করে।সবাই শাড়ি পরবে নীড়কে ভাবি সবুজ একটা কাতান দেয়।নীড় যখন লিষ্টে অর্ক নাম দেখে শাড়ি পরতে রাজি হয়ে যায়।রাতে বাবুকে ভাবির সাথে দেখা শুনা করে।সকালে নাস্তা রেডি করো সবাই আসবে মূলত ছোট একটা গেটটুগেদার অনেক কাজ।আবার ভাবীকে এটা সেটা খাওয়ানো।অনেক ব্যস্থ ছিল।সকালে নাস্তা করে কাজে লেগেছে দুপুরে খায়নি সময় হয়নি আবার পেট ব্যথা ছিল তাই আর খেতে ইচ্ছে করেনি কেও জোড় দেয়নি।এ কয়দিন সে মোটেও ভালো ছিল না ঠিকমতো খায়নি।অর্ক আসে না ভেবেছে চলে গেল কি না।আর দেখা হবে কি না ?সন্ধ্যার পর সবাই আসে ছাদে গেট টুগেদার হয়।সবাই আসে নীড় সবার পরে ছাদে যায় ।ভাবি ছাদে যায়নি বাবুর ঠান্ডা লাগবে বলে।সবাই দেখে ছাদে উপরে চলে গেছে।এতো মানুষ বাসায় জায়গা দেওয়া যায় না।নীড় শাড়ি পরে উপরে যায়।অর্ক দেখে মুচকি হাঁসে।কিন্তু নীড় শীতে আর পেট ব্যথায় ওই যায়গায় টিকতে পারলো না।অর্ক কে দেখার লোভ সেও হার মানলো শীত আর ব্যথার মাঝে।ভাবি তার আগে বাবুকে শুয়ে দিয়ে উপরে যায়।আর নীড়কে বলে নীচে গিয়ে দেখতে।
।নীড় নিচে নামতে নামতে সিঁড়িতে বসে পরে ।
অর্ক;কে বলছে শাড়ি পরতে আর যখন পেরেছো শীতের প্রতিরোধের জন্য কিছু পরা দরকার ছিল।
নীড় ফেল ফেল করে তাকিয়ে আছে।কত দিন পর দেখছে।
অর্ক;শরিল ভালো না তোমার
নীড় কোন কথা বলে না খালি তাকিয়ে আছে।
অর্ক;কি হলো
;পেট ব্যথা
;;;কেনো
;সকালে খেয়েছি আর খায়নি ।আমার আলসার ছিল ।সে থেকে ঠিক মতো না খেলে পেট ব্যথা করে।
অর্ক;কোন কথা না বলে কোলে তুলে নেয়।নীড় অর্ক বুকে মাথা হেলান দেয়।
অর্ক;কেও দেখলে
;তুমি আমাকে কোলে নিতে দ্বিধাবোধ করো না ।আমি কেনো মাথা ঠেকাতে কে দেখলো না দেখলো সে চিন্তা করবো?
চলবে,,,

#অধিকার_নেই গল্পের সব পার্ট ⇩

অধিকার নেই পার্ট:01
https://wonderfulstoryandletter.blogspot.com/2020/07/01.html
অধিকার নেই পার্ট:02
https://wonderfulstoryandletter.blogspot.com/2020/07/02.html
অধিকার নেই পার্ট,03
https://wonderfulstoryandletter.blogspot.com/2020/07/03.html
অধিকার নেই পার্ট,04
https://wonderfulstoryandletter.blogspot.com/2020/07/04.html
অধিকার নেই পার্ট,05
https://wonderfulstoryandletter.blogspot.com/2020/07/05.html
অধিকার নেই পার্ট,06
https://wonderfulstoryandletter.blogspot.com/2020/07/06.html
অধিকার নেই পার্ট,07(সমাপ্তি)
https://wonderfulstoryandletter.blogspot.com/2020/07/07.html
Reactions

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ