#_পারফেক্ট_গার্লফেন্ড_
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
-- এই যে, শুনেন (আমি)
-- জ্বী, কিছু বলবেন (নিহা)
-- আপনি আমার সাথে থানায় চলেন (আমি)
-- মানে? মাথা ঠিক আছে তো? (নিহা)
-- আজকে কি ৩৫ তারিখ? এটা কি ৩০১৮ সাল? আপনি কি মেয়ে? আপনি কি বাঙ্গালী?
এমন পাগলের মতো কিছু তো বলিনি,, তাহলে মাথা খারাপ হওয়ার কি আছে?
নিহা কিছুক্ষণ শুকনো কাঠের মতো দাড়িয়ে রইল।
-- এভাবে দাড়িয়ে থাকলে তো আমার হারানো জিনিস ফেরত পাবো না (আমি)
-- হারানো জিনিস ! আমাকে চোর ভাবছেন না তো? (নিহা)
-- একদম ঠিক ধরেছেন। আপনি চোর। (আমি)
-- হোয়াট ননসেন্স একটা মেয়ের সাথে এভাবে ব্যবহার করছেন,, আপনার লজ্জা করে না? (নিহা)
-- ওকে,, আর এরকম ব্যবহার করব না। কিন্তু আপনি আর এই রাস্তা দিয়ে আসা-যাওয়া করবেন না। পরবর্তীতে যদি আবার এই রাস্তায় দেখি তাহলে আমার হারানো জিনিসটা ফেরত দিতে হবে,, না হলে পুলিশ ডাকতে বাধ্য হবো। (আমি)
-- আচ্ছা, আপনার এমন কি মূল্যবান জিনিসটা হারিয়ে গেছে শুনি? (নিহা)
-- সেটা আবার এই রাস্তায় যখন আসবেন তখন পুলিশ আর পুরো এলাকার মানুষের সামনে বলব। (আমি)
-- কিছু কিছু ছেলেরা যে পুরো ম্যান্টেলে আপনি হচ্ছেন তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। (নিহা)
তারপর সে রাগ দেখিয়ে চলে গেছে।
পিছন থেকে দুই-তিন বন্ধু কাঁধে হাত দিয়ে বললঃ-
আজকে কিন্তু সেই রকম দিছিস। এখন দেখিস নিহার মাথায় প্রশ্নের জ্যাম লেগে যাবে। শুধু ভাববে আর ভাববে। তার দোষটা কোথায়।
আরেক বন্ধু হাতে টানতে টানতে হোটেলের ভিতর নিয়ে গেল...
-- দোস্ত আজকে তুই খাওয়াবি,, আর কোন কথা বলবি না। দেখ গরম সিঙ্গারা,, তাড়াতাড়ি অডার দে। ইদানিং তোর সময় খুব ভালো যাচ্ছে। ট্টিট তো পাওয়ারই কথা তাই না?
আমি কিছু বলার সুযোগ পেলাম না,, বাধ্য হয়েই সিঙ্গারা অডার করলাম।
-- জামাই, সিঙ্গারা দাও তো?
কিছুক্ষনের মধ্যেই জামাই সিঙ্গারা নিয়ে হাজির,, গরম সিঙ্গারা উপর দিয়ে ধোয়া উঠছে।
দোকানের মালিককে সবাই জামাই বলে ডাকি,, উনি এখন জামাই ডাক শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।
জামাই সামনে সিঙ্গারা দিয়ে বললঃ--
-- আমি বোঝিনা তোমরা এই ম্যাইয়ার লগে এমন ব্যবহার কেরে কর,,
-- আরে বলো কি? তুমি কি আমাদের দিকে তাকিয়ে থাক নাকি? (আমি)
-- উহু,, যেই সিনেমা কর,, না দেইখ্যা কেমন থাহি কও? তাও দুই-তিন মাস ধইরা দেখতাছি।
-- আরে তুমি দেখলে সমস্যা নাই,, তবে অন্য কাউকে এই সিনেমার কাহিনী বলো না কিন্তু,,, বিপদ ঘটবে।
খাওয়া শেষে আমি বাসার দিকে রওনা হলাম.......
নিহা ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। দেখতে একদমই আমার মতো খারাপ না। ওর কালো চুলগুলো অনেক লম্বা,, সব সময় খোলা অবস্থায় রাখে। মায়া ভরা ছোট ছোট চোখ দু'টো -তে প্রায়ই কাজল দেওয়া থাকে।
ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অনেক বার রাস্তার খাম্বার মধ্যে ধাক্কা খেয়েছি,, অনেক বার মানুষের সাথে ধাক্কা খেয়েছি।
আর আমি লেখা-পড়া শেষে চাকরির জন্য চেষ্টা করছি,, হাত খরচ চালানোর জন্য নিহাদের পাশের বাসায় টিউশনি করছি। বাবার কাছে আর কত হাত পাতবো।
নিহা সাথে পরিচয়টা টিউশনি দিয়েই। প্রতিদিন যখন টিউশনির জন্য পাশের বাসায় যেতাম,, প্রায়ই উপরের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। কারন, বিকেল বেলা ছাদে নিহা দাড়িয়ে থাকত।
বাসায় যেতেই মা বললঃ--
-- কিরে, টিউশনিতে যাবি না?
-- নাহ্.. আজ যাব না,, ভালো লাগছে না। এখন ঘুমাবো।
-- এখন ! এই সন্ধ্যা বেলা?
-- হুম,,
আমি রুমে চলে গেলাম।
মায়ের সাথে মিথ্যা বলে চলে আসলাম। আসলে আজ যদি টিউশনিতে যায় আর নিহা আমাকে দেখতে পায় তাহলে ১২টা বাজিয়ে দেবে।
একটার পর একটা প্রশ্ন করেই যাবে আর টিউশনির সময় শেষ হয়ে যাবে,, তার চেয়ে ভালো হবে যদি না যাই।
রুমে এসে ফ্যানটা চালু করে ধপাস করে বিছানার উপর শুয়ে পড়লাম। কিন্তু ঘুম আর আসছে না।
মাথার মধ্যে একটাই চিন্তা হচ্ছেঃ--
যদি নিহা আর এই রাস্তা দিয়ে আসা-যাওয়া না করে? আর ওকে এভাবে বলা মনে হয় একদম ঠিক হয়নি।
এরপর থেকে দুই-তিন কেটে গেল,, রোজ দিনের মতোই আমি রাস্তার ঐ জায়গাটায় অপেক্ষা করতে লাগলাম কিন্তু নিহা আর আসছে না।
খোজ নিয়ে দেখলাম নিহা কলেজেও তিন দিন যাবৎ আসেনি।
কবে চতুর্থ দিন একটু দেরি করেই বাসায় ফিরছিল। নিহাকে দেখেই আমার মনে একটা শান্তির বাতাস বইতে লাগল।
আমি তাড়াহুড়ো করে নিহার সামনে গিয়ে দাড়ালাম।
-- একবার নয়,, দুই বার নয়,, বার বার একই জিনিস চুরি হচ্ছে। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। চলেন থানায় যেতেই হবে। (আমি)
-- দেখুন,, সব সময় কিন্তু ফাইজলামি ভালো লাগে না। আমি কি চুরি করছি হুম? (নিহা)
-- আপনি যাবেন নাকি পুলিশ এখানে ডাকব? (আমি)
-- আচ্ছা, আমি কি করলাম বলবেন তো? (নরম সুরে নিহা বলল)
-- ফোন, টাকা, গাড়ি, গয়না যদি চুরি হয়ে যায় তাহলে পুলিশ ডাকা হয়,, আর আপনি আমার এত্তো বড় একটা মন চুরি করছে আমি পুলিশ ডাকব না? এটা কি বড় ধরনের অপরাধ নয়?
আপনি আমার আকাশের মতো বড় একটা মন চুরি করছেন,, শাস্তি আপনাকে পেতেই হবে। চলেন পুলিশ স্ট্যাশনে....।।
-- কিহহ ! আমি আপনার মন চুরি করছি? (নিহা)
-- হুম,, আমার মন চুরি করছেন,, তাও আবার আমার অনুমতি না নিয়ে। (আমি)
-- চলেন আমার সাথে (নিহা)
-- আপনার সাথে আমি যাব কেন? আপনি আমার সাথে চলেন। (আমি)
-- আপনাকে পাবনা নিয়ে যাব। (নিহা)
-- কেন? আমি তো পাগল না। (আমি)
-- হুম, জানি আপনি পাগল না,,, তবে মানসিক রোগী। আর মানসিক রোগী নিজেকে কখনো পাগল বলে না। (নিহা)
-- এতো কষ্ট করার কোন দরকার নাই,, আপনি শুধু আমার মনটা ফেরত দিয়ে দেন,, না হলে আপনার মনটা দিয়ে দেন। কথা দিচ্ছি আপনার মনটা দিলে গুছিয়ে রাখব,,, অন্য কারো হাতে দেব না। (আমি)
-- আপনি কি টুকাই নাকি? আসছে মন মন নিতে,,, আচ্ছা,, আপনার কি কোন কাজ নাই? শুধু কি টিউশনিই করেন?
আমি টিউশনি করি,, তা নিহা জানল কি করে? আমি সব সময় ওর দিকে তাকিয়ে থাকতাম,, কিন্তু কোন দিন তো দেখিনি ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ( ভাবতে লাগলাম)
-- দেখতে তো ভালো আর ভদ্র মনে হচ্ছে,, এতো কথা আসে কোথা থেকে? চেহেরায়ও মাস্টার মাস্টার ভাব আছে,, তবে এই মেয়ে পাটানো কখন থেকে শুরু করছেন? (নিহা)
ওর কোন কথা আমার মাথায় ডুকছে না,, শুধু একটা কথা মাথায় দৌড়াদৌড়ি করছে,,
নিহা আমার সম্পর্কে এতো কি জানল কি করে?
ও লুকিয়ে লুকিয়ে আমার খোঁজ নেয় না তো?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
-- কি হলো কিছু বলছেন না যে? এভাবে হা করে দাড়িয়ে আছেন কেন? (নিহা)
-- ও হ্যাঁ, আমি কোন মেয়ে পটাই না। এসবে কোন ইন্টারেস্ট নাই। (আমি)
-- তাহলে প্রতিদিন আমার সাথে এই কাজগুলো করেন কেন? এখনও সময় আছে ভালো হয়ে যান,, না হয় আপনার বাড়িতে নালিশ পাঠাবো। (নিহা)
-- ওওও.... আপনি কি আমাকে হুমকি দিচ্ছেন নাকি? আমি এসবে একদম ভয় পায় না। (আমি)
-- রাস্তায় মেয়েদের সাথে এমন করলে কপালে বউ জুটবে না,, বিয়ে তো দূরের কথা। মাস্টার মানুষ মাস্টারের মতো থাকেন,, বখাটে বখাটে ভাব নিয়েন না। (নিহা)
-- তুমি থাকতে আর বউয়ের কি দরকার? (মাথা নিচু করে আস্তে আস্তে বললাম)
-- কিছু বললেন নাকি? শুনি নাই আবার বলেন। (নিহা)
-- বলতে হবে না,, আপনি আসতে পারেন,, (আমি)
তারপর নিহা চলে গেল।
ওর কথা শুনে আমার মাথা ধরে গেছে। অতিরিক্ত কথা বলে,, মেয়ে একটা।
সত্যিই সুন্দরী মেয়েদের কথা বিষের মতো লাগে।
যেমন রুপ তেমন মুখের পাওয়ার।
বিকেল প্রায় চারটা,, টিউশনির জন্য রওনা হলাম। উদ্দেশ্য আবীরদের বাসা।
আবীর ক্লাস সিক্সে পড়ে,, আমার ছাত্র।
নিহাদের বাসার নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় দু-একবার উপরের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। কিন্তু আজ কোন দেখা পায়নি। প্রতিদিন ছাদে থাকবে এমন কোন কথা না তবে প্রায়ই দেখতাম।
বাসায় কলিং বেল চাপতেই আবীরের দরজা খুলে সালাম দিলেন।
-- স্যার, আপনি কাল আসেননি কেন? আপনার জন্য আমি কতোক্ষণ বসে ছিলাম। খেলতেও যেতে পারি নাই। আপনি একটা ফোন দিয়েও বলেনি যে, আসবেন না। (আবীর)
-- আমার ফোনের কথা একদম মনে ছিল না,, সরি।
-- আচ্ছা,আজকে তুমি এই পাঁচটা অংক তিন বার করে সমাধান করবা। (আমি)
-- বাপরে,, তার মানে পনের বার? (আবীর)
-- হুম, কোন কথা নয়। চুপচাপ করতে থাক।
আবীর মাত্র দুই বার করে শেষ করল,, তার মধ্যেই হঠাৎ করে পিছন থেকে একটা মেয়ে এসে বললঃ--
-- এই আবীর এদিকে আয়? তোর সাথে একটা কথা।
আমি ঘাড় ফিরিয়ে পেছনে তাকালাম, ছোট্ট একটা মেয়ে,, বয়স এগারো অথবা বার বছর হবে।
আমি বললামঃ--
-- এখন কোথাও যাওয়া যাবে না,, আগে লেখা শেষ হোক তারপর,, তুমি এখন যাও।
আমার কথা শুনে মেয়েটি আমার দিকে কপাল সংকুচিত করে তাকাল। চোখ দুটোতে স্পষ্ট রাগের ছাপ বোঝা যাচ্ছে।
-- আবীর আয় বলছি। জরুরি কথা বলার আছে। (মেয়ে)
তারপর আবীর কিছুটা জোর দেখিয়ে উঠে গেল।
প্রায় পাঁচ মিনিট পর ফিরে আসল,, পেছন পেছন মেয়েটে আসছে।
-- এখন তো কথা শেষ হয়েছে এবার তুমি যাও, আবীর পড়া শেষ হলে আসবে। (মেয়েটাকে বললাম)
-- স্যার ওর নাম জয়া। আপনাকে নিতে এসেছে। আমাদের পাশের বাসায় থাকে। আমার সাথেই পড়ে। (আবীর)
-- আমাকে নিতে এসেছে মানে? (আমি)
-- জয়া অংকে দুর্ভল। আপনার কাছে পড়তে চায়। (আবীর)
-- জ্বী, স্যার আমার প্রাইভেটটা খুব দরকার,, প্লিজ না বলবেন না। (জয়া)
কিছুক্ষণ চিন্তা করে দেখলাম,, আমার টাকার দরকার আছে। তাছাড়া এখন তো ফ্রী আছি। চাকরী হলে না হয় ছেড়ে দেব।
-- ঠিক আছে, কিন্তু কবে থেকে শুরু করবা? (আমি)
-- আপনি চাইলে কাল থেকেই শুরু করতে পারেন।
-- আচ্ছা, ঠিক আছে।
-- তাহলে আমি বসি,, পড়ানো শেষ হলে আমার বাসায় নিয়ে যা। আজকে বাসা চিনে যাবেন। (জয়া)
এক ঘন্টা পড়ানোর পর আবীর পড়ানো শেষ হলো। এখন জয়াদের বাসাটা দেখে বাড়িতে যাব। কাল থেকে আবার জয়াকে পড়ানো শুরু করব।
জয়া আমাকে নিয়ে আবীরদের বাসা থেকে বের হলো। পথের মধ্যে কথা বলতে বলতে হাঁটছি। কয়েকটা বাড়ি পাড় হওয়ার পর সে দু'তলা বাড়ির ভেতর ঢুকছে।
আমি হঠাৎ দাড়িয়ে গেলাম।
কোথায় যাচ্ছি? এটা তো নিহাদের বাসা। আমি এই বাড়িতে যাচ্ছি কেন?
-- জয়া, এইটা তোমাদের বাসা? (আমি)
জয়া মাথা নেড়ে স্পষ্ট করে দিল,, হ্যাঁ এটাই তার বাসা।
আমি ভাবছি এবার কপালে অন্যরকম কিছু একটা আছে,, না পারছি বাড়ির ভেতরে ঢুকতে না পারছি ফিরে যেতে।
আমি ভাবছিঃ--
-- এটা নিহার কোন প্ল্যান নয়তো? হয়তো সব কিছুর পেছনে নিহা দায়ী। নাকি প্রেমের সবুজ সংকেত।
এসব কথা চিন্তা করে ইতিমধ্যে আমার ভেতরে খুশির ঝড় বইছে।
-- ওহ, এবার তাহলে সফল হলাম।
-- কি হলো স্যার? দাড়িয়ে আছেন কেন? ভেতরে আসুন। (জয়া)
রুমের ভেতর পা রাখতেই চমকে উঠলাম। সামনের চেয়ারেই নিহা বসে আমার দিকে ঢ্যাপ ঢ্যাপ করে তাকিয়ে আছে। চোখে যেন রাগের গুদাম।
আমার দিকে বড় বড় চোখ দিয়ে তাকিয়ে আছে। যেন চোখ দিয়ে গুলি করছে।
-- তাহলেই আমি যা ভেবেছিলাম,, আপনিই আবীরের টিচার? (নিহা)
-- জ্বী, আমিই (করুন সুরে)
কিছুক্ষণের মধ্য নিহার বাবা এসে বললঃ--
-- এই হচ্ছে আমার দুই মেয়ে নিহা আর জয়া। জয়ার পড়ার ব্যাপারে নিহাই সব জানে,, আপনি ওর সাথে কথা বলে নিন। (এই কথা বলে উনি চলে গেলেন)
-- তো ডিয়ার স্যার,, আপনার রুলস্ হচ্ছে,, প্রতিদিন জয়াকে সমান এক ঘন্টা পড়াবেন। ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। আর টাকার কোন চিন্তা করবেন না,, মাস শেষে তিন হাজার পেয়ে যাবেন। যদি কোন রকম উল্টা-পাল্টা কাজ দেখি তাহলে টিচার সোজা করার অস্ত্র কিন্তু আমার কাছে আছেই। (নিহা)
লজ্জায় আমার মুখ লাল হয়ে গেছে। যে মেয়ের পেছন পেছন ঘুরতাম আজ তার বাসায় টিউশনি করতে হবে।
-- হে আল্লাহ্ এই আমি কোন বিপদে পড়লাম। ভেবে ছিলাম প্রেমের রাস্তা পরিষ্কার হয়ছে,, এখন দেখি মহা বিপদ। (মনে মনে বললাম)
পরের দিন থেকে ঐ বাড়িতে আমার আসা-যাওয়া শুরু হলো। বিকেল বেলা আবীরকে পড়ানোর পর নিহাদের বাসায় যেতাম। আমি জয়াকে পড়ানোর সময় নিহা পেশর সোফায় বসে থাকত। কিছুটা অদ্ভুদ লাগত। সব কিছু ঠিক-ঠাক চলছিল। এভাবে তিন মাস পড়ানো হয়েছে। কেউ আমার কাজের কোন ভুল ধরতে পারেনি।
তবে হঠাৎ করে প্রায় পাঁচ দিন কাউকে পড়াতে গেলাম না,, আবীর আর জয়া কারো বাসায় গেলাম।
৬ষ্ঠ দিনের মাথায় যখন জয়াকে পড়াতে গেলাম তখন শুরু হলো নিহার চেচিয়ে চেচিয়ে কথা বলা।
-- এতো দিন কোথায় ছিলেন? আসেননি কেন? টাকা তো এমনি এমনি দেয় না। ( নিহার কথায় আমার কথা বলার কোন সুযোগই পাচ্ছি না)
ওর চেচামেচি শুনে পাশের রুম থেকে নিহার বাবা উঠে আসলেন।
-- কি হলো,, এতো চেচাচ্ছিস কেন? (নিহার বাবা)
নিহা চুপ হয়ে গেল। টিচারের সাথে এভাবে কেউ ব্যবহার করে?
-- আঙ্কেল গত পাঁচ দিন আমি একটা সমস্যার কারনে আসতে পারিনি। আপনাদের ফোন নাম্বার ছিল না তাই বলতেও পারিনি। দঃখিত
-- তো বাবা কি সমস্যা বলা যাবে? (নিহার বাবা)
-- ইদানিং আমায় সময় খুব খারাপ যাচ্ছে।
কিছু দিন আগে বাবা হঠাৎ স্ট্রোক করে আর এখন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। বয়স হয়েছে কখন যে কি সমস্যা হয় বোঝে উঠতে পারি না। ডাক্তার বলছে অপরেশন করাতে হবে। আরো প্রায় পঞ্চাশ হাজারো টাকা জোগাড় করতে হবে,, সে জন্যই আসতে পারিনি। তবে মাসের শেষে পাঁচ দিন বাড়িয়ে পড়াবো।
আমার কথা শুনে নিহা একদম চুপ হয়ে আছে।
-- আরে তেমন কোন ব্যাপার না,, তোমার যতদিন ইচ্ছা ছুটি নিতে পারো,, আগে তোমার বাবা সুস্থ হোক। (এই বলে নিহার বাবা চলে গেলেন)
অবশেষে জয়াকে পড়ানো শেষে বাড়ি ফিরব ঠিক সেই মুহূর্তে নিহা আমার সামনে এসে বললঃ--
-- আমাকে ক্ষমা করবেন,, আসলে আমি আমি বোঝতে পারিনি। (নিহা)
-- নাহ,,, সমস্যা নেই। আজ আসি।
নিহার আমার সামনে কাগজে মুড়ানো একটা প্যাকেট দিয়ে বলেঃ--
এতো সমান পঞ্চাশ হাজার আছে,, বাবা বলছে আপনাকে দেওয়ার জন্য।
-- আমার এখনো আপাতত দরকার নেই,, এক বন্ধুর কাছে ধার চেয়েছি,, ও বলছে গিয়ে আনার জন্য।
-- ক্লাস সিক্সের মেয়ের জন্য কি টিচার লাগে? আমিই তো পড়াতে পারি,, আপনি কি সেটা বোঝেননি? (নিহা)
এখন টাকা ধরেন,, বাবা বলছে নেওয়ার জন্য।
-- বললাম তো এখন আপাতত দরকার নেই।
আমি আসছি।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
-- হুম ঠিকই তো,, ক্লাস সিক্সের বাচ্চাদের তো প্রাইভেট পড়তে হয় না,, আপনিই তো পড়াতে পারেন। (আমি)
-- হুম,, সেটা তো আপনার বোঝা উচিৎ।
-- আচ্ছা, আমি আসছি।
-- টাকা তো নিয়ে যান।
বার বার নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছে। আমি ভাবছি এতো টাকা আমি পরে পরিশোধ করব কি করে? হাতে তো চাকরিও নেই।
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে নিহার বাবা রুম থেকে বেরিয়ে আসলেন। টাকাগুলো এখনো নিহার হাতেই ঝুলছে।
-- কি ব্যাপার এখনো টাকা নাও নি?
-- না আঙ্কেল,, আমি ভাবছি....
-- কোন কিছু ভাবার দরকার নেই। পরিশোধ করার জন্য আবার টেনশন করো না,, তোমার যখন ইচ্ছা তুমি দিও,, এখন তোমার বাবা অসুস্থ। এতো কিছু চিন্তা করার সময় নেই।
অতঃপর টাকাগুলো হাতে নিলাম...
-- আর হ্যাঁ, নিহার ফোন নাম্বারটা নিয়ে যাও,, যেদিন আসবে পারবে না ঐ দিন ফোনে বলে দিও। আমি তো সব সময় বাসায় থাকি না,, ওর মাও নানা রকম ব্যাস্ত থাকে।
আমি নাম্বারটা চাওয়ার আগেই নিহা মুচকি হাসি দিয়ে আমার ফোনে নাম্বার তুলে দিল।
যেন আমার চেয়ে তার বেশি তাড়াহুড়ো। নিহার বাবা এতোক্ষনে চলে গেছেন। নিহা নিজ হাতেই একটা মিসড কল দিয়ে কনফার্ম করে নিল।
-- এবার তাহলে আসি,, (একটু হেসে বাসা থেকে বেরিয়ে আসলাম)
-- সাবধানে যাবেন।
নিহার কথা শুনে কিছুটা অবাক হয়ে দাড়ালাম,, আগে কখনো বলেনি।
আবার সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে লাগলাম।
-- এই যে স্যার,, নাম্বারটা কিন্তু সেইভ করে নিয়েন। (আমি হাসতে হাসতে নিচে নেমে আসলাম)
রাস্তায় বের হতেই দেখি এক রিক্সাওয়ালা বাজে ভাবে এক্সিডেন্ট করে,, হাটুর থেকে মাংস খসে পড়ে। কয়েকজন ধারা-ধরি করে গাড়িতে তুলল।
আমি বার বার হাতে থাকা টাকার দিকে তাকাচ্ছি। এক পর্যায়ে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে দিলাম। তিনিও কারো না কারোর বাবা।
বাসায় আসার পর কিছু ভালো লাগছে,, কারন, এখন বাবার সব টাকা জোগাড় হয়ে গেছে।
রাতের বেলা হাতে ফোনটা নিয়ে ফেসবুক চালাচ্ছি। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠে। অপরিচিত নাম্বার। রিসিব করলামঃ--
-- আসসালামু আলাইকুম।
-- (কোন কথা বলছে না)
-- হ্যালো....
অতঃপর ফোনটা কেটে যায়।
কিছুক্ষণ পর আবার একই নাম্বারে ফোন আসল। বার বার ফোন আসায় নেট কানেকশন কেটে যাচ্ছে।
-- হ্যালো কে বলছেন? কোন কথা বলেন না কেন? বার বার ডিস্টার্ভ করেন। (কিছুটা রেগে গিয়ে)
-- জ্বী আমি।
-- কে আপনি?
-- নিহা।
-- ওহ,, সরি সরি। আমি আসলে খেয়াল করিনি।
-- ঠিক আছে সমস্যা নেই। কি করছেন?
-- তেমন কিছু না,, ফেসবুক চালাচ্ছি।
কিছু বলবেন?
-- নাহ, এমনিতেই ফোন দিয়েছিলাম।
-- আচ্ছা, তাহলে রাখছি।
এই বলে ফোন কেটে দিলাম।
নিহা ভাবছে যে ছেলেটা রাস্তায় ওর সাথে এত্তো কিছু করল আজ আমার নাম্বার পেয়েও বেশি কিছু বলেনি।
-- এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে বদলে গেল?
ফোন রাখার পাঁচ মিনিটের মধ্যে একটা ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এলো। প্রফাইলে কোন ছবি ছিল না শুধু একটা কার্টুনের ছবি দেওয়া।
কিন্তু আইডির ভেতরে ঢুকতেই দেখি নিহার বোনের ছবি আর পুরো পরিবারের ছবিও আছে। আমার আইডিটা ফোন নাম্বার দিয়ে খোলা তাই হয়ত সহজেই খুজে পেয়েছে।
এক্সেপ্ট করার সাথে সাথেই মেসেজ আসলঃ--
-- এইটা আমার আইডি।
-- আর আপনি নিহা,, তাই তো?
-- একদম তাই।
এভাবে অনেক্ষণ কথা হলো,,
সকাল হতেই আমি প্রথমে হাসপাতালে গেলাম,, বাড়িতে পাঁচ হাজার টাকা নিলাম বন্ধুর কাছে থেকে।
বাবার সব টাকা পরিশোধ করে বসে রইলাম।
আজ অপরেশন করানো হবে। মা,, ছোট বোন আরো কয়েকজন আত্নীয় কান্না-কাটি করছে।
আজ টিউশনিতে যেতে পারব না,, আমি আমি গতকাল রাতে নিহাকে মেসেজ দিয়ে বলে দিয়েছি।
বেলা গড়াতেই বাবার অপরেশন সফল ভাবে শেষ হলো। সবাই খুশি। আর কোন চিন্তা নেই।
তবে আমার চিন্তা আরেকটু বেড়ে গেল। এবার সত্যি সত্যিই একটা চাকরি খুজতে হবে,,বাবার ঔষধ পত্রের খরচও বেড়ে যাবে,, আমি চায় যেন আমার টাকায় সংসার চলে। বড় হয়েছি নিজের বিবেকই বলে দেয়।
পরদিন আবীরকে পড়ানোর পর জয়াদের বাসায় গিয়ে কলিং বেল চাপার সাথে সাথে নিহা দরজা খুলল।
বিশ সেকেন্ডের বেশি সময় নেয়নি।
আমি অবাক হয়ে গেলাম,, এতো তাড়াতাড়ি আমিও কোন দিন দরজা খুলিনি।
তার মানে একটায় নিহা আমার জন্য অপেক্ষা করছিল।
জয়াকে আজ বেশিক্ষণ পড়াতে পারব না। কারন, আজ বাবাকে বাড়ি নিয়ে আসব। তাই তাড়াহুড়ো করে পড়ানো শেষ করলাম।
নিহার বাবা রুমে থেকে এস বললেনঃ--
-- তা বাবা, তোমার বাবা এখন কেমন আছে?
-- জ্বী আঙ্কেল এখন অনেকটা সুস্থ। আজকেই নিয়ে আসব।
-- তাই ভালো। তবে খেয়াল রেখ যেন আবার অসুস্থ না হয়ে পড়ে।
পাশেই নিহা দরজার মধ্যে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। আমার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,, কেমন রোমান্টিক মায়া ভরা চোখে।
আমি একবার তাকানোর পর আর ফিরে তাকায়নি।
আজকের মতো আসি বলে উঠে দাড়ালাম। ইতিমধ্যে জয়া আর তার বাবা এখান থেকে চলে গেছেন।
রুম থেকে বের হওয়ার জন্য পা রাখতেই নিহা পথ আটকে দিল।
আমার সামনে হাত বাড়িয়ে দিল,, হাতে কতগুলো পাঁচ শত টাকার নোট।
-- এগুলো কেন? কিসের টাকা? (আমি)
-- কাল যে পাঁচ হাজার টাকা কম নিয়ে বাসায় গেলেন সেই পাঁচ হাজার এখনে। তবে এগুলো বাবার দেওয়া না,, আমার জমানো টাকা। (নিহা)
-- লাগবে না,, জোগাড় হয়ে গেছে।
-- এবার কিন্তু আমি চেচাবো। নিন বলছি। (নিহা)
-- কিন্তু আমি পাঁচ হাজার দিয়েছি আপনি জানলেন কি করে?
-- যাকে দিয়েছেন সে আমাদের পাড়ায় ই থাকে। খোঁজ নিয়ে জেনেছি।
-- কিন্তু কেন?
-- সেটা আমার ইচ্ছা। ধরবেন কিনা বলেন? আর হ্যাঁ এই টাকা আপনি ফেরত না দিলে খুশি হবো। কেন ফেরত নেব না সেটা আর জিজ্ঞেস করবেন না কিন্তু। ধরেন।
-- তবে,,, আমি....
-- কোন কথা বলবেন না।
অতঃপর টাকা হাতে নিলাম।
-- আচ্ছা, এবার তাহলে আসি।
আবার বাহিরে পা বাড়াতেই নিহা শার্টের কলারে টান দিয়ে কাছে নিয়ে আসল।
-- এই যে,,, মি. হঠাৎ এতো পাল্টে গেলেন যে। ফোন দিলে বেশি কথা বলেন না ব্যাপার কি? অন্য কোন মেয়ে পেছেন নাকি? ফেসবুকে দেখলাম মেয়ে পটানোর অনেক স্ট্যাটাসও দিয়েছেন। (নিহা)
-- আরে কি করছেন এইসব। ছাড়েন ছাড়েন,, এক্ষুনি কেউ চলে আসবে। (আমি)
আমি জোড় করে শার্টের কলার ছাড়িয়ে নিলাম,, একটু তাড়াতাড়ি সিড়ি বেয়ে নামছি।
-- যতই লাফালাফি করেন না কেন কোন কাজ হবে না। রিলেশনশীপ স্ট্যাটাসটা কিন্তু আমার সাথেই দিতে হবে। (আমি চলে আসার সময় নিহা চেচিয়ে চেচিয়ে বলছে। আমি স্পষ্ট শুনতে পেয়েছি)
ডিয়ার স্যার কথাটা মনে থাকে যেন।
আমি ভাবছি,,
এতো ভয়ংকর মেয়ে আগে কখনো দেখিনি।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
-- আপু তুই স্যারের গায়ে হাত তুলছিস কেন? (জয়া)
কথাটা শুনে নিহা চমকে গেল। দোখ দু'টো বড় বড় হয়ে গেল।
-- তুই দেখলি কি করে? ( অনেকটা ভয় নিয়ে জয়াকে জিজ্ঞেস করল)
-- আমি রুমে থেকে বের হয়ে রান্না ঘরে যাচ্ছিলাম তখন দেখছি। (জয়া)
-- আর কেউ দেখেনি তো? আর তুই কাউকে বলিসনি তো? (নিহা)
-- না বলিনি,, তবে এখন আম্মুর কাছে সব বলে দেব,, তুই স্যারের গায়ে হাত দিয়ে কথা বলেছিস। স্যারদের গায়ে হাত দেওয়া অপরাধ তুই জানিস না? (জয়া)
নিহা কিছুক্ষণ চুপ হয়ে দাড়িয়ে রইল। কি করে ছোট বোনের মুখ বন্ধ করবে বোঝতে পারছে না। আর যদি একবার আম্মু বা আব্বুর কাছে বলে দেয় তাহলে সর্বনাশ।
-- জয়া,, বোন আমার। তোর না কোন চকলেট সবচেয়ে বেশী পছন্দ? তুই না কোন জামা পড়তে পছন্দ করিস,, আমি কিন্তু জানি। ভাবছি এবার কিনে দেব।
এই কথা শুনে ছোট বোন খুশিতে আত্নহারা হয়ে উঠে,, ইতিমধ্যে কয়েকটা নাচও দিয়ে ফেলে।
-- সত্যিই কি কিনে দিবি? (অবাক হয়ে)
-- হুম, কিনে দিতাম তবে... ভাবছি কি করা যায়। তুই যদি আমার একটা কথা মনে রাখিস তাহলে অবশ্যই কিনে দেব।
-- আমি তোর সব কথা মেনে চলব,, তুই একবার বলে তো দেখ।
-- বেশী কিছু না তবে আমি যে স্যারের গায়ে হাত দিছি তা কাউকে বলতে পারবি না। যদি তুই বলে দিস তাহলে তোরই ক্ষতি,, পরিক্ষায় ফেল করবি। কারন, স্যার লজ্জায় আর তোকে পড়াতে আসবে না। আর যদি না বলিস তাহলে তোর রেজাল্টও ভালো হবে,, আমি চকলেট আর কাপড়ও কিনে দেব।
অনেক চেষ্টার পর নিহা জয়ার মুখ চুপ করাতে সক্ষম হয়েছে।
টিউশনি থেকে বের হওয়ার পর সোজা হাসপাতালে বাবার কাছে চলে গেলাম। সব কিছু শেষ হওয়ার পর ডাক্তার বাবাকে শেষ বারের মতো চেকআপ করে নিলেন। অবশেষে হাতে ছাড় পত্র পেলাম। কোন রকম দেরি না করে বাবাকে বাসায় এলাম।
বাবা পাশে থাকলে অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করে,, এখন যেন মনের জোড় বেড়ে গেল। নিয়মতি ঔষধ খাওয়ানোর জন্য ঔষধের একটা লিস্ট করা দরকার। রাতে বসে বসে লিস্ট লিখছিলাম। আমার ফোনের নেট কানেকশন সব সময় অন থাকে। বিদেশ থেকে অনেক আত্নীয়-স্বজনরা ফোন দেয়।
হঠাৎ ফোনটা টুইং করে বেজে উঠে। লক খুলে হাতে নিয়ে দেখলাম কোন এক অপরিচিত মেয়ে আমার কোন পোষ্টে কমেন্ট করেছে।
কমেন্টটা দেখে রীতিমত ভয় পেয়ে যায়।
চারদিন আগে একটা পোষ্ট করেছিলামঃ--
টর্চ লাইট দিয়ে কত্তো খুজলাম কিন্তু কোন মেয়ের সন্ধান পেলাম না।
তাই আজও নিজের কাপড় নিজেকেই ধুইতে হয়।
অচেনা মেয়েটি কমেন্টে বললঃ--
-- আমাদের কি আর কোন দিন দেখা হবে না? (কমেন্টটা দেখে আমি বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে যায়)
-- কে আপনি? আর কাকে কি বলছেন?
-- এতো দিন তো ভালোই খোঁজ নিয়েছো আজ হঠাৎ চিনতেই পারছো না।
এই কমেন্টগুলোর মধ্যে ঘটল আরেক মাথা গরম করা ঘটনা। ঠিক ঐ সময় নিহাও অনলাইনে চলে আসে। সেও কমেন্টগুলো পড়তে লাগল। আর প্রত্যেকটা কমেন্টে রাগী ইমুজি দিতে লাগল।
-- আপনি হয়তো ভুল কারো পোষ্টে কমেন্ট করছেন,, ভালো করে দেখে নিন।
-- ভুল তো আমার সেদিন হয়েছিল যেদিন তোমার মিথ্যে ভালবাসায় জড়িয়ে ছিলাম। ভালো করে আর কি দেখার আছে? তুমি হয়তো ভুল করতে পার তবে আমি কোন ভুল করিনি।
এবার আমার রাগ হতে লাগল... মাথা প্রায় গরম হয়ে গেছে।
-- ঐ মেয়ে কি সমস্যা তোর? ফাইজলামি বন্ধ কর।
-- তোমার শাসনের প্রতিটা মুহূর্ত আজ ও আমার মনে গভীর ভাবে জায়গা দখল করে আছে। কেন আমি তোমাকে ভুলতে পারি না?
-- তাহলে বিষ চিনেন বিষ? যা দিয়ে ইদুর মারা হয় ঐটা খেয়ে নিন। না হয় কচু গাছে ফাঁসি নেন। ফালতু।
-- তুমি চাইলে মরতেও রাজি।
এর মধ্য দিয়ে এক ছেলে কমেন্টের মাঝে রিপ্লে দিলঃ--
-- আহ কি রোমান্টিক ! বেঁচে থাকুক এমন ভালবাসা।
আমার মেজাজ এতোটা গরম হয়ে গেছে যে ইচ্ছা করছে মেয়েটাকে গরম তেলে ইচ্ছে মতো চুবাই।
অতঃপর মেয়েটি রিপ্লে দিল...
-- হয়তো কোন দিন তোমাকে ভুলতে পারব না।
আমি সাথে সাথে ব্লক দিয়ে দেয়।
কপাল বেয়ে বেয়ে ঘাম ঝরছে। আমি সত্যিই এই মেয়ে চিনি না। নিহা কি ভাবছে? আমি প্রেম করি?
নিহা তো সবগুলো কমেন্টে রিয়েক্ট দিয়েছে। তার মানে প্রতেকটা কমেন্ট দেখেছে।
সে হয়তো খুব রেগে আছে। একটা কল দেওয়া উচিৎ। ফোনটা হাতে নিলাম,, তখন ভাবলাম এখন যদি ফোন দেয় তাহলে কি না কি বলবে। তার চেয়ে ভালো বরং কাল বাসায় গিয়ে ঠান্ডা মাথায় সব বোঝিয়ে বলব।
ফ্যানটা অন করলাম,, খট খট শব্দ করে মাথার উপর ঘুরছে। আমি বিছানায় শুয়ে ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আছি।
ভেবছি নিহা হয়তো সত্যিই আমাকে এখন খারাপ ভাবছে। হয়তো আর কোন দিন কথা বলবে না।
কথাগুলো ভাবতে না ভাবতে ক্রিং ক্রিং শব্দ করে বেজে উঠল।
হাতে নিয়ে দেখি নিহার কল। এই বার সেরেছে। আল্লাহ্ জানে কি না কি বলে।
ভয়ে ভয়ে ফোনটা রিসিভ করে কানে দিলাম। কানে দিতেই নিহা কোন কথা জিজ্ঞেস না করেই বলছেঃ--
-- আহা, কি মধুর প্রেম,,, সত্যিই প্রান জুড়িয়ে গেল। সচারাচর এরকম প্রেম কাহিনী খুব কমই চোখে পড়ে।
-- আরেহ আমি চিনি না এই মেয়েকে,, (আমি)
-- তো কাল আসবেন তো বাসায়? জয়াকে পড়ানোর জন্য তখনই না হয় সব কিছু ফাইনাল করে নেব। (নিহা দাতঁ কামড়ে কট কট শব্দ করে বলল)
এই রে,,, ও তো প্রচন্ড রেগে আছে।
এইবার কি হবে? কি করে বোঝাব যে এই মেয়েকে আমি একদম চিনি না?
তারপর নিহা রাগ দেখিয়ে ফোন কেটে দিল।
আমি কল দিলাম,, বার বার চেষ্টা করছি। কিন্তু ফোন বন্ধ আসছে। কাল গিয়ে কিভাবে বোঝাব যে আমি ঐ মেয়েকে চিনি না?
কিছুক্ষনের জন্য চোখটা বন্ধ করে ভাবছি কি বলব।
কাল যখন তাদের বাসায় যাব নিহা নিশ্চয় জিজ্ঞেস করবে আমার কয়টা মেয়ের সাথে সম্পর্ক আছে।
আমি বলব সব মিথ্যা,, না হয় তুমি খোঁজ নিয়ে দেখ।
অথবা কোন বন্ধুকে সামনে নিয়ে গিয়ে বলব,,,
এইটা ফেক আইডি ছিল,, আর সে আমার সাথে মজা করছে।
আবার চিন্তা করলাম আমি এতো কিছু কেন করব? নিহা তো আমার গার্লফ্রেন্ড না,, আমি তো কখনো প্রপোজ করিনি। তবে এতো কিছু করার কি দরকার? ভাবতে ভাবতে চোখে ঘুম চলে আসল। কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম বোঝতেই পারিনি।
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি নিহার সতেরটা মিসড কল। মাথা পুরো
গরম হয়ে গেল.....
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
সতেরটা মিসড কল ! চোখ দুটো রসগুল্লোর মতো বাইরে বেরিয়ে আসল।
চোখ মুছতে মুছতে কল দিলাম...
-- হ্যালো,, কি হইছে আপনার? এতোগুলো মিসড কল দিলেন যে।
-- কতগুলো মিসড কল দিছি কি দিছি না তা আমার ব্যাপার,, এখন বলেন ফোন ধরেন নাই কেন?
-- রাত আড়াইটায় ফোন দিবেন তা উপর আবার বলেন ধরিনি কেন,, আর আপনি এমন ত্যাড়া ত্যাড়া কথা বলছেন কেন?
-- কিহহ ! আমি ত্যাড়া কথা বলছি? সারা রাত মেয়েদের সাথে প্রেম করেন আবার আমার সাথে এমন ব্যবহার করেন।
-- দেখুন একদম বাজে বকবেন না,, ভালো হবে না কিন্তু,, সকাল সকাল ঝগড়া করতে চায় না।
ফোনে কথা বলা অবস্থায় পাশের রুম থেকে ছোট লাফিয়ে লাফিয়ে রুমে এসে বললঃ--
-- ভাইয়া, ভাইয়া আজকে আমার স্কুলে বার্ষীক অনুষ্ঠান তুই আমাকে একটু পর নিয়ে যাবি। আমি রেডি হতে যাচ্ছি।
দুই পা পিছনে গিয়ে ফিরে তাকাল।
-- আর শোন বিকেলে মা বলছে বাবাকে আবার ডাক্তার দেখানোর জন্য।
আমি ফোনটা হাত দিয়ে চেপে ধরে বললঃ--
-- আচ্ছা, তুই এখন যা।
আবার ফোনটা কানে নিলাম...
নিহা চমকে উঠে বললঃ--
-- মেয়ের কণ্ঠ ! আপনার পাশে কে?
-- আমার বোন,, কেন কি হয়েছে?
-- নাহ, কিছু না। তবে আজ যদি এগারোটায় চলে আসতেন তাহলে ভালো হতো। বিকেলে সবাই বেড়াতে যাবো।
-- না,, আজকে আর আসতেই পারব না। একটু পর বোনকে নিয়ে তার স্কুলে যেতে হবে আর বিকেলে ডাক্তারের কাছে যাব। হাতে কোন সময় নেই। আর আপনি চিন্তা করবেন না,, মাস শেষ হলেই টাকা নেব।
এই বলে ফোন কেটে দিলাম।
টাকার কথা শুনে নিহা চোখ দুটো আগুনের মতো লাল হয়ে গেছে।
সে ভাবতে থাকে...
ওর সাথে কি আমার টাকার সম্পর্ক? কিভাবে এতোটা পাল্টে যেতে পারে? তাও আবার হঠাৎ করেই। না আর এভাবে চলতে পারে না,, কিছু একটা করতেই হবে।
এদিকে বিদ্যুৎ গতিতে ছোট বোন একবারে রেডি হয়ে চলে আসে। আমি এখনো বিছানা ছেড়ে উঠিনি।
-- আচ্ছা, বলতো তুই কি মানুষ না রোবট সোফিয়া? (আমি)
-- আমি তোর বোন আর তুই মানুষ হলে আমিও মানুষ। কিন্তু হঠাৎ এই কথা জিজ্ঞেস করলি কেন?
-- কারন, আমি এখনো বিছানা ছেড়ে উঠিনি আর তুই একবারে রেডি হয়ে আসলি।
-- হিহিহি। অলস হাতি একটা।এখন তুই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আয়,, না হয় তোর উপর পানি ঢেলে দেব।
আমি তৈরি হতে প্রায় বিশ মিনিট সময় লেগেছে আর তাতে বোন রেগে মুখ ফুলিয়ে রেখেছে।
ওর রাগ দেখে মজা লাগছে,, তাই ভাবছি আর একটু রাগিয়ে দেয়।
তারপর বিছানার উপর বসে গামছা দিয়ে চুল মুছছি,, কখনো আয়নায় চুল ঠিক করছি আবার কখনো কাপড় স্ত্রী করছি।
এর মাঝে আবার মা ডাকতে লাগল খাওয়ার জন্য।
বোনের দিকে তাকিয়ে লক্ষ্য করছি আর একটু দেরি করলেই রাগের বোম ফাটবে অর্থাৎ হয়তো হাতে কামড় বসাবে নয়তো আমার চুল টেনে ছিড়বে।
-- আয় খেতে যাব? তারপর না হয় স্কুলে যাব।
-- তোর আর কিচ্ছু করতে হবে না,আমার সাথেও যেতে হবে না। থাক তুই বাসায় আমি একা একাই বাসে করে যেতে পারব। আমি গেলাম অলস হাতি। (প্রচন্ড রাগ দেখিয়ে বলল)
আর খেতে পারব না,, বোন রেগে গেছে। আমার শার্টের বোতাম লাগানো হয়নি তবুও বোতাম লাগাতে লাগাতে ছুটলাম আদরের বোনটার পিছে। প্রচন্ড রাগী একদম নিহার মতো।
অবশেষে বোনকে নিয়ে স্কুলে আসলাম। অনুষ্ঠান অনেক আগেই শুধু হয়ে গেছে। এই কারনে বোনটা চোখ ভরা রাগ আর দাঁত কামড় দিয়ে তাকাল।
আমি ইশরায় বললামঃ--
:- সরি.......
স্কুলেন ভেতর চার পা হাটে সামনেন দিকে তাকাল।
চোখটা মুছলাম আমি যা দেখছি তা সত্যি তো?
যদি সত্যি হয় তবে আজকে কপালে খুব খারাপ কিছু আছে।
আমার ঠিক সামনেই নিহা ড্যাপ ড্যাপ করে তাকিয়ে আছে।
আমি আর হাঁটতে পারছি না। মনে হচ্ছে পা দুটো চোরা বালির মধ্যে আটকে গেছে।
চোখ দুটো ক্রমশ বড় হতে লাগল। সাথে সাথে আমার ভয়টাও বাড়তে লাগল। সাথেই বোন,, ও তো সব জেনে যাবে।
আমাকে হঠাৎ দাড়িয়ে যাওয়া অবস্থায় দেখে বোন বললঃ--
-- কি হলো আয়?
আমি কর্কশ কন্ঠে বললামঃ--
-- তুই যা আমি আসছি।
অতঃপর বোন চলে গেল।
নিহা দ্রুত পা চালিয়ে আমার কাছে চলে আসল,, হাতটা ধরে স্কুলের পিছনে নিয়ে গেল।
এই মুহূর্তে দু'জন সামনা-সামনি দাড়িয়ে আছি। আমি মাটির দিকে মাথা দিয়ে ভাবছি....
-- এখন কি বলব? আর নিহা স্কুলে আসল কেন? হয়তো কালকে রাতের ব্যাপরে কিছু বলবে।
রাতে যে মেয়েটি পোষ্টে কমেন্ট করেছিল আমি তাকে চিনি না,, কিন্তু এই কথা নিহা বিশ্বাস করবে না। আমি সাথে কোন বন্ধুকেও নিয়ে আসিনি যে, বলবে ঐটা তার ফেক আইডি ছিল।
এখন যদি নিহা জানতে চায় তাহলে কি বলব?
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে নিহা হাতের ফোনটা গায়ের জোড়ে মাটিতে ছুঁড়ে মারল। ডিসপ্লেটা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে গেছে। ব্যাটারিটা ছিটকে এসে আমার পায়ের কাছে পড়ল। এতো দামি মোবাইল ঙেঙ্গে দিছে?
চোখ বড় বড় করে নিহার দিকে তাকালাম... ও রীতিমত সাপের মতো যেন ফুস ফুস করে রাগতে শুরু করল।
চোখের কোনে পানি টলমল করছে।
-- কি হয়েছে আপনার? এরকম করতেছেন কেন? আপনার পঞ্চাশ হাজার আমি খুব তাড়াতাড়ি দিয়ে দেব। (আমি করুন সুরে বললাম)
টাকার কথা বলায় নিহা আরো রেগে গেল। প্রচন্ড !!
নিহা দু পা সামনে এগিয়ে আসলঃ--
-- এই এটা কোন ধরনের স্বভাব? আপনি আপনি কিসের হ্যাঁ? (চোখের কাছে আঙ্গুল নিয়ে বলল)
-- তো কি বলব?
-- তুমি করে বলতে পার না? নিজের ইচ্ছায় অনেক কাজ করেছে আর পারবা না।
-- কেন পারব না?
-- আমি করতে দেব না।
অবশেষে চোখের জল মুছে কানে কানে বলে দিল।
আই লাভ ইউ !!
পাশে তাকিয়ে দেখি বোন হাঁ করে দাড়িয়ে আছে। যেন টাইটানিক মুভি দেখতেছে।
নিহা তার কথাটা বলে দিয়ে চলে যাচ্ছে।
-- এই যে, আপনার মোবাইটা নিয়ে যান।
-- আবার আপনি বলছো?
-- এই যে, তোমার ফোনটা নিয়ে যাও।
-- এই বার ঠিক আছে। লাগবে না ফোন,, ফোনের জীবন শেষ।
-- তাহলে এইটুকু কারনে ভাঙ্গার কি দরকার ছিল?
-- কারন, এইটা দিয়েই তোমার ঐ নোংরা কমেন্টগুলা দেখতে হয়েছে।
নিহা চলে গেল।
বোন কাছে এসে বললঃ--
-- ভাবিটা কিন্তু তোর চেয়ে সুন্দর। তো এসব কবে থেকে?
-- ও যে তোর ভাবি সেটা তোকে কে বলছে শুনি? আমি কি না জানিয়ে বিয়ে করে ফেলছি?
-- তাহলে হবু ভাবি,, তোর সাথে কিন্তু দারুন মানাবে। কাইল্লা + সুন্দরী।
-- দেখ কাইল্লা বলবি না।
-- হইছে হইছে আর ঝগড়া করতে হবে না।
-- হবু ভাবি কিন্তু তোর চেয়ে বেশি রাগী সামলাতে পারবে তো?
-- তোর মতো আস্তো অলস হাতিই যেহেতু সামলাতে পারছি তাতে ভাবি সামলানোর কোন সন্দেহ নেই।
-- তবে মা আর বাবাকে কিন্তু এখন কিচ্ছু বলতে পারবি না। আগে চাকরি জোগাড় করে নেয় তারপর।
-- তো এসব কবে থেকে শুনি?
-- কিছু দিন মাত্র,, এখনই যে রাগ আর সামনে আর কি বাকি আছে আল্লাহ্ জানে।
কিন্তু কে শুনে আমার কথা? তার উপর বোন যদি এতোটা পাজি হয়।
রাতের বেলা কানে হেড লাগিয়ে গান শুনছি।
মা হাতে দুধের গ্লাস হাতে নিয়ে রুমে আসল। টেবিলের উপর গ্লাসটা রেখে বিছানায় আমার পাশে এসে বসল।
মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। কি জানি বলছে,, কানে হেড ফোন থাকায় ঠিক মতো শুনতে পারছি না।
মা গায়ে ধাক্কা দিল...
আমি কান থেকে হেড ফোন নামিয়ে মায়ের দিকে তাকালাম।
লক্ষ্য করলাম মায়ের মুখে খুশির বন্যা বয়ে যাচ্ছে। মায়ের ঠোঁট যেন হাসছে।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
-- এতো খোঁজ খবর নিতে হবে না,, আমি নিজেকে সব সময় অন্য মেয়েদের থেকে বাঁচিয়ে রাখি। (আমি)
-- হুম,, আমার ভয়টা তো ঠিক এই জায়গায় ই। তুমি না হয় নিজেকে বাঁচিয়ে চলাফেরা কর কিন্তু অন্য মেয়ে যদি তোমার প্রেমে পড়ে তখন? (নিহা)
নিহা মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবলামঃ--
-- আহ, কি গুয়েন্দা রে বাবা।
-- এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? না বাবা আমি এতো কিছু জানি না। তোমার কোম্পানির ম্যানেজারের প্রতি আমার একটুও বিশ্বাস নেই। মহিলা চাকরি করে তার উপর আবার এখনও বিয়ে হয়নি। নিশ্চয় কোন না কোন কারন আছে,, এখন যদি তোমার প্রেমে পড়ে তখন আমার কি হবে? (নিহা)
কথার মধ্যে কোন বিরতি নেই। একটানা বক বক করেই যাচ্ছে,, মাথায় যা আসছে তাই বলছে। আমি মাথা হেলিয়ে নিহার দিকে তাকিয়ে আছি। কোন কিছু বলার সুযোগ পাচ্ছি না আর বললেও কানে যাবে না।
দু'পা এগিয়ে নিহার কাছে গিয়ে হাত দিয়ে মুখটা চেপে ধরলাম।
-- এবার চুপ কর, এতক্ষণ ধরে বলেই যাচ্ছ যদি কেউ শুনে তবে কি হবে?
নিহা মুখ থেকে হাত সরিয়ে বললঃ--
-- বিয়ে করিয়ে দিবে।
-- আগে তোমার পরিক্ষা শেষ হোক তারপর না হয় ঐ ব্যাপারে ভাববো। এবার আমি আসি,, রাতে ফোন করব। ঠিক আছে?
রুম থেকে বেরিয়ে যাব ঠিক ঐ মুহূর্তে নিহা পিছন থেকে হাত ধরে বলেঃ--
-- তাহলে কথা দাও যত দিন আমার পরিক্ষা না শেষ হচ্ছে তত দিন তোমার অফিসের মহিলার সাথে কাজের কথা ছাড়া অন্য কোন কথা বলবা না,, সব সময় শুধু মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিবা।
নিহার গালে টান দিয়ে বললামঃ--
-- বাহ্ তুমি আমার কতো খেয়াল রাখ,, কতটা কেয়ার কর,, মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে তোমাকে পার্সেল বানিয়ে কাঁধে ঝুলিয়ে রাখি। আর মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে তোমাকে রুমে তালা দিয়ে পালিয়ে যায়,, যেমনটা এখন করতে ইচ্ছে করছে।
ছাড় ছাড় তোমার বাবা আসছে মনে হয়। নিহা তাড়াহুড়ো করে হাতটা ছেড়ে দিয়ে একুট দূরে সরে দাড়ালো। কিন্তু নিহার বাবা আসেনি। সুযোগটা কাজে লাগিয়ে আমি পালিয়ে আসলাম। না হয় কে জানে আরো কত রকমের নিয়ম বেঁধে দিত। পুরো মাথা নষ্ট মেয়ে একটা।
বাসায় আসতেই মা ভীষণ খুশি মুখে সামনে এসে দাড়ালো।
-- নিশ্চয় তুই বউমার সাথে দেখা করে এসেছিস,, কই এবার ছবিটা দেখা তো।
পেছন পেছন বাবাও চলে এসেছে।
-- আমাদের আর কষ্ট করে বউ খুঁজতে হবে না,, তুই সেরে ফেললি।
বাবার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম।
-- বাবা জানল কি করে?
ছোট বেলা থেকেই বাবাকে খুব শ্রদ্ধা করি,, কি বলব বোঝতে পারছি না।
মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলাম। লজ্জায় মুখ লাল হয়ে গেছে।
-- দেখি মেয়ে ছবিটা,, (বাবা)
-- আমি তো আজ পর্যন্ত ওর কোন ছবি তুলিনি। (মাথা নিচু করে বললাম)
-- তাহলে বাসার ঠিকানাটা দিস তো,, কথা বর্তা ঠিক করে রাখব।
আমি ভাবছি বাবাকে এসব ব্যাপারে রাজি করাল কে? আর কি ভাবে? আমি তো ভয় পায়।
এভাবে সুন্দর ভাবেই এক সপ্তাহ কেটে গেল। কিছু দিন ধরে নিয়মিত অফিস করছি। এখন আর নিয়মিত টিউশনির জন্য নিহাদের বাসায় যাওয়া হয়না। ওদেরকে অনেক মিস করছি। বিশেষ করে নিহাকে।
গতকাল অফিসে যাওয়ার সময় হঠাৎ করে হাতের ফোনটা বৃষ্টির পানিতে পড়ে সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে গেছে। সার্ভিসিংয়ের দোকানে নিয়ে গেছি কিন্তু দুই দিন সময় চেয়েছে। ফোন নেই বলে এখনো কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না।
হয়তো নিহা ক্রমাগত ফোন দেওয়া চেষ্টা করে যাচ্ছে কিন্তু আমার ফোন তো বন্ধ।
পরদিন সকালে ফ্রেশ হয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হলাম।
খাবার টেবিলে সবাই বসে ব্রেকফাস্ট করছি।
পরিবারের সবাই এক সাথে আবার খাচ্ছি,, হঠাৎ করে কলিং বেল বেজে উঠল।
-- এতো সকাল সকাল আবার কে আসল?
মা বলতে বলতে দরজাটা খুলল।
নিহা দ্রুত গতিতে ঘরের ভেতর ঢুকল।
আর খেতে পারলাম না।
-- আমি জানতাম তুমি ঠিকই স্বাভাবিক ভাবে নিজের কাজ করছো,, নতুন ম্যানেজার পাইছো তো তাই ভুলে গেছো। এ জন্যই সন্দেহ করছি। (নিহা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে)
আমার গলা দিয়ে খাবার নামছে না আর তুমি দিব্যি হাসের মতো গিলে যাচ্ছো। দুই দিন ধরে ফোন বন্ধ,, মাথায় আছে? নাকি ঐ মহিলা মাথাও খেয়ে ফেলেছে। (নিহা)
-- আরে ভাবি তুমি !! কি ব্যাপার? (বোন)
-- কার ভাবি? আর কে এই মেয়েটা? (মা)
বাবা হা করে তাকিয়ে আছে।
-- তোমাকে বলেছিলাম না ভাইয়া আর ঐ মেয়েটার কথা,, এটাই ভাবি। (বোন)
মা যেন খুশিতে লাফিয়ে উঠল।
-- বাহ্ বউ তো দেখতে খুব মিষ্টি। ওগো আমাদের ছেলের পছন্দ একটুও খারাপ না.... (মা বাবার দিকে তাকিয়ে বলছে)
এখন আমার মনে হচ্ছে আমি যেন কোন এক কমেডি শো দেখতেছি। হাসব না কাঁদবো বোঝতে পারছি না। এদিকে নিহা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে।
বসা থেকে দাড়িয়ে গেলাম।
-- কি আজে বাজে বলছো? মা-বাবা দেখতে পারছো না?
-- ঠিক তোমার মতো একটা মেয়েই খুজছিলাম,, এই মাথা মোটাকে সোজা করার জন্য।
বাবা টেবিলে বসে মুচকি মুচকি হাসছে,, আমারও যেন কি রকম লজ্জা লাগছে। অতঃপর রুমে চলে গেলাম।
মা নিহার হাত ধরে রুমে নিয়ে গেল,, অনেক্ষণ ধরে কি যেন বলছে। অনেকক্ষণ পর রুম থেকে বর হলো।
আজ আর অফিসে যেতে পারলাম না। ল্যাপটপ দিয়ে কাজ শেষ করতে পারব তবুও কেমন জানি লাগছে।
-- বউ মা, তুমি কফি খেতে ভালবাস?(মা)
আমি অভাক হয়ে রইলাম,, এখনও বিয়েই হলো না আর বউ হয়ে গেল? বিয়ের পর জানি কি হয় আল্লাহ জানে।
-- হুম,, আমি কফি পছন্দ করি।
তারপর মা কফি নিয়ে আসল।
-- আচ্ছা, আমাদের বাড়িটা পছন্দ হয়েছে তো? (মা)
-- একটু ও খারাপ না,, তবে আপনাকে সবচেয়ে বেশি পছন্দ হয়েছে। (নিহা মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল)
মা নিহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।
আমি রুম থেকে বের হয়ে নিহার হাত। পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে বললামঃ--
-- এই নাও,, তোমার টাকা।
-- আমার দরকার নেই।
-- কেন?
-- ধরে নাও হবু বউ হওয়ার কর্তব্য পালন করলাম।
অতঃপর মা নিহাকে এক এক করে ঘরের রুম দেখাতে লাগল,,,,
-- এটা তোমাদের রুম হবে,, এটা পাক ঘর, এটা বাথরুম, এটা গেস্ট হাউজ
ইত্যাদি ইত্যাদি।
ছোট বোনটা পেছন পেছন ঘুরঘুর করছে। বাবা সোফায় বসে বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছেন।
মা বলল নিহার ইন্টার পরিক্ষা শেষ হলেই বিয়ের কথা পাকাপাকি করে ফেলবেন।
এখন আপাতত তাদের বাসায় গিয়ে কথা বলে সব ঠিক করে রাখবে।
-- এই যে, শুনেন (আমি)
-- জ্বী, কিছু বলবেন (নিহা)
-- আপনি আমার সাথে থানায় চলেন (আমি)
-- মানে? মাথা ঠিক আছে তো? (নিহা)
-- আজকে কি ৩৫ তারিখ? এটা কি ৩০১৮ সাল? আপনি কি মেয়ে? আপনি কি বাঙ্গালী?
এমন পাগলের মতো কিছু তো বলিনি,, তাহলে মাথা খারাপ হওয়ার কি আছে?
নিহা কিছুক্ষণ শুকনো কাঠের মতো দাড়িয়ে রইল।
-- এভাবে দাড়িয়ে থাকলে তো আমার হারানো জিনিস ফেরত পাবো না (আমি)
-- হারানো জিনিস ! আমাকে চোর ভাবছেন না তো? (নিহা)
-- একদম ঠিক ধরেছেন। আপনি চোর। (আমি)
-- হোয়াট ননসেন্স একটা মেয়ের সাথে এভাবে ব্যবহার করছেন,, আপনার লজ্জা করে না? (নিহা)
-- ওকে,, আর এরকম ব্যবহার করব না। কিন্তু আপনি আর এই রাস্তা দিয়ে আসা-যাওয়া করবেন না। পরবর্তীতে যদি আবার এই রাস্তায় দেখি তাহলে আমার হারানো জিনিসটা ফেরত দিতে হবে,, না হলে পুলিশ ডাকতে বাধ্য হবো। (আমি)
-- আচ্ছা, আপনার এমন কি মূল্যবান জিনিসটা হারিয়ে গেছে শুনি? (নিহা)
-- সেটা আবার এই রাস্তায় যখন আসবেন তখন পুলিশ আর পুরো এলাকার মানুষের সামনে বলব। (আমি)
-- কিছু কিছু ছেলেরা যে পুরো ম্যান্টেলে আপনি হচ্ছেন তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। (নিহা)
তারপর সে রাগ দেখিয়ে চলে গেছে।
পিছন থেকে দুই-তিন বন্ধু কাঁধে হাত দিয়ে বললঃ-
আজকে কিন্তু সেই রকম দিছিস। এখন দেখিস নিহার মাথায় প্রশ্নের জ্যাম লেগে যাবে। শুধু ভাববে আর ভাববে। তার দোষটা কোথায়।
আরেক বন্ধু হাতে টানতে টানতে হোটেলের ভিতর নিয়ে গেল...
-- দোস্ত আজকে তুই খাওয়াবি,, আর কোন কথা বলবি না। দেখ গরম সিঙ্গারা,, তাড়াতাড়ি অডার দে। ইদানিং তোর সময় খুব ভালো যাচ্ছে। ট্টিট তো পাওয়ারই কথা তাই না?
আমি কিছু বলার সুযোগ পেলাম না,, বাধ্য হয়েই সিঙ্গারা অডার করলাম।
-- জামাই, সিঙ্গারা দাও তো?
কিছুক্ষনের মধ্যেই জামাই সিঙ্গারা নিয়ে হাজির,, গরম সিঙ্গারা উপর দিয়ে ধোয়া উঠছে।
দোকানের মালিককে সবাই জামাই বলে ডাকি,, উনি এখন জামাই ডাক শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।
জামাই সামনে সিঙ্গারা দিয়ে বললঃ--
-- আমি বোঝিনা তোমরা এই ম্যাইয়ার লগে এমন ব্যবহার কেরে কর,,
-- আরে বলো কি? তুমি কি আমাদের দিকে তাকিয়ে থাক নাকি? (আমি)
-- উহু,, যেই সিনেমা কর,, না দেইখ্যা কেমন থাহি কও? তাও দুই-তিন মাস ধইরা দেখতাছি।
-- আরে তুমি দেখলে সমস্যা নাই,, তবে অন্য কাউকে এই সিনেমার কাহিনী বলো না কিন্তু,,, বিপদ ঘটবে।
খাওয়া শেষে আমি বাসার দিকে রওনা হলাম.......
নিহা ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। দেখতে একদমই আমার মতো খারাপ না। ওর কালো চুলগুলো অনেক লম্বা,, সব সময় খোলা অবস্থায় রাখে। মায়া ভরা ছোট ছোট চোখ দু'টো -তে প্রায়ই কাজল দেওয়া থাকে।
ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অনেক বার রাস্তার খাম্বার মধ্যে ধাক্কা খেয়েছি,, অনেক বার মানুষের সাথে ধাক্কা খেয়েছি।
আর আমি লেখা-পড়া শেষে চাকরির জন্য চেষ্টা করছি,, হাত খরচ চালানোর জন্য নিহাদের পাশের বাসায় টিউশনি করছি। বাবার কাছে আর কত হাত পাতবো।
নিহা সাথে পরিচয়টা টিউশনি দিয়েই। প্রতিদিন যখন টিউশনির জন্য পাশের বাসায় যেতাম,, প্রায়ই উপরের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। কারন, বিকেল বেলা ছাদে নিহা দাড়িয়ে থাকত।
বাসায় যেতেই মা বললঃ--
-- কিরে, টিউশনিতে যাবি না?
-- নাহ্.. আজ যাব না,, ভালো লাগছে না। এখন ঘুমাবো।
-- এখন ! এই সন্ধ্যা বেলা?
-- হুম,,
আমি রুমে চলে গেলাম।
মায়ের সাথে মিথ্যা বলে চলে আসলাম। আসলে আজ যদি টিউশনিতে যায় আর নিহা আমাকে দেখতে পায় তাহলে ১২টা বাজিয়ে দেবে।
একটার পর একটা প্রশ্ন করেই যাবে আর টিউশনির সময় শেষ হয়ে যাবে,, তার চেয়ে ভালো হবে যদি না যাই।
রুমে এসে ফ্যানটা চালু করে ধপাস করে বিছানার উপর শুয়ে পড়লাম। কিন্তু ঘুম আর আসছে না।
মাথার মধ্যে একটাই চিন্তা হচ্ছেঃ--
যদি নিহা আর এই রাস্তা দিয়ে আসা-যাওয়া না করে? আর ওকে এভাবে বলা মনে হয় একদম ঠিক হয়নি।
এরপর থেকে দুই-তিন কেটে গেল,, রোজ দিনের মতোই আমি রাস্তার ঐ জায়গাটায় অপেক্ষা করতে লাগলাম কিন্তু নিহা আর আসছে না।
খোজ নিয়ে দেখলাম নিহা কলেজেও তিন দিন যাবৎ আসেনি।
কবে চতুর্থ দিন একটু দেরি করেই বাসায় ফিরছিল। নিহাকে দেখেই আমার মনে একটা শান্তির বাতাস বইতে লাগল।
আমি তাড়াহুড়ো করে নিহার সামনে গিয়ে দাড়ালাম।
-- একবার নয়,, দুই বার নয়,, বার বার একই জিনিস চুরি হচ্ছে। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। চলেন থানায় যেতেই হবে। (আমি)
-- দেখুন,, সব সময় কিন্তু ফাইজলামি ভালো লাগে না। আমি কি চুরি করছি হুম? (নিহা)
-- আপনি যাবেন নাকি পুলিশ এখানে ডাকব? (আমি)
-- আচ্ছা, আমি কি করলাম বলবেন তো? (নরম সুরে নিহা বলল)
-- ফোন, টাকা, গাড়ি, গয়না যদি চুরি হয়ে যায় তাহলে পুলিশ ডাকা হয়,, আর আপনি আমার এত্তো বড় একটা মন চুরি করছে আমি পুলিশ ডাকব না? এটা কি বড় ধরনের অপরাধ নয়?
আপনি আমার আকাশের মতো বড় একটা মন চুরি করছেন,, শাস্তি আপনাকে পেতেই হবে। চলেন পুলিশ স্ট্যাশনে....।।
-- কিহহ ! আমি আপনার মন চুরি করছি? (নিহা)
-- হুম,, আমার মন চুরি করছেন,, তাও আবার আমার অনুমতি না নিয়ে। (আমি)
-- চলেন আমার সাথে (নিহা)
-- আপনার সাথে আমি যাব কেন? আপনি আমার সাথে চলেন। (আমি)
-- আপনাকে পাবনা নিয়ে যাব। (নিহা)
-- কেন? আমি তো পাগল না। (আমি)
-- হুম, জানি আপনি পাগল না,,, তবে মানসিক রোগী। আর মানসিক রোগী নিজেকে কখনো পাগল বলে না। (নিহা)
-- এতো কষ্ট করার কোন দরকার নাই,, আপনি শুধু আমার মনটা ফেরত দিয়ে দেন,, না হলে আপনার মনটা দিয়ে দেন। কথা দিচ্ছি আপনার মনটা দিলে গুছিয়ে রাখব,,, অন্য কারো হাতে দেব না। (আমি)
-- আপনি কি টুকাই নাকি? আসছে মন মন নিতে,,, আচ্ছা,, আপনার কি কোন কাজ নাই? শুধু কি টিউশনিই করেন?
আমি টিউশনি করি,, তা নিহা জানল কি করে? আমি সব সময় ওর দিকে তাকিয়ে থাকতাম,, কিন্তু কোন দিন তো দেখিনি ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ( ভাবতে লাগলাম)
-- দেখতে তো ভালো আর ভদ্র মনে হচ্ছে,, এতো কথা আসে কোথা থেকে? চেহেরায়ও মাস্টার মাস্টার ভাব আছে,, তবে এই মেয়ে পাটানো কখন থেকে শুরু করছেন? (নিহা)
ওর কোন কথা আমার মাথায় ডুকছে না,, শুধু একটা কথা মাথায় দৌড়াদৌড়ি করছে,,
নিহা আমার সম্পর্কে এতো কি জানল কি করে?
ও লুকিয়ে লুকিয়ে আমার খোঁজ নেয় না তো?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
-- কি হলো কিছু বলছেন না যে? এভাবে হা করে দাড়িয়ে আছেন কেন? (নিহা)
-- ও হ্যাঁ, আমি কোন মেয়ে পটাই না। এসবে কোন ইন্টারেস্ট নাই। (আমি)
-- তাহলে প্রতিদিন আমার সাথে এই কাজগুলো করেন কেন? এখনও সময় আছে ভালো হয়ে যান,, না হয় আপনার বাড়িতে নালিশ পাঠাবো। (নিহা)
-- ওওও.... আপনি কি আমাকে হুমকি দিচ্ছেন নাকি? আমি এসবে একদম ভয় পায় না। (আমি)
-- রাস্তায় মেয়েদের সাথে এমন করলে কপালে বউ জুটবে না,, বিয়ে তো দূরের কথা। মাস্টার মানুষ মাস্টারের মতো থাকেন,, বখাটে বখাটে ভাব নিয়েন না। (নিহা)
-- তুমি থাকতে আর বউয়ের কি দরকার? (মাথা নিচু করে আস্তে আস্তে বললাম)
-- কিছু বললেন নাকি? শুনি নাই আবার বলেন। (নিহা)
-- বলতে হবে না,, আপনি আসতে পারেন,, (আমি)
তারপর নিহা চলে গেল।
ওর কথা শুনে আমার মাথা ধরে গেছে। অতিরিক্ত কথা বলে,, মেয়ে একটা।
সত্যিই সুন্দরী মেয়েদের কথা বিষের মতো লাগে।
যেমন রুপ তেমন মুখের পাওয়ার।
বিকেল প্রায় চারটা,, টিউশনির জন্য রওনা হলাম। উদ্দেশ্য আবীরদের বাসা।
আবীর ক্লাস সিক্সে পড়ে,, আমার ছাত্র।
নিহাদের বাসার নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় দু-একবার উপরের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। কিন্তু আজ কোন দেখা পায়নি। প্রতিদিন ছাদে থাকবে এমন কোন কথা না তবে প্রায়ই দেখতাম।
বাসায় কলিং বেল চাপতেই আবীরের দরজা খুলে সালাম দিলেন।
-- স্যার, আপনি কাল আসেননি কেন? আপনার জন্য আমি কতোক্ষণ বসে ছিলাম। খেলতেও যেতে পারি নাই। আপনি একটা ফোন দিয়েও বলেনি যে, আসবেন না। (আবীর)
-- আমার ফোনের কথা একদম মনে ছিল না,, সরি।
-- আচ্ছা,আজকে তুমি এই পাঁচটা অংক তিন বার করে সমাধান করবা। (আমি)
-- বাপরে,, তার মানে পনের বার? (আবীর)
-- হুম, কোন কথা নয়। চুপচাপ করতে থাক।
আবীর মাত্র দুই বার করে শেষ করল,, তার মধ্যেই হঠাৎ করে পিছন থেকে একটা মেয়ে এসে বললঃ--
-- এই আবীর এদিকে আয়? তোর সাথে একটা কথা।
আমি ঘাড় ফিরিয়ে পেছনে তাকালাম, ছোট্ট একটা মেয়ে,, বয়স এগারো অথবা বার বছর হবে।
আমি বললামঃ--
-- এখন কোথাও যাওয়া যাবে না,, আগে লেখা শেষ হোক তারপর,, তুমি এখন যাও।
আমার কথা শুনে মেয়েটি আমার দিকে কপাল সংকুচিত করে তাকাল। চোখ দুটোতে স্পষ্ট রাগের ছাপ বোঝা যাচ্ছে।
-- আবীর আয় বলছি। জরুরি কথা বলার আছে। (মেয়ে)
তারপর আবীর কিছুটা জোর দেখিয়ে উঠে গেল।
প্রায় পাঁচ মিনিট পর ফিরে আসল,, পেছন পেছন মেয়েটে আসছে।
-- এখন তো কথা শেষ হয়েছে এবার তুমি যাও, আবীর পড়া শেষ হলে আসবে। (মেয়েটাকে বললাম)
-- স্যার ওর নাম জয়া। আপনাকে নিতে এসেছে। আমাদের পাশের বাসায় থাকে। আমার সাথেই পড়ে। (আবীর)
-- আমাকে নিতে এসেছে মানে? (আমি)
-- জয়া অংকে দুর্ভল। আপনার কাছে পড়তে চায়। (আবীর)
-- জ্বী, স্যার আমার প্রাইভেটটা খুব দরকার,, প্লিজ না বলবেন না। (জয়া)
কিছুক্ষণ চিন্তা করে দেখলাম,, আমার টাকার দরকার আছে। তাছাড়া এখন তো ফ্রী আছি। চাকরী হলে না হয় ছেড়ে দেব।
-- ঠিক আছে, কিন্তু কবে থেকে শুরু করবা? (আমি)
-- আপনি চাইলে কাল থেকেই শুরু করতে পারেন।
-- আচ্ছা, ঠিক আছে।
-- তাহলে আমি বসি,, পড়ানো শেষ হলে আমার বাসায় নিয়ে যা। আজকে বাসা চিনে যাবেন। (জয়া)
এক ঘন্টা পড়ানোর পর আবীর পড়ানো শেষ হলো। এখন জয়াদের বাসাটা দেখে বাড়িতে যাব। কাল থেকে আবার জয়াকে পড়ানো শুরু করব।
জয়া আমাকে নিয়ে আবীরদের বাসা থেকে বের হলো। পথের মধ্যে কথা বলতে বলতে হাঁটছি। কয়েকটা বাড়ি পাড় হওয়ার পর সে দু'তলা বাড়ির ভেতর ঢুকছে।
আমি হঠাৎ দাড়িয়ে গেলাম।
কোথায় যাচ্ছি? এটা তো নিহাদের বাসা। আমি এই বাড়িতে যাচ্ছি কেন?
-- জয়া, এইটা তোমাদের বাসা? (আমি)
জয়া মাথা নেড়ে স্পষ্ট করে দিল,, হ্যাঁ এটাই তার বাসা।
আমি ভাবছি এবার কপালে অন্যরকম কিছু একটা আছে,, না পারছি বাড়ির ভেতরে ঢুকতে না পারছি ফিরে যেতে।
আমি ভাবছিঃ--
-- এটা নিহার কোন প্ল্যান নয়তো? হয়তো সব কিছুর পেছনে নিহা দায়ী। নাকি প্রেমের সবুজ সংকেত।
এসব কথা চিন্তা করে ইতিমধ্যে আমার ভেতরে খুশির ঝড় বইছে।
-- ওহ, এবার তাহলে সফল হলাম।
-- কি হলো স্যার? দাড়িয়ে আছেন কেন? ভেতরে আসুন। (জয়া)
রুমের ভেতর পা রাখতেই চমকে উঠলাম। সামনের চেয়ারেই নিহা বসে আমার দিকে ঢ্যাপ ঢ্যাপ করে তাকিয়ে আছে। চোখে যেন রাগের গুদাম।
আমার দিকে বড় বড় চোখ দিয়ে তাকিয়ে আছে। যেন চোখ দিয়ে গুলি করছে।
-- তাহলেই আমি যা ভেবেছিলাম,, আপনিই আবীরের টিচার? (নিহা)
-- জ্বী, আমিই (করুন সুরে)
কিছুক্ষণের মধ্য নিহার বাবা এসে বললঃ--
-- এই হচ্ছে আমার দুই মেয়ে নিহা আর জয়া। জয়ার পড়ার ব্যাপারে নিহাই সব জানে,, আপনি ওর সাথে কথা বলে নিন। (এই কথা বলে উনি চলে গেলেন)
-- তো ডিয়ার স্যার,, আপনার রুলস্ হচ্ছে,, প্রতিদিন জয়াকে সমান এক ঘন্টা পড়াবেন। ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। আর টাকার কোন চিন্তা করবেন না,, মাস শেষে তিন হাজার পেয়ে যাবেন। যদি কোন রকম উল্টা-পাল্টা কাজ দেখি তাহলে টিচার সোজা করার অস্ত্র কিন্তু আমার কাছে আছেই। (নিহা)
লজ্জায় আমার মুখ লাল হয়ে গেছে। যে মেয়ের পেছন পেছন ঘুরতাম আজ তার বাসায় টিউশনি করতে হবে।
-- হে আল্লাহ্ এই আমি কোন বিপদে পড়লাম। ভেবে ছিলাম প্রেমের রাস্তা পরিষ্কার হয়ছে,, এখন দেখি মহা বিপদ। (মনে মনে বললাম)
পরের দিন থেকে ঐ বাড়িতে আমার আসা-যাওয়া শুরু হলো। বিকেল বেলা আবীরকে পড়ানোর পর নিহাদের বাসায় যেতাম। আমি জয়াকে পড়ানোর সময় নিহা পেশর সোফায় বসে থাকত। কিছুটা অদ্ভুদ লাগত। সব কিছু ঠিক-ঠাক চলছিল। এভাবে তিন মাস পড়ানো হয়েছে। কেউ আমার কাজের কোন ভুল ধরতে পারেনি।
তবে হঠাৎ করে প্রায় পাঁচ দিন কাউকে পড়াতে গেলাম না,, আবীর আর জয়া কারো বাসায় গেলাম।
৬ষ্ঠ দিনের মাথায় যখন জয়াকে পড়াতে গেলাম তখন শুরু হলো নিহার চেচিয়ে চেচিয়ে কথা বলা।
-- এতো দিন কোথায় ছিলেন? আসেননি কেন? টাকা তো এমনি এমনি দেয় না। ( নিহার কথায় আমার কথা বলার কোন সুযোগই পাচ্ছি না)
ওর চেচামেচি শুনে পাশের রুম থেকে নিহার বাবা উঠে আসলেন।
-- কি হলো,, এতো চেচাচ্ছিস কেন? (নিহার বাবা)
নিহা চুপ হয়ে গেল। টিচারের সাথে এভাবে কেউ ব্যবহার করে?
-- আঙ্কেল গত পাঁচ দিন আমি একটা সমস্যার কারনে আসতে পারিনি। আপনাদের ফোন নাম্বার ছিল না তাই বলতেও পারিনি। দঃখিত
-- তো বাবা কি সমস্যা বলা যাবে? (নিহার বাবা)
-- ইদানিং আমায় সময় খুব খারাপ যাচ্ছে।
কিছু দিন আগে বাবা হঠাৎ স্ট্রোক করে আর এখন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। বয়স হয়েছে কখন যে কি সমস্যা হয় বোঝে উঠতে পারি না। ডাক্তার বলছে অপরেশন করাতে হবে। আরো প্রায় পঞ্চাশ হাজারো টাকা জোগাড় করতে হবে,, সে জন্যই আসতে পারিনি। তবে মাসের শেষে পাঁচ দিন বাড়িয়ে পড়াবো।
আমার কথা শুনে নিহা একদম চুপ হয়ে আছে।
-- আরে তেমন কোন ব্যাপার না,, তোমার যতদিন ইচ্ছা ছুটি নিতে পারো,, আগে তোমার বাবা সুস্থ হোক। (এই বলে নিহার বাবা চলে গেলেন)
অবশেষে জয়াকে পড়ানো শেষে বাড়ি ফিরব ঠিক সেই মুহূর্তে নিহা আমার সামনে এসে বললঃ--
-- আমাকে ক্ষমা করবেন,, আসলে আমি আমি বোঝতে পারিনি। (নিহা)
-- নাহ,,, সমস্যা নেই। আজ আসি।
নিহার আমার সামনে কাগজে মুড়ানো একটা প্যাকেট দিয়ে বলেঃ--
এতো সমান পঞ্চাশ হাজার আছে,, বাবা বলছে আপনাকে দেওয়ার জন্য।
-- আমার এখনো আপাতত দরকার নেই,, এক বন্ধুর কাছে ধার চেয়েছি,, ও বলছে গিয়ে আনার জন্য।
-- ক্লাস সিক্সের মেয়ের জন্য কি টিচার লাগে? আমিই তো পড়াতে পারি,, আপনি কি সেটা বোঝেননি? (নিহা)
এখন টাকা ধরেন,, বাবা বলছে নেওয়ার জন্য।
-- বললাম তো এখন আপাতত দরকার নেই।
আমি আসছি।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
-- হুম ঠিকই তো,, ক্লাস সিক্সের বাচ্চাদের তো প্রাইভেট পড়তে হয় না,, আপনিই তো পড়াতে পারেন। (আমি)
-- হুম,, সেটা তো আপনার বোঝা উচিৎ।
-- আচ্ছা, আমি আসছি।
-- টাকা তো নিয়ে যান।
বার বার নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছে। আমি ভাবছি এতো টাকা আমি পরে পরিশোধ করব কি করে? হাতে তো চাকরিও নেই।
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে নিহার বাবা রুম থেকে বেরিয়ে আসলেন। টাকাগুলো এখনো নিহার হাতেই ঝুলছে।
-- কি ব্যাপার এখনো টাকা নাও নি?
-- না আঙ্কেল,, আমি ভাবছি....
-- কোন কিছু ভাবার দরকার নেই। পরিশোধ করার জন্য আবার টেনশন করো না,, তোমার যখন ইচ্ছা তুমি দিও,, এখন তোমার বাবা অসুস্থ। এতো কিছু চিন্তা করার সময় নেই।
অতঃপর টাকাগুলো হাতে নিলাম...
-- আর হ্যাঁ, নিহার ফোন নাম্বারটা নিয়ে যাও,, যেদিন আসবে পারবে না ঐ দিন ফোনে বলে দিও। আমি তো সব সময় বাসায় থাকি না,, ওর মাও নানা রকম ব্যাস্ত থাকে।
আমি নাম্বারটা চাওয়ার আগেই নিহা মুচকি হাসি দিয়ে আমার ফোনে নাম্বার তুলে দিল।
যেন আমার চেয়ে তার বেশি তাড়াহুড়ো। নিহার বাবা এতোক্ষনে চলে গেছেন। নিহা নিজ হাতেই একটা মিসড কল দিয়ে কনফার্ম করে নিল।
-- এবার তাহলে আসি,, (একটু হেসে বাসা থেকে বেরিয়ে আসলাম)
-- সাবধানে যাবেন।
নিহার কথা শুনে কিছুটা অবাক হয়ে দাড়ালাম,, আগে কখনো বলেনি।
আবার সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে লাগলাম।
-- এই যে স্যার,, নাম্বারটা কিন্তু সেইভ করে নিয়েন। (আমি হাসতে হাসতে নিচে নেমে আসলাম)
রাস্তায় বের হতেই দেখি এক রিক্সাওয়ালা বাজে ভাবে এক্সিডেন্ট করে,, হাটুর থেকে মাংস খসে পড়ে। কয়েকজন ধারা-ধরি করে গাড়িতে তুলল।
আমি বার বার হাতে থাকা টাকার দিকে তাকাচ্ছি। এক পর্যায়ে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে দিলাম। তিনিও কারো না কারোর বাবা।
বাসায় আসার পর কিছু ভালো লাগছে,, কারন, এখন বাবার সব টাকা জোগাড় হয়ে গেছে।
রাতের বেলা হাতে ফোনটা নিয়ে ফেসবুক চালাচ্ছি। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠে। অপরিচিত নাম্বার। রিসিব করলামঃ--
-- আসসালামু আলাইকুম।
-- (কোন কথা বলছে না)
-- হ্যালো....
অতঃপর ফোনটা কেটে যায়।
কিছুক্ষণ পর আবার একই নাম্বারে ফোন আসল। বার বার ফোন আসায় নেট কানেকশন কেটে যাচ্ছে।
-- হ্যালো কে বলছেন? কোন কথা বলেন না কেন? বার বার ডিস্টার্ভ করেন। (কিছুটা রেগে গিয়ে)
-- জ্বী আমি।
-- কে আপনি?
-- নিহা।
-- ওহ,, সরি সরি। আমি আসলে খেয়াল করিনি।
-- ঠিক আছে সমস্যা নেই। কি করছেন?
-- তেমন কিছু না,, ফেসবুক চালাচ্ছি।
কিছু বলবেন?
-- নাহ, এমনিতেই ফোন দিয়েছিলাম।
-- আচ্ছা, তাহলে রাখছি।
এই বলে ফোন কেটে দিলাম।
নিহা ভাবছে যে ছেলেটা রাস্তায় ওর সাথে এত্তো কিছু করল আজ আমার নাম্বার পেয়েও বেশি কিছু বলেনি।
-- এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে বদলে গেল?
ফোন রাখার পাঁচ মিনিটের মধ্যে একটা ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এলো। প্রফাইলে কোন ছবি ছিল না শুধু একটা কার্টুনের ছবি দেওয়া।
কিন্তু আইডির ভেতরে ঢুকতেই দেখি নিহার বোনের ছবি আর পুরো পরিবারের ছবিও আছে। আমার আইডিটা ফোন নাম্বার দিয়ে খোলা তাই হয়ত সহজেই খুজে পেয়েছে।
এক্সেপ্ট করার সাথে সাথেই মেসেজ আসলঃ--
-- এইটা আমার আইডি।
-- আর আপনি নিহা,, তাই তো?
-- একদম তাই।
এভাবে অনেক্ষণ কথা হলো,,
সকাল হতেই আমি প্রথমে হাসপাতালে গেলাম,, বাড়িতে পাঁচ হাজার টাকা নিলাম বন্ধুর কাছে থেকে।
বাবার সব টাকা পরিশোধ করে বসে রইলাম।
আজ অপরেশন করানো হবে। মা,, ছোট বোন আরো কয়েকজন আত্নীয় কান্না-কাটি করছে।
আজ টিউশনিতে যেতে পারব না,, আমি আমি গতকাল রাতে নিহাকে মেসেজ দিয়ে বলে দিয়েছি।
বেলা গড়াতেই বাবার অপরেশন সফল ভাবে শেষ হলো। সবাই খুশি। আর কোন চিন্তা নেই।
তবে আমার চিন্তা আরেকটু বেড়ে গেল। এবার সত্যি সত্যিই একটা চাকরি খুজতে হবে,,বাবার ঔষধ পত্রের খরচও বেড়ে যাবে,, আমি চায় যেন আমার টাকায় সংসার চলে। বড় হয়েছি নিজের বিবেকই বলে দেয়।
পরদিন আবীরকে পড়ানোর পর জয়াদের বাসায় গিয়ে কলিং বেল চাপার সাথে সাথে নিহা দরজা খুলল।
বিশ সেকেন্ডের বেশি সময় নেয়নি।
আমি অবাক হয়ে গেলাম,, এতো তাড়াতাড়ি আমিও কোন দিন দরজা খুলিনি।
তার মানে একটায় নিহা আমার জন্য অপেক্ষা করছিল।
জয়াকে আজ বেশিক্ষণ পড়াতে পারব না। কারন, আজ বাবাকে বাড়ি নিয়ে আসব। তাই তাড়াহুড়ো করে পড়ানো শেষ করলাম।
নিহার বাবা রুমে থেকে এস বললেনঃ--
-- তা বাবা, তোমার বাবা এখন কেমন আছে?
-- জ্বী আঙ্কেল এখন অনেকটা সুস্থ। আজকেই নিয়ে আসব।
-- তাই ভালো। তবে খেয়াল রেখ যেন আবার অসুস্থ না হয়ে পড়ে।
পাশেই নিহা দরজার মধ্যে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। আমার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,, কেমন রোমান্টিক মায়া ভরা চোখে।
আমি একবার তাকানোর পর আর ফিরে তাকায়নি।
আজকের মতো আসি বলে উঠে দাড়ালাম। ইতিমধ্যে জয়া আর তার বাবা এখান থেকে চলে গেছেন।
রুম থেকে বের হওয়ার জন্য পা রাখতেই নিহা পথ আটকে দিল।
আমার সামনে হাত বাড়িয়ে দিল,, হাতে কতগুলো পাঁচ শত টাকার নোট।
-- এগুলো কেন? কিসের টাকা? (আমি)
-- কাল যে পাঁচ হাজার টাকা কম নিয়ে বাসায় গেলেন সেই পাঁচ হাজার এখনে। তবে এগুলো বাবার দেওয়া না,, আমার জমানো টাকা। (নিহা)
-- লাগবে না,, জোগাড় হয়ে গেছে।
-- এবার কিন্তু আমি চেচাবো। নিন বলছি। (নিহা)
-- কিন্তু আমি পাঁচ হাজার দিয়েছি আপনি জানলেন কি করে?
-- যাকে দিয়েছেন সে আমাদের পাড়ায় ই থাকে। খোঁজ নিয়ে জেনেছি।
-- কিন্তু কেন?
-- সেটা আমার ইচ্ছা। ধরবেন কিনা বলেন? আর হ্যাঁ এই টাকা আপনি ফেরত না দিলে খুশি হবো। কেন ফেরত নেব না সেটা আর জিজ্ঞেস করবেন না কিন্তু। ধরেন।
-- তবে,,, আমি....
-- কোন কথা বলবেন না।
অতঃপর টাকা হাতে নিলাম।
-- আচ্ছা, এবার তাহলে আসি।
আবার বাহিরে পা বাড়াতেই নিহা শার্টের কলারে টান দিয়ে কাছে নিয়ে আসল।
-- এই যে,,, মি. হঠাৎ এতো পাল্টে গেলেন যে। ফোন দিলে বেশি কথা বলেন না ব্যাপার কি? অন্য কোন মেয়ে পেছেন নাকি? ফেসবুকে দেখলাম মেয়ে পটানোর অনেক স্ট্যাটাসও দিয়েছেন। (নিহা)
-- আরে কি করছেন এইসব। ছাড়েন ছাড়েন,, এক্ষুনি কেউ চলে আসবে। (আমি)
আমি জোড় করে শার্টের কলার ছাড়িয়ে নিলাম,, একটু তাড়াতাড়ি সিড়ি বেয়ে নামছি।
-- যতই লাফালাফি করেন না কেন কোন কাজ হবে না। রিলেশনশীপ স্ট্যাটাসটা কিন্তু আমার সাথেই দিতে হবে। (আমি চলে আসার সময় নিহা চেচিয়ে চেচিয়ে বলছে। আমি স্পষ্ট শুনতে পেয়েছি)
ডিয়ার স্যার কথাটা মনে থাকে যেন।
আমি ভাবছি,,
এতো ভয়ংকর মেয়ে আগে কখনো দেখিনি।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
-- আপু তুই স্যারের গায়ে হাত তুলছিস কেন? (জয়া)
কথাটা শুনে নিহা চমকে গেল। দোখ দু'টো বড় বড় হয়ে গেল।
-- তুই দেখলি কি করে? ( অনেকটা ভয় নিয়ে জয়াকে জিজ্ঞেস করল)
-- আমি রুমে থেকে বের হয়ে রান্না ঘরে যাচ্ছিলাম তখন দেখছি। (জয়া)
-- আর কেউ দেখেনি তো? আর তুই কাউকে বলিসনি তো? (নিহা)
-- না বলিনি,, তবে এখন আম্মুর কাছে সব বলে দেব,, তুই স্যারের গায়ে হাত দিয়ে কথা বলেছিস। স্যারদের গায়ে হাত দেওয়া অপরাধ তুই জানিস না? (জয়া)
নিহা কিছুক্ষণ চুপ হয়ে দাড়িয়ে রইল। কি করে ছোট বোনের মুখ বন্ধ করবে বোঝতে পারছে না। আর যদি একবার আম্মু বা আব্বুর কাছে বলে দেয় তাহলে সর্বনাশ।
-- জয়া,, বোন আমার। তোর না কোন চকলেট সবচেয়ে বেশী পছন্দ? তুই না কোন জামা পড়তে পছন্দ করিস,, আমি কিন্তু জানি। ভাবছি এবার কিনে দেব।
এই কথা শুনে ছোট বোন খুশিতে আত্নহারা হয়ে উঠে,, ইতিমধ্যে কয়েকটা নাচও দিয়ে ফেলে।
-- সত্যিই কি কিনে দিবি? (অবাক হয়ে)
-- হুম, কিনে দিতাম তবে... ভাবছি কি করা যায়। তুই যদি আমার একটা কথা মনে রাখিস তাহলে অবশ্যই কিনে দেব।
-- আমি তোর সব কথা মেনে চলব,, তুই একবার বলে তো দেখ।
-- বেশী কিছু না তবে আমি যে স্যারের গায়ে হাত দিছি তা কাউকে বলতে পারবি না। যদি তুই বলে দিস তাহলে তোরই ক্ষতি,, পরিক্ষায় ফেল করবি। কারন, স্যার লজ্জায় আর তোকে পড়াতে আসবে না। আর যদি না বলিস তাহলে তোর রেজাল্টও ভালো হবে,, আমি চকলেট আর কাপড়ও কিনে দেব।
অনেক চেষ্টার পর নিহা জয়ার মুখ চুপ করাতে সক্ষম হয়েছে।
টিউশনি থেকে বের হওয়ার পর সোজা হাসপাতালে বাবার কাছে চলে গেলাম। সব কিছু শেষ হওয়ার পর ডাক্তার বাবাকে শেষ বারের মতো চেকআপ করে নিলেন। অবশেষে হাতে ছাড় পত্র পেলাম। কোন রকম দেরি না করে বাবাকে বাসায় এলাম।
বাবা পাশে থাকলে অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করে,, এখন যেন মনের জোড় বেড়ে গেল। নিয়মতি ঔষধ খাওয়ানোর জন্য ঔষধের একটা লিস্ট করা দরকার। রাতে বসে বসে লিস্ট লিখছিলাম। আমার ফোনের নেট কানেকশন সব সময় অন থাকে। বিদেশ থেকে অনেক আত্নীয়-স্বজনরা ফোন দেয়।
হঠাৎ ফোনটা টুইং করে বেজে উঠে। লক খুলে হাতে নিয়ে দেখলাম কোন এক অপরিচিত মেয়ে আমার কোন পোষ্টে কমেন্ট করেছে।
কমেন্টটা দেখে রীতিমত ভয় পেয়ে যায়।
চারদিন আগে একটা পোষ্ট করেছিলামঃ--
টর্চ লাইট দিয়ে কত্তো খুজলাম কিন্তু কোন মেয়ের সন্ধান পেলাম না।
তাই আজও নিজের কাপড় নিজেকেই ধুইতে হয়।
অচেনা মেয়েটি কমেন্টে বললঃ--
-- আমাদের কি আর কোন দিন দেখা হবে না? (কমেন্টটা দেখে আমি বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে যায়)
-- কে আপনি? আর কাকে কি বলছেন?
-- এতো দিন তো ভালোই খোঁজ নিয়েছো আজ হঠাৎ চিনতেই পারছো না।
এই কমেন্টগুলোর মধ্যে ঘটল আরেক মাথা গরম করা ঘটনা। ঠিক ঐ সময় নিহাও অনলাইনে চলে আসে। সেও কমেন্টগুলো পড়তে লাগল। আর প্রত্যেকটা কমেন্টে রাগী ইমুজি দিতে লাগল।
-- আপনি হয়তো ভুল কারো পোষ্টে কমেন্ট করছেন,, ভালো করে দেখে নিন।
-- ভুল তো আমার সেদিন হয়েছিল যেদিন তোমার মিথ্যে ভালবাসায় জড়িয়ে ছিলাম। ভালো করে আর কি দেখার আছে? তুমি হয়তো ভুল করতে পার তবে আমি কোন ভুল করিনি।
এবার আমার রাগ হতে লাগল... মাথা প্রায় গরম হয়ে গেছে।
-- ঐ মেয়ে কি সমস্যা তোর? ফাইজলামি বন্ধ কর।
-- তোমার শাসনের প্রতিটা মুহূর্ত আজ ও আমার মনে গভীর ভাবে জায়গা দখল করে আছে। কেন আমি তোমাকে ভুলতে পারি না?
-- তাহলে বিষ চিনেন বিষ? যা দিয়ে ইদুর মারা হয় ঐটা খেয়ে নিন। না হয় কচু গাছে ফাঁসি নেন। ফালতু।
-- তুমি চাইলে মরতেও রাজি।
এর মধ্য দিয়ে এক ছেলে কমেন্টের মাঝে রিপ্লে দিলঃ--
-- আহ কি রোমান্টিক ! বেঁচে থাকুক এমন ভালবাসা।
আমার মেজাজ এতোটা গরম হয়ে গেছে যে ইচ্ছা করছে মেয়েটাকে গরম তেলে ইচ্ছে মতো চুবাই।
অতঃপর মেয়েটি রিপ্লে দিল...
-- হয়তো কোন দিন তোমাকে ভুলতে পারব না।
আমি সাথে সাথে ব্লক দিয়ে দেয়।
কপাল বেয়ে বেয়ে ঘাম ঝরছে। আমি সত্যিই এই মেয়ে চিনি না। নিহা কি ভাবছে? আমি প্রেম করি?
নিহা তো সবগুলো কমেন্টে রিয়েক্ট দিয়েছে। তার মানে প্রতেকটা কমেন্ট দেখেছে।
সে হয়তো খুব রেগে আছে। একটা কল দেওয়া উচিৎ। ফোনটা হাতে নিলাম,, তখন ভাবলাম এখন যদি ফোন দেয় তাহলে কি না কি বলবে। তার চেয়ে ভালো বরং কাল বাসায় গিয়ে ঠান্ডা মাথায় সব বোঝিয়ে বলব।
ফ্যানটা অন করলাম,, খট খট শব্দ করে মাথার উপর ঘুরছে। আমি বিছানায় শুয়ে ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আছি।
ভেবছি নিহা হয়তো সত্যিই আমাকে এখন খারাপ ভাবছে। হয়তো আর কোন দিন কথা বলবে না।
কথাগুলো ভাবতে না ভাবতে ক্রিং ক্রিং শব্দ করে বেজে উঠল।
হাতে নিয়ে দেখি নিহার কল। এই বার সেরেছে। আল্লাহ্ জানে কি না কি বলে।
ভয়ে ভয়ে ফোনটা রিসিভ করে কানে দিলাম। কানে দিতেই নিহা কোন কথা জিজ্ঞেস না করেই বলছেঃ--
-- আহা, কি মধুর প্রেম,,, সত্যিই প্রান জুড়িয়ে গেল। সচারাচর এরকম প্রেম কাহিনী খুব কমই চোখে পড়ে।
-- আরেহ আমি চিনি না এই মেয়েকে,, (আমি)
-- তো কাল আসবেন তো বাসায়? জয়াকে পড়ানোর জন্য তখনই না হয় সব কিছু ফাইনাল করে নেব। (নিহা দাতঁ কামড়ে কট কট শব্দ করে বলল)
এই রে,,, ও তো প্রচন্ড রেগে আছে।
এইবার কি হবে? কি করে বোঝাব যে এই মেয়েকে আমি একদম চিনি না?
তারপর নিহা রাগ দেখিয়ে ফোন কেটে দিল।
আমি কল দিলাম,, বার বার চেষ্টা করছি। কিন্তু ফোন বন্ধ আসছে। কাল গিয়ে কিভাবে বোঝাব যে আমি ঐ মেয়েকে চিনি না?
কিছুক্ষনের জন্য চোখটা বন্ধ করে ভাবছি কি বলব।
কাল যখন তাদের বাসায় যাব নিহা নিশ্চয় জিজ্ঞেস করবে আমার কয়টা মেয়ের সাথে সম্পর্ক আছে।
আমি বলব সব মিথ্যা,, না হয় তুমি খোঁজ নিয়ে দেখ।
অথবা কোন বন্ধুকে সামনে নিয়ে গিয়ে বলব,,,
এইটা ফেক আইডি ছিল,, আর সে আমার সাথে মজা করছে।
আবার চিন্তা করলাম আমি এতো কিছু কেন করব? নিহা তো আমার গার্লফ্রেন্ড না,, আমি তো কখনো প্রপোজ করিনি। তবে এতো কিছু করার কি দরকার? ভাবতে ভাবতে চোখে ঘুম চলে আসল। কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম বোঝতেই পারিনি।
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি নিহার সতেরটা মিসড কল। মাথা পুরো
গরম হয়ে গেল.....
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
সতেরটা মিসড কল ! চোখ দুটো রসগুল্লোর মতো বাইরে বেরিয়ে আসল।
চোখ মুছতে মুছতে কল দিলাম...
-- হ্যালো,, কি হইছে আপনার? এতোগুলো মিসড কল দিলেন যে।
-- কতগুলো মিসড কল দিছি কি দিছি না তা আমার ব্যাপার,, এখন বলেন ফোন ধরেন নাই কেন?
-- রাত আড়াইটায় ফোন দিবেন তা উপর আবার বলেন ধরিনি কেন,, আর আপনি এমন ত্যাড়া ত্যাড়া কথা বলছেন কেন?
-- কিহহ ! আমি ত্যাড়া কথা বলছি? সারা রাত মেয়েদের সাথে প্রেম করেন আবার আমার সাথে এমন ব্যবহার করেন।
-- দেখুন একদম বাজে বকবেন না,, ভালো হবে না কিন্তু,, সকাল সকাল ঝগড়া করতে চায় না।
ফোনে কথা বলা অবস্থায় পাশের রুম থেকে ছোট লাফিয়ে লাফিয়ে রুমে এসে বললঃ--
-- ভাইয়া, ভাইয়া আজকে আমার স্কুলে বার্ষীক অনুষ্ঠান তুই আমাকে একটু পর নিয়ে যাবি। আমি রেডি হতে যাচ্ছি।
দুই পা পিছনে গিয়ে ফিরে তাকাল।
-- আর শোন বিকেলে মা বলছে বাবাকে আবার ডাক্তার দেখানোর জন্য।
আমি ফোনটা হাত দিয়ে চেপে ধরে বললঃ--
-- আচ্ছা, তুই এখন যা।
আবার ফোনটা কানে নিলাম...
নিহা চমকে উঠে বললঃ--
-- মেয়ের কণ্ঠ ! আপনার পাশে কে?
-- আমার বোন,, কেন কি হয়েছে?
-- নাহ, কিছু না। তবে আজ যদি এগারোটায় চলে আসতেন তাহলে ভালো হতো। বিকেলে সবাই বেড়াতে যাবো।
-- না,, আজকে আর আসতেই পারব না। একটু পর বোনকে নিয়ে তার স্কুলে যেতে হবে আর বিকেলে ডাক্তারের কাছে যাব। হাতে কোন সময় নেই। আর আপনি চিন্তা করবেন না,, মাস শেষ হলেই টাকা নেব।
এই বলে ফোন কেটে দিলাম।
টাকার কথা শুনে নিহা চোখ দুটো আগুনের মতো লাল হয়ে গেছে।
সে ভাবতে থাকে...
ওর সাথে কি আমার টাকার সম্পর্ক? কিভাবে এতোটা পাল্টে যেতে পারে? তাও আবার হঠাৎ করেই। না আর এভাবে চলতে পারে না,, কিছু একটা করতেই হবে।
এদিকে বিদ্যুৎ গতিতে ছোট বোন একবারে রেডি হয়ে চলে আসে। আমি এখনো বিছানা ছেড়ে উঠিনি।
-- আচ্ছা, বলতো তুই কি মানুষ না রোবট সোফিয়া? (আমি)
-- আমি তোর বোন আর তুই মানুষ হলে আমিও মানুষ। কিন্তু হঠাৎ এই কথা জিজ্ঞেস করলি কেন?
-- কারন, আমি এখনো বিছানা ছেড়ে উঠিনি আর তুই একবারে রেডি হয়ে আসলি।
-- হিহিহি। অলস হাতি একটা।এখন তুই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আয়,, না হয় তোর উপর পানি ঢেলে দেব।
আমি তৈরি হতে প্রায় বিশ মিনিট সময় লেগেছে আর তাতে বোন রেগে মুখ ফুলিয়ে রেখেছে।
ওর রাগ দেখে মজা লাগছে,, তাই ভাবছি আর একটু রাগিয়ে দেয়।
তারপর বিছানার উপর বসে গামছা দিয়ে চুল মুছছি,, কখনো আয়নায় চুল ঠিক করছি আবার কখনো কাপড় স্ত্রী করছি।
এর মাঝে আবার মা ডাকতে লাগল খাওয়ার জন্য।
বোনের দিকে তাকিয়ে লক্ষ্য করছি আর একটু দেরি করলেই রাগের বোম ফাটবে অর্থাৎ হয়তো হাতে কামড় বসাবে নয়তো আমার চুল টেনে ছিড়বে।
-- আয় খেতে যাব? তারপর না হয় স্কুলে যাব।
-- তোর আর কিচ্ছু করতে হবে না,আমার সাথেও যেতে হবে না। থাক তুই বাসায় আমি একা একাই বাসে করে যেতে পারব। আমি গেলাম অলস হাতি। (প্রচন্ড রাগ দেখিয়ে বলল)
আর খেতে পারব না,, বোন রেগে গেছে। আমার শার্টের বোতাম লাগানো হয়নি তবুও বোতাম লাগাতে লাগাতে ছুটলাম আদরের বোনটার পিছে। প্রচন্ড রাগী একদম নিহার মতো।
অবশেষে বোনকে নিয়ে স্কুলে আসলাম। অনুষ্ঠান অনেক আগেই শুধু হয়ে গেছে। এই কারনে বোনটা চোখ ভরা রাগ আর দাঁত কামড় দিয়ে তাকাল।
আমি ইশরায় বললামঃ--
:- সরি.......
স্কুলেন ভেতর চার পা হাটে সামনেন দিকে তাকাল।
চোখটা মুছলাম আমি যা দেখছি তা সত্যি তো?
যদি সত্যি হয় তবে আজকে কপালে খুব খারাপ কিছু আছে।
আমার ঠিক সামনেই নিহা ড্যাপ ড্যাপ করে তাকিয়ে আছে।
আমি আর হাঁটতে পারছি না। মনে হচ্ছে পা দুটো চোরা বালির মধ্যে আটকে গেছে।
চোখ দুটো ক্রমশ বড় হতে লাগল। সাথে সাথে আমার ভয়টাও বাড়তে লাগল। সাথেই বোন,, ও তো সব জেনে যাবে।
আমাকে হঠাৎ দাড়িয়ে যাওয়া অবস্থায় দেখে বোন বললঃ--
-- কি হলো আয়?
আমি কর্কশ কন্ঠে বললামঃ--
-- তুই যা আমি আসছি।
অতঃপর বোন চলে গেল।
নিহা দ্রুত পা চালিয়ে আমার কাছে চলে আসল,, হাতটা ধরে স্কুলের পিছনে নিয়ে গেল।
এই মুহূর্তে দু'জন সামনা-সামনি দাড়িয়ে আছি। আমি মাটির দিকে মাথা দিয়ে ভাবছি....
-- এখন কি বলব? আর নিহা স্কুলে আসল কেন? হয়তো কালকে রাতের ব্যাপরে কিছু বলবে।
রাতে যে মেয়েটি পোষ্টে কমেন্ট করেছিল আমি তাকে চিনি না,, কিন্তু এই কথা নিহা বিশ্বাস করবে না। আমি সাথে কোন বন্ধুকেও নিয়ে আসিনি যে, বলবে ঐটা তার ফেক আইডি ছিল।
এখন যদি নিহা জানতে চায় তাহলে কি বলব?
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে নিহা হাতের ফোনটা গায়ের জোড়ে মাটিতে ছুঁড়ে মারল। ডিসপ্লেটা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে গেছে। ব্যাটারিটা ছিটকে এসে আমার পায়ের কাছে পড়ল। এতো দামি মোবাইল ঙেঙ্গে দিছে?
চোখ বড় বড় করে নিহার দিকে তাকালাম... ও রীতিমত সাপের মতো যেন ফুস ফুস করে রাগতে শুরু করল।
চোখের কোনে পানি টলমল করছে।
-- কি হয়েছে আপনার? এরকম করতেছেন কেন? আপনার পঞ্চাশ হাজার আমি খুব তাড়াতাড়ি দিয়ে দেব। (আমি করুন সুরে বললাম)
টাকার কথা বলায় নিহা আরো রেগে গেল। প্রচন্ড !!
নিহা দু পা সামনে এগিয়ে আসলঃ--
-- এই এটা কোন ধরনের স্বভাব? আপনি আপনি কিসের হ্যাঁ? (চোখের কাছে আঙ্গুল নিয়ে বলল)
-- তো কি বলব?
-- তুমি করে বলতে পার না? নিজের ইচ্ছায় অনেক কাজ করেছে আর পারবা না।
-- কেন পারব না?
-- আমি করতে দেব না।
অবশেষে চোখের জল মুছে কানে কানে বলে দিল।
আই লাভ ইউ !!
পাশে তাকিয়ে দেখি বোন হাঁ করে দাড়িয়ে আছে। যেন টাইটানিক মুভি দেখতেছে।
নিহা তার কথাটা বলে দিয়ে চলে যাচ্ছে।
-- এই যে, আপনার মোবাইটা নিয়ে যান।
-- আবার আপনি বলছো?
-- এই যে, তোমার ফোনটা নিয়ে যাও।
-- এই বার ঠিক আছে। লাগবে না ফোন,, ফোনের জীবন শেষ।
-- তাহলে এইটুকু কারনে ভাঙ্গার কি দরকার ছিল?
-- কারন, এইটা দিয়েই তোমার ঐ নোংরা কমেন্টগুলা দেখতে হয়েছে।
নিহা চলে গেল।
বোন কাছে এসে বললঃ--
-- ভাবিটা কিন্তু তোর চেয়ে সুন্দর। তো এসব কবে থেকে?
-- ও যে তোর ভাবি সেটা তোকে কে বলছে শুনি? আমি কি না জানিয়ে বিয়ে করে ফেলছি?
-- তাহলে হবু ভাবি,, তোর সাথে কিন্তু দারুন মানাবে। কাইল্লা + সুন্দরী।
-- দেখ কাইল্লা বলবি না।
-- হইছে হইছে আর ঝগড়া করতে হবে না।
-- হবু ভাবি কিন্তু তোর চেয়ে বেশি রাগী সামলাতে পারবে তো?
-- তোর মতো আস্তো অলস হাতিই যেহেতু সামলাতে পারছি তাতে ভাবি সামলানোর কোন সন্দেহ নেই।
-- তবে মা আর বাবাকে কিন্তু এখন কিচ্ছু বলতে পারবি না। আগে চাকরি জোগাড় করে নেয় তারপর।
-- তো এসব কবে থেকে শুনি?
-- কিছু দিন মাত্র,, এখনই যে রাগ আর সামনে আর কি বাকি আছে আল্লাহ্ জানে।
কিন্তু কে শুনে আমার কথা? তার উপর বোন যদি এতোটা পাজি হয়।
রাতের বেলা কানে হেড লাগিয়ে গান শুনছি।
মা হাতে দুধের গ্লাস হাতে নিয়ে রুমে আসল। টেবিলের উপর গ্লাসটা রেখে বিছানায় আমার পাশে এসে বসল।
মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। কি জানি বলছে,, কানে হেড ফোন থাকায় ঠিক মতো শুনতে পারছি না।
মা গায়ে ধাক্কা দিল...
আমি কান থেকে হেড ফোন নামিয়ে মায়ের দিকে তাকালাম।
লক্ষ্য করলাম মায়ের মুখে খুশির বন্যা বয়ে যাচ্ছে। মায়ের ঠোঁট যেন হাসছে।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
-- এতো খোঁজ খবর নিতে হবে না,, আমি নিজেকে সব সময় অন্য মেয়েদের থেকে বাঁচিয়ে রাখি। (আমি)
-- হুম,, আমার ভয়টা তো ঠিক এই জায়গায় ই। তুমি না হয় নিজেকে বাঁচিয়ে চলাফেরা কর কিন্তু অন্য মেয়ে যদি তোমার প্রেমে পড়ে তখন? (নিহা)
নিহা মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবলামঃ--
-- আহ, কি গুয়েন্দা রে বাবা।
-- এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? না বাবা আমি এতো কিছু জানি না। তোমার কোম্পানির ম্যানেজারের প্রতি আমার একটুও বিশ্বাস নেই। মহিলা চাকরি করে তার উপর আবার এখনও বিয়ে হয়নি। নিশ্চয় কোন না কোন কারন আছে,, এখন যদি তোমার প্রেমে পড়ে তখন আমার কি হবে? (নিহা)
কথার মধ্যে কোন বিরতি নেই। একটানা বক বক করেই যাচ্ছে,, মাথায় যা আসছে তাই বলছে। আমি মাথা হেলিয়ে নিহার দিকে তাকিয়ে আছি। কোন কিছু বলার সুযোগ পাচ্ছি না আর বললেও কানে যাবে না।
দু'পা এগিয়ে নিহার কাছে গিয়ে হাত দিয়ে মুখটা চেপে ধরলাম।
-- এবার চুপ কর, এতক্ষণ ধরে বলেই যাচ্ছ যদি কেউ শুনে তবে কি হবে?
নিহা মুখ থেকে হাত সরিয়ে বললঃ--
-- বিয়ে করিয়ে দিবে।
-- আগে তোমার পরিক্ষা শেষ হোক তারপর না হয় ঐ ব্যাপারে ভাববো। এবার আমি আসি,, রাতে ফোন করব। ঠিক আছে?
রুম থেকে বেরিয়ে যাব ঠিক ঐ মুহূর্তে নিহা পিছন থেকে হাত ধরে বলেঃ--
-- তাহলে কথা দাও যত দিন আমার পরিক্ষা না শেষ হচ্ছে তত দিন তোমার অফিসের মহিলার সাথে কাজের কথা ছাড়া অন্য কোন কথা বলবা না,, সব সময় শুধু মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিবা।
নিহার গালে টান দিয়ে বললামঃ--
-- বাহ্ তুমি আমার কতো খেয়াল রাখ,, কতটা কেয়ার কর,, মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে তোমাকে পার্সেল বানিয়ে কাঁধে ঝুলিয়ে রাখি। আর মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে তোমাকে রুমে তালা দিয়ে পালিয়ে যায়,, যেমনটা এখন করতে ইচ্ছে করছে।
ছাড় ছাড় তোমার বাবা আসছে মনে হয়। নিহা তাড়াহুড়ো করে হাতটা ছেড়ে দিয়ে একুট দূরে সরে দাড়ালো। কিন্তু নিহার বাবা আসেনি। সুযোগটা কাজে লাগিয়ে আমি পালিয়ে আসলাম। না হয় কে জানে আরো কত রকমের নিয়ম বেঁধে দিত। পুরো মাথা নষ্ট মেয়ে একটা।
বাসায় আসতেই মা ভীষণ খুশি মুখে সামনে এসে দাড়ালো।
-- নিশ্চয় তুই বউমার সাথে দেখা করে এসেছিস,, কই এবার ছবিটা দেখা তো।
পেছন পেছন বাবাও চলে এসেছে।
-- আমাদের আর কষ্ট করে বউ খুঁজতে হবে না,, তুই সেরে ফেললি।
বাবার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম।
-- বাবা জানল কি করে?
ছোট বেলা থেকেই বাবাকে খুব শ্রদ্ধা করি,, কি বলব বোঝতে পারছি না।
মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলাম। লজ্জায় মুখ লাল হয়ে গেছে।
-- দেখি মেয়ে ছবিটা,, (বাবা)
-- আমি তো আজ পর্যন্ত ওর কোন ছবি তুলিনি। (মাথা নিচু করে বললাম)
-- তাহলে বাসার ঠিকানাটা দিস তো,, কথা বর্তা ঠিক করে রাখব।
আমি ভাবছি বাবাকে এসব ব্যাপারে রাজি করাল কে? আর কি ভাবে? আমি তো ভয় পায়।
এভাবে সুন্দর ভাবেই এক সপ্তাহ কেটে গেল। কিছু দিন ধরে নিয়মিত অফিস করছি। এখন আর নিয়মিত টিউশনির জন্য নিহাদের বাসায় যাওয়া হয়না। ওদেরকে অনেক মিস করছি। বিশেষ করে নিহাকে।
গতকাল অফিসে যাওয়ার সময় হঠাৎ করে হাতের ফোনটা বৃষ্টির পানিতে পড়ে সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে গেছে। সার্ভিসিংয়ের দোকানে নিয়ে গেছি কিন্তু দুই দিন সময় চেয়েছে। ফোন নেই বলে এখনো কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না।
হয়তো নিহা ক্রমাগত ফোন দেওয়া চেষ্টা করে যাচ্ছে কিন্তু আমার ফোন তো বন্ধ।
পরদিন সকালে ফ্রেশ হয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হলাম।
খাবার টেবিলে সবাই বসে ব্রেকফাস্ট করছি।
পরিবারের সবাই এক সাথে আবার খাচ্ছি,, হঠাৎ করে কলিং বেল বেজে উঠল।
-- এতো সকাল সকাল আবার কে আসল?
মা বলতে বলতে দরজাটা খুলল।
নিহা দ্রুত গতিতে ঘরের ভেতর ঢুকল।
আর খেতে পারলাম না।
-- আমি জানতাম তুমি ঠিকই স্বাভাবিক ভাবে নিজের কাজ করছো,, নতুন ম্যানেজার পাইছো তো তাই ভুলে গেছো। এ জন্যই সন্দেহ করছি। (নিহা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে)
আমার গলা দিয়ে খাবার নামছে না আর তুমি দিব্যি হাসের মতো গিলে যাচ্ছো। দুই দিন ধরে ফোন বন্ধ,, মাথায় আছে? নাকি ঐ মহিলা মাথাও খেয়ে ফেলেছে। (নিহা)
-- আরে ভাবি তুমি !! কি ব্যাপার? (বোন)
-- কার ভাবি? আর কে এই মেয়েটা? (মা)
বাবা হা করে তাকিয়ে আছে।
-- তোমাকে বলেছিলাম না ভাইয়া আর ঐ মেয়েটার কথা,, এটাই ভাবি। (বোন)
মা যেন খুশিতে লাফিয়ে উঠল।
-- বাহ্ বউ তো দেখতে খুব মিষ্টি। ওগো আমাদের ছেলের পছন্দ একটুও খারাপ না.... (মা বাবার দিকে তাকিয়ে বলছে)
এখন আমার মনে হচ্ছে আমি যেন কোন এক কমেডি শো দেখতেছি। হাসব না কাঁদবো বোঝতে পারছি না। এদিকে নিহা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে।
বসা থেকে দাড়িয়ে গেলাম।
-- কি আজে বাজে বলছো? মা-বাবা দেখতে পারছো না?
-- ঠিক তোমার মতো একটা মেয়েই খুজছিলাম,, এই মাথা মোটাকে সোজা করার জন্য।
বাবা টেবিলে বসে মুচকি মুচকি হাসছে,, আমারও যেন কি রকম লজ্জা লাগছে। অতঃপর রুমে চলে গেলাম।
মা নিহার হাত ধরে রুমে নিয়ে গেল,, অনেক্ষণ ধরে কি যেন বলছে। অনেকক্ষণ পর রুম থেকে বর হলো।
আজ আর অফিসে যেতে পারলাম না। ল্যাপটপ দিয়ে কাজ শেষ করতে পারব তবুও কেমন জানি লাগছে।
-- বউ মা, তুমি কফি খেতে ভালবাস?(মা)
আমি অভাক হয়ে রইলাম,, এখনও বিয়েই হলো না আর বউ হয়ে গেল? বিয়ের পর জানি কি হয় আল্লাহ জানে।
-- হুম,, আমি কফি পছন্দ করি।
তারপর মা কফি নিয়ে আসল।
-- আচ্ছা, আমাদের বাড়িটা পছন্দ হয়েছে তো? (মা)
-- একটু ও খারাপ না,, তবে আপনাকে সবচেয়ে বেশি পছন্দ হয়েছে। (নিহা মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল)
মা নিহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।
আমি রুম থেকে বের হয়ে নিহার হাত। পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে বললামঃ--
-- এই নাও,, তোমার টাকা।
-- আমার দরকার নেই।
-- কেন?
-- ধরে নাও হবু বউ হওয়ার কর্তব্য পালন করলাম।
অতঃপর মা নিহাকে এক এক করে ঘরের রুম দেখাতে লাগল,,,,
-- এটা তোমাদের রুম হবে,, এটা পাক ঘর, এটা বাথরুম, এটা গেস্ট হাউজ
ইত্যাদি ইত্যাদি।
ছোট বোনটা পেছন পেছন ঘুরঘুর করছে। বাবা সোফায় বসে বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছেন।
মা বলল নিহার ইন্টার পরিক্ষা শেষ হলেই বিয়ের কথা পাকাপাকি করে ফেলবেন।
এখন আপাতত তাদের বাসায় গিয়ে কথা বলে সব ঠিক করে রাখবে।
0 মন্তব্যসমূহ