অধিকার নেই পার্ট,03

অধিকার নেই পার্ট,03

অধিকার নেই
W:আফসানা মিমি
পার্ট,03
প্রায় দেড় মাস পর।জানুয়ারির প্রথম দিকে।ইতালিতে বেশ ঠান্ডা পড়েছে।
অর্ক রাস্তার পাশে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।ওর চোখে পরল একটা মেয়ে আসে পাশে না তাকিয়ে দৌড়ে কি যেনো আনতে যাচ্ছে।অর্ক দেখলো দুই পাশে দিয়ে গাড়ি আসছে।অর্ক দৌড়ে কাঁধের কাছে জেকেটের টুপি ধরে টেনে দুই পা পিছনে টেনে আনে মেয়েটিকে।আর গাড়ি টা আর একটুর জন্য ধাক্কা দিয়ে যায়নি।
অর্ক; ম্যাম বি কেয়ারফুল।
বিয়ের দুই দিন পর অৰ্কদের পরিবারের সাথে নীড়দের পরিবার আবার বৈঠকে বসে।নীড়ের বাবা ,মামা খোঁজ নিয়ে দেখে ছেলে অনেক ভালো।খারাপ কোনো রেকর্ড নেই।ভাবির বাড়ি খবর নিয়ে জানা যায়।স্বামী নেশা করে তাই সংসার ছেড়ে চলে এসেছে।যখন অর্ক নির্দোষ প্রমাণিত হয়।অর্ক মলিন মুখে হাঁসি ফুঁটে।
অর্ক;(যাক সব ঠিক হয়ে গেল।এখন আমার নীড় ফাইনালী বাড়ি ফিরবে।জানি না মেয়েটা কিভেবে বসে আছে?আজ যখন ওর পরিবারের ভুল ভাঙ্গল আসা করি ওর মনেও কোনো সন্দেহ নেই আমাকে নিয়ে।আর থাকলে তা আমি দূর করে দিব।)
(নীড় এর বড় ভাই এর শশুর কখনো চাইনি নীড়কে অন্য কারো ঘরের বউ হতে দিতে।নীড় কে ছেলের বউ করবে সে তার অনেক দিনের স্বপ্ন।তার ছেলে একটা এক্সিডেন্ট এর পর থেকেই বাহাতে একটু সমস্যা হয়।হাতে নাড়াতে অনেক সমস্যা হয়।ছেলে হিসেবে খুব বেশি ভালো না।নীড় এর ভাই এক্সিডেন্ট এর পর নীড়কে বাংলাদেশ পাঠিয়ে দেয় বিয়ে দিবে না ওই ছেলের কাছে।ওই ছেলে তখন uk তে থাকে।নীড় কখনোই দেখেনি ।বিয়ে যে মোটা মুটি ঠিক ছিল সে সম্পর্কে শুধু নীড়ের ভাই ভাবি,মা,বাবা,আর নীড়ের ভাইয়ের শশুড় শাশুড়ি জানতো।নীড় বাংলাদেশ আসার পর ওর বিয়ের কাজ আসতো কিন্তু কেউ দেখে গেলে ফিরে আসতো না।আবার সব ঠিক হলেও কোন কিছু একটা হয়ে বিয়ে ভেঙ্গে যেতো।এর কারণ কেও জানতো না।দীর্ঘ সাত মাস পর অর্ক সাথে বিয়ে হয় বিয়ে হয়ে ও জামাই বাড়ি যেতে পারলো কৈ তার আগেই আবার এক সমস্যা হয়ে দাঁড়ালো।)
নীড় এর বড় ভাইর এর শশুর হাবীব মোল্লা নীড়ের বাবাকে পাশে ডেকে বলে;ভাই নীড় মা কে এই বাড়িতে পাঠানো কি ঠিক হবে?
বাবা;কেন
হাবীব; ভাই আপনার মেয়ের বিয়ে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সমস্যা হচ্ছে ।এখন যখন বিয়ে হলো জামাইর বদনাম হলো।এখন যে জামাই নির্দোষ প্রমাণিত হলো।এটাকি কি গ্রাম বাসী মেনে নিবে?
বাবা;মানে
হাবীব; গ্রামের মানুষ ভাববে আপনি মান সম্মানের কথা ভেবে মেয়েকে এমন একটা ছেলের হাতে তুলে দিচ্ছে।ভাই মেয়েটার কথা ভেবে ওকে এই বাড়ি না দিলেন।আর ছেলের ভাই ভালো না নেশা করে।বুঝেন নীড় মার জন্য কতটা অনিরাপদ হতে পারে পরিস্থিতি।
নীড়ের বাবা সবার সামনে গিয়ে বলে।
বাবা; বুঝলাম আপনাদের ছেলে নির্দোষ কিন্তু আমার পক্ষে এ ছেলের সঙ্গে আমার মেয়েকে সংসার করতে দেওয়া সম্ভব না।আমরা তালাক নাম পাঠিয়ে দিব।আপনাদের সময় নষ্ট করার জন্য দুঃখিত আসি আমরা।
অর্ক;আপনি কিভাবে পারেন নিজে উদ্যোগ নিতে বিনা নীড়ের অনুমতি নিয়ে।
বাবা;মেয়ে আমার ডিসিশন ও আমারি হবে।
হাবীব মোল্লা তার স্ত্রী সাথে কথা বলছে;নীড় এর বাবাকে অনেক কিছু বুঝিয়ে নীড়ের সংসার ভেঙ্গে এসেছি।এখন নীড় আমার ছেলের বউ হবে।এখন হয়েছে সমান সমান।নীড়ের গায়ে তালাকের দাক থাকবে ভালো ছেলে পাবে না। না পেয়ে আমার ছেলের কাছে বিয়ে দিতে বাধ্য।কত বিয়ে ভেঙ্গেছি এ মেয়ের আমি।আমার ছেলের বউ করবো বলে।অর্ক দোষ নেই ওকে আমি মিথ্যা ফাঁসিয়ে দিয়ে এ বিয়ে ভাঙ্গলাম।
নীড়কে কখনো ওর বাবা বা বাড়ির যে যে জানতো অর্ক নির্দোষ কেও তা বলেনি।অর্ক নির্দোষ এ কথা ওর মাকেও বলেনি ওর বাবা।
অৰ্কদের বাসায় থেকে বাবা যখন ফিরে নীড়  দৌড়ে বাবা কাছে যায়।নীড়ের মাথায় হাত দিয়ে বলেছিল ভুলে যাও তোমাকে কখনো আমরা বিয়ে দিয়েছিলাম।নীড় এর অতো সাহস ছিল না বাবাকে প্রশ্ন করবে কেনো ভুলে যাবো ?বাবাকে প্রশ্ন করতে পারে না কিন্তু মাকে জিজ্ঞাসা করেও লাভ হয়নি।কত প্রশ্ন মনে ছিল কিন্তু কিছুই করতে পারেনি ।নীড়ের কাছে ফোন ও ছিল না বিয়ের রাতেই আছাড় দিয়ে ভেঙ্গে ফেলে ।ফেসবুক ও ব্যবহার করতো না ।কোন ভাবেই যোগাযোগ করা সম্ভব ছিল না।নীড়ের পাগল হওয়া বাকি ছিল।ও নিজের নাসিব মেনে নিতে পারছিল না।না কাউকে নিজের পরিস্থিতি বুঝাতে পারছে না নিজে বুঝতে পারছে।খালি পাগল এর মত কান্না করতো আর বেহুশ হয়ে পরে থাকতো।দিন শেষে বাবা দূর থেকে দেখতো মেয়ে ঘুমিয়ে আছে।কিন্তু চোখে কোনায় পানি জমে আছে তা চোখে পরতো না।
অর্ক এক মাসের ছুটি কাটিয়ে ফ্রীল্যান্ডে চলে যায়।প্রায় দুই মাসের বেশি দিন ফ্রীল্যান্ডে থেকে ইতালিতে যায়।
অর্ক;ম্যাম বি কেয়ারফুল (বলে অর্ক ঘুরে হাটতে থাকে।পেছনে থেকে কেউ জোরে ধাক্কা দেয় অর্ক টাল সামলাতে না পেরে লেম্পোস্ট এ বাড়ি খায়।আর মাথা কোনায় হাত দিয়ে উঠে দাঁড়ায়।পাশে একটা টেক্সী যায়।
;;; Sorry sir ,There was a car near by you. I can push (নীড় থেমে গেল।অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো নিঃস্বাস নিতে ভুলে গেছেন ,হা করে তাকিয়ে আছে অর্ক দিকে।অর্ক ওকে দেখে নিজের চোখে বিশ্বাস করতে পারছে না।নীড় নিজের মুখ নিজে হাত দিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।নীড় আশেপাশে তাকিয়ে আবার অর্ক দিকে তাকায়।কান্নায় চোখে পানি টল টল করছে যে কোন মুহূতে গড়িয়ে পড়বে।সেই মুখ যাকে বিয়ের দিন শেষবারের মতো দেখিছিল।একবার আবদার করেছিল মুখে যেনো খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি রাখে।আজ সত্যি মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি।কালো একটা জ্যাকেট পরা নীড়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।নীড়ের মুখে মুচকি হাসি,চোখে পানি গড়িয়ে পড়ছে।নীড় কাঁপা কাঁপা দুই হাত তুলতে অর্ক গাল স্পর্শ করে ।অর্ক চোখেও পানি বোজা যাচ্ছে।নীড়ের চোখের পানি যেনো বাঁধ ভেঙ্গে গেলে হিঁচকি পেরে কান্না শুরু করে দিল।অর্ক থুতনিতে মাথা ঠেকিয়ে অর্ক দুই গালে হাত দিয়ে নীড় কান্না করে যাচ্ছে।অর্ক কে ছেড়ে মুখ তুলে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।অর্ক কেমন মায়া মায়া চোখে তাকিয়ে আছে নীড়ের দিকে ।নীড়ের চোখে হাজারো প্রশ্ন।ঠিক তখন নীড়ের ভাই এর গাড়ি আসে।ভাইয়া নেমে নীড়ের সামনে আসে।)
হাসান;নীড়
নীড়; ভাইয়া
হাসান নীড়কে জড়িয়ে ধরে।নীড় চোখে এখনো পানি বাধহীন ভাবে বেয়ে যাচ্ছে।
হাসান;বাস বাস আর কাঁদে না যা হবার হয়েছে সব ভুলে যা।
অর্কে খেয়াল করে না হাসান আর হাসান চেনেও না অর্ককে।
ভাবি;এদিকে এসো আমাকে নামাও।
ভাইয়া;চল ভেতরে তোর লাকিজ সব বাইরে না।আমি সব বেগ নেই তুই ভাবীকে নিয়ে উপরে চল।
অর্ক সামনে নীড়ের কাঁধে হাত দিয়ে ভেতরে নিয়ে যায়।নীড়ের ভাবির যে কোন সময় ডেলিভারি করাতে হতে পারে ।এখন চেকআপ করিযে নিয়ে এলো।নীড়কে ভাবীর কাছে রাখতে এনেছে।ভাইয়া সব সময় থাকে না কখন কি হয় কে জানে।নীড় ভাবীকে চার তালায় উঠিয়ে দিয়ে নামতে যাবে ভাবি পানি চায় ভাবি খেতে গেলে গলায় আটকে যায় সব নীড়ের উপর ঢেলে দেয়।নীড় জ্যাকেট খুলে ব্ল্যাক সেমিলঙ্গ গেঞ্জি পরে উপরের স্ক্রাফ পরে  দৌড়ে নীচে আসে।
নীড় একবার এদিকে দোড় দেয় একবার ওই দিকে কোন দিকে ছুটবে কোন দিকে গেলে অর্ককে পাবে বুঝে উঠতে পারছে না।দৌড়ে মেট্রো দিকে গেল ওদের বাসা থেকে তিন মিনিট লাগে যদিও।নীড় দৌড়ে আসে পাশে খুঁজে বেড়াচ্ছে আর চোখের পানি মুছে যাচ্ছে।ওর সামনে একটা মেট্রো যেতে দেখে ও কান্না করে গুটি সুটি হয়ে নিচে বসে মাথা নিচু করে কান্না করতে থাকে আর ঠান্ডায় কাঁপতে থাকে।ঠিক তখন পায়ের শব্দ মুখ তুলে তাকিয়ে দেখে অর্ক ওর সামনে হাতে রেডবুলের ক্যান।নিজের জ্যাকেট খুলে নীড়কে জড়িয়ে দিয়ে চলে যেতে গেলে নীড় সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
নীড়; আমার সাথে কেনো এমন হলো ?আমি কি অপরাধ করেছিলাম?
অর্ক কোন কথা বলছে না।ও ঢক ঢক করে খাচ্ছে।
নীড়; আমাকে একবার বলো তোমার উপর যে অপবাদ দেওয়া হয়েছে সব মিথ্যা তুমি নির্দোষ।প্লিজ আমাকে বলো আমি হাত জোড় করে বলি প্লিজ।বলো না তোমার কোন দোষ নেই।সব মিথ্যা
অর্ক;তুমি কি জানো না তোমাকে আমার নতুন করে বলতে হবে?আর ডিসিন তোমার বাবার ছিল আমার না।তোমরা তালাক নামা এখনো পাঠাওনি কেনো?তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দিয়ো।আর এখন এসব প্রশ্ন করার কোন মানে হয় না।এসব কথা এখন পুরাতন হয়ে গেছে।
নীড়; কিসব বলো ?পুরান হবে কেনো?আর পুরান নতুন আমি বুঝি না ।আমার জানার অধিকার আছে?প্লিজ বলো।আমি জানি তুমি নির্দোষ ।তুমি এমন কিছু করতেই পারো না।আমি তোমার পায়ে পরি প্লিজ বলো।
অর্ক রেগে নীড়কে তুলে ওর হাতের কোনায় শক্ত করে ধরে;তখন কোথায় ছিলে যখন আমাকে তোমাদের বাড়ি থেকে বাজে অপবাদ দিয়ে বের করে দিয়েছিল?তখন কোথায় ছিলে যখন আমার বিচার করা হচ্ছিল।তখন তো সব একাই সয়ে নিতে হয়েছে।ওইদিন যদি তুমি পাশে থাকতে আমার জন্য সব কিছু সহজ হতো।আজ দেখা হলো বলে সব জানতে এসেছো এতদিন কোথায় ছিলে?বলে একটা ধাক্কা দিয়ে নীড়কে ফেলে চলে যায়।নীড় টাল সামলে ওর পিছনে যেতে যেতে স্লিপ খেয়ে পড়ে পা মুচকে পরে যায়।পাশে ওয়ালে মাথায় ও বাড়ি খায়।সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে ভাইয়া পাশে ফোনে কথা বলছে।ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে প্রায় নয়টা।
চলবে;;;

#অধিকার_নেই গল্পের সব পার্ট ⇩

অধিকার নেই পার্ট:01
https://wonderfulstoryandletter.blogspot.com/2020/07/01.html
অধিকার নেই পার্ট:02
https://wonderfulstoryandletter.blogspot.com/2020/07/02.html
অধিকার নেই পার্ট,03
https://wonderfulstoryandletter.blogspot.com/2020/07/03.html
অধিকার নেই পার্ট,04
https://wonderfulstoryandletter.blogspot.com/2020/07/04.html
অধিকার নেই পার্ট,05
https://wonderfulstoryandletter.blogspot.com/2020/07/05.html
অধিকার নেই পার্ট,06
https://wonderfulstoryandletter.blogspot.com/2020/07/06.html
অধিকার নেই পার্ট,07(সমাপ্তি)
https://wonderfulstoryandletter.blogspot.com/2020/07/07.html
Reactions

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ