লাভ গেমস্ - পর্ব ১১

লাভ গেমস্ - পর্ব ১১

লাভ গেমস্

লেখকঃ Sanjida Afrin Shetu

পর্বঃ ১১

শোয়েব চলে গেছে অনেক্ষণ হয়ে গেছে,সোমা এখনও ওভাবেই মাথা নিচু করে বসে আছে।ঘরের দরজাটা এখনও বন্ধ,বাইরে থেকে লক করা নাকি শুধুই ভেঁজিয়ে দেয়া আছে বোঝা যাচ্ছে না,সোমার সেটা দেখতেও ইচ্ছে করছে না।নিজের দুর্ভাগ্যের কথা চিন্তা করে নিজেরই কান্না পাচ্ছে,কি করে যে শোয়েবের মত একটা বাজে ছেলের প্রেমে পড়েছিল ভেবে নিজের উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে।
খানিক বাদেই রুমের দরজাটা আবার খুলে গেল,শোয়েব রুমে ঢুকল,মুখে সেই চিরচেনা শয়তানি হাসি
শোয়েব: তো মিস সোমা,কেমন আছেন আপনি?
(সোমা ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিল,শোয়েবের কুৎসিত মুখটা দেখতেও ইচ্ছে করছে না)
শোয়েব: (সোমার মুখটা জোর করে ঘুরিয়ে)খুব ঘেণ্না করছে না আমার মুখের দিকে তাকাতে?ঠিক আছে প্রতিদিন সারাটা ক্ষণ যেন এই মুখটাই দেখতে হয় সেই ব্যবস্থা করছি আমি
সোমা: (অবাক হয়ে)মানে?
শোয়েব: তোমার খুব শখ না,আমার বাচ্চার মা হওয়ার?চিন্তা কর না,একটু পরেই সেই ব্যবস্থা করছি...
সোমা: (চমকে উঠে)শো..শোয়েব প্লিজ...আমার এত বড় সর্বনাশ কর না...
শোয়েব: (সোমার গালে হাত দিয়ে)সর্বনাশ!কিসের সর্বনাশ স্যুইটহার্ট?আর কিছুক্ষণ পরেই তো আমাদের বিয়ে হবে আর বিয়ের পর স্বামী হিসেবে তোমার উপর আমার একটা অধিকার আছে না?সেই অধিকার থেকেই আমি তোমার সাথে...আর একটা কথা ভালই ভালই রাজি হয়ে যাও নাহলে আমার অধিকার কিভাবে আদায় করে নিতে হয় আমার জানা আছে
সোমা: বি..ব..বিয়ে!আর তো..ত..তোমাকে?অসম্ভব...আমার জীবন থাকতে এটা কখনই সম্ভব নয়...
শোয়েব: (তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে)অসম্ভবকে কিভাবে সম্ভব করতে হয় আমার জানা আছে
সোমা: তোমার যা ইচ্ছে হয় করতে পার কিন্তু যাই কর আমাকে কিছুতেই রাজি করাতে পারবে না...
শোয়েব: তাই নাকি?মিস সোমা,তোমার ছোট বোনের নাম প্রোমা তাইনা?আর ও সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে পড়ে তাইতো?
সোমা: (চমকে উঠে)তু..ত..তুমি...
শোয়েব: ও প্রতিদিন সকাল নয়টায় কলেজে যায়,ফেরে দুপুর ২টায় তাইতো?
সোমা: তুত..তুমি ওর ব্যাপারে এতকিছু জানলে কি করে?
শোয়েব: জানিতো অনেককিছুই,ও কখন কি করে,কোথায় থাকে তার সবকিছুই অামার জানা আছে আর আমি চাইলে ওকেও তোমার মত...
সোমা: (হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে)শোয়েব,শোয়েব তোমার দুটি পায়ে পড়ি আমার বোনটার কোন ক্ষতি তুমি কর না..তোমার রাগটাতো আমার উপর,যা করার আমার সাথে কর ওকে কেন এর মধ্যে টানছো...
 শোয়েব: ঠিক আছে টানব না,তুমি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাও আমি প্রোমার কথা সব ভুলে যাব...
সোমা: তুমি আমার সাথে এমন কেন করছ?আমি তোমার কি ক্ষতি করেছি?
শোয়েব: কি করনি তাই বল...তোমার জন্য আমি রিশানের সাথে বেট হেরে গেছি,ওকে সাড়ে সাত লাখ টাকা দিতে হয়েছে।টাকা পয়সা আমার কাছে বড় কোন ব্যাপার না কিন্তু শর্ত মোতাবেক আমাকে ক্যাম্পাস ছাড়তে হয়েছে।
আর সবচেয়ে বড় কথা সবার সামনে আমাকে ওকে সরি বলতে হয়েছে,সবাই আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করেছে,যারা কখনও আমার সামনে কখনও মাথা তুলে দাঁড়ায়নি তারা আজ আমার চোখে চোখ রেখে কথা বলেছে,আমাকে লুজার বলেছে,সবার সামনে এমন অপমানিত হতে হয়েছে শুধুমাত্র তোমার জন্য...
সোমা: এতে আমার কি দোষ?এসবের জন্যে তুমিই দায়ী...
শোয়েব: (সোমার গলা চেপে ধরে)আমি দায়ী তাইনা?না না মিস সোমা,তোমাকে তো আমি এমনি এমনি ছেড়ে দিব না,তোমাকে বিয়ে করে ডে এন্ড নাইট তোমার সাথে যা ইচ্ছে তাই করব,ওই রিশান আর তার সাথে সবাইকে দেখিয়ে দিব আই এম নট এ লুজার...
সোমা: তো..এটাও একটা বেট?
শোয়েব: হ্যাঁ হ্যাঁ ইট'স এ বেট আর এই বেট টা যেভাবেই হোক আমিই জিতব,কেউ আমাকে আটকাতে পারবে না,বুঝেছো?
সোমা: ছি!আমার ভাবতেও অবাক লাগছে আমি তোমার মত একটা ছেলেকে...
শোয়েব: তোমার যা ইচ্ছা ভাবতে পার বাট বিয়েটা আজ এন্ড এখানেই হবে,একটু পরেই কাজি চলে আসবে সো ইউ শুড বি প্রিপেয়ার্ড...
(শোয়েব চলে গেল,সোমা কিছু্ক্ষণ চুপ করে বসে থাকল তারপর চোখ মুছে উঠে দাঁড়ালো।বালিশের নিচে রাখা ফোনটা বের করে একটা নাম্বারে ডায়াল করল)
সোমা: হ্যালো জাফু...
জাফির: কি রে,তোর কণ্ঠটা এমন লাগছে কেন?সব ঠিক আছে তো...
সোমা: হ্যাঁ হ্যাঁ সব ঠিক আছে...
জাফির: সত্যি করে বল বলছি,শোয়েব ভাইয়া তোর কোন ক্ষতি করেনি তো?কিছু করলে ওর খবর আছে,আমি ভুলে যাব যে ও আমার বড় ভাইয়ার বন্ধু...
সোমা: না না,ও আমার কোন ক্ষতি করেনি।সবকিছু আমাদের প্ল্যান মোতাবেকই হয়েছে
জাফির: থ্যাঙ্ক গড,এই সোমা শোন ও যদি তোর কোন ক্ষতি করার চেষ্টা করে তুই সবার আগে আমাকে বলবি বুঝলি?ফোনের স্পিড ডায়ালে আমার নাম্বারটা সেভ করা আছে তুই শুধু ডায়াল করবি কেমন?
সোমা: আচ্ছা ঠিক আছে তাই হবে,এখন তুই আমাকে বল তোকে যেই কাজটা করতে দিয়েছিলাম সেটার কতদূর?
জাফির: আমি এখন ওটাই করছি,তুই কোন চিন্তা করিস না,সব একদম টাইমলি তোর হাতে পৌঁছে যাবে...
সোমা: আচ্ছা ঠিক আছে,এখন তাহলে রাখছি
জাফির: সোমা শোন...
সোমা: কি?
জাফির: আমি তোকে আবারও বলছি,তুই আরেকবার ব্যাপারটা ভেবে দেখ প্লিজ...
সোমা: আমি ডিসিশনটা খুব ভেবে চিন্তেই নিয়েছি,শোয়েবকে ওর পাপের শাস্তি দিয়ে তবেই আমি শান্তু পাব
জাফির: কিন্তু তাই বলে তুই নিজের লাইফটা এভাবে নষ্ট করে দিবি!😟  
সোমা: আমার লাইফটা তো এমনিতেও নষ্টই হচ্ছিল,যাকে ভালোই বাসি না,যাকে মন থেকে কখনই মেনে নিতে পারব না তাকেই বিয়ে করতে হচ্ছিল।
জাফির: কিন্তু যাকে ভালোবাসিস তাকে বিয়ে করা আর নিজের পায়ে কুড়াল মারাতো একই ব্যাপার তাইনা?
সোমা: হয়ত তাই কিন্তু এই লম্পটটাকে একটা উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য যদি আমাকে আগুনেও ঝাঁপ দিতে রাজি আছি...
জাফির: কিন্তু দোস্ত...
সোমা: তুই আর আমাকে বাঁধা দিস না প্লিজ,আমি আমার ডিসিশনে একদম অনড়...
জাফির: আচ্ছা ঠিক আছে,তোর যা ইচ্ছে কর তবে যেকোন রকম হেল্প লাগলে তুই অবশ্যই কিন্তু আমাকে জানাবি ওকে?
সোমা: ওকে,এখন রাখছি,শোয়েব এখনই মনে হয় চলে আসবে।তুই কিন্তু একদম টাইমলি আমার কাছে সব পৌঁছে দিবি...
জাফির: আচ্ছা ঠিক আছে বাই আর শোন...
সোমা: কি?
জাফির: নিজের দিকে খেয়াল রাখবি আর সাবধানে থাকিস কেমন?
সোমা: আচ্ছা তাই হবে...
.
ঘড়িতে রাত প্রায় একটা,প্রোমা বিছানায় চুপটি করে বসে আছে।ঘরটাকে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে,পুরো ফুলে ফুলে ছেয়ে আছে মনে হচ্ছে যেন ভুল করে কোন ফুলের বাগানে চলে এসেছে।যেই বিছানাটায়
প্রোমা বসে আছে সেটাও পুরো ফুল আর হালকা লাইটিং দিয়ে সাজানো।গাঁদা,রজনীগন্ধ্যা আর গোলাপ ফুল দিয়ে সাজানো রয়েছে চারপাশটা আর উপরের দিকটা কালারফুল পেপার আর জরি দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো রয়েছে।রুমে আলো বলতে লাল-নীল-সবুজ আর হালকা হলুদ আলোর মোমবাতি,লাইটগুলো সব বন্ধ করে রাখা হয়েছে।সবকিছুই পারফেক্টলি সাজানো রয়েছে শুধু একটা জিনিসই কেউ খেয়াল করেনি,দেয়ালে বেশ বড় বড় করে শোলার উপর ডিজাইন করে লেখা:
"তুহিন এন্ড সোমার বাসরঘর"
বর ঠিক থাকলেও বউ টা যে বদলে গেছে ব্যাপারটা হয়ত কারোরই মাথায়ই আসেনি,আসলে ওদেরও দোষ দেয়া যায়না,বপয়েটা নিয়ে যত ঝামেলা হয়ে গেছে তাতে এতকিছু মাথাই থাকবেই বা কিভাবে?
প্রোমার অবশ্য এসব নিয়ে কোন প্রবলেম হচ্ছে না,ওর প্রবলেমটা হচ্ছে গোলাপফুল নিয়ে পুরো বিছানায় গোলাপ ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে রাখা হয়েছে।এ বাড়ির কেউই জানেনা যে গোলাপ ফুলে ওর এ্যালার্জি আছে অবশ্য জানলেও কিছু করার ছিল না,বাসরঘরের সবকিছুই সাজানো হয়েছে সোমার কথা মাথায় রেখে,প্রোমাতো এখানে নিতান্তই অনাকাঙ্খিত...😰
রুমের মধ্যে প্রোমা যখন এসব ভাবছে,দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে তুহিনও তখন গভীর চিন্তায় মগ্ন।বাবার দেয়া কথা রাখতে প্রোমাকে বিয়েতো করেছে কিন্তু এখন ওকে ফেস করবে কিভাবে বুঝতে পারছে না।ভাবতে ভাবতেই একসময় দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকল,বিছানার উপর ঘোমটা দিয়ে প্রোমাকে বসে থাকতে দেখে বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠল।যেই জায়গায় আজ সোমার থাকার কথা সেখানে এখন...
সোমার সাথে তুহিনের রিলেশন না থাকলেও ওকে খুব ভালোবেসে ফেলেছিল তুহিন,আজকের রাতটার জন্য কত কি প্ল্যান করে রেখেছিল কিন্তু সেসব এখন নিতান্তই নিরর্থক।হঠাৎই দেয়ালের লেখাটার দিকে চোখ পড়ল তুহিনের,ঝড়ের বেগে ছুটে গিয়ে ওয়াল থেকে টেনে নামিয়ে জানালা দিয়ে ছুড়ে ফেলে দিল।
প্রোমা চিন্তায় এতটাই মগ্ন ছিল যে তুহিন যে রুমে এসেছে বুঝতেই পারেনি,দেয়ালের লেখাটা নামানোর শব্দে বুঝতে পারল।ঝটপট বিছানা থেকে নেমে তুহিনকে সালাম করল,তুহিন কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না।অনেক্ষণ চুপ থেকে বলল...
তুহিন: অনেক রাত হয়ে গেছে,তুমি বরং ঘুমিয়ে পড়...
প্রোমা: আচ্ছা...আর আপনি?
তুহিন: আমি একটু পরে ঘুমাব...
প্রোমা চুপচাপ শুয়ে পড়ল,কিন্তু তাতে এ্যালার্জির প্রবলেমটা আরও বেড়ে গেল।ঘন ঘন হাঁচি আর সেই সাথে সারা গায়ে র্যাশ বেরিয়ে জ্বালা করতে লাগল।
তুহিন ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে সোফায় বসতেই প্রোমার হাঁচির শব্দ কানে আসল।প্রথমে পাত্তা না দিলেও কিছু্ক্ষণ পরেই খেয়াল করল প্রোমা কেমন যেন উশখুশ করছে।তুহিন উঠে প্রোমার কাছে গেল...
তুহিন: Are you ok Proma?
সোমা: হ্যাঁ আমি ঠিক আছি,আপনি চিন্তা করবেন...😤😤
তুহিন: সমানে হাঁচি দিচ্ছ আবার বলছ ঠিক আছো!!কই দেখি ঠাণ্ডা লেগেছে নাকি?জ্বর এসেছে?
(তুহিন প্রোমার গায়ে,কপালে হাত দিয়ে দেখছে ওর জ্বর এসেছে কিনা,প্রোমা অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে)
তুহিন: কই জ্বরতো নেই
প্রোমা: বললামতো আমার কিছু হয়নি...
তুহিন: এক মিনিট,এই তোমার সারা গায়ে এসব কি বের হয়েছে?
প্রোমা: (শাড়ি টেনে হাত ঢাকতে ঢাকতে)ও...ও কিছু না,ওসব এমনি...
তুহিন: কিছু না বললেই হল?দেখি কি হয়েছে?(প্রোমার হাত টেনে ধরে)
প্রোমা: বলছিতো কিছু হয়নি,আপনি শুধু শুধু...
তুহিন: এগুলো তো মনে হচ্ছে এ্যালার্জি,হ্যাঁ তাইতো এ্যালার্জিইতো।কিন্তু এখানেতো...এক মিনিট,এই তোমার কি বোন ফুলে এ্যালার্জি আছে নাকি?
প্রোমা: না মানে..ওই গোলা..প ফুল...
তুহিন: (রেগে গিয়ে)এই মেয়ে তুমি কি পাগল?গোলাপ ফুলে এ্যালার্জি তাহলে এতক্ষণ ওর ভিতরে বসে আছো কেন?কাউকে বলবে তো তোমার এ্যালার্জি আছে😡
প্রোমা: আ..আসলে আ..আমি😤😤
তুহিন: থাক থাক আর কিছু বলতে হবে না,এই তুমি এসোতো আমার সাথে...
প্রোমা: কিন্তু কোথায়?
তুহিন: কথা না বলে চুপচাপ চল বলছি...
(তুহিন প্রোমার হাত ধরে বেরিয়ে গেল,পাশের রুমের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল)
তুহিন: তুমি এখানে বস,আমি একটু আসছি
প্রোমা চুপটি করে বসে রইল,একটু পরেই তুহিন চলে আসল,কার সাথে ওর বাবা...
বাবা: একি বৌমা,তোমার যে এত কষ্ট হচ্ছিল তুমি কাউকে বললে না কেন?
প্রোমা: আসলে বাবা...
বাবা: আমি মানলাম তোমার শাশুড় বেঁচে নেই আর এ বাড়িতে আর তেমন কোন মহিলাও নেই কিন্তু এতগুলো কাজের মেয়েতো আছে আর আমি আর তুহিনতো আছিই।তোমার কোন অসুবিধা হলে তুমি নিঃশংকোচে আমাদেরকে বলবে...
প্রোমা: ভুল হয়ে গেছে বাবা
বাবা: ঠিক আছে বৌমা,আর যেন এমন না হয়...
(বাবা চলে গেলেন,তুহিন ওকে নিয়ে অন্য একটা রুমে গেল।প্রোমা অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালো)
তুহিন: আজ রাতটা এই রুমেই থাকতে হবে
প্রোমা: কেন?
তুহিন: ঐ রুম থেকে সব গোলাপফুল সরানো হলে তারপর যাবে
প্রোমা: আচ্ছা
তুহিন: এটা ধর
প্রোমা: এটা কি?
তুহিন: এ্যালার্জির ঔষধ
প্রোমা: আমার লাগবে না,সামান্য একটু প্রবলেম হয়েছে...
তুহিন: কথা না বলে চুপচাপ খেয়ে নাও আর শোন...
প্রোমা: জ্বি?
তুহিন: শাড়িটা চেঞ্জ করে ঘুমাও,ইজি হবে
প্রোমা: আচ্ছা
তুহিন: তুমি শাড়ি পরতে পার তো?
প্রোমা: না...😞
তুহিন: ঠিক আছে,তাহলে শাড়ির দরকার নেই,একটা সালোয়ার কামিজ পরবে কেমন?
প্রোমা: আচ্ছা...
ভোর হয়ে এসেছে,প্রোমা গভীর ঘুমে মগ্ন।মেয়েটা এতটাই টায়ার্ড ছিল যে শোয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঘুমিয়ে পড়েছে,তুহিনের চোখে ঘুম নেই।বিছানায় বসে প্রোমার ঘমন্ত মুখটার দিকে একবার তাকিয়ে উঠে পড়ল।বালিশটা নিয়ে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ল....
.
(এদিকে শোয়েব সোমাকে ননিয়ে যখন বাড়ি আসল ঘড়িতে তখন রাত ১টা)
সোহরাব সাহেব অবাক হয়ে নিজের ছেলের দিকে তাকিয়ে আছেন,শোয়েব খুব বেয়াড়া সেটা তিনি জানতেন কিন্তু তাই বলে কাউকে কিছু না জানিয়ে একটা মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে চলে আসবে এমনটা তিনি ভাবতেও পারেন নি।তার খুব রাগ হওয়ার কথা ছিল কিন্তু শোয়েবের সাথে বধূবেশে আসা মেয়েটার মুখের দিকে একবার তাকাতেই তার সব রাগ পানি হয়ে গেল।তার কেন যেন মনে হচ্ছে এই মেয়েটায় পারবে তার এই অবাধ্য বকে যাওয়া ছেলেটাকে শুধরাতে।রাগটাকে কনট্রোলে রাখতে শোয়েবকে কষে একটা থাপ্পড় দিলেন তারপর কিছু না বলেই বাড়ির ভেতরে চলে গেলেন।কিছু্ক্ষণ পর একদল কাজের লোককে নিয়ে ফিরে এলেন,সোমা অবাক হয়ে দেখল সবাই মিলে ওকে বরণ করে ঘরে তুলল।
সোমাকে যেই ঘরটাতে রাখা হয়েছে সেই ঘরটা যে শোয়েবের সেটা বুঝতে সোমার মাত্র কয়েক সেকেণ্ড লাগল।টেবিলে অগোছালো ভাবে ফেলে রাখা বইপত্র,দেয়ালে বড় বড় ফটোফ্রেমে টানিয়ে রাখা ছবি,একপাশে ফেলে রাখা গিটার আর মাউথ অর্গ্যান,চেয়ার আর ওয়্যারড্রোবের উপরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা জামা-কাপড়ই এর প্রমাণ দিচ্ছে।এতকিছু ছাপিয়ে সোমার চোখ আটকে গেল বেডের নিচে ফেলে রাখা বিয়ার আর হুইস্কির বোতলের দিকে।নিজের অজান্তেই গা টা গুলিয়ে উঠল সোমার...
এমন সময় দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকল শোয়েব,গায়ের জোরে দরজাটা থাক্কা দিয়ে বন্ধ করে সোমার দিকে এগিয়ে আসল।শয়তানির হাসি হেসে বলল...
শোয়েব: তা মিস...স্যরি স্যরি মিসেস সোমা,এতদিন না খুব উড়ছিলে,এখন আমার হাত থেকে তোমাকে কে বাঁচাবে?
সোমা: এসব তুমি কি বলছ?এখন আমরা স্বামী-স্ত্রী,কি লাভ পুরনো কথা মনে রেখে?চল না সব ভুলে আমরা নতুন করে জীবনটাকে সাজিয়ে তুলি...
শোয়েব: চাইলেই কি সব ভোলা যায়?শুনেছিলাম উইপোকার পাখা গজায় মরার ঠিক আগে,এতদিন যত ওড়ার উড়ে নিয়েছো কিন্তু আর না।এবার তোমার ডানাগুলো আমি একটা একটা করে কাটব বুঝেছ মাই ডিয়ার ওয়াইফ?
সোমা: শোয়েব...😧
শোয়েব: সেদিন চালাকি করে আমাকে ঠকিয়েছিলে না,আজ দেখব তোমাকে কে বাঁচায়।আজ তোমার সবকিছু আমি কেড়ে নিব আর এই কাজে কেউ আমাকে আটকাতে পারবে না কারণ এখন আমি তোমার হাজবেন্ড আর তোমার কাছে এটা আমার অধিকার
সোমা: 😕😕
শোয়েব: ওই রিশানটাকে আমি দেখিয়ে দিব যে আই এ্যাম নট এ লুজার...
(শোয়েবের কথা শুনে সোমা হা হা করে হাসতে লাগল,ওর হাসি দেখি শোয়েব অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালো)
শোয়েব: What is this Soma?Have you gone mad?
সোমা: (আরো জোরে হাসতে হাসতে)নিজেকে খুব চালাক ভাব তাইনা?
শোয়েব: মানে?
সোমা: মানে,নিজেকে যতই চালাক ভাব না কেন তুমি যে একটা বড় মাপের বোকা সেটা জানো?
শোয়েব: (রেগে মেগে)এই মেয়ে তোমার মাথার ঠিক আছেতো?😡
সোমা: আমার মাথা ঠিকই আছে কিন্তু কাল সকালে আমি যা বলব তাতে তোমার মাথা অার ঠিক থাকবে না...
শোয়েব: কি..ক কি বলবে তুমি?
সোমা: সেটা যখন বলব তখনই জানতে পারবে..
শোয়েব: সেতো জানবই কিন্তু আজ রাতে তোমাকে আমার হাত থেকে কে বাঁচাবে?
সোমা: (হেসে)তুমি চাইলেও আমার কিছুই করতে পারবে না মি.শোয়েব,বিশ্বাস না হলে চেষ্টা করে দেখতে পারো...

Reactions

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ