লাভ গেমস্
লেখকঃ Sanjida Afrin Shetu
পর্বঃ ১৩
সোমা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল,শোয়েব ধপ করে বসে পড়ল,মনে মনে ভাবছে "এই মেয়ে যা বলেছে তা যদি সত্যি হয় তাহলে তো আমার লাইফটা হেল করে দেব..😟"
ঝটপট ভাবতে লাগল কি করা যায়,বন্ধুদেরকে যে ব্যাপারটা জানাবে তাও পারছে না কারণ ঐ রিশানটার জন্যে এমনিতেই ওর ইজ্জতের ফালুদা হয়ে আছে তার উপর যদি এই খবরটা সবাই জেনে যায় তাহলেতো সবার সামনে মুখ দেখানোও দায় হয়ে যাবে😞
রাগে দুঃখে পাশের টি-টেবিলটার উপরই নিজের সব রাগ ঝাড়ল শোয়েব।টেবিলের উপরের গ্লাস ভেঙ্গে হাতটা কেটে দরদর করে রক্ত পড়তে লাগল...
সোজা ছাদে চলে গেল সোমা,আশেপাশে কেউ আছে কিনা একবার দেখে নিয়েই ফোনটা বের করে ডায়াল করল জাফিরের নাম্বারে...
জাফির: কি রে,কি অবস্থা তোর?সবকিছু প্ল্যানমত করতে পেরেছিসতো?নাকি শোয়েব ভাইয়া সব ঘেঁটে দিয়েছে?কি রে কিছু বলছিস না কেন?কিছুতো বল...
সোমা: তুই কিছু বলতে দিলে তো বলব...
জাফির: স্যরি দোস্ত এখন বল কি হয়েছে...
সোমা: হ্যাঁ হ্যাঁ সবকিছু একদম ঠিকঠাকমতই হয়েছে,ঐ ব্যাটার মুখ একেবারেই বন্ধ করে দিয়েছি
জাফির: তোর কোন ক্ষতি করেনি তো?
সোমা: সেই সুযোগ দিলে তো...
জাফির: যাক ভালই হল,খুব টেনশনে ছিলাম
সোমা: এখন ওসব বাদ দে,ওদিকের খবর বল
জাফির: আজ নাহয় থাক,অন্য একদিন বলব
সোমা: এই তুই এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিস কেন?কি হয়েছে,খারাপ কিছু হয়নিতো...😟
জারিফ: আরে না না খারাপ কিছু হবে কেন?এই সোমা শোন না,ভাইয়া আসছে আমি এখন রাখছি রে পরে কথা বলব
সোমা: খবরদার জাফু,একদম ফোন কাটার চেষ্টা করবি না
জাফির: সোমা তুই কিন্তু বাড়াবাড়ি করছিস
সোমা: করলে করছি,তুই আগে বলবি কি হয়েছে তারপর আমি শান্ত হব
জারিফ: না মানে ওদিকের অবস্থা খুব খারাপ,সবাই ভেবেছে তুই বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে গেছিস।তারপর তোকে না পেয়ে আঙ্কেলের একটা মাইনর স্ট্রোক হয়েছে আর তুহিন ভাইয়ার সাথে প্রোমার...
সোমা: প্রোমার!কি যা-তা বলছিস!তোর মাথার ঠিক আছেতো?
জাফির: যা বলছি তাই সত্যি
সোমা: না..এ কিছুতেই হতে পারে না।প্রোমা...প্রোমাতো এখনও বাচ্চা আর তুহিন...ওতো আমাকে ভালোবাসতো,আমার ছোট্ট বোনটার এমন সর্বনাশ সবাই কি করে করতে পারল!
জাফির: সোমা তুই একটু শান্ত হ প্লিজ...
সোমা: কি করে শান্ত হব তুই ই বল...না জানি আমার বোনটা এখন কি অবস্থায় আছে,তুহিন ওর সাথে কেমন ব্যবহার করছে...😟
জাফির: তুই মাথাটা একটু ঠাণ্ডা কর প্লিজ,দেখ যা কিছুি হয়েছে তুই চাইলেও তো আর চেঞ্জ করতে পারবি না তাইনা?
সোমা: (ফুঁপিয়ে)আমাদের প্ল্যানটাতো ফুলপ্রুফ ছিল তাইনা?তাহলে এসব কি করে হয়ে গেল😪
জাফির: প্ল্যান ফুলপ্রুফই ছিল বাট এমন কিছুও যে হতে পারে আমরা কেউ চিন্তাও করতে পারিনি তাই...
সোমা: এসব যখন হচ্ছিল,তখন তোরা কই ছিলি?বাবাকে আটকাসনি কেন...
জাফির: কি করে করব?প্ল্যান মোতাবেক ভাইয়া তোকে নিয়ে বেনিয়ে যাওয়ার পর আমরাওতো বাঁকি কাজগুলো করার জন্যে ওখান থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম তাইনা?
(সোমার আর কিছু শুনতে ইচ্ছে করছিল না তাই কিছু না বলেই ফোনটা কেটে দিল।পেছন ফিরতেই চমকে উঠল,শোয়েবের বাবা দাঁড়িয়ে আছে)
সোমা: (মনে মনে)উনি কিছু শুনে ফেলেননি তো😟
বাবা: কি ব্যাপার বৌমা,এত রাতে একা একা ছাদে কি করছ?শোয়েব কোথায়?
সোমা: (যাক কিছু শুনতে পায়নি মনে হচ্ছে)ওতো রুমেই আছে বাবা,আমার একটু রাতের আকাশটা দেখতে ইচ্ছে করছিল তাই চলে আসলাম
বাবা: এই অমাবস্যার রাতে আকাশ দেখতে ইচ্ছে করছিল!স্ট্রেঞ্জ...
সোমা: (মনে মনে)জীবনটাই যখন অমাবস্যার নিকষ কালো আঁধারে ঢেকে গেছে তখনতো আঁধারকেই আলিঙ্গন করতে হবে,আলোকে নয়...
বাবা: কি ভাবছো বৌমা?
সোমা: (চমকে উঠে)কি..ক কিছু না বাবা
বাবা: আমি জানি মা,তুমি কি ভাবছিলে...
(সোমা অবাক হয়ে ওর শ্বশুরের দিকে তাকালো)
সোমা: (মনে মনে)এ বাবা,ধরা পড়ে গেলাম নাকি😕
বাবা: আমি জানি মা,আমার ছেলেটাকে তুমি এমনি এমনি বিয়ে করতে রাজি হওনি।ও নিশ্চয় এমন কিছু করেছে যার কারণে তুমি বিয়েটা করতে বাধ্য হয়েছ...
সোমা: না বাবা,আপনি যা ভাবছেন তা ঠিক না...
বাবা: আমার কাছে কিছু লুকিও না মা,আমার ছেলেটাকে তো আমি চিনি,আসলে খুব ছোটবেলায় ওর মা মারা যাওয়ার পর ছেলেটাকে আর মানুষ করতে পারিনি,একটা অমানুষ তৈরি হয়েছে।বলতে পারো এটা আমার জীবনের একমাত্র এবং সবচেয়ে বড় ভুল...
সোমা:....
বাবা: জানো মা,শোয়েবের ভার্সিটিতে আমি বেশ বড় এ্যামাউন্টের একটা ডোনেশন দেই।আমি ডোনেশনটা করি দরিদ্র আর মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের সাহায্য করার জন্য কিন্তু আমার ছেলেটা এইটাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে ক্যাম্পাসে নানা রকম উশৃঙ্খল কাজ করে বেড়ায়,নিয়মনীতির কোন তোয়াক্কা করে না,এক কথায় ক্যাম্পাসটাকে নিজের রাজত্ব বানিয়ে রেখেছে
সোমা: (মনে মনে)আমি জানি বাবা
বাবা: আমাকে সব জেনেও মুখ বুজে সব সহ্য করতে হয়।মা মরা ছেলেতো তাই চাইলেও কিছু বলতে পারিনা।মাঝে মাঝে মনে হয় ছেলেটাকে মানুষ করতে পারিনি বলে ওর মা আমার উপর অনেক রেগে আছে।মরার পর ওকে আমি কি জবাব দিব বল...
সোমা: এমন করে বলবেন না বাবা প্লিজ
বাবা: নিজের ভুলটা স্বীকার করতে আমার কোন আপত্তি নেই মা,সে যাই হোক তোমাকে যেদিন প্রথম দেখি সেদিনই আমার কেন জানি মনে হচ্ছিল তুমিই পারবে আমার এই অমানুষ ছেলেকে মানুষ বানাতে...
সোমা:....
বাবা: (সোমার মাথায় হাত বুলিয়ে)আমি দোয়া করি মা,যে উদ্দেশ্য নিয়ে তুমি এ বাড়িতে পা দিয়েছো তোমার সেই লক্ষ্য পূরণে তুমি সফল হও...
বাবা চলে গেলেন,সোমা কিছু্ক্ষণ অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকল।ওর কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না উনার মত একজন ভাল মানুষের শোয়েবের মত একটা ছেলে থাকতে পারে।
কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই নিজের রুমে চলে আসল সোমা,রুমে ঢুকে দেখল শোয়েব চুপচাপ সোফায় বসে আছে,ওকে দেখেও কোন কথা বলছে না।সোমা একটু হেসে রুমে ঢুকতে যাবে তখনই দেখল শোয়েবের হাতে কতকগুলো কাঁচের টুকরা ফুটে আছে আর হাত দিয়ে টপ টপ করে রক্ত ঝরছে।সোমা আর এক মুহূর্তও দেরি না করে ছুটে বেরিয়ে গেল,কিছুক্ষণ পর ফিরে এলো গরম পানি আর ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে।
শোয়েবের হাতটা ধরতেই ও এক ঝটকায় নিজের হাতটা সরিয়ে নিল
শোয়েব: জাস্ট স্টে এওয়ে ফ্রম মি ইউ ব্লাডি লায়ার..
সোমা: (একটু হেসে)তোমার যা ইচ্ছে হয় বলতে পারো,আমি কিছু মনে করব না কিন্তু এভাবে তোমার রক্ত ঝরবে তাও হবে না
শোয়েব: আমার রক্ত ঝরলে তোমার কি?
সোমা: আমার কিছু না আবার অনেক কিছুই
শোয়েব: কেন,আমার কোন ক্ষতি হলে তোমারতো আরও খুশি হওয়ার কথা...
সোমা: খুশি আমি হতাম যদি রক্তটা আমার হাতে ঝরত
শোয়েব: মানে?
সোমা: মানে তোমার রক্ত যদি ঝরাতেই হয় তাহলে আমিই ঝরাব,অন্য কেউ না...কি ভেবেছিলে,তোমার এত এত পাপের শাস্তি এত ছোট হবে?এত ইজিলি সব পাপের ক্ষমা পেয়ে যাবে!
শোয়েব: ইউ...😡
সোমা: চুপ,একদম চিৎকার করবে না,সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে তুমিও ঘুমিয়ে পড়...
শোয়েব: আমি কখন ঘুমাব,কখন খাব সেসবও কি তুমিই ঠিক করে দেবে নাকি?
সোমা: না তা ঠিক করে দিব কেন?তোমার ইচ্ছে হলে ঘুমাও নাহলে সারারাত জেগেই বসে থাকো তাতে আমার কি?আমার খুব ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমাব গুড নাইট...
(সোমা বিছানায় উঠে চুপচাপ শুয়ে পড়ল,শোয়েব কিছু্ক্ষণ অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইল তারপর ওর দিকে এগিয়ে গেল)
শোয়েব: এই মেয়ে তুমি আমার বিছানায় ঘুমাচ্ছো কেন?
সোমা: ডিয়ার হাজবেন্ড তুমি বোধহয় ভুলো যাচ্ছো,আই এম ইয়োর ওয়াইফ আর তাই তোমার সব জিনিসেই এখন আমার সমান সমান অধিকার...
শোয়েব: অধিকার মাই ফুট,এই মেয়ে নামো..নামো বলছি আমার বিছানা থেকে..😡
সোমা: না নামলে কি করবে?
শোয়েব: টেনে হিঁচড়ে তোমাকে বিছানা থেকে নামাবো আর শুধু বিছানা থেকেই না,তোমাকে এই রুম থেকেই বের করে দিব...
সোমা: তাই নাকি?ঠিক আছে তাহলে চেষ্টা করে দেখতে পারো...
(শোয়েব সোমার হাত ধরে টান দিতেই সোমা চিৎকার করে উঠল)
সোমা: বাবা...
শোয়েব: (সোমার মুখ চেপে ধরে)আবার বাবাকে ডাকছো কেন?
সোমা: উনাকে ডেকে বলব তুমি আমাকে এই রুম থেকে বের করে দিতে চাইছ..
শোয়েব: কি ভেবেছো,রোজ রোজ বাবার দোহাই দিয়ে বেঁচে যাবে?
সোমা: রোজ রোজ কেন বাবার দোহাই দিতে যাব?আমার আরো অনেক উপায় জানা আছে
শোয়েব: তাই নাকি,তা কি উপায় আছে আপনার?
সোমা: তেমন কিছুই না,কাল সকালেই তেজগাঁও থানায় গিয়ে তোমার নামে ছোট্ট একটা এফ আই আর করে আসব
শোয়েব: তবে রে...😡
শোয়েব সোমার গলা চেপে ধরতেই সোমা এগ্রিমেন্টের কথা মনে করিয়ে দিল।শোয়েব দাঁত মুখ খিঁচিয়ে সোমাকে এক ধাক্কায় দূরে সরিয়ে দিল)
সোমা: (মুচকি হেসে)ভেবেছিলাম তোমাকেও এই বিছানাতে আমার পাশেই ঘুমাতে বলব কিন্তু এখন দেখছি তোমার সেই যোগ্যতাও নেই...
শোয়েব: (কটমট করে সোমার দিকে তাকালো)
সোমা: আমার খুব ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।তুমি বরং সোফাতেই...ওহ্ স্যরি এই রুমেতো কোন সোফাও নেই।তাহলেতো তোমাকে ফ্লোরেই...
শোয়েব: হাউ ডেয়ার ইউ,তুমি আমাকে আমার রুমেই ফ্লোরে ঘুমাতে বলছ!😡
সোমা: হ্যাঁ বলছি,তাছাড়া আর কি করবে সারারাত জেগেই কাটাবে?
শোয়েব: দরকার হলে তাই করব
সোমা: ঠিক আছে,তবে তাই কর...
সোমা মুচকি হেসে চাদরটা গায়ের উপর টেনে নিয়ে শুয়ে পড়ল।শোয়েব কিছু্ক্ষণ অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলো তারপর বিড়বিড় করে বলল...
শোয়েব: আমি সারারাত জেগে জেগে কষ্ট করব আর মহারাণী নিশ্চিন্ত মনে ঘুমাবে!আমি বেঁচে থাকতে তা কিছুতেি হতে দিব না।মাই ডিয়ার ওয়াইফ জাস্ট ওয়েট এন্ড সি,তোমার কি অবস্থা করি...
সোমার চোখে সবেমাত্র একটু ঘুম ঘুম ভাব এসেছিল,হঠাৎই মনে হল গায়ের উপর ঠাণ্ডা কিছু এসে পড়ল।লাফ দিয়ে উঠে বসতেই দেখল শোয়েব সামনে দাঁড়িয়ে দাঁত বের করে হাসছে।পুরো বিছানা ভিজে একাকার হয়ে আছে,শোয়েবের হাতে বালতিটা দেখে পুরো ঘটনাটাই ওর কাছে ক্লিয়ার হয়ে গেল।শয়তানটা বালতি ভর্তি পানি দিয়ে ওকে আর পুরো বিছানাটাকে ভিজিয়ে দিয়েছে।
সোমা: এটা কি হল?😡
শোয়েব: কেন দেখতে পাচ্ছো না কি হল?
সোমা: আমার গায়ে পানি দেয়ার মানেটা কি?
শোয়েব: মানেটা খুব পরিষ্কার,আমাকে যদি ফ্লোরে ঘুমাতে হয় তাহলে তোমাকেও তাই করতে হবে।আমি ফ্লোরে আর তুমি বিছানায় তাতো হবে না...
সোমা: (দাঁতে দাঁত চেপে)হাউ ডেয়ার ইউ টু ডু দিস?
শোয়েব: ডেয়ারের দেখেছো টা কি?আমার সাথে টক্কর দেওয়ার ফল কি হতে পারে তুমি হাড়ে হাড়ে বুঝবে...
সোমা: তুমিও বুঝবে এই সোমা কি জিনিস
শোয়েব: (সেটাতো এখনই বুঝতে পারছি)ইউ ওয়ানা প্লে গেম উইথ মি রাইট?ঠিক আছে মাই ডিয়ার ওয়াইফ তাই যদি হয় দেন লেট দ্য গেম বিগিন...
সোমা: তাই নাকি?ঠিক আছে দেন লেটস স্টার্ট,দেখি এই খেলায় কে জেতে...
(সকাল ৮ টা)
রাতে শোয়েবের সাথে ঝামেলা করার পর আর এক ফোঁটাও ঘুমাতে পারেনি।একেতো এই শীতের রাতে ফ্লোরে শুতে হয়েছে তার উপর আবার ঐ শয়তানটার জন্য মোজাজটাও খারাপ হয়ে গিয়েছিল।তবে সবথেকে বেশি প্রবলেমটা হচ্ছিল প্রোমাকে নিয়ে চিন্তাটা।প্রোমা এখন কি করছে,তুহিন ওকে মেনে নিয়েছে তো এসব চিন্তায় সারারাত শুধু এপাশ ওপাশ করে গেছে।সকাল হতেই সবার জন্য নাস্তা রেডি করে টেবিলে সাজিয়ে দিয়েই তুহিনের নাম্বারে কল দিল...
কলারের নামটা দেখেই চমকে উঠল তুহিন,সোমার নামটা জলজল করে জ্বলছে।বেশ কিছু্ক্ষণ ধরে কিছু একটা ভাবল তারপর রিসিভ করেই রান্নাঘরের দিকে এগোতে লাগল...
সোমা: হ্যালো...হ্যালো তুহিন...আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন?
তুহিন:....
সোমা: প্লিজ ফোনটা কাটবেন না,আমার একটু কথা ছিল
তুহিন: হ্যাঁ বলেন কি বলবেন
সোমা: দেখুন দোষ যা করেছি,আমি করেছি এর জন্যে আমার ছোট্ট বোনটাকে কোন শাস্তি দেবেন না প্লিজ...
তুহিন:....
সোমা: দেখুন আমি জানি আপনি আমার উপর অনেক রেগে আছেন কিন্তু বিশ্বাস করুন আমার সামনে এটা ছাড়া অন্য কোন উপায়ও ছিল না।আমি এমনটা না করলে শোয়েব আমাকে কিছুতেই ছাড়তো না সেই সাথে আমার ফ্যামিলি মেম্বারদেরও ক্ষতি করতো...
তুহিন: স্টপ ইট সোমা,আমি আপনার থেকে কোন এক্সপ্লেনেশন চাই নি।এটা আপনার লাইফ,আপনি এটার সাথে যা ইচ্ছে করতে পারেন কিন্তু আমার এবং আপনার ফ্যামিলিকে এমন একটা সিচুয়েশনে না আনলেও পারতেন।আমাকে সবকিছু খুলে বলতে পারতেন,আর প্রোমা,আমিতো জানতাম ওকে তো আপনিই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন তাহলে ওর সাথে কিভাবে এমনটা করতে পারলেন...
সোমা: বিশ্বাস করুন,আমার কোন আইডিয়াই ছিল না ঘটনাটা এভাবে মোড় নিবে।প্রোমার কোন ক্ষতি হোক আমি কখনও চাইতেই পারিনা...
তুহিন: আমার বিশ্বাস করা না করাতে কি আপনার কোন যায় আসে?
সোমা: হ্যাঁ আসে কারণ আপনি এখন আমার ছোটবোনের বর তাই পুরো ঘটনাটা আপনার কাছে ক্লিয়ার করা দরকার....
তুহিন: তাতে কি হবে?
সোমা: দেখুন তুহিন আপনাদের বিয়েটা যেই সিচুয়েশনেই হোক না কেন বিয়েটাতো হয়ে গেছে তাইনা?এখন আপনার কাছে আমার একটাই অনুরোধ আপনি প্রোমাকে মেনে নিন।বিশ্বাস করুন এসবের ব্যাপারে ও কোন কিছুই জানতো না,যা করার আমিই করেছি
তুহিন: জানি
সোমা: আর প্রোমা খুব ভাল মেয়ে,আমার থেকেও অনেক অনেক ভালো একটা মেয়ে।আপনি দেখবেন,ও আপনাকে অনেক অনেক হ্যাপি রাখবে।তাই বলছিলাম আপনি প্লিজ ওকে আপনি মেনে নিন,এই বিয়েটাকে মেনে নিয়ে নতুন করে জীবনটাকে সাজানোর ট্রাই করুন প্লিজ...
তুহিন: ঠিক আছে আই উইল ট্রাই আর কিছু বলবেন?
সোমা: না মানে একটু প্রোমার সাথে কথা বলা যাবে?
তুহিন: ওয়ে একটু ওয়েট করেন আমি ওকে দিচ্ছি...
(একটু পর)
প্রোমা: হ্যালো
সোমা: হ্যালো প্রোমা,কেমন আছিস তুই?
প্রোমা: সেটা জানা কি তোর খুবই দরকার?
সোমা: তুই এভাবে বলছিস কেন?
প্রোমা: তো কিভাবে বলব?তুই আমার সাথে যা করেছিস তারপরও তোকে এর থেকে ভালোভাবে কিছু বলা আমার পক্ষে সম্ভব না..
সোমা: প্রোমা..😢
প্রোমা: খবরদার,আমার নামটাও কখনও মুখে নিবি না,আজ তোর জন্য শুধুমাত্র তোর জন্য আমার জীবনটা তছনছ হয়ে গেছে
সোমা: প্লিজ প্রোমা,আমার কথাটা একটু শোন...
সোমা: কি শুনব?আমার আর কিছু শোনার বা জানার দরকার নেই আজ থেকে আমি জানব আমার কোন বড়বোন নেই,কোনদিন ছিলও না...
সোমা: প্রোমা...প্রোমা আমার কথাটা শোন...
কিন্তু প্রোমা ওর কোন কথা না শুনেই কেটে দিল,সোমা বাকরুদ্ধ হয়ে মেঝেতে বসে পড়ল।যেই বোনকে ও নিজের জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবাসে,যার চোখে এক ফোঁটা পানি দেখলেও সারারাত ঘুমাতে পারতো না তাকে আজ এতটা কষ্ট পেতে দেখছে অথচ কিছুই করতে পারছে না।জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে সোমা মনে মনে বলল...
"ও ঠিকই বলেছে আজ আমার জন্যেই ওর এই অবস্থা।আমিই ওর জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছি,আমিও আসলেই খুব খারাপ একটা বোন খুব খুব খারাপ😪😪"
এদিকে শোয়েব নাস্তা করতে যাবে তখনই কারো কান্নার শব্দ শুনে রান্নাঘরে উঁকি দিল।সোমাকে ওভাবে কাঁদতে দেখে চমকে উঠল,মনে মনে বলল...
"আমি এতকিছু করার পরও যেই মেয়ের চোখে এক ফোঁটা পানিও আসেনি সে আজকে এভাবে কাঁদছে!কিন্তু কেন?এই প্রশ্নটার উত্তর বের করতে পারলেই ওর উইকনেসটা খুঁজে পাওয়া যাবে আর আমার পক্ষেও ওকে ঘায়েল করা ইজি হয়ে যাবে।ঠিক আছে মাই ডিয়ার ওয়াইফ,সর আগে তোমার এই উইকনেসটাকেই আমি খুঁজে বের করব তারপর সবাই দেখবে হু ইজ দ্য রিয়েল গেম চেঞ্জার...
0 মন্তব্যসমূহ