লাভ গেমস্ - পর্ব ১৬

লাভ গেমস্ - পর্ব ১৬

লাভ গেমস্

লেখকঃ Sanjida Afrin Shetu

পর্বঃ ১৬

ক্রিং ক্রিং...ক্রিং ক্রিং...
অনেক্ষণ ধরেই শোয়েবের ফোনটা বেজে চলেছে,চিন্তার জগতে এতটাই ডুবে ছিল যে খেয়ালই করেনি।
সোমা: কি হল,ফোনটা ধরছ না কেন?উফ!কানটা ঝালাপালা করে মারবে দেখছি
(সোমা গট্ গট্ করে চলে গেল)
শোয়েব: হ্যালো কে?
সিজা: হ্যালো মি হ্যাণ্ডসাম,আমাকে চিনতে পারছো?
শোয়েব: কই নাতো,কে আপনি?
সিজা: সে কি জান,তুমি আমাকে চিনতে পারছ না
শোয়েব: ফাইজলামি না করে বলেন তো কে আপনি?
সিজা: শোয়েব...তুত...তুমি..­.অবশ্য এখনতো আমাকে না চেনাটাই স্বাভাবিক,নতুর বিয়ে করেছ বৌ ছাড়া কি এখন আর কাউকে চিনবে?
শোয়েব: আপনি কি বলবেন আপনি কে,না কি আমিই ফোনটা ডিসকানেক্ট করে দিব...
সিজা: (রেগে গিয়ে)আমি সিজা বলছিলাম,এবার চিনতে পারছেন নাকি নামটাও ভুলে গেছেন?
শোয়েব: ওহ্ আই এ্যাম সো স্যরি জান,আসলে তুমি অন্য নাম্বার থেকে ফোন দিয়েছো তাই...
সিজা: নাম্বার চেঞ্জ হয়েছে,কণ্ঠ তো আর চেঞ্জ হয়নি তাইনা?
শোয়েব: স্যরি জান,ভুল হয়ে গেছে আর এমন হবে না আই প্রমিস
সিজা: এখনতো মনে হচ্ছে ওরা যা বলছিল সবই সত্যি
শোয়েব: কারা আর কি সত্যি?
সিজা: রিশান আর তোমার সব বন্ধুরা
(ওদের নাম শুনেই আবার রগে গেল শোয়েব)
শোয়েব: (দাঁতে দাঁত চেপে)তা কি বলছিল ওরা?
সিজা: বলছিল তুমি ঐ গাঁইয়া মেয়েটার প্রেমে পড়েছ,ওর জন্য নাকি বন্ধুদের গায়েও হাত তুলেছ!আমারতো বিশ্বাসই হচ্ছিল না,কিন্তু এখনতো মনে হচ্ছে...
শোয়েব: শাট আপ সিজা
সোমা: কেন,চুপ কেন করব?আমি মাত্র কয়েকদিনের জন্য ওয়ার্ল্ড ট্যুরে গেলাম আর তুমি এরমধ্যেই এত সব গোলমাল করে ফেললে!I can't believe that you have betrayed me...
শোয়েব: Shija please try to understand me sweetheart,I only love you not anyone else and you know that right?এই কয়দিনে যা কিছুই হয়েছে সবই আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে হয়েছে
সিজা: আচ্ছা ঠিক আছে,আই বিলিভ ইউ।এখন এক কাজ কর তো ঝটপট মিডনাইট বারে চলে এসো।কতদিন তোমার সাথে নাইটে হ্যাংআউট করিনি...
শোয়েব: সেটা এখন সম্ভব না...
সিজা: হোয়াট!আর ইউ ম্যাড শোয়েব,আমি এতদিন পর দেশে আসলাম আর তুমি আমার সাথে দেখা করবে না!ইউ হ্যাভ টোটালি চেঞ্জড,তুমি থাক ঐ গাঁইয়া আন্টিটার সাথে...
শোয়েব: শাট আপ সিজা,তোমার বন্ধুরা তোমাকে এতকিছু বলেছে আর এটা বলেনি যে আমি এখন ঠিক কোন কন্ডিশনে আছি?
সিজা: কি বলবে হ্যাঁ?আর বাই দ্য ওয়ে ওরা আমার ফ্রেণ্ড না,ওরা তোমার ফ্রেণ্ড...😡
শোয়েব: ওকে ওকে আই এ্যাম সরি জান,আমার ভুল হয়ে গেছে এখন প্লিজ একটু ঠাণ্ডা মাথায় শোন আমার কথাটা...
সিজা: কি কথা?তাড়াতাড়ি বল আমার সময় নেই...
শোয়েব: আসলে আমার একটা এ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে আর তাই হাঁটা-চলা টোটালি বন্ধ...
সিজা: হোয়াট!কি করে হল এসব😮
শোয়েব: সেসব পরে বলব,তুমি ঝটপট আমার বাসায় চলে আসো তো কতদিন তোমার সাথে দেখা হয়নি...
সিজা: তোমার বৌ রাগ করবে না?
শোয়েব: রাখো তো ওর কথা,যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে এসো I am eagerly waiting for you...
সিজা: কিন্তু এতরাতে ওদিকে...আচ্ছা শোন আমি কাল সকালে আসব ওকে?
শোয়েব: আচ্ছা ঠিক আছে,সকালেই চলে আসবে কেমন?বেশি দেরি করবে না কিন্তু...
সিজা: ওকে নাউ বাই আর শোন
শোয়েব: কি?
সিজা: আই মিস ইউ...
শোয়েব: মিস ইউ টু বেবি...
সোমা: (রুমে ঢুকেই)মিসিং কিসিং সব হয়ে গিয়ে থাকলে এখন কি আমি একটু ঘুমাতে পারি?কাল সকালে আবার অফিসে যেতে হবে...
শোয়েব: হুম
শোয়েবকে ঠিকমত শুইয়ে দিয়ে সোমাও বিছানার অন্যপাশে শুয়ে পড়ল তারপর কোলবালিশটা দুজনের মাঝখানে রেখে বলল
সোমা: খবরদার,বর্ডার ক্রস করলে কিন্তু ঐ ভাঙ্গা পা টা আবার ভেঙ্গে দিব বুঝেছো?
শোয়েব: আচ্ছা প্রতিদিন রাতে এই কথাটা কেন বলতে হয় তোমাকে?প্রথমদিন যখন বলেছিলে তখন থেকেইতো আমি মুখস্ত করে নিয়েছি...
সোমা: প্রতিদিন বলি যাতে তুমি ভুলে গেলেও আবার মনে পড়ে যায় বিকজ আন্ট ডোন্ট বিলিভ ইউ...
শোয়েব: চাল হাট,তোমার মত আন্টিজিকে টাচ করতে আমার বয়েই গেছে
সোমা: কথাটা যেন মনে থাকে...
(ওহ্ ওদের এক বিছানায় দেখে আপনারা খুব অবাক হচ্ছেন তাইনা?অবাক হওয়ার কিছু নেই,আসলে শোয়েবকে হসপিটাল থেকে নিয়ে আসার পর থেকে ওরা দুজনে একই বিছানায় ঘুমায়।সোমা জানে শোয়েব চাইলেও কিছু করতে পারবে না আর তাছাড়া যদি রাত বিরাতে ওর কোনকিছু দরকার হয় তাহলে পাশে থাকলে সোমাই হেল্প করতে পারবে এসব ভেবেই  দুজনে এক বিছানাতেই ঘুমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।তবে দুজন দুদিকে ফিরে ঘুমায় আর ওদের মাঝে এই বালিশটা স্থান পেয়েছে)
(পরদিন)
সিজার সকালে আসার কথা থাকলেও ওর আসতে আসতে দুপুর হয়ে গেল,বাবা তখনও অফিসে আর সোমা সবে অফিস থেকে আসল।সিজা এসেছে দেখে সোমা ওকে ড্রয়িংরুমে বসতে দিয়ে সোজা শোয়েবের রুমে চলে গেল। কিছু্ক্ষণ পর শোয়েব সোমার কাঁধে ভর দিয়ে আস্তে আস্তে ড্রয়িংরুমে ঢুকল।ওকে আসতে দেখে সিজা ছুটে গিয়ে সোমার কাঁধ থেকে শোয়েবের হাতটা ছুটিয়ে নিজের কাঁধের উপর রাখল তারপর ওকে ধরে নিয়ে এসে সোফায় বসিয়ে দিল।
সোমা: তোমরা কথা বল,আমি তোমাদের জন্য চা-নাস্তার ব্যবস্থা করছি
(সোমা চলে গেল,সিজা শোয়েবের দিকে তাকিয়ে বলল)
সিজা: বাব্বাহ্ ভালইতো চলছে😏
শোয়েব: (অবাক হয়ে)মানে?
সিজা: মানেটা বেশ পরিষ্কার,নিজ চোখেই তো দেখলাম ঐ মেয়েটাতো তোমাকে ভালই বশ করে ফেলেছে
শোয়েব: কি যা-তা বলছ?
সিজা: ঠিকইতো বলছি,যে মেয়ের তোমার পায়ের ধুলো হওয়ার যোগ্যতাও নেই তুমি তার কাঁধে ভর করে চলাফেরা করছ😮
শোয়েব: আরে বাবা,ওটাতো আমি সিক তাই...
সিজা: মিথ্যা বল না শোয়েব,তোমাদের দুজনের বডি ল্যাঙ্গুয়েজই বলে দিচ্ছিল তোমরা দুজনেই বেশ কমফোর্টেবল ছিলে,মনে হচ্ছিল দুজনের মধ্যে কেমিস্ট্রিটা ভালই জমেছে...
শোয়েব: শাট আপ সিজা
সিজা: আমাকে চুপ করিয়ে কি লাভ?যেটা সত্যি সেটাতো প্রকাশ পাবেই...
শোয়েব: সত্যিটা এটাই যে আই ডোন্ট লাইক হার ইনফ্যাক্ট আই হেট হার দ্য মোস্ট ইউ দিস ওয়ার্ল্ড...
সিজা: হোয়াট!
শোয়েব: হ্যাঁ ঠিকই শুনেছো,ওই মেয়ে আমার সাথে বিট্রে করেছে And you know that I hate betrayals the most...আমার সামর্থ্য থাকলে ওকে কবেই এ বাড়ি থেকে বের করে দিতাম।ওর মত মেয়ের প্রেমে পড়ার আগে আমি নিজেকেই শেষ করে দিব😡
সিজা: রিয়েলি!আমি জানতাম তুমি আমার সাথে বিট্রে করতেই পারো না।Love you baby love you so....much😘😘
শোয়েব: Love you too baby😘
সিজা আর শোয়েব দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরল আর সিজা আলতো করে নিজের ঠোঁট শোয়েবের গালে বসিয়ে দিল,শোয়েবও,তাতে সাড়া দিল...
দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে এ সবই নিজ চোখে দেখছিল সোমা,ওদের এভাবে দেখে নিজেকে আর কিছুতেই ঠিক রাখতে পারল না।অনেক কষ্টে কান্নাটাকে আটকে রেখে কাজের বুয়াকে ডেকে নাস্তার ট্রেটা ওদের কাছে পাঠিয়ে দিল তারপর ছুটে চলে গেল নিজের রুমে।ধপ করে বিছানায় পড়ে মুখে বালিশ চেপে চোখের জল ফেলতে লাগল,ঠিক তখনই মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পেল।চমকে উঠে চোখের পানি মুছে ফিরে তাকাতেই দেখল বাবা দাঁড়িয়ে আছেন...
বাবা: কি হয়েছে বৌমা?তুমি এভাবে কাঁদছো কেন?
সোমা: কই বাবা,নাতো আমি আবার কাঁদতে যাব কেন?ওই চোখে একটা পোকা পড়েছিল তাই..
বাবা: (একটু হেসে)বৌমা,এই যে আমার মাথার পাকা চুলগুলো দেখছ,এগুলো কিন্তু এমনি এমনি পাকেনি।অনেক কিছু দেখেছি,শিখেছি তারপর আজকের এই অবস্থায় এসেছি।কোনটা আসল কান্না আর কোনটা চোখে পোকা পড়ার কান্না সবই কিন্তু আমি বুঝি।তাই বলছি কি হয়েছে আমাকে খুলে বল...
সোমা: না মানে বাবা আসলে আমি...
(তখনই ড্রয়িংরুম থেকে সিজা আর শোয়েবের হাসির শব্দ ভেসে আসলো)
বাবা: থাক মা আর বলতে হবে না,আমি বুঝতে পেরেছি।
সোমা: আমি আর পারছি না বাবা,কালই আমি এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাব...
বাবা: তোমাকে কোথাও যেতে হবে না,আমি জানি আমার ঐ অমানুষ ছেলেটার জন্যে আমার এই মা টা এতটা কষ্ট পাচ্ছে,ঠিক আছে ওর ব্যবস্থা আমি করছি
সোমা: না বাবা,ওকে কিছু বলবেন না।এমনিতেই ওর শরীরটা খারাপ তারপর এসব করলে...
বাবা: (একটু হেসে)আমার ঐ গাধা পুত্রটা আসল হিরেটা চিনতে পারল না।তাইতো কোহিনূর হিরা রেখে নকল হিরার পেছনে ছুটে চলেছে...
(সোমা আবারও কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল)
বাবা: (সোমার মাথায় হাত বুলিয়ে)জানো মা,যেদিন জাফির তোমাকে আমার অফিসে নিয়ে এসেছিল সেদিন তোমাকে দেখেই আমি বুঝেছিলাম তুমিই পারবে আমার এই কুলাঙ্গার ছেলেটাকে ঠিকপথে আনতে।
(সোমা বাবার দিকে মুখ তুলে তাকালো)
বাবা: আর তাই তোমাদের বিয়ের প্ল্যানটাতে আমি রাজি হয়ে গিয়েছিলাম।কিন্তু আমার ধারণাটা মনে হয় ভুল ছিল...
সোমা: বাবা!আপনি এমন কথা কেন বলছেন?
বাবা: তো কি করব বল,তুমি যদি এভাবে হাল ছেড়ে দাও তাহলে কি করে হবে?
সোমা: (ফুঁপিয়ে)আমি কি করব বাবা?আপনিই বলেন...আমি যে আর পারছি না...
বাবা: মা গো আমার ছেলেটা কেমন আমি জানতাম আর তাইতো তোমাকে বিয়ে নিয়ে ঐ এগ্রিমেন্টটা করতে কলেছিলাম।কৌশলে শোয়োবের সিগনেচারও নিয়ে নিয়েছিলাম,এসব আমি কেন করেছিলাম জানো?
সোমা:...
বাবা: যাতে তুমি এটার সুযোগ নিয়ে আমার ছেলেটাকে ঠিক করার একটা উপায় বের করতে পারো
সোমা: আমিতো চেষ্টা করেছি বাবা,কিন্তু আমি আর পারছি না এসব সহ্য করতে😪😪
বাবা: বৌমা এতদিন ধরে শোয়েবের সামনে আমি তোমাকে না চেনার ভান করেছি,এহসানকে বলে শোয়েবের অসুস্থতার মিথ্যা নাটক করিয়েছি,আমি জানি শোয়েবের এই অবস্থার জন্য তুমিই দায়ী তবুও আমি কিছুই বলিনি তোমাকে কারণ কি জানো?
সোমা: জানি বাবা
বাবা: কারণ আমি ভেবেছিলাম তুমি এসবই শোয়েবকে ঠিক করার জন্য করছ আর এখন তুমি হাল ছেড়ে দিচ্ছো?আমি আর কিচ্ছু শুনতে চাই না তুমি আমাকে কথা দিয়েছিলে ওকে তুমি  ঠিকপথে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে আর এই কথাটা তোমাকে রাখতেই হবে
সোমা: কিন্তু বাবা...
বাবা: কোন কিন্তু নয়,আমি কাল রাতেই নিউইয়র্ক যাচ্ছি ফিরব মাস খানেক পরে।এই একমাসে তুমি কি করবে জানিনা তবে আমি ফিরে এসে যেন দেখি তোমাদের দুজনের মধ্যে সবকিছুই একেবারে ঠিক হয়ে গেছে
সোমা: বাবা প্লিজ আমার কথাটা একটু বোঝার চেষ্টা করেন... 
বাবা: আমার কিছুই বোঝার দরকার নেই,আমি জানি মা তুমি চাইলে সবই করতে পারবে।আর তোমমার যা যা হেল্প লাগবে আমাকে বলবে আমি শুধু আমার ছেলেটাকে মানুষ করতে চাই...
সোমা:....
বাবা: কি বৌমা পারবে না?
সোমা: হ্যাঁ বাবা,পারব।আমাকে যে পারতেই হবে...
বাবা: দোয়া করি মা তুমি যা চাইছ সব কাজেই যেন সফল হতে পারো.. 
(বাবা চলে গেলেন,সোমাও উনার পেছন পেছন বেরিয়ে গেল।ড্রয়িংরুমের দরজার অাড়ালে দাঁড়িয়ে শোয়েবের হাসিমাখা মুখের দিকে তাকিয়ে বলল...)
সোমা: (মনে মনে)মি. হাজবেন্ড,তোমার অবস্থা দেখে ভেতরো ভেতরে খুব খারাপ লাগছিল,ভেবেছিলাম আমি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি।কিন্তু না,তেমন কিছুই হয়নি,কাল থেকে দেখবে আমি আরও কি কি করতে পারি।তোমাকে লাইনে আনার জন্যে যদি আমাকে তোমার উপর থার্ড ডিগ্রী টর্চারও প্রয়োগ করতে হয় আমি তাও করব।মি.শোয়েব তুমি ঘুঘু দেখেছো কিন্তু ফাঁদ দেখোনি,এবার তুমি ঘুঘুও দেখবে আবার ফাঁদও দেখবে।শুধু দেখবেই না,ফাঁদে আটকা পড়ার পর বুঝবে কেমন লাগে....

Reactions

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ