লাভ গেমস্
লেখকঃ Sanjida Afrin Shetu
পর্বঃ ১৭
দরজার আড়াল থেকে বেরিয়ে সোমা ড্রয়িংরুমের দিকে এগোল,হাতে বাটি ভর্তি স্যুপ...
সোমা: তোমার স্যুপ
শোয়েব: এখন না পরে
সোমা: জ্বি না,তোমার স্যুপ খাওয়ার টাইম হয়ে গেছে তাই কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ হা কর আমি খাইয়ে দিচ্ছি...
সিজা: (সোমার হাত থেকে বাটিটা কেড়ে নিয়ে)আমি থাকতে ওকে তুমি খাওয়াবে!তোমার মাথা ঠিক আছে তো?
সোমা: মা..ম্ম..মানে?
সিজা: ইউ গাঁইয়া ভূত,শোয়েব আমার বয়ফ্রেণ্ড,You are just an outsider বুঝেছো?সো আমাদের দুজনের মাঝে আসার চেষ্টাও করবে না...
(সোমা এক ঝটকায় সিজার হাত থেকে স্যুপের বাটিটা কেড়ে নিল)
সিজা: You lower middle class silly village girl,how dare you do this...
সোমা: (রেগে মেগে)শাট আপ
সিজা: ইউ...
সোমা: I said hold your tongue.এই মেয়ে ম্যানার কি জিনিস জানো?
সিজা: তুত..তুমি!!
সোমা: মিস সিজা,একটু আগে কি যেন বলছিলে,শোয়েব তোমার বয়ফ্রেণ্ড তাইতো?
সিজা: অফকোর্স
সোমা: হুম বুঝলাম।আচ্ছা ও যদি তোমার বয়ফ্রেণ্ড হয় তাহলে ওতো আমার হাজবেণ্ড তাইনা?তাহলে এখন একটা কথা বলতো আমরা যদি হাজবেণ্ড-ওয়াইফ হই তাহলে আউট সাইডারটা কে?
সিজা: শোয়েব,তোমার বউ কিন্তু আমাকে অপমান করছে
শোয়েব: সোমা...
সোমা: তুমি চুপ কর,এই মেয়ে ওকে কি বলছ যা বলার আমাকে বল..
সিজা: 😷😷
সোমা: শোন মেয়ে আর কক্ষণও আমার আর আমার হাজবেণ্ডের মধ্যে আসার চেষ্টা করবে না।কথাটা যত ত
তাড়াতাড়ি বুঝবে ততই তোমার জন্য ভাল,না বুঝলে কিভাবে বোঝাতে হয় আমার জানা আছে...
সিজা: তুমি কি আমাকে থ্রেট করছ!
সোমা: যদি তাই মনে হয় তাহলে তাই
সিজা: (শোয়েবের হাত ধরে)জান তুমি এই মেয়েকে কিছু বলছ না কেন?ওকে ওর জায়গাটা দেখিয়ে দাও প্লিজ...
সোমা: (সিজার হাত শক্ত করে ধরে)হাউ ডেয়ার ইউ টাচ মাই হাজবেণ্ড!আর একবার ওর গায়ে হাত দিয়েছো তো তোমার ঐ হাত আমি ভেঙ্গে ফেলব।সো বি ওয়্যার অফ ইট...
(সিজা শোয়েবের দিকে একবার তাকিয়ে সোমার দিকে অগ্নিদৃষ্টি দিয়ে গটগট করে বেরিয়ে গেল)
শোয়েব: তুমি কিন্তু কাজটা ঠিক করলে না
সোমা: আর তুমি যেটা করছিলে সেটা কি ঠিক ছিল?
শোয়েব: কি করছিলাম আমি?
সোমা: বুঝতে পারছো না তাইনা?আচ্ছা আমিই বুঝিয়ে দিচ্ছি,ঘরে বৌ রেখে বাইরের একটা মেয়ের সাথে...ছি ছি ছি!আমারতো বলতেও লজ্জা লাগছে
শোয়েব: (হাসতে হাসতে)বৌ!কিসের বৌ!তুমি কি নিজেকে আমার বৌ বলে ভাবতে শুরু করেছ নাকি?হাহাহা আর হাসতে পারছি না এবারতো অফ যাও প্লিজ...
সোমা আর কিছু না বলে চুপচাপ শোয়েবকে স্যুপটা খাযে দিয়ে রুমে চলে গেল
(৭ দিন পর)
ম্যানেজার: স্যরি স্যার,আপনার এ্যাকাউন্ট লক দেখাচ্ছে।স্যরি স্যার আপনাকে ক্যাশে পেমেন্ট করতে হবে তানাহলে আমরা নেকলেসটা আপনাকে দিতে পারছি না।I am really very sorry...
শোয়েব: What!what are you saying damn it?Are you mad or what!
ম্যানেজার: Sorry sir,আপনার ক্রেডিট কার্ড যা দেখাচ্ছে আমিতো তাই ই বললাম
শোয়েব: কিন্তু এটা কি করে সম্ভব!
ম্যানেজার: স্যার হয়ত কেউ আপনার এ্যাকাউন্ট লক করে দিয়েছে
শোয়েব: কিন্তু...আচ্ছা ঠিক আচ্ছে আপনি আমার অফিসের এ্যাড্রেসে নেকলেসটা পাঠিয়ে দিন,আমি ওখান থেকেই পেমেন্ট করে দিব
ম্যানেজার: Sorry sir,I can't help you in this matter,You have to make the payment clear first...
শোয়েব: ইট'স ওকে
একক্ষণ শোয়েব যার সাথে কথা বলছিল সে একটা জুয়েলারি শপের ম্যানেজার।শোয়েবের পা এখন আগের থেকে অনেক ভাল,এখন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে,শুধু দাঁড়াতেই না খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতেও পারছে।আগামী সপ্তাহেই সিজার বার্থডে তাই ওর জন্য বার্থডে গিফ্ট কেনার উদ্দেশ্যেই এই শপিংমলে এসেছিল শোয়েব কিন্তু ব্যাপারটা কি দাঁড়ালো মাথায় ঢুকছে না।অফিসে গিয়ে একটা চেক লিখে জমা দিতেই সেটা রিজেক্ট হয়ে গেল।মেজাজ গরম করে আসল ব্যাপারটা বের করতেই এ্যাকাউন্ট সেকশনে চলে গেল,গিয়েই পেয়ে গেল জাফর আঙ্কেলকে...
শোয়েব: আঙ্কেল,আমার এ্যাকাউন্ট থেকে কোনভাবেই কোন ব্যালেন্স উইথড্রো করা যাচ্ছে না কেন?
আঙ্কেল: তোমার এ্যাকাউন্ট ব্লক করে দেয়া হয়েছর তাই
শোয়েব: হোয়াট!কিন্তু কেন আর কে করল এটা?
আঙ্কেল: আমি অত কিছু জানিনা,তুমি বৌমার সাথে কথা বলে দেখ
(শোয়েব রেগে মেগে সোমার কেবিনে গিয়ে ঢুকল)
সোমা: হোয়াট ইজ দিস মি.শোয়েব?কারো রুমে ঢোকার আগে যে পারমিশন নিতে হয় সেটাও ভুলে গেছেন?
শোয়েব: এসবের মানে কি?
সোমা: কি সবের?
শোয়েব: আমার এ্যাকাউন্ট ব্লক করা হয়েছে কেন?
সোমা: আমি করতে বলেছি তাই
শোয়েব: হাউ ডেয়ার ইউ...
সোমা: চুপ একদম চুপ,গলা নামিয়ে কথা বল
শোয়েব: শাট আপ,এই মেয়ে কোন সাহসে তুমি আমার এ্যাকাউন্ট ব্লক করেছো?আর এই অধিকার তোমাকে কে দিল!
সোমা: কুল ডাউন মি.শোয়েব
শোয়েব: কুল ডাউন মাই ফুট,আমি তোমাকে আমার বাড়ি থেকেই বের করে দিব,আমার জীবন থেকেই দূর সরিয়ে দিব
সোমা: (একটু হেসে)তাই নাকি?আচ্ছা ঠিক আছে একটু মনযোগ দিয়ে এটা পড়ুন(একটা ফাইল এগিয়ে দিয়ে)
শোয়েব: এটা কি?
সোমা: পড়েই দেখুন না..
.
(ফাইলটা খুলে একবার চোখ বুলাতেই চোখ কপালে উঠে গেল শোয়েবের)
শোয়েব: এ..এটাতো...
সোমা: পাওয়ার অফ এ্যাটোর্নি,নিউইয়র্ক যাওয়ার আগে বাবা সবকিছু আমার দ্বায়িত্বে দিয়ে গেছে তাই লগ্যালি আমিই এখন উনার সব সম্পত্তির মালিক বলা যায়।আমি চাইলেই এখন সবকিছু নিজের নামে করে নিতে পারি
শোয়েব: (সোমার দিকে তেড়ে গিয়ে)শয়তানি,এই ছিল তোর মনে!
সোমা: নো নো মি.শোয়েব,ডোন্ট ট্রাই টু ডু এনি হার্ম টু মি নাহলে আমি সিকিউরিটি ডাকতে বাধ্য হব
(শোয়েব রাগ কনট্রোল করতে দেয়ালে একটা ঘুষি মারল)
সোমা: দ্যাটস বেটার ফর ইউ
শোয়েব: ওসব ফাইজলামি বাদ দাও আর আমার কিছু টাকা লাগবে ওদেরকে বলে দাও
সোমা: কত?
শোয়েব: এক লক্ষ
সোমা: (চোখ কপালে তুলে)এত টাকা দিয়ে কি করবে?
শোয়েব: That's none of your business
সোমা: It is my business.আমার সিগনেচার ছাড়া তুমি একটে টাকাও উইথড্রো করতে পারবে না আর কারণটা না জেনে আমি সিগনেচার করব না...
শোয়েব: (রেগে মেগে)ইউ...
সোমা: আর কান খুলে শুনে রাখো এখন থেকে আমার ইচ্ছেমতই সবকিছু করতে হবে তোমাকে।তোমার ভাল না লাগলেও করতে হবে নাহলে...
শোয়েব: নাহলে কি করবে?
সোমা: ঘাড় ধরে বাড়ি থেকে বের করে দিব
শোয়েব: হাউ ডেয়ার ইউ!ওটা আমার বাবার বাড়ি
সোমা: ছিল এখন আর নেই।বাবা আগেই ওটা আমার নামে রেজিস্ট্রি করে দিয়ে গেছেন
শোয়েব: কি!!!আি কান্ট বিলিভ দিস
সোমা: বিশ্বাস না হলে করবে না,আমিতো আর কাউকে জোর করছি না...
শোয়েব: (হাতের মুঠি পাকিয়ে)তোমাকে তো আমি...
(কথা শেষ না করেই শোয়েব হন্ হন্ করে বেরিয়ে গেল)
সোমার অফিস থেকে ফিরতে সন্ধ্যা লেগে গেল,বাবার অবর্তমানে ওকেই সবকিছু দেখতে হচ্ছে তাই এত লেট।বেশ টায়ার্ড লাগছে তাই শাওয়ার নিতে ওয়াশরুমে গিয়ে ঢুকল,কিন্তু পানির লাইনটা অন করতেই বুঝল লাইনে পানি নেই।কিন্তু এমনতো কখনও হয় না,আধভেজা কাপড়েই বাইরে বেরিয়ে এসে চিৎকার করে সবাইকে ডাকতে লাগল।পানির লাইনটা তাড়াতাড়ি ছাড়তে বলল...
হঠাৎই কোথা থেকে যেন এক ঝাপটা পানি এসে ওকে পুরোপুরি ভিজিয়ে ফেলল,অবাক ভাব কাটিয়ে পানির উৎস কোথায় দেখার জন্য ঘুরতেই দেখল শোয়েব হাতে একটা বালতি নিয়ে দাঁত বের করে হাসছে...
সোমা: (দাঁতে দাঁত চেপে)এটা কি হল!
শোয়েব: শাওয়ার নেবে বলছিলে না,সেই ব্যবস্থাই করলাম
সোমা: হাউ ডেয়ার ইউ...
শোয়েব: ডেয়ারের দেখেছো টা কি?কি ভেবেছিলে আমাকে বাড়ি ছাড়ার ভয় দেখাবে,এ্যাকাউন্ট ব্লক করে দেবে আর আমি হাতে হাত দিয়ে বসে থাকব!কান খুলে শুনে রাখো আমার পেছনে লাগতে আসলে আমিকিন্তু ছেড়ে কথা বলব না...
সোমা: তোমাকেতো আমি পরে দেখে নেব(ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে)
আসলে শোয়েবের সামনে ওভাবে ভেজা কাপড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে সোমার খুবই আনইজি লাগছিল আর তাছাড়া এখন অসুখ বিসুখে পড়লে অফিস কে সামলাবে তাই শোয়েবের সাথে কথা বলে সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে নিল...
(রাতে খাওয়ার টেবিলে)
শোয়েব খাবারের দিকে হাত বাড়াতেই সোমা ওর হাত চেপে ধরল
সোমা: ওগুলো তোমার জন্য নয়,ওগুলো আমার জন্য...
শোয়েব: মানেটা কি?এতগুলো খাবার তুমি খাবে!তাহলে আমি কি খাব?
সোমা: ওয়েট,এই পারুল...তোর ভাইজানের খাবারটা নিয়ে আয় তো...
শোয়েব: (খাবারগুলো দেখে)ইয়াক!এগুলো আমি খাব!অসম্ভব...
সোমা: কেন কি সমস্যা?
শোয়েব: কাঁচা কলা ভর্তা,করলার সবজি আর পেঁপে ভাজি!আমি এসব খাব!এসব কি মানুষ খায়?
সোমা:নাহ্ গরু-ছাগলে খায়
শোয়েব: তোমির ইচ্ছে হলে তুমি খাও
সোমা: আমি খাব কেন?আমাকে কি ডক্টর এসব খেতে বলেছে যে আমি খাব?
শোয়েব: আমাকেওতো বলেনি
সোমা: বলেছে তুমি ভুলে গেছো
শোয়েব: কই কবে বলল?
সোমা: কেন ভুলে গেলে তোমার পা ভাঙ্গার আগেতো তুমি এসবই খেতে?এখন কথা বাড়িয়ে খেয়ে নাও এখন থেকে এসবই খেতে হবে...
শোয়েব: বললমতো আমি এসব খাব না
সোমা: খেতে চাইলে এসবই খেতে হবে নাহলে না খেয়েই থাকতে হবে
শোয়েব:....
সোমা: (চোখ পাঁকিয়ে)কি হল চুপ করে বসে আছো যে!কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ খাও বলছি...
শোয়েব: আমি না খেয়ে থাকব তবুও এসব খাব না...
সোমা: খেতে না চাইলে খেয়ো না,আমারতো খুব ক্ষুধা লেগেছে তাই আমিই খেয়ে নিই...
(সোমা বেশ মজা করে খাচ্ছে,শোয়েব চোখ কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে)
শোয়েব: (মনে মনে)ডাইনি,শাকচুন্নি,শয়তানী,ফাযিল একটা মেয়ে।দেখ কেমন রাক্ষসের মত খাচ্ছে!ঐ খাবার হজমই হবে না,বাথরুমে আসা-যাওয়া করতে করতে জীবন বেরিয়ে যাবে
সোমা: এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?আমার কি পেটের অসুখ বানানোর ধান্দা করছ নাকি?
শোয়েব: (মনে মনে)ও আমার মনের কথা জানলো কি করে!
সোমা: চিন্তা কর না আমি কিছু শুনতে পাইনি কিন্তু তুমি আমার সম্পর্কে কি ভাবছো সবই কিন্তু আমি বুঝতে পারছি
শোয়েব: (মনে মনে)এই মেয়েতো দেখি মনের খবরও রাখে!!!
সোমা: কি হল,হা করে কি দেখছো?খেতে চাইলে খাও,নাহলে নিজের রুমে যাও এভাবে আমার খাবারে নজর দিও না
শোয়েব: আমার বয়েই গেছে তোমার খাবারে নজর দিতে,আমি রুমে যাচ্ছি খুব ঘুম পাচ্ছে...
ডিনার শেষে রুমে আসতেই সোমা দেখল শোয়েব হাত-পা ছড়িয়ে বিছানায় শুয়ে আছে
সোমা: তুমি এখানে কি করছ?
শোয়েব: কেন?ঘুমাব তাই শুয়ে আছি।কেন তোমার কোন সমস্যা?
সোমা: সমস্যাতো বটেই,আমি তোমার সাথে ঘুমাতে পারব না
শোয়েব: কেন?এতদিন তো একসাথেই থাকতাম তাইনা?
সোমা: হ্যাঁ থাকতাম কারণ তুমি অনেক অসুস্থ ছিলে।এখন তুমি অনেকটা সুস্থ তাই একসাথে থাকতে পারব না
শোয়েব: থাকতে না চাইলে অন্য রুমে গায়ে ঘুমাও
সোমা: আমি কেন অন্য রুমে যাব,তুমি যাবে অন্য রুমে
শোয়েব: আমার রুম ছেড়ে আমি কেন যাব?যেতে হলে তুমি যাবে
সোমা: (অট্টহাসি হেসে)আর হাসিও না প্লিজ...এ বাড়িটাই যখন আমার তখন বেডরুমটাও....
শোয়েব: ইউ...
সোমা: ডোন্ট ডেয়ার টু ডু দিস মি.শোয়েব
(শোয়েব রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেল)
সোমা: (মনে মনে)চিন্তা কর না মি.শোয়েব,আজকে তো তাও অল্পের উপর দিয়ে ছেড়ে দিয়েছি আগে আগে দেখো হোতাহে কিয়া....
0 মন্তব্যসমূহ