পাগলীর পাগল


পাগলীর পাগল
এইতো বছর খানিক হয়ে গেছে এম.এ পাস করেছি। অনেক
খুজাখুজি করার পর একটা চাকরি
খুজে পাই। ভালোই দিন কাটতেছিল আমার। প্রতিদিন
শাট পেন্ট লাগিয়ে অফিসে যাবো ছোট বেলা
থেকে স্বপ্ন ছিলো। সেই আশা পূরন হয়েছে আমার।।
কিন্তু একটা স্বপ্ন পূরন এখনো হয়নি।
সেটা হলো আমার বিয়ে।। সেই ৮ম শ্রেনী থাকা কালিন
থেকেই বিয়ে করার স্বপ্ন দেখতাম।
প্রেম করার জন্য কতো চেষ্টা করেছি কিন্তু একটাও
করতে পারি নাই। বন্ধুরা,বড় ভাইরা বলতো
আরে বেটা চিন্তা করিস না কলেজ উঠলে দেখবি
এমনিতেই অনেক মেয়ে পেয়ে যাবি প্রেম করার জন্য
গেরান্টি। কিন্তু কলেজ কি
ভার্সিটিতে যেয়েও কনো কাজ হলো না।। যখন
দেখতাম বন্ধুরা তাদের জি.এম এর সাথে রসালো
আলাপ পাড়তো। তখন সেই রকমের খারাপ লাগতো। মনে
মনে ভাবতাম আল্লায় জানে আমার
বউটা আমাকে রেখে কোন ছেলের সাথে যেনো টাংকি
মারতাছে। গ্রামের কিছু চাচা ছিলো আমার, খুব ফ্রি
মাইন্ডে
কথা বলতাম, বছর খানিক আগে তাদের দিয়ে
বাবাকে বলিয়েছিলাম যে আমার বিয়েটা দেয়ার
কথা,কিন্তু আমার বাবা বলে আগে আমার ছেলে
নিজে টাকা পয়সা উপার্জন করুক তারপর। এইতো চার
মাস ধরে একটা চাকরি পায়েছি আশায় আছি কখন বাবা
মা বিয়ে করার কথা বলে।
<>
<>
সকালে ঘুম থেকে উঠে অফিসের জন্য রওনা দিবো ঠিক
তখনি দেখি মোবাইলটা বেজে উঠলো। মোবাইলে
তাকিয়ে দেখি মা ফোন করেছে,
আমি: হ্যালো মা!
মা: হুম বাবা কেমন আছিস।
আমি: ভালো, তোমরা কেমন আছো? মা: ভালো.। একটা
কথা বলার জন্য তোকে ফোন দিয়েছিলাম।
আমি: হুম বলে দিবা এইটা আবার জিজ্ঞাস করা লাগে
নাকি।
মা: না তোর বাবা তোর বিয়ে দেওয়ার কথা
বলতেছে। এখন তুই কি বলিস? আমিতো পুরাই টাসকি! এই
কি শুনাইলো আমারে।
আরে ৯ বছর ধরে এই জিনিসটার আশায় ছিলাম।
আমিতো চার হাত পায়ে রাজি। কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে
বল্লাম,
যদি ভালো মেয়ে পাও তাহলে দেইখো। মা: মেয়ে
তিনটা আমরা দেখে রেখেছি। এখন
তুই দুই দিনের জন্য ছুটি নিয়ে আয় দেখ তোর কোন
মেয়েটা পছন্দ হয়। তারপর আমরা কথা বার্তা বলে সব
কিছু ফাইনাল করবো। আমি: আচ্ছা আমি বসের থেকে
ছুটি নিয়ে আসছি।
কথাটা বলেই ফোনটা কেটে দিলাম। সেই রকম
খুশি একটা মুড নিয়ে অফিসে গেলাম।। অফিস যেয়ে
কিছুখন কাজ করে বসের রুমে ঢুকে বেপারটা বল্লাম। বস
ও আমাদের মতো ইয়াং জেনারেশন এর ছেলে তাই সে
বুঝতে পেরে আমাকে হাসি মুখেই ছুটি দিয়ে দিলো।
আমি বাসায় এসে ব্যাগ গুছাতে লাগলাম, কারন আমি
ঢাকায় চাকরী করি,তো এখানেই একটা রুম ভাড়া
করে থাকি।
পরের দিন সকালে আমি গ্রামে যাওয়ার জন্য রওনা
দিলাম। বাড়িতে যেয়ে দেখি মা রান্না করতেছে।
আমাকে দেখে রান্নাঘর থেকে উঠে এসে বলতে লাগলো,
মা: তুই এসে পরেছিস।
আমি: হুম সকালে রওনা দিয়েছি বিদায় এতো তারাতারি
আসলাম,না হলে আরো দেরি হতো আসতে। মা: আচ্ছা যা
এখন মুখ, হাত, পা ধুয়ে ঘরে বস,আমি
তোর জন্য খাবার নিয়ে আসতেছি। আমি: ঠিক আছে।
এই বলে আমি রুমে যেয়ে সব কিছু রেখে ফ্রেশ হয়ে
বসলাম, ভাবতে লাগলাম কখন যে মা
ছবি গুলো দেখাবে।
কিছুখন পর মা আমার জন্য পায়েস নিয়ে আসলো।
আমিও খেতে লাগলাম।
আমি মাকে বল্লাম, আমি:বাবাকে দেখছিনা বাবা কই।
মা: তোর বাবা সেই সকালে হাটে গেছে,তুই
আসবি বলে বাজার করতে এখনো ফিরে নি। আমি: ও
পায়েস খাওয়া শেষ মা বাটিটা নিয়ে বল্লো এখন
একটু রেস্ট নে তোর বাবা আসলে ডাক দিবোনে।
আমি: ঠিক আছে।
কিছুখন পর দেখলাম আমার কাজিনরা আসছে।
হয়তো আমার খবর পেয়ে এসেছে। ওরা এসেই আমাকে
বলতে লাগলো, কি শুনলাম এইসব?
আমি: কি শুনলি মানে?
- হঠাৎ গ্রামে আসার মানেটা কি? (মুচকি হেসে)
আমি: বুঝতে বাকি রইলো না যে ওরা এই সম্পর্কে সব
জানে। তাই আমি বল্লাম,মা আসতে
বল্লো তাই আসলাম।
- ও তাই তো কেন আসতে বলছে যানো? আমি: হুম জানি
তো কি হইছে।
- না এমনি আর কি বয়স তো আর কম হয় নাই তোমার।
আমি: ওই তোরা গেলি এই জায়গা থেকা।। - আরে ভাইয়া
এরকম করো না। আমাদেরি কাজে
লাগবে।
আমি: ইসস! ভালই তো পাইকা গেছোছ। এরি মাঝে মা
এসে বলতে লাগলো, মা: কিরে কি হইছে তোদের।
আমি: আরে কিছুনা।
মা: ওই রুমে যা তোর বাবা আসছে কথা বলে আস।
আমিও বাবার সাথে কথা বলার জন্য চলে গেলাম।
<<
<<
রুমে ঢুকে দেখলাম বাবা বসে আছে, আমি: কেমন আছো।
বাবা: ভালো তুই কেমন আছিস। আমি: এইতো ভালো।
বাবা: তুইতো জানিস এখানে তোকে কেন ডেকে এনেছি।
আমি: হুম।
বাবা: তো ঘটক আসতেছে তুই ছবিগুলো দেখ যেই মেয়ে
তোর পছন্দ হবে ওর সাথেই তোর বিয়ে হবে।
আমি: আমি ঠিক আছে।।। ( আহা! ) কথাটা শেষ করেই রুমে
চলে গেলাম। যেয়ে দেখি আমার কাজিনরা যেনো কি
নিয়ে
কুচুরমুচুর করছে।
আমি: কিরে তোরা এমন করতাছিস কেন। এরি মাঝে আমার একটা
কাজিন বলে উঠলো। ভাইয়া
তোমার জন্য ভাবী সিলেক্ট করলাম। এই ছবিটা
দেখো, তুমার সাথে সেই লাগবে। আমি ওদের কাছ থেকে
সব ছবি নিয়ে আমার রুম
থেকে ওদের বের করলাম।
আমি এক এক করে তিনটা ছবি দেখলাম, নাহ কাজিনদের দেখানো
ছবিটা খুব ভালো লাগলো।
বাকি দুইটাও ভাল কিন্তু আমার কাছে কাজিনদের
চয়েজ করা ছবিটাই ভালো লাগলো। ভালো লাগবেই বা না
কেনো?
খুব মায়াবি একটা চেহারা, ছবিটা হাসি দিয়ে তুলছে বিদায়
মনে হয় সকল সুন্দর্যের আধার এই মেয়েটার মধ্যেই আছে।
তাই আর কিছু না ভেবে আবার
আমার এক কাজিন কে ডেকে এনে বল্লাম বাবাকে যেয়ে বল
আমার এই মেয়ে পছন্দ হইছে।
কিছুখন পর লক্ষ করলাম আমাদের বাড়িতে ঘটক
আসছে। বাবা ঘটক কে ছবিটা দেখিয়ে বলতে
লাগলো,এই মেয়েটার বাড়িতে যেয়ে খবর দেন কাল আমরা
এই মেয়েকে দেখতে আসতেছি তাদের বাড়িতে। বাবার কথাটা
শুনে আমি
মহা খুশি। অপেক্ষা করতে লাগলাম কখন রাতটা পার
হয়ে সকাল হবে। আসলেই অপেক্ষার সময় সহযে কাটতে
চাইনা।
<<
<<
পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে
ঘরে বসে বসে টিভি দেখতে লাগলাম। ঠিক তখনি মা এসে
বলতে লাগলো।
মা: ফায়সাল বিকেলে আমরা ওই মেয়েকে দেখতে
যাবো তো তুই রেডি থাকিস। আমি: ঠিক আছে।কে কে যাবে?
মা: তোর বাবা,আমি,তুই আর নিপা। ( নিপা/কাজিন)
আমি: ও ঠিক আছে।
এই বলে আমি আবার টিভি দেখতে লাগলাম আর বারবার ঘড়ির দিকে
তাকাতে লাগলাম।
দুপুরে সবাই খাওয়া দাওয়া করে রেডি হতে লাগলো। আমিও রেডি
হয়ে বসে রইলাম। কিছুখন
পর ঘটক এসে আমাদের সবাইকে নিয়ে গেলো।
নাহ! আমার শ্বশুর বাড়িটা খুবি সুন্দর দেখতে।( মনে
মনে)
তারপর আমরা একটা রুমে যেয়ে বসললাম
কিছুখন
পর মেয়ের বাবা আর মা আসলো। বাবা আমার
দিকে তাকিয়ে ইশারা করে বল্লো,সালাম দিতে।
আমিও তাদের সালাম দিয়ে দিলাম। তারপর মেয়ের
বাবা আমাকে উদ্দেশ্যে করে আমার বাবাকে
বল্লো, আপনার ছেলেকে কিন্তু আমাদের আগে থেকেই
পছন্দ,তাছাড়া আমার মেয়ের সাথে কিন্তু আপনার ছেলেকে খুব
ভালোই মানাবে। এরি মাঝে বাবা বলে উঠলো, বাবা: তা তো
বটেই।তো মেয়ে কোথায়? মেয়ের বাবা: এইতো
আসতেছে। তারপর কিছুখন পর মেয়ে চা নিয়ে রুমে প্রবেশ
করলো।। নাহ ছবিতে যেই রকম দেখেছি ঠিক
তেমনি দেখতে। চোখে টানা কাজল দেওয়া এতেই খুব
মায়াবী লাগতেছে। আমি ওকে দেখেই ওর প্রেমে পরে
গেলাম। মনে মনে ভাবতে লাগলাম যতো কষ্ট হোক এই
মেয়েকে বিয়ে করেই ছাড়বো।
ওর দিক থেকে চোখি ফিরাতে পারলাম না। তারপর
নিপা কানের সামনে এসে বল্লো, নিপা: ওই ভাইয়া এইভাবে কি
দেখতেছো। আমি: কই কিছুনা।
নিপা: ইস দেখলাম তো ভাবীর দিক থেকে চোখি ফিরাতে
পারছো না।
আমি: নিপা তুই চুপ থাকবি। নিপা: আচ্ছা ঠিক আছে।
তারপর মা মেয়েটাকে বলতে লাগলো, মা: তোমার নাম কি মা?
মেয়ে: রাইজা আক্তার ফারিহা। (আহা মায়াবীনির নামটা ওর মতোই
সুইট) মা: ও। তুমি কিসে পরতেছো। রাইজা: অনার্স ৩য় তে।
মা: কোথায় পড়াশুনা করো? রাইজা: আমি ঢাকা হস্টেল এ থেকে
পড়াশুনা করি।
মা:ও রান্না করতে পারো? (মায়ের কথা শুনে মনে মনে বলতে
লাগলাম, রান্না করতে না পারলেও আমি ওকেই বিয়ে
করবো)
রাইজা: জ্বি পারি।
আরো অনেক কিছু জিজ্ঞাস করলো মেয়েটাও সুন্দর করে
উত্তর দিয়ে দিলো।। আমি নিপাকে বল্লাম, মাকে একটু
বলতো,আমি ওর
সাথে একটু আলাদা কথা বলতে চাই। নিপা মাকে বলে দিলো।
তারপর রাইজাকে ওর মা
বল্লো, যা ওকে তোর রুমে নিয়ে যা। তারপর আমি ওর পিছুপিছু
ওর রুমে গেলাম। <<
যেয়ে দেখি রুমটা সুন্দর করেই সাজিয়ে রেখেছে।। আমি
বল্লাম,
আমি: আপনার রুমটা কিন্তু খুব সুন্দর করেই সাজিয়েছেন।
রাইজা: ধন্যবাদ।
আমি: আচ্ছা আপনি কোন ভার্সিটি তে পরেন?
রাইজা: তিতুমির এ।
আমি:ও।। খুব ভালো।। তো আমাদের বাবা মারা
তো আমাদের বিয়ের ব্যাপারে রাজি, আমার ও
আপনাকে খুব পছন্দ হইছে,আমিও রাজি কিন্তু
আপনার মতামতটা কি এইটা বলবেন।। রাইজা: দেখেন
এইখানে যদি আমার সাধ্য থাকতো
তাহলে আমি আপনাদের প্রস্তাবটাও বাতিল করতাম।
কারন আমার ইচ্ছা আমি যাকে বিয়ে করবো তার
সম্পর্কে ভালো মতো জানা, দুইজন একে অপরকে ভালো
করে চিনা। এই নিয়ে অনেক প্রস্তাব আসছে আমার কিন্তু
আমি না করে দিয়েছি। কিন্তু আমার বাবা এইবার
যেইভাবে বল্লো
আমি রাজি না হয়ে পারলাম না। (মেয়েটা এক নিশ্বাস এ
কথাগুলো বলে গেলো।)
আমি: আচ্ছা ঠিক আছে বুঝলাম। আপনার কি পর্যন্ত
লেখাপড়া করার ইচ্ছা আছে। রাইজা: যেটা সম্ভব না
ওইটা বলে কি লাভ। আমি: আপনি বলেন আগে!
রাইজা: অনার্স কমপ্লিট করার ইচ্ছা ছিলো।
আমি: অনার্স কমপ্লিট করতে আপনার আরো ১
বছর লাগবে তাই না?
রাইজা: জি।
আমি: আমার মতে ১ বছর এ একটা মানুষকে খুব
ভালো করে চিনা,জানা যায় তাই না। রাইজা: মানে! কি
বুঝাতে চাচ্ছেন আপনি? আমি: আপনি অনার্স কমপ্লিট
করবেন। আর অনার্স
কমপ্লিট করতে আপনার যেই কইদিন সময় লাগে
আমি অপেক্ষা করবো। তবুও আমি আপনার কনো আশা
অপূরন করতে চাইনা। তাছাড়া এই
কইদিনে আপনি আমাকে ভালো করে চিনেন
জানেন তারপর যদি আমাকে আপনার ভালো লাগে
তাহলে বিয়েটা হবে আর না ভালো লাগলে............ আমিই
বিয়েটা না হওয়ার জন্য যা
করা লাগে তা করবো
কথাটা শেষ করে আমি আবার বল্লাম, আমি আপনার
বাবা মাকে বুঝিয়ে বলতেছি,যেনো আপনাকে
কনো পেশার না দেয়। এই কথাটা বলেই ওর রুম
থেকে বের হয়ে গেলাম। (কাজল কালো চোখে আমার
দিকে তাকিয়ে রইলো) তারপর আমি সবার সামনে যেয়ে
কথাগুলো খুব
সুন্দর করে বল্লাম,আমার কথাগুলো সবাই শুনে
হাশিমুখেই রাজি হলো। এরি মাঝে আমার বাবা বলে
উঠলো,
বাবা: যাক ওদের কথাই থাক। দুইজন একে অপরকে
আগে বুজুক। তাছাড়া যুগতো পালটিয়েছে। রাইজার
বাবা: হুম ঠিক বলেছেন। তাহলে বিয়েটা
১বছর পরে হোক।
তারপর কথাগুলো শেষ করে, আমরা বাড়ির দিকে
রওনা দিলাম।।
<<
<<
বাড়িতে এসে ব্যাগ গুছাতে লাগলাম কারন রাতের
ট্রেনেই আজরওনা দিবো। মা এসে বল্লো, মা: কি রে
ব্যাগ গুছাচ্ছিস কেন? আমি: আজ রাতের ট্রেনেই রওনা
দিবো। মা: সত্যি বলতো। মেয়েটার সাথে তোর কি কথা
হয়েছে।
আমি: ওর সাথে কি কথা হবে। আমিই ওকে বলছি ১
বছর আমাকে সময় দিতে। তাছাড়া ওর ও লেখা পড়া
শেষ হয়ে যাবে। ( মিথ্যা বল্লাম) মা: তুই যা মনে করিস।।
আর আজ রাতে যাবি কেন
কাল সকালে যাস।
আমি: আরে না কিছু কাজ আছে তা শেষ করতে
হবে।
মা: আচ্ছা যা তাহলে।
আমি ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে দিলাম।
ট্রেন চলতে শুরু করলো। আর ভাবতে লাগলাম,কেন যে
আমার সাথে এমন হয়। কি এমন
ভুল করেছিলাম যে আমার সাথেই এমনটা হয়। থাক
দেখি ১বছর এর ভিতর মেয়েটার মাঝে কনো পরিবর্তন হয়
কিনা?? এই চিন্তা করতে দেখি আমি
ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম যখন ভাঙ্গলো তখন দেখি
প্রায় আমি পৌছে গেছি। কিছুখন পর ট্রেন থেকে নেমে
রিকশা নিয়ে বাড়িতে চলে গেলাম।
বাড়িতে এসে ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে আবার ঘুম দিলাম।।
দিনটা কিভাবে কেটে গেলো বুঝতেই পারলাম
<<
সকালে ঘুম থেকে উঠে অফিস এ রওনা দিলাম। অফিস
যেয়ে কনো কাজেই আমার মন বসতেছিল না।।। মনে মনে
ভাবছিলাম বিয়ে করার আগে হবু বউ এর সাথে কিছু দিন
চুটিয়ে প্রেম করবো। আট দশটা ছেলের মতো পালিয়ে
পালিয়ে ঘুরবো,কিন্তু ওইটা আমার ভাগ্যে হলো না।।
চোখটা বন্ধ করে মেয়েটাকে ভাবতে লাগলাম কি সুন্দর
চোখ দুইটা ওর। মেয়েটার চোখের প্রতিটা পলক যেনো
আমার ক্রাশ খাওয়ার একটা অংশ হয়ে দাড়িয়েছে।। ইশ
মিষ্টিরঙের শাড়িতে ওকে যা লাগবেনা।। দুই বছর পর কি
মেয়েটা আমার হবে।। তাছাড়া ওর সাথেতো আমার
যোগাযোগ করার কনো মাধ্যমি দেখতেছিনা। কি করে
মেয়েটা আমাকে জানবে,বুঝবে একটা কিছুতো করতে
হবে। তাই একটা সিদ্ধান্ত নিলাম যে কাল ওর কলেজে
যাবো। কিন্তু এতো মানুষের মধ্যে ওকে কই খুজে পাবো ?
আর কনো কিছু ভাবলাম না কালকেরটা কালকেই দেখে
নিবো। তারপর নিজ কাজে খুব মনোযোগ দিলাম। কাজ
শেষ করে রাতে বাড়িতে গেলাম।ফ্রেশ হয়ে খাটে যেয়ে
শুইলাম এরি মাঝে মার ফোন। মা: কিরে কি করিস?
আমি: এইতো অফিসে আসলাম।
মা: ও। ওই শুন আমরা কাল ওই মেয়েটার বাড়িতে
গিয়েছিলাম।
আমি: হুমতো?
মা: ওকে আংটি পড়িয়ে আসছি। আমি: তাই নাকি।
মা: হুম।
আমি: ও কি ঢাকা আসছে?
মা: কেনরে তুই দেখা করবি নাকি। (একটু মজা করে)
আমি: আরে না এমনি আর কি।
মা: হুম গতকাল রাতের ট্রেনেই নাকি ঢাকা যাবে
বলছিল।
আমি: ও।
মা: ফায়সাল তুই যেইভাবে বলছিস মনে হয় কালই
মেয়েটার সাথে দেখা করবি। কিরে মেয়েটা ঢাকা কই
থাকে সব কিছুর এডরেস ও কি নিয়ে নিছিস। ( হেসে
হেসে) আমি: আহা! মা তুমিও না।। আচ্ছা রাখি। এই বলেই
ফোনটা কেটে দিয়ে ভাবতে লাগলাম,কিভাবে মা
আমার মনের কথা বুঝলো। যাক ভালো হইছে আংটি
পড়িয়ে দিছে।। কখন যে সকালটা হবে অপেক্ষার প্রহর
গুনতে লাগলাম। এই রকম করতে করতে রাতটা কেটে সকাল
হয়ে গেলো।
<<
<<
সকালে ঘুম থেকে উঠেই। রেডি হতে লাগলাম,
আর একটা সিদ্ধান্ত নিলাম যে, মেয়েটা যেই
পর্যন্ত আমাকে ভাল না বাসে ওই পর্যন্ত ওকে
আমি বিয়ে করবোনা। আমি চাইনা দুইটা জীবন নষ্ট
হোক। তারপর রাস্তায় এসে একটা সি.এন.জি নিয়ে
সোযা তিতুমির কলেজ এ চলে গেলাম। সেখানে যেয়ে খুব
নার্ভাস ফিল করতে লাগলাম।
এতো বড় কলেজ মেয়েটাকে কোথায় খুজে পাবো। তারপর
ওই কলেজ এর একটা ছাত্রকে জিজ্ঞাস করলাম, আমি: এই
যে ভাইয়া শুনেন ছাত্র: জি বলেন।
আমি: অনার্স ৩য় বর্ষের ক্লাস হয় কোথায়? ছাত্র: ভাইয়া
ওইযে হলুদ রং এর ভবনটা দেখতেছেন না,ওইটাতে অনার্স
৩য় বর্ষের ক্লাস হয়। সব বিষয়ের। আপনি ওই জায়গায়
গেলে
একটা চার্ট দেখতে পাবেন ওইখানেই লিখা আছে কোন
বিষয়ের ক্লাস কোন রুমে হয়। আমি: ওকে ধন্যবাদ।
মনে মনে হায় আল্লাহ মেয়েটা কোন বিষয় নিয়ে পড়ছে
আমার তো তা জানা নেই এখন কি
করবো। কনো কিছু না ভেবে ভবনের নিচে দাড়িয়ে
রইলাম। প্রায় এক ঘন্টা পর দেখলাম ক্লাস
শেষ করে ছাত্র-ছাত্রীরা নামছে। আমি প্রতিটা
মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম।আধা ঘন্টা যাবৎ
ছেলে মেয়েরা নামতেই রইলো। কিন্তু রাইজার
কনো খবর নাই। কিছুখন পর দেখলাম সেই ভুবন
রাঙা হাশি দিয়ে আমার ভবিষ্যৎ এর হবু লাভ বার্ডটা
আসতেছে।।ইশ এতো কিউট কি কেউ হয়! অটোমেটিক ওকে
দেখেই ২০ কেজি ক্রাশ এর উপর আমি ভাসতেছি। ও
আমার কিছুটা সামনে
এসে আমাকে দেখে হাতা থামিয়ে দিলো। ওর
সাথে কিছু ফ্রেন্ড ছিলো ওদের যেনো কি বল্লো,ওর
কথা শুনে ওর ফ্রেন্ডরারা চলে গেলো।
তারপর আস্তে আস্তে আমার সামনে এসে দাড়ালো।
আর বলতে লাগলো,
রাইজা: আপনি এখানে!
আমি: জি কিছু কথা ছিলো। রাইজা: জি বলুন।
আমি: অন্য কোথাও একটু বসে বলতাম। শুধু সময়
ধরে ১০ মিনিট।
রাইজা: ওকে। ওইদিকটাই চলুন। তারপর সামনে এগিয়ে
একটা বেঞ্চ এ দুইজনে
বসলাম। তারপর আমি একটু কেপে কেপে বলতে লাগলাম।
আমি: আপনার ইচ্ছা আপনি যাকে বিয়ে করবেন তার
সমর্কে আপনি জানবেন বুঝবেন সে আপনার উপযুক্ত
কিনা। তাই এখানে আমি এসেছি। কারন
যোগাযোগ না থাকলে এইটা কিভাবে সম্ভব?
তাছাড়া সত্যি বলতে যেইদিন আমি আপনার ছবি প্রথম
দেখি সেইদিনি আপনাকে আমি ভালবেসে ফেলেছি।।
সো প্লিজ আপনি যেই সিদ্ধান্তটা
নিবেন একটু ভেবে নিয়েন। (একটু ইমোশনাল ভাবে)
রাইজা: আর কি সিদ্ধান্ত নিবো আপনার মা ওইদিন
এসে আমাকে আংটি পারিয়ে গেছে। এখন তো
আমার কিছু করার নেই। আপনাদের যা ইচ্ছা তাই
করেন।
আমি: এইভাবে বলতেছেন কেন? আমি আপনাকে এক বছর
টাইম দিলাম,এতো দিনে আপনি
আমাকে জানবেন,বুঝবেন তারপর আপনার যদি
আমাকে ভালো লাগে আপনি আমাকে বিয়ে
করবেন।
রাইজা: যতো সহযে কথাটা বল্লেন,কাজটা কিন্তু
ততো সহযনা।
আমি: এই নিয়ে আপনি কনো চিন্তা করবেন না
এতোটুক বিশ্বাস রাখতে পারেন যে আপনি চাইলে
বিয়েটা হবে না হলে হবেনা। আর হে!
আপনার বাসা থেকে কনো সমস্যা ও হবেনা। কি
ঠিক আছেতো?
রাইজা: হুম।
আমি: তাহলে আমি আসি।
রাইজা: ঠিক আছে।
আমি: আর একটা কথা,কিছু না মনে করলে আপনার
ফোন নাম্বারটা দেওয়া যাবে। রাইজা: হুম নেন,
০১৭................... আমি: ধন্যবাদ। আমি আসি।
এই বলে আমি বাড়িতে চলে আসলাম।
বাড়িতে এসে ভাবতে লাগলাম,এই মেয়েটাকি
আমাকে এক বছর এর মধ্যে নিজের করে নিতে পারবে।।
যতই মেয়েটার কাছে যাই সব কিছু
ভুলে যাই। দেখি শেষ পর্যন্ত কি হয়। রাতে খাওয়া
দাওয়া করার পর রাইজাকে ফোন দিলাম,
কিছুখন রিং হওয়ার পর ফোনটা ধরলো, রাইজ: হেলো কে?
আমি: ফায়সাল, চিনতে পারছেন। রাইজা: হুম।
আমি: কি করেন?
রাইজা: এইতো খাওয়া দাওয়া করে উঠলাম। আপনি?
আমি: আমিও এইমাত্র খেলাম। তো পড়াশুনা কেমন
চলতেছে?
রাইজা: এইতো ভালো
আমি: ও।। আচ্ছা আপনি কোন ডিপার্টমেন্ট এ
আছেন?
রাইজা: ম্যানেজমেন্ট।
আমি: ও ভাল। আচ্ছা আপনার ফেসবুক আইডিটার নামটা
একটু বলা যাবে?
রাইজা: রাইজা আক্তার ফারিহা। আমি: আচ্ছা ঠিক
আছে। গুড নাইট। রাইজা: গুড নাইট।
এইভাবে ওর সাথে আমার প্রতিদিন কথা হতে
থাকলো। প্রায় ছয় মাস কেটে গেলো ওর মধ্যে কনো
পরিবর্তন পেলাম না। একটা দিন ও
আমাকে নিজ ইচ্ছায় ফোন দেই নি। আমিই সব
সময় দিতাম, আমি কিছু না জিজ্ঞাস করলে ও নিজ
ইচ্ছায় কনো কথা বলতোনা আমার সাথে।। মাঝে
মাঝে খুব পাগলামী করতাম,কিন্তু আমাকে কিছু
বলতোনা। খুব খারাপ লাগতো কখনো নিজ ইচ্ছায়
কথা বলতো না বিদায়। ছয় বারের মতো দেখাও
করেছি। একদিন ওকে সরাসরি প্রোপজ ও করেছিলাম
কিন্তু ও কনো কিছু বলেনি। একদিন
মধ্যে রাতে ওকে খুব দেখতে ইচ্ছা করতেছিল,তাই কিছু
না ভেবেই ওদের হস্টেল
এর নিচে দাড়িয়ে ওকে ফোন দিলাম আর বল্লাম
একটু জানালার সামনে আসতে,শুধু ওর মুখে একটু
রাগত্ব শুরে একটা কথা শুনতে চেয়েছিলাম,আপনি
কি পাগল এতো রাতে এই জায়গায় এসেছেন। কিন্তু ও
কিছু বলে নি। তখনি আমি বুঝতে পেরেছিলাম ওর মনে
আমার জন্য হয়তো কনো জায়গা নেই। তবুও আমি থেমে
থাকিনি।
একের পর এক চেষ্টা করতে লাগলাম। <<
<<
আজ খুব ফ্রি অফিস বন্ধ বিদায়। তাই ভাবলাম রাইজাকে
নিয়ে কোথাও থেকে ঘুরে আসা যাবে। তাই সকালে ওকে
ফোন দিলাম।কিন্তু ওর ফোন বন্ধ। মনে মনে ভাবতে
লাগলাম বেপপার কি ওর
ফোন তো কখনো বন্ধ থাকে না। আজ হঠাৎ বন্ধ কেন?
অনেক বার ফোন দিলাম কিন্তু ফোন ততোবারি বন্ধ
পেলাম। খুব টেনশন হচ্ছিলো। তাই আর কনো কিছু না
ভেবে ওর কলেজ এ আমি চলে গেলাম।। কিন্তু আমি আর
কলেজে ঢুকতে পারলাম না। কলেজ এর ছাত্ররা
এক দল আরেক দলের সাথে সংঘর্ষ শুরু করে দিলো। আমি
সেই সংঘর্ষের মাঝে পরে গেলাম। খুব চেষ্টা করেও
আমি সেখান থেকে
বের হতে পারলাম না। কিছুখন এর মধ্যে পুলিশ এর
গাড়ি এসে পরলো। অনেকেই দৌড়ে পালিয়ে
গেতে পারলেও আমি পারলাম না। পুলিশ আমাকে
আসামী মনে করে ধরে নিয়ে গেলো। আমার সাথে আরো
কয়েকটা ছেলেকে ধরে নিয়ে গেলো। জেলে ঢুকিয়ে
আমমাকে খুব মারলো অনেক বার বলেছিলাম যে আমি
কনো
দোষ করি নি,আমি সেইখানে আমার এক ফ্রেন্ড
এর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম আর ঠিক তখনি
আমি এই পরিস্থিতির মধ্যে পরি। কিন্তু তারা আমার
কোথায় কনো কান দিলো না, তারা আমাকে খুব
মারধর করলো। প্রায় তিন দিন হলো আমি জেলে,কেউ
হয়তো যানেনা আমি কি অবস্থায়
আছি। কিছুখন পর বাহিরের দিকে খেয়াল করে
দেখলাম রাইজা আসছে। আমি ওর কাছে যেয়ে
দেখতে পেলাম, ওর চোখ পানিতে টলমল করছে, আমি
ওকে বলতে লাগলাম আপনি কিভাবে
খবর পেলেন যে,আমি এইখানে। রাইজা: আপনার নাম্বার
এ ফোন করলাম,এই জায়গা
থেকে একজন ফোনটা রিসিভ করে বল্লো আপনি নাকি
কলেজ এ সংঘর্ষ করেছেন বলে এইখানে ধরে এনেছে।
আমি: সত্যি আপনি বিশ্বাস করেন,আমি কিছু করিনি।
আমি আপনার ফোন বন্ধ পেয়ে আপনার কলেজে ছুটে
গেছি আপনার সাথে দেখা করতে।
রাইজা: আমিও মনে মনে এই রকমটা ভাবছি। একটু
অপেক্ষা করেন উকিল নিয়ে এসেছি। সে পুলিশ
এর সাথে কথা বলতেছে আপনাকে আজই ছেড়ে দিবে। এই
বলে আমার কাছ থেকে চলে গেলো।
(রাইজা কথা গুলো বলার সময় মনে হচ্ছিলো ওর
চোখ দিয়ে এখনি পানি বের হয়ে যাবে কিন্তু ও
তা সামনে নিলো)
কিছুখন পর একটা লোক এসে আমাকে জেল থেকে বের
করে নিয়ে গেলো।
জেলের ভিতর রাইজাকে আর দেখতে পেলামনা। হয়তো
চলে গেছে। কিন্তু জেল থেকে বাহিরে যেয়ে দেখলাম
রাইজা দাড়িয়ে আছে। আমার হাটতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো,ও
তা বুঝতে পেরে রিকশা ঢেকে আনলো। আমাকে
রিকশাতে উঠিয়ে রাইজাও রিকশাতে উঠলো।
আমি বলে উঠলাম, আপনি কোথায় যাবেন। রাইজা:
আপনার বাসায়। আর এতো রাতে হোস্টেল এ যাওয়া ঠিক
হবেনা। আমি: মানে? আপনি রাতে আমার বাসায়
থাকবেন?
রাইজা: কেন?কনো সমস্যা। আমি তবুও যাবো।
আমি আর কিছু বল্লাম না। কিছুখন পর রাইজা বল্লো,
রাইজা: খুব মারছে তাই না?
আমি : হুম।
রাইজা: কেন এরকম পাগলামি করেন? আমি: আপনাকে খুব
ভালবাসি তাই। রাইজা:..........
আমি: মোবাইল বন্ধ ছিলো কেন আপনার।
রাইজা:মোবাইলে চার্জ ছিলো না। কারেন্ট ছিলোনা
বিদায় চার্জ দিতে পারি নাই।
আমি: ও
রাইজা: সরি।
আমি: কেন?
রাইজা: আমার জন্যই তো এতো কিছু হলো। আমি: জ্বিনা
এখানে আপনার কনো দোষ নাই।
(খুব ভাল লাগতেছিল আজ ও নিজ ইচ্ছায় আমার সাথে
কথা বলতেছে। প্রায় ৮ মাসে একটুও নিজ ইচ্ছায় কথা বলে
নাই।) এরি মধ্যে আমারা বাড়িতে এসে পরি। রিকশা
থেকে নেমে ভাড়া দিয়ে।। রুমে ঢুকলাম।
রাইজারুমে ঢুকেই, আমাকে বল্লো, রাইজা: রান্নাঘর
কোথায়? আমি:হাত দিয়ে দেখিয়ে দিলাম ওই পাশে।
কেন?
রাইজা: গরম পানি করে দিচ্ছি আগে গোসল করে আসেন।
এই অবস্থায় গোসল না করলে ঘুমাতে পারবেন না। এই বলে
ও রান্নাঘরে চলে গেলো।
(ওর এই রকম আচরন দেখে খুব ভাল লাগতেছে। আজ জেলে
না গেলে হয়তো ওর
এই রকম কেয়ারিং গুলো খুব মিছ করতাম।) কিছুখন পর ও
গরম পানি নিয়ে এসে আমাকে গোসলল করতে পাঠালো।
আমি গোসল করে এসে দেখি ও ওর ব্যাগ থেকে খাবার
বের করে ও বসে রইছে। আমি: এইগুলো কি?
রাইজা: ভাত আর মাংস রান্না করে এনেছি।
আমি যেয়ে খেতে বসে পড়লাম। রাইজা আবার বল্লো, এই
তিন কি ভালো করে খাইছেন?
আমি: না।
রাইজা: আর একটু ভাত দেই
আমি: না এতেই চলবে। আপনি খাইছেন। রাইজা: হুম বাসা
থেকে খেয়ে এসেছি। আমি খাওয়া শেষ করে শুইতে
যাবো ঠিক তখনি ও আমাকে বল্লো,একটু দাড়ান। আমি:
কেন?
রাইজা: একটা মলম আমার হাতে দিয়ে বল্লো যেই যেই
জায়গায় ব্যাথা করছে। মলমটা সেই জায়গায় লাগান।
আমি হাতে আর পায়ে কনো রকম করে লাগালাম,কিন্তু
পিঠে মলমটা লাগাতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো।
রাইজা আমার হাত থেকে মলমটা নিয়ে আমার পুরো
পিঠে মলম লাগিয়ে দিলো। আর বল্লো আর কখনো এমন
পাগলামি করবেন না। ( এই প্রথম ওর ছোয়া পেলাম। ওর
হাতের স্পর্শ পাওয়ার পর মনে হচ্ছে আমার ব্যাথাগুলো
চলেগেছে) আমি; কেন?
রাইজা: যদি কর্টে চালান করে দিতো আপনাকে তখন!
আমি: আপনার বাবা মা তা যেনে গেতো। তারপর আমার
সাথে আপনার বিয়েটা ভেঙ্গে যেতো।
রাইজা আর কিছুই বল্লোনা। আমি বিছানায় শুয়ে পরলাম।
আমি আবার বল্লাম, আপনি ঘুমাবেন না? রাইজা: আমি
আজ সারাদিন ঘুমায়ছি। এখন আর ঘুম ধরবেনা। ব্যাগের
ভিতর বই আছে ওগুলো পড়বো এখন।আপনি ঘুমিয়ে পরেন।
আমি আর কিছুনা বলেই ঘুমিয়ে পরলাম। <<
<<
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ও চেয়ারে বসে বসে চা
খাচ্ছে আর বই এর পৃষ্ঠা উল্টাচ্ছে। তাছাড়া পুরো ঘরটাও
গুছিয়েছে। আমাকে উঠতে দেখেই মেয়েটা বলতে
লাগলো, এখন কেমন লাগছে শরীরটা। আমি: অনেকটাই
ভালো।
রাইজা: যান ফ্রেশ হয়ে আসেন নাস্তা রেডি করে
রেখেছি। আপনাকে নাস্তা খাওয়িয়ে কলেজ এ
যেতে হবে।
আমি: ঠিক আছে।
এই বলে ফ্রেশ হয়ে দুই জনেই নাস্তা খেয়ে নিলাম।
তারপর রাইজা বলে উঠলো, আমি আসি দুপুরে আমি
খাবার নিয়ে আসবো। বাহিরে বের হবেন না
একদম। এই বলে চলে যাবে ঠিক তখনি ওর হাতটা
ধরে বল্লাম, আজ হয়তো এই রকম কেয়ার গুলো
পেতামনা,যদি জেলে না যেতাম। আমি চাই
বাকি জীবনটুকু তোমার পাশে থেকে এই রকম
কেয়ার পেতে। খুব বেশিই ভালবাসি তোমাকে।
(আপনি থেকে তুমি করেই বল্লাম।) যাও ক্লাস শুরু
হয়ে যাবে আবার।
রাইজা: হুম। আসি।
এই বলে চলে গেলো।। শুয়ে শুয়ে ফেসবুক চালাতে
লাগলাম। রাইজার আইডিটারে ঢুকে ওর সব
কিছুতে লাইক দিলাম। তারপর ওর about এ ঢুকলাম।
ওইখানে যেয়েদেখি আগামিকাল ওর জন্মদিন।
খুব আফসোস হতে লাগলো শরীরটা ভালো থাকলে কাল
ওকে নিয়ে একটু ঘুরতে যেতে পারতাম। তো এখন কি করা
যাই ভাবতে লাগলাম।
সিদ্ধান্ত নিলাম আমার ঘরটাই সুন্দর করে সাজিয়ে
এইখানেই ওকে একটা সারপ্রাইজ দিবো।
দুপুরে রাইজা খাবার নিয়ে আসলো। রাইজা: এখন কেমন
শরীরটা?
আমি: এইতো একটু ব্যাথা আছে,আর হালকা জ্বর
আছে।
রাইজা: খাবারটা খেয়ে ওষুধ খেয়ে নেন। আমি: হুম। ঠিক
আছে।
রাইজা: আর কিছুর দরকার পরলে আমাকে যানাবেন।
আমার হোস্টেল এ যেতে হবে এখন। আমি: ঠিক আছে
চলো তোমাকে রিকশাই উঠিয়ে দিয়ে আসি।
রাইজা: এমনি ঠিক মতো হাটতে পারেন না আবার
বলে রিকশাই উঠিয়ে দিয়ে আসবেন। (ওর কথাগুলো একটু
অন্য রকম লাগছে আজ।) আমি: আরে সমস্যা নাই।
রাইজা: না আমি যেতে পারবো।। এই বলে ও চলে গেলো।
রাতে আমি ওকে ফোন দিতে যাবো ঠিক তখনি ওর ফোন।
রাইজা: কি করেন?
আমি: এইতো শুয়ে আছি, আপনি? রাইজা: আমিও।কিছু
খাইছেন? আমি: হুম, তুমি খাইছো?
রাইজা: হুম।এখন শরীরটা কেমন? আমি: আগের মতনি।
রাইজা: অফিসে ফোন দিয়ে বলছেন যে শরীর
খারাপ আপনার?
আমি: হুম বলছি।
রাইজা: এখন ঘুমিয়ে পরেন। দুই তিন দিন রেস্ট
নিলেই ভালো হয়ে যাবেন।
আমি: ঠিক আছে বাই।
রাইজা: বাই।
মনে মনে ভাবতে লাগলাম এই কেয়ারটা যদি সারা
জীবন পেতাম, ওকি আমাকে ভালবাসবে এই রকম
মনের ভিতর হাজার প্রশ্ন জেগে উঠছে। রাতের ১২টা ১ এ
ওকে মোবাইল মেসেজ দিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা
জানিয়ে ঘুমিয়ে
পরলাম।
<<
<<
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বাহিরে গিয়ে নাস্তা
করলাম। তারপর একটা ফুলের দোকানে ঢুকে অনেক গুলো
সাদা আর নীল রঙ এর গোলাপ কিনলাম,ওর জন্য একটা
শাড়ি
কিনলাম,আর একটা আংটি নিলাম ওকে পড়িয়ে
দেওয়ার জন্য। তারপর বেকারী থেকে একটা কেক আর
কিছু মোম নিয়ে বাড়িতে রওনা দিলাম।
এরি মাঝে রাইজাকে ফোন দিয়ে বল্লাম, আমি: সন্ধায়
একটু আমার বাসায় আসতে পারবা।
রাইজা: কেন? কিছু লাগবে?
আমি: তোমাকে দেখতে ইচ্ছা করতেছে। রাইজা: ঠিক
আছে। (খুব নরম ভাবে আস্তে করে
বল্লো)
এই বলে ফোনটা রেখে দিলাম। আর বাড়িতে
যেয়ে পুরো ঘরটা ফুল দিয়ে সাজিয়ে ফেল্লাম। সন্ধার
সময় ওকে ফোন দিয়ে জানলাম
ও এই মাত্র বাসা থেকে রওনা দিছে। তারপর লাইট টা
বন্ধ করে মোম দিয়ে পুরো ঘর আলোকিত করে ফেল্লাম।
টেবিল এর সামনে কেক রেখে অপেক্ষা করতে লাগলাম।
কিছুখন পর ঘরের দরজায় নক করার আওয়াজ পেলাম। দরজা
খুলে দেখলাম রাইজা এসে পরছে। লং একটা থ্রি
পিছ পরনে ছিলো। মাথার চুল গুলো খোলা ছিলো। আমি
দেখে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে
রইলাম। তারপর ও রুমে ঢুকে পুরো অবাক হয়ে গেলো। পুরো
রুম ও ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো। আমার দিকে তাকিয়ে
বল্লো, রাইজা: আর কতদিন এইরকম পাগলামি করবেন?
( আহ্লাদী কন্ঠে)
আমি: তুমি যদি আমার পাশে সারাজীবন থাকো
তাহলে সারাজীবনি এই পাগলামি দেখতে পারবা।
রাইজা: এই অবস্থা নিয়ে এগুলো করাকি আপনার ঠিক
হইছে। ( আহ্লাদী কন্ঠে)
ওর একটু কাছে যেয়ে বল্লাম, আমি: নীজের মানুষটার
জন্যইতো করছি। তাকে
যে ভীষন ভালবাসি।ঠিক ব্যঠিক এর কথা আমি জানিনা।
কেন পছন্দ হয়নি?
রাইজা: পছন্দ মানে খুব পছন্দ হইছে।আর এতো
ভালবাসেন কেন আমাকে? যদি আমি আমি আপনার
না হই। (নরম,আহ্লাদী কন্ঠে) আমি: তাহলে মরা..........
মুখটা চেপে ধরলো আর বল্লো এই শব্দটা আর উচ্চারণ
করবেন না।
এই বলেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো, i love u, i
love u, i love u খুব ভালবেসে ফেলেছি। এখন থেকে আর এই
রকম পাগলামি করবা না। (কান্না জনিত কন্ঠে আপনি
থেকে তুমি করে বল্লো)
আমি: ঠিক আছে।
রাইজা: এখন কেমন লাগতেছে? আমি: একটু শুরশুরি
লাগতেছে। (দুষ্টামি করার জন্য)
রাইজা আমাকে ছেড়ে দিয়ে বল্লো মানে? আমি: তুমি
না বল্লা কেমন লাগতেছে, তাই বল্লাম
তুমি জড়িয়ে ধরার পর শুরশুরি লাগতেছে। রাইজা: হা হা
হা।
সেই ছবির ভিতরে যেই হাসিটা দিছিলো,একদম
সেই ক্রাশ মার্কা হাসিটা আবার দিলা। রাইজা: কি
হইছে এভাবে তাকিয়ে কি দেখছো?
আমি: তোমার সেই ক্রাশ মার্কা হাসিটা। ওকে চলো
কেক কাটবে। এই বলে ওর হাতে চাকু দিলাম। তারপর
প্রথমে কেকটা কেটে আমাকে খাওয়িয়ে দিলো। তারপর
শাড়িটা ওকে
দিলাম। শাড়িটা দেখে খুব খুশি হলো,। আমি: কাল
শাড়িটা পরবা। আর কাল সকাল থেকে
নিয়ে সারাদিন বাহিরে ঘুরবো,বাহিরেই খাবো।
রাইজা: না। এমনি তোমার শরীর খারাপ আগে
ভালো হউ তারপর।
আমি: আমি এখন পুরো সুস্থ। কালকে রেডি থাকবা।
রাইজা: ঠিক আছে।
আমি ওর হাতটা টান দিয়ে এনে ওর জন্য আনা আংটিটা
ওকে পড়িয়ে দিলাম।
রাইজা আমার এই রকম কান্ড দেখে,রাইজা আমাকে
আবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বল্লো আসলেই তুমি একটা
পাগল।এই অসুস্থ শরীর নিয়ে
তুমি সারাদিন কেন এগুলা করলা। আর কতো কিছু
বলতে লাগলো আমি ওর কথায় বিভোর হয়ে গেলাম। ওর
কথার মাঝে খুজে পেলাম আমার
প্রতি ওর ভালবাসা।
তার পর আমরা একে অপরকে জানতে শুরু করলাম
আমার পছন্দের কালার ও পছন্দও এক ছিলো।
'
'
ওর পছন্দের খাবার ইত্যাদি ইত্যাদি
ছুটির দিনে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরা ইত্যাদি"
হাসি ঠাট্টা রাগ অভিমানে দেখতে একটা বছর কখন যে পার হয়ে গেল বুঝতেই পারি নি।
'
'
বিয়ের আর মাত্র সাত দিন বাকি।
রাতে ঘুমাতে গেলাম তখনি ওর কল এল বলল যে কালকে দেখা করতে জায়গা ও বলে দিল।
আমি ঘুমিয়ে গেলাম সকালে রেডি হয়ে চলে গেলাম ওর বলা জায়গায় ও বলল যে আজকে ওকে নিয়ে রিকশায় ঘুরতে হবে আমি বললাম হবু বউয়ের কথা কিভাবে ফেলতে পারি চলুন আমার পাগলি।
ওপস আপনাদের বললামই না ওর আমার নাম পাগল রেখে ছিলো কারন আমি একটু বেশিই পাগলামি করতাম
আর আমি ও বলতাম আমি তো আমার এই পাগলিটার পাগল। "
'
'
যাই হোক একটাে রিকশাকে ডাক দিলাম ও নিশ্চিন্তে আমার বুকে মাথা রেখেছে।
আমিও ওকে দেখছি আর আজকে ও আমার পছন্দের কালো একটা শাড়ি পরে এসেছে কালো শাড়িতে আমার পাগলিটাকে পরির চেয়ে কম সুন্দর লাগছে না!
'
আমরা সরাদিন অনেক ঘুরলাম আমার মনে হলো আজকে হয়তো আমার জীবনের সবচেয়ে সুখী দিন!
সন্ধা হয়ে এসেছে আমি ওকে বাসায় পৌছে দিতে গেলাম।
হঠাৎ একটা বাস এসে আমাদের রিকসায় ধাক্কা মারে আমি রিকসা থেকে পড়ে যাই।
'তার পর আর কিছুই মনে নাই যখন জ্ঞান ফিরল আমি নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করলাম দেখলাম মা বাবা আমার পাশে বসে কান্না করছে। আমি জিজ্ঞাস করলাম রাইসা কোথায় তখন আমার মনে হল এক্সিডেন্টের কথা। আমি বিছানা থেকে দৌড়ে গেলাম গিয়ে দেখি আমার রাইসা শুয়ে আছে।
কিন্তু সাদা কাফনে আমি বুকটা ফেটে আর্তনাদ বেরিয়ে আসল চোখ থেকে অশ্রু বরিয়ে আসল।
'
'
হঠাৎ আমি উঠে গেলাম দেখলাম যে আমার সারা শরির ঘামিয়ে গেছে
তার মানে আমি এতক্ষন সপ্ন দেখছিলাম ?
একটা শান্তির নিশ্বাস ফেললাম।
দেখতে ছয়টা দিন কেটে গেল আজ আমার বিয়ে লাল বেনরসিতে রাইসাকে দারুন মানিয়েছে!
খুব ভালো ভাবেই বিয়েটা শেষ হলো।
পাগলির আমার কানে কানে বলল এখন থেকে সারা জীবন জ্বালাবো হিহিহি।
আমি মনে মনে ভাবলাম এই বার মনে হয় আর পাগলির হাত থেকে নিস্তার নেই।
লেখক:কথাশ্রোতা হৃদয়
পাঠকরা হয়তো অনেক বানান ভুল আছে তার জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। আমনে অনেক বড় গল্পটা তাই বানানটা একটু বেশিই ভুল হইছে।" গল্পটা পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
Reactions

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ