অদ্ভুত সমাপ্তি

অদ্ভুত সমাপ্তি

অদ্ভুত সমাপ্তি

এত বড় বিয়ের অনুষ্ঠানে আমাকে কেমন জানি আর্বজনা আর্বজনা লাগছে।এই অনুষ্ঠানে সবছেয়ে কমদামী পোষাক পড়া ছেলেটি আমি।আমি এখানে আসতে মোটেও চাই নি।আমার বাবার বন্ধুর মেয়ের বিয়ে।বাবা বিদেশ তাই উনি আসতে না পারায়, আমাকে আসতে হলো।বিয়েতে এসে বরং ভালোই হলো।একটা নীল পরীর দেখা পেলাম।কিছুক্ষন পর পর তার দিকে তাকাচ্ছি।যখনি চোখে চোখ পড়ছে নামিয়ে রাখছি চোখটা।এভাবে অনেক্ষন ধরেই চলছে।সব কিছু ভালোই ছিলো,যখন চলে আসছি বিয়ের খাবার শেষ করে তখন কেউ একজন আমাকে লক্ষ্য করে বলে উঠল Excuse me....আমি তাকিয়ে দেখলাম নীল পরী।মনে মনে নিজেকে থাপ্পাতে ইচ্ছে করল। এভাবে মেয়েটিকে দেখা উচিৎ হয়নি মোটেই।আল্লায় জানে এখন সে কি করে বসে।মধ্যবিত্ত ছেলেদের বড় ঘরের মেয়েরা মোটেই পছন্দ করে না।নীল পরী যে বিশাল বড় ঘরের মেয়ে তা বুঝতে তার জামা আর নেকলেসের দিকে তাকানোর চেয়ে বেশি কিছু করতে হবে না।৪০০ টাকা দিয়ে কিনা শার্ট, ৮০০ টাকা দিয়ে কেনা প্যান্ট ২৫০ টাকা দিয়ে কেনা জুতার দিকে নীল পরি ১ সেকেন্ডে তাকিয়ে গেল।আমি নিশ্চিত ফকিন্নি বলে গাল শুনতেই হবে।
নীল পরীঃ আপনি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে ছিলেন কেন?
আমিঃ না মানে!!!!(মেয়েটা খুবই মায়ালু ভাবে জানতে চাওয়াতে ভয়টা এখন আর নেই।মেয়েটা আমাকে বেশ গুরুত্ব দিয়েই প্রশ্নটা করেছিল।তবে আমি জবাবটা দিতে পারলাম না কিছু)
নীল পরীঃ আচ্ছা স্যরি আমি মনে হয় ভুল প্রশ্ন করে পেলেছি।
আমিঃনা মানে!!!!মানে
নীল পরী চলে গেল।আমিও বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে এসে মেসে বসে আছি।নীল পরীটাকে আমক কখনো দেখি নি আগে অথচ ও এমন ভাবে কথা বলল যে মনে হলো সে আমার খুব ভালো বন্ধু।এমন উদ্ভট ভাবতে ভাবতে সে দিন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।৩ বছর সে দিন মানে ১৮ জুলাইয়ের বিকাল বেলার সে কথাটা হয়ত আর কখনো মনে পড়তো না যদি আজকের ঘটনাটা না ঘটতো।আমি তো ঢাবি তে এমবিএ ভর্তি হলাম,আজ প্রথম ক্লাস ছিল। বেশিরভাগ বন্ধু ই পুরানো আমার,কারন বিবিএ আমি ঢাবি থেকেই পড়েছিলাম।আমি আর বন্ধুরা ক্লাসে বসে গল্প করতেছিলাম।তখন ক্লাসে এসে তারাহুরা করে ইপতির প্রবেশ।
ইপতিঃমামা এক আজব কাহিনী হইয়া গেছে।ডাকার শহরের সবছেয়ে বড় শিল্পপতি হাবিব কাহারের মেয়ে আমগো ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টেরে মামা।
সবাই তার কথা শুইনা এই কথায় সবাই উপনীত হইলো যে,এই মেয়েরে পটানো সম্ভব না,কারণ এই মেয়ে আমিরিকার নামকরা versity থেকে পড়ে আসছে।কথা শেষ হতে না হতেই এক পরীর প্রবেশ ক্লাসে,ঠিক নীল পরি না আজ।আজ সে হলুদ পরী,কারণ তার জামার কালার আজ হলুদ।ইপতি তাকে দেখিয়ে দিয়ে বলল; আসছে মামা,তবে তার সাথে কেউ কথা বলতে যাইস না কে জানি কি বিপদ হয় আবার।নীল পরী আমারে দিকে তাকিয়া একটা হাসি দিয়ে বলল আরে তুমি!!! অভাক হলাম আমি।কেমনে সম্ভব ৩ বছর আগের হওয়া ১ মিনিটের কথা থেকে কাউকে মনে রাখা!
নীল পরীঃ আচ্ছা বেরিয়ে আসো তো,একা কিছু কথা বলবো।
পুরু ক্লাসের সব স্টুডেন্ট যেন কারেন্টের যাকুনি খাইছে। যাই হোক বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াইলাম তার সাথে।
নীল পরীঃ আচ্ছা আপনি হয়ত আমাকে চিনতে পারেন নাই।আমার সাথে আপনার ৩ বছর আগে(কথা শেষ করার আগেই থামাই দিলাম)
আমিঃচিনেছি,আমি চিনেছি।
নীল পরীঃ তাই নাকি?আচ্ছা বলুন তো আমার নাম কি?
আমিঃ নীল পরী।
নীল পরীঃ ইন্টারেস্টটিং তো।আরে না আমার নাম তো(বলাই আগগেই থামাই দিলাম)
আমিঃনা আপনার নাম জানতে চাই না।আমার কাছে আপনার নামটা না হয় নীল পরী ই থেকে যাক।
নীল পরীঃ সে দিন আমি কি কালারের ড্রেস পড়েছিলাম তাও মনে রেখেছেন?বেরী ইন্টারেস্টটিং।
আমিঃআচ্ছা আমাকে মনে রাখার কারণটা বুঝতেছি না এখনো।
নীলপরীঃআসলে আমি আমি আমিরিকায় জন্মগ্রহণ করেছি।মা খালামণি সবাই আমিরিকায় ই থাকতো।কখনও বাংলাদেশে আসা হয় নি আমার।আমার খালত বোনের বিয়েতে প্রথম আসি বাংলাদেশে।ওই দিনটা আমার জন্য স্পেশাল।নিজের দেশটাকে খুবই ইনজয় করেছি।কিন্তু সেদিন মাত্র ২ ঘন্টাই দেশে কাটিয়েছিলাম।১ ঘন্টা কাটিয়েছিলাম বিয়ের অনুষ্ঠানে।অদ্ভুত ভাবে আমার দিকে কেউ একজন তাকিয়ে ছিল।১-২ মিনিট নয় টানা ৪০-৪৫ মিনিট তাকিয়ে ছিল।চোখে চোখ পড়তেই চোখ সরিয়ে নিচ্ছিল সে মানুষটা।আমেরিকায় কেউ কখনও আমার দিকে তাকায় নাই।আর সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে আমি সেই মানুষটার সাথে কথা বলতে চেয়েছি।সে মানুষটা ভয়ে কথা বলে নি।সে মানুষটাকে নিয়ে অনেক ভেবেছি আমিরিকায় বসে।যাই হোক ফ্যামিলি ১ বছর নাকি বাংলাদেশে থাকবে।আর যেই লোকটির কথা বলছিলাম,সে লোকটি হচ্ছেন আপনি।
তার সাথে কথা হতো নিয়মিত।কখনও বুঝতে পারলাম না,সে কি আমায় ভালোবাসে!!নাকি শুধু ই বন্ধু ভাবে?সে আমার স্বপ্ন, জীবন,সাধনা।আজ কলেজের রেজাল্ট দিলো। আমি সিজিপিএ ৪ পেয়েছি।আজ আমি খুশি না বেজার ঠিক বুঝতে পারলাম না।একজন গরিব ছেলে সিজিপিএ ৪ পেয়েছে তার ছেয়ে বড় কথা আজ নীল পরী এই মাত্র বিদেশ চলে গেল।ভালোবাসি হলো না বলা।আচ্ছা সে কি জানে!!

আরো গল্প পড়ুন



Reactions

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ