জিরো থেকে হিরো হবো কিভাবে?

 জিরো থেকে হিরো হবো কিভাবে?

আমরা সেরা হতে চাই, অন্তত স্বপ্ন দেখি যে অনেক ভাল কিছু করবো এবং বড় হবো। কেউ ডাক্তার, কেউ বা ইঞ্জিনিয়ার, খেলোয়াড়, সিনেমার নায়ক হতে চায় এবং সেরা হতে চায়, ভাল কিছু করতে চায় জীবনে। কিন্তু বাস্তবতা হল খুব কম লোক ভাল কিছু করতে পারে আমাদের সমাজে। তাই হতাশায় কাটে আমাদের অনেকের জীবন। সবচেয়ে খারাপ দিক হল অল্প বয়সে অনেকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে তাদের দিয়ে ভাল কিছু হবে না। মূলত তাদের জন্যই আমার এই লেখাটি।

গত দুই বছরে অনেক তরুন তরুণীর সঙ্গে ফেইসবুকে, মোবাইল ফোনে, স্কাইপে এবং সামনা সামনি আমার কথা হয়েছে। তাদের থেকে যে ধরনের হতাশাজনক বাক্য শুনেছি তার মধ্যে কিছু হল এমনঃ

১। আমি কোন পাবলিক (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট এবং ঢাকা মেডিক্যাল) বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় টিকিনি তাই আমার জীবনে আর কিছু হবে না।

২। আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি তাই আমার কোন ভবিষ্যৎ নেই।

৩। আর্টস নিয়ে পড়ছি তাই জীবন এখানেই শেষ।

৪। আমি অনেক চেষ্টা করেও কোন চাকুরী পাইনি গত ১ বছরে তাই সারা জীবন বেকার থাকতে হবে।

৫। ফ্রিল্যান্সিং করার চেষ্টা করছি এবং প্রতিদিন বিড করি কিন্তু একটাও প্রোজেক্ট পাইনি।

এসব কারনে হতাশা আসা স্বাভাবিক এবং অযৌক্তিক নয়। কিন্তু যা মনে রাখা দরকার তাহল জীবনে হাল ছেড়ে দিলে কোন লাভ হবে না। বরং খারাপ অবস্থার মধ্যেও চেষ্টা করে যেতে হবে। আর চেষ্টা না করলে নিশ্চয়ই অবস্থার উন্নতি হবে না।

আসলে খারাপ অবস্থায় নিজের মনকে শান্ত, শক্ত ও স্বাভাবিক করতে পারাটাই যুদ্ধ জয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন ধাপ। যারা এটা করতে পারে তাদের জন্য পরের অংশটা অনেক সহজ হয়ে যায়। ঘুরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে তার জন্য আজ থেকেই চেষ্টা করা শুরু করে দিন।

জিরো থেকে হিরো হবো কিভাবে?



ঠিক আছে ধরা যাক আমার লেখার এই অংশটুকু পড়ে আপনি পটে গেছেন এবং মনকে শান্ত, শক্ত ও স্বাভাবিক করতে পেরেছেন। এর পর কি করতে হবে? এর পর যা করতে হবে তাহল কি করতে চান, কি লক্ষ্য বা কি স্বপ্ন তা স্থির করা। তবে আপনার অনেক টাকা হবে সে স্বপ্ন দেখবেন না। টাকা পেতে হলে আপনাকে কিছু একটা করতে হবে এবং সেদিকে দক্ষ হতে হবে। তাই কোন কাজে দক্ষ হলে এবং পরিশ্রম করতে পারলে টাকা এমনিতেই আসে। ঢাকাতে অনেক চা বিক্রেতা এবং চটপটি বিক্রেতা মাসে ৫০,০০০ থেকে ১ লাখ টাকা আয় করছেন।

আপনি হয়তো স্থির করতে পেরেছেন কি করতে চান। এর পরের ধাপ হল যা করতে চান সেদিকে শেখার চেষ্টা করেন। ইন্টারনেটের যুগে প্রায় সব বিষয়ের উপর ওয়েবসাইট আছে এবং অনেক কিছু শেখা সম্ভব প্রায় বিনামূল্যে। এজন্য অবশ্য একটু ইংরেজি জানা দরকার আগে এবং তাও শেখার জন্য অনেক কিছু আছে।

পড়ার অভ্যাস থাকা খুব জরুরী। বাংলাদেশে বেশীরভাগ মানুষ মনে করে যে মাস্টার্স পাস করার পর আর নতুন করে পড়ার দরকার নেই। অথচ আমাদের মনে রাখা উচিত যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা পড়ি পরিক্ষা পাসের জন্য আর এর পর আমরা পড়ি পেশাগত জীবনে দক্ষতা বাড়ানোর জন্য যা আমাদের বাড়তি টাকা এনে দিতে পারে।

পড়ার পাশাপাসি আরেকটি জিনিশ দরকার তাহল প্রতিদিন সময় দিয়ে অনুশীলন বা প্র্যাকটিস করা। আপনি যে দিকে দক্ষ হতে চান, সেরা হতে চান সেদিকে আপনাকে প্রতিদিন সময় দিতে হবে প্র্যাকটিস করার জন্য। হতাশ না হয়ে ৮-১০ ঘণ্টা করে সময় দেবার চেষ্টা করুন এবং দেখবেন ৬ মাসে অন্যরকম দক্ষতা এসে গেছে আপনার মধ্যে। যে কোন দিকেই আপনি ভাল এক ধরনের উন্নতি দেখতে পাবেন ৬ মাসের মধ্যে। আর ১ বছর নিয়মিত লেগে থাকলে অনেক উন্নতি করবেন।

তবে এজন্য আপনাকে অনেক কিছু বাদ দিতে হবে, আত্মত্যাগ করতে হবে। বিনোদন এর পরিমান কমাতে হবে। মন দিয়ে ৮-১০ ঘণ্টা প্রতিদিন এবং দিনের পর দিন লেগে থাকা কঠিন এটি আমি মানি। তবে এর কোন বিকল্প নেই। অবশ্য আজ থেকেই আপনি ৮ ঘণ্টা মন দিয়ে কিছু করতে পারবেন তা নয়। বরং চেষ্টা করুন ১ ঘণ্টা সব ভুলে গিয়ে একদিকে মন দিয়ে কাজ করার, অনুশীলন করার। ১ ঘণ্টা থেকে একটু একটু করে সময় বাড়ান এবং দেখবেন ১ মাসের মধ্যে ৩-৪ ঘণ্টা আমি মন দিয়ে কিছু করতে পারছেন একাগ্রচিত্তে। আর এভাবে প্রতিদিন ৮-১০ ঘণ্টা কাজ করার অভ্যাস করতে হয়তো ৩ মাস লাগবে।

বাংলাদেশে আমরা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই পরিবার, সমাজ, বন্ধু, আত্বীয়, সহপাঠী, প্রতিবেশি থেকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য, বিদ্রূপ, হিংসা- এসবের স্বীকার হই অনেক বেশি। সেই তুলনায় প্রশংসা, উৎসাহ ও সহযোগিতা তেমন পাই না। তাই যখন সব কিছু ফেলে আপনি একদিকে চেষ্টা করে যাবেন তখন নানা ধরনের সমস্যায় পরবেন চার পাশের মানুষের কারনে। অনেকে আপনাকে পাগল মনে করবে, অনেকে বাঁধা দেবার চেষ্টা করবেন, অনেকে আপনাকে নিয়ে ফালতু কথা বলবে। এসবকে পাত্তা দেবেন না। বরং একটু একটু করে এগিয়ে যান।

এক বছর পর দেখবেন অনেকেই আপনার প্রশংসা করছে। অনেকে আপনাকে সমীহ করে চলছে। আসলে লড়াইয়ের ৯০% শতাংশ আপনার নিজের সঙ্গে। আপনি যদি এ দিকে জয়ী হতে পারেন তাহলে বাকি ১০% কোন ব্যপার হবে না।

১ বছর চেষ্টা করলেই কি আমি শুন্য থেকে সেরা হয়ে যাবো? না মনে হয়। তবে সেরা হবার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপে চলে আসবেন। আমার নিজের একটা উদাহরণ দেই। ধরা যাক এই আজ ৯ সেপ্টেম্বার ২০২০ তারিখে আমি এই পোস্ট লিখলাম। এরপর আমি সহ আমরা কয়েকজন ফেইসবুকে শেয়ার করলাম এবং লেখাটি আগামী কয়েকদিনে ১০০০ বার এর মত পড়া হল। এখন হয়তো এতেই আমি ভীষণ আনন্দিত হবো কারণ একটি লেখা হাজার বার পড়া হলে তা নিজের কাছে এক ধরনের সন্তুষ্টি নিয়ে আসবে। কিন্তু চেষ্টা করে গেলে হয়তো এক বছর পর এই লেখাটি ১০,০০০ বার পড়া হতে পারে। অর্থাৎ সেরা থেকে আরও সেরা হবার রাস্তা সব সময় ফাঁকা আছে।

তাহলে এতক্ষণ যা বললাম তার একটা সারাংশ টানিঃ

১। আজকেই সিদ্ধান্ত নিন এবং নিজের মনে বারবার বলুন যে অবস্থা যত খারাপ থাকুক না কেন আপনি চেষ্টা করে যাবেন।

২। কোন দিকে দক্ষ হবার চেষ্টা করবেন তা স্থির করুন। লাগলে একটু সময় নিয়ে পরিকল্পনা করুন।

৩। পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং যেদিকে দক্ষ হতে চান সেদিকে যতটা সম্ভব পড়ার ও জানার চেষ্টা করুন।

৪। প্রতিদিন মাত্র ১ ঘণ্টা সব বাদ দিয়ে মন দিয়ে অনুশীলন করুন এবং ৩ মাসে হয়তো ১০ ঘণ্টা তা করতে পারবেন।

৫। অন্যদের ফালতু কথাকে পাত্তা দেবেন না।

৬। এক বছর লেগে থাকুন এবং দেখবেন অনেক উন্নতি হয়েছে।

তাহলে আজ থেকেই চেষ্টা শুরু করে দিন।

রাত এখন ৪ঃ২০ আপনি ফেসবুকে বিনোদন করছেন আপনার পোস্টে ১০০০+ লাইক ৫০০+ কমেন্ট দরকার আপনারে ভার্চুয়াল জগতের মানুষেরা অচেনা এক নামে নতুন করে চিনুক এরকম যদি আপনার উদ্দেশ্য হয় আপনি জীবনে একদিন আমার মতো হয়তো পস্তাইবেন তবে আমি আলহামদুল্লিল্লাহ এই ট্রেন্ড থেকে ফিরে এসেছি ২ বছর আগে ।

আপনি বলবেন আমি ফেসবুকে তাহলে ৪ঃ২০মিনিটে কি করছি আমি আমার কাজের উদ্দেশ্যে এসেছি কারণ ফেসবুক বিশ্ব-সামাজিক আন্তঃযোগাযোগ ব্যবস্থার একটি ওয়েবসাইট বিনোদনের জন্য প্রস্তুত করা নয় এটা টিকটক নয় যার মুল উদ্দেশ্য বিনোদন এটা পাবজি নয় যার মুল  উদ্দেশ্য বিনোদন+এডিকশন । তাই এখন  আমি চেষ্টা করি আমার ফেসবুক টাইমলাইনের সদব্যবহার করতে যেটা সবারই করা উচিত । কাজের ফাকে কালেক্টেড একটা পোষ্ট তরুনদের উদ্দেশ্যে কপি পেষ্ট করলাম যারা ভাবে আমাকে দিয়ে কিছু হবেনা আমি কিছু করতে পারবোনা আসলেই সময় এইসব চিন্তা ভাবনা করাতে বাধ্য করে আমাদের তবে আমাদের সেই চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে নিজেকে সময় দিতে হবে নিজের ভবিষ্যতের জন্য ।

২০১৮ সালে এক গুরুজন আমার জীবনে সবচেয়ে কঠীনতম সময়ে আমাকে একটি উদাহরণ দিয়ে বলেছিলেন "মনে করো তুমি একটা পথ ধরে তোমার ঘরে ফিরছো, তোমায় একাই হেটে যেতে হবে পথ দিয়ে, হোচট খেয়ে পরে গেলে কেউ আসবেনা তোমার হাতটি ধরে টেনে তুলবার জন্য তাহলে যদি কখনো পড়ে যাও তুমিকি আর ঘরে ফিরবেনা? তুমিকি সেখানেই পরে থাকবে অব্যশই না যত কষ্টই হোক তুমি আবার উঠে দাড়াবে এবং তোমার গন্ত্যবে পোছাবে ।"  জীবনটা ঠিক তেমনি আজ তুমি খারাপ পরিস্তিথির মধ্যে আছো তাইবলে হাল ছাড়া যাবেনা তোমার রাস্তা তোমায় শেষ করতেই হবে যেভাবেই হোক আবার ঊঠে দাড়াতে হবে আবার হাটতে হবে তবেই তুমি তোমার গন্তব্য খুজে পাবে । তার এই কথাটি আমার অনেক কাজে দিয়েছে 

Reactions

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ