সাত আট দশ বছরের বড় কারো সাথে 'বিয়ে' দিয়ে দিবে হাসিমুখে!

সাত আট দশ বছরের বড় কারো সাথে 'বিয়ে' দিয়ে দিবে হাসিমুখে!


 বাংলাদেশি পিতামাতা তাদের মেয়েকে, তার চেয়ে সাত আট দশ বছরের বড় কারো সাথে 'বিয়ে' দিয়ে দিবে হাসিমুখে!

বিয়ের পরে মেয়ের এডজাস্ট করতে সমস্যা হবে প্রচুর, বাবা মা বলবে এডজাস্ট করে নিতে তবু। মেয়ে চেষ্টা করে যাবে, একটা পর্যায়ে এই যন্ত্রণা ঝগড়া নিয়েই মেয়েটা বেঁচে থাকতে শিখে যাবে।

বাংলাদেশি পিতামাতা এইসব কিছুই হাসিমুখে মেনে নিবে, কিন্তু মেয়ে তার পছন্দের ব্যাচমেট বা ভালোবাসার মানুষটাকে বিয়ে করুক, এইটা বাংলাদেশি পিতামাতা কখনোই মেনে নিবেন না, NEVER EVER!

এইটা বাংলাদেশের খুব কমন একটা দৃশ্য!

We are a generation that has grown up with completely wrong parenting.

স্কুলে যখন স্টাডি ট্যুরের এনাউন্সমেন্ট আসতো, তখন প্রথম কোন চিন্তাটা আপনি করতেন? ঐদিন কোন জামা বা জুতা পরবেন সেটা? নাকি কত মজা হবে সেটা?

না। প্রথম যে কথাটা আপনি ভাবতেন, সেইটা হলো আপনাকে আপনার বাসা থেকে পারমিশন দিবে কি না, কিভাবে বাসায় রাজি করাবেন, আদৌ যাইতে পারবেন কিনা, এসব!

আমাদের অনেকের এই স্মৃতিটা আছে : পিকনিকের দিন আগায় আসতেছে, ক্লাস টিচারকে সবাই পিকনিকের টাকা দিচ্ছে, নাম এন্ট্রি করাচ্ছে, আর আপনি বেঞ্চের এক কোণায় বসে এসব দেখতেছেন। পিকনিকের দিন আসছে, সবাই যখন বাসে চড়তেছে, তখন আপনি বাসায় বসে পড়তেছেন, কারণ পিকনিকের দিন স্কুল ছুটি থাকে, তাই আপনাকে বলা হয়েছে সকালে এই সময়টা নষ্ট না করে পড়তে। আপনার মন খারাপ, হু কেয়ারস ম্যান?

তারা কেন এমন করতো? কারণ উনারা ভয় পাইতো আপনাকে নিয়ে। যাইতে দিতো না, কারণ পিকনিকের বাস এক্সিডেন্ট করতে পারে, পিকনিক স্পটে পানি আছে, আপনি ডুবে যাইতে পারেন। আমাদেরকে সাঁতার শিখানোর বদলে যেখানে পানি থাকে সেখানে না গিয়ে বাসায় বসে থাকা শিখানো হয়সে সবসময়।

ছোটবেলায় এক টাকা দিয়ে খেলা গেমসগুলোর কথা মনে আছে? বিকেলবেলা মাঝেমধ্যে খেলতে যাইতাম। এই গেইম খেলার মধ্যে খারাপ কোন কিছু না থাকার পরও দেখতাম কয়েকজনকে তাদের বাপ মা গেইমের দোকান থেকে কান ধরে মেরেধরে বাসায় নিয়ে যাচ্ছে। কেন? গেইম খেলার মধ্যে খারাপের কি? আমি উত্তর পাই নাই কোনদিন সেটার!

আমাদেরকে বলা হয়সে, বাবা মায়ের সব কথা শুনতে হয়, তাদের কথা না শোনা পাপ। আমরা শুনে গেছি, শুনে শুনে অনেকের শৈশব কৈশোরের আনন্দময় বিকাল কাটসে স্যারের সামনে পড়ার টেবিলে। আমরা অনেক শুনসি, শুনে শুনে একটা বয়সে এসে দেখসি, আমাদের পড়াশোনার বাইরে কিছু শেখা হয় নাই, পড়াশোনাটাও আমাদের ইচ্ছামত লাইনে পড়া হয় নাই, আমাদের আসলে কিছুই করা হয় নাই। আপনি যদি খুব ভদ্র কেউ হোন, কখনো তাদের কথার বিরুদ্ধে না যান, তাহলে একটা সময় গিয়ে দেখবেন, আপনার প্রাপ্তি বা আনন্দের খাতাটা শূন্য। আপনি বার্ষিক পরীক্ষার পরে এঞ্জয় না করে উনাদের কথা শুনে কোন বড় ভাই বোন থেকে পুরাতন বই এনে অগ্রীম পড়সেন, জেএসসি পরীক্ষার পরে পঁয়তাল্লিশ দিন বন্ধেও আপনি উনাদের কথা শুনে আগে থেকে নাইন টেনের পড়া পড়সেন, মেট্রিকের পরের বন্ধে সারাদিন টোটো না করে ইন্টারের পড়া পড়সেন, সব কিছু করসেন তাদের কথামত, আপনাকে বলা হয়সে পরে আনন্দ করা যাবে। কিন্তু আনন্দ একটা সময় নির্ভর ব্যাপার, একেক বয়সের আনন্দটা একেকরকম। ক্লাস ফোরে আপনাকে বিকেলে বরফ পানি খেলতে দেয় নাই পড়ার চাপ দিয়ে, বলসে পড়ালেখা শেষ করে আনন্দ করা যাবে। পড়ালেখা শেষ করে পঁচিশ ত্রিশ বছরে কেউ বরফ পানি খেলবে? এখন এসে আপনি জীবনের সার্কেলে ব্যস্ত হয়ে গেছেন, ব্যস্ততার ভীড়ে আপনার ঐসব শখ আর কাজ করে না আগের মত, ভবিষ্যতেও আরো করবে না। অথচ এমনও হইতে পারতো, আপনাকে বার্ষিক পরীক্ষা, জেএসসি বা এসএসসি পরীক্ষার পরে মুক্ত পাখির মত আনন্দ করতে দিতে পারতো, আপনার পছন্দের লাইনে পড়তে দিতে পারতো, পছন্দের মানুষটাকে বিয়ে করতে দিতে পারতো।

আমাদেরকে ধর্মের দোহাই দিয়ে উনাদের কথা শুনতে বলা হয়সে, অথচ সেই ধর্মের কথা অনুসারে যখন আপনি পায়ে ধরে সালামটা ঠিক না বলবেন, তখন দেখবেন আপনাকে বেয়াদব আখ্যা দিয়ে ফেলা হয়সে, যখন আপনি গুনাহ কমাতে দ্রুত বিয়ে দেওয়ার কথা বলবেন, তখন উনারা সেটা এড়িয়ে যাবেন।

উনারা আমাদের ভালো চান নিঃসন্দেহে, কিন্তু আমাদের খুশিটা কোথায় সেটা জানেন না, জানতে চানও নাই কোনদিন।

এই ভুল প্যারেন্টিংয়ের ফাঁকে আমরা "ভালো চাওয়ার" অত্যাচারের মধ্যেই বড় হয়ে গেছি সবাই, মনের মধ্যে অনেক ক্ষোভ আর ক্ষত নিয়ে।

আমরা কেউ প্রকাশ করি নাহ! বাবা দিবস বা মা দিবসে খুব ভালোবাসার স্ট্যাটাস আমরা দেই... কিন্তু যে ক্ষতটা তৈরি হয়ে আছে, সেইটা আমরা কখনো একটুও ভুলি নাই।

~ সংগৃহীত

Reactions

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ