গল্প টা একজন ডেলিভারি ম্যান এর

গল্প টা একজন ডেলিভারি ম্যান এর

আজ কয়েকদিন ধরে ভীষণ জ্বর। 

ঘরে খুব অভাব। বাবা বেঁচে নেই। মা,২ বোন,আর আমাকে নিয়ে আমাদের পরিবার। আমাদের নিজেদের কোন বাড়ি নেই। ভাড়া ঘরে থাকি। বাবা মারা যাওয়ার পর মা গার্মেন্টস এ চাকুরি করে ঘর ভাড়া দিয়ে আমাদের নিয়ে কোন রকম বেঁচে আছে। বড় আপা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ।

আর বোন এর বয়স ৯ বছর। লেখাপড়া করার খুব ইচ্ছে ছিলো। কিন্তুু টাকার অভাবে লেখাপড়া করতে পারি নি। আমি খুব মেধাবী ছাএ ছিলাম। কোন রকম রাজমিস্ত্রী এটা সেটার কাজ করে এসএসসি পরীক্ষা টা দি। 

কলেজে ভর্তি হতে পারি নি। 

মায়ের শরীরে এখন আর চাকুরি টা কুলায় না। অফিস থেকে এসে মা লাশের মত শুয়ে থাকে। 

আজকাল চাকুরির বাজার খুব কঠিন আর কড়া। তেমন কোন চাকুরিই পেতাম। আর সামান্য চাকুরির জন্য ও ঘুষ চাইতো। একটা দারোয়ানির চাকুরির জন্য ও ৫ হাজার টাকা ঘুষ চাইতো। যা দেওয়া আমার দ্বারা পসিবল ছিলো না। 

 চাকুরির জন্য হন্য হয়ে ঘুরতাম। মাসের শেষের দিকে আমাদের বাজার খরচ এর টাকা টা ও থাকতো না।

কারণ মা বেতন পেতো ১২ হাজার টাকা। 

সেখানে ৪ হাজার টাকা ঘর ভাড়া দিতে হতো। 

এক রুমের ঘর ছিলো আমাদের। 

তাই মা বোনরা সহ সবাই একসাথে ঘুমাতাম। আসলে অভাবে পড়লে লজ্জা শরম সব চলে যায়। 

আমাদের ও চলে গিয়েছিলো।

তার মধ্যে মা আর বড় আপার ওষুধ লাগতো ৩ হাজার টাকার। ওষুধ না খেলে মা চাকুরি করতে পারতো না। 

বাদ বাকি টাকা দিয়ে আমাদের জীবন চলতো। 

হন্য হয়ে যখন চাকুরি খুঁজেছিলাম তখন এক আন্টির মাধ্যমে হোম ডেলিভারি দেওয়ার খোঁজ পাই।আন্টি হোম মেড খাবার সেল করতো। 

অন্য ডেলিভারি বয় দের থেকে আন্টি আমাকে কিছু টাকা কম দিতো। 

প্রতিদিন আন্টির তেমন অর্ডার ও পড়তো না। আর এদিকে আমার কোন মোবাইল ছিলো না। 

মোবাইল আম্মার টা রেখে দিয়েছিলাম।

আমি জায়গা ও চিনতাম না তেমন। 

অনেক কষ্টে খুঁজে বের করতাম। আমার কোন সাইকেল ছিলো না বাসে করে যেতাম আসতাম। তখন গাড়ি ভাড়া বাদ দিয়ে থাকতো ৫০ টাকা। 

যাদের বাসায় ডেলিভারি দিতে যেতাম তাদের বলতাম দরকার হলে কল দিবেন।

বাসে করে যাওয়ার সময় দেখা যেতো খাবার ঠান্ডা হয়ে যেতো। অনেক সময় বাস পেতাম না ভিড়ের কারণে উঠতে পারতাম না। নিদিষ্ট সময়ে আমি ডেলিভারি ও দিতে পারতাম না। 

তখন তারা বকাঝকা করতো। 

একদিন একজন এর বাসায় ডেলিভারি দিতে গিয়েছি। তার বাসা ৭ম তলায়। 

তাদের আবার লিফট নষ্ট। ওইদিন আমার জ্বর ও ছিলো। 

আমি সিঁড়ি বেয়ে ৭ম তলায় উঠলাম। আমি মনে করেছি তিনি হয়তো আমাকে টিপস দিবেন। কিন্তুু উল্টো বকা দিয়ে বললেন এত দেরি কেন। 

আমি একটু পানি চেয়েছিলাম। উনি আমাকে বললেন নিচে ট্যাপ আছে খেয়ে নিও। 

আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। 

আমি এই ৭ম তলা নামার সময় একটু নামছিলাম আর একটু বসছিলাম। 

এই ডেলিভারি বাবদ গাড়ি ভাড়া দিয়ে আমার হাতে ৫০ টাকা ছিলো। 

সেদিন আর কোন ডেলিভারির অর্ডার পাই নি। 

তাই এই ৫০ টাকা দিয়ে ওষুধ কিনে এনে খেয়ে বাসায় ঘুমিয়ে যায়। 

পরের দিন আবার একটা অর্ডার পাই। তার জন্য পোলা ওর চাউল কিনে নিতে হবে ৫ কেজি বাজার থেকে। 

আমি নিয়ে যায়। 

সে আমাকে ২০০ টাকা বখশিশ দেয় আর ১০০ টাকা চার্জ দেয়। 

 আমি সেদিন বাসায় একটা মুরগি কিনে নিয়েছিলাম তারপর সবাই মিলে তৃপ্তি সহকারে খেয়েছি। 

মাঝে মাঝে এমন এমন জায়গায় ডেলিভারির অর্ডার পড়ে দেখা যায় রাস্তা অনেক ভাঙা তারউপর ৫ম তলা কিংবা ৭ম তলা কিন্তুু কোন লিফট নেই। 

তারা আমাদের একটা টাকা টিপস তো দেয়না উল্টো গালমন্দ করে। 

এর মধ্যে আমার মা চাকুরি টা করতে পারে না ঠিক মতো। 

মাসে ৭ দিন এর মত বাসায় থাকে। আপনারা হয়তো জানেন গার্মেন্টস এর চাকুরিতে হাজির না থাকলে তারা খুব অকথ্য আর জঘন্য বাসায় গালাগালি করে। 

ডেলিভারির অর্ডার প্রতিদিন পাই না। 

যেদিন পাই না সেদিন আমি রিকশা চালাই। 

রিকশা চালিয়ে মালিককে ২০০ টাকা দি আর বাকি টাকা দিয়ে ঘরের বাজার করি। 

যাএীরা সবসময় ভালো পড়ে না। 

আমাদের ঈদ আসে কিন্তুু সবসময় জামা কাপড় কিনতে পারি না। 

দিন শেষে ২ টা মোটা ভাত আর ডালই আমাদের আনন্দের কারণ। 

আমরা গরীব ঘরের অভাবী সন্তান রাই এসব ডেলিভারির কাজ করি। দয়া করে আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করবেন না। 

ভালো থাকবেন আসসালামু আলাইকুম।।

(সমাপ্ত)


Reactions

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ