অভিমানী ছেলে - Wonderful Story And Letter

অভিমানী ছেলে


~~~অভিমানী ছেলে!~~~
- ওই
- কি ?
- চলো।
- কোথায় ?
- বাসায় যাবো না ?
- আরেকটু থাকো না আমার সাথে।
- না গো, অনেক দেরি হয়ে গেছে। আর দেরি করলে বাসায় বকা শুনতে হবে।
- আরেকটু থাকো না, প্লিজ।
- নাহ…. চলো
কথাটা বলেই বিপলুর হাত ধরে টান দিলো নাবিলা। গোমরা মুখ করে নাবিলার একটু পিছু পিছু হাটতে শুরু করল বিপলু। নাবিলাকে পাগলের মত ভালোবাসে বিপলু। নাবিলাকে এক নজর দেখার জন্য বিপলু প্রতিদিন ১৬ কি.মি. পথ পাড়ি দিয়ে যায়।
আর ঢাকা শহরের ১৬ কি.মি. মানে ২/৩ ঘন্টার জ্যামে বসে থাকা। কিন্তু তবুও বিপলু নাবিলাকে একটু দেখার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যাম উপেক্ষা করে নাবিলার কোচিং এর সামনে যায়। কখনো কোচিং এর সামনে ২ মিনিট এর জন্য দেখা, কখনো বা কোচিং থেকে বাসায় যাওয়ার পথে নাবিলার পিছু পিছু হাটা, কখনো বা নাবিলার জানালার সামনে গিয়ে ঘুর ঘুর করা, কখনো বা নাবিলাকে দেখতে গিয়ে নাবিলার আপুকে দেখে চলে আসা, আবার কখনো বা নাবিলার আন্টির দৌড়ানি খেয়ে পথ হারিয়ে ফেলা।
এভাবে চলত বিপলুর প্রত্যেকটা দিন কিন্তু নাবিলাকে বড়জোর এক নজর দেখা ছাড়া কোন কথাই হতো না তাদের। তবুও বিপলু প্রতিদিন যেত একটি বার নাবিলাকে দেখতে। সপ্তাহের একটা দিনই তাদের এক সাথে ঘুরা হয় কিন্তু আজ মাএ এক ঘন্টা সময় দেওয়ায় বিপলু মুখটা ভার করে রাখল। হঠাৎ পিছন থেকে বিপলু,
- ওহ
- কি হলো ?
- এতো তাড়াতাড়ি হাটছো কেন ? বাসায় কি তোমার ছেলেমেয়ে রেখে আসছো নাকি ?
- দেখো অনেক দেরি হয়ে গেছে। যেতে হবে।
- আমার পা ব্যাথা করছে, আমি হাটতে পারছি না। একটু আস্তে হাটো না, প্লিজ।
- তোমার পা ব্যাথা করছে না এটা আমি ভালো করেই জানি। এটা তোমার পুরানো অজুহাত আমাকে দেরিতে বাসায় পাঠানোর জন্য।
- জানো যেহেতু আরেকটু থাকলেই পারো ?
- দেখো বুঝতে চেষ্টা করো। দেরী করলে আপু বকা দিবে।
- আপুর কি তোমার পিছনে ছাড়া আর কোন কাজ নাই ?
- দেখো আপুর নামে কিছু বলবা না কিন্তু।
- আচ্ছা বলব না। চলো ফুসকা খাই। কতো দিন একসাথে ফুসকা খাই না। চলো ওকে,,,,,,,done……thank you……..thank you……. thank you…….!!!!
কথাগুলো বলে নাবিলাকে কিছু না বলতে দিয়েই ফুসকার দোকানে দিকে দৌড় দিলো বিপলু। বিপলু জানে নাবিলাকে কথা বলার সুযোগ দিলে “না” ছাড়া কিছুই বলবে না। পকেট থেকে মানিব্যাগটা বের করল বিপলু। মানিব্যাগে মাএ ১১৫ টাকা আছে। দুই প্লেট ফুসকার অর্ডার দিলে রিকসা ভাড়া আর বিপলুর বাস ভাড়া হবে না।
তাই বিপলু এক প্লেট ফুসকার অর্ডার দিয়ে টেবিলে এসে বসে পড়ল। নাবিলা এসে বিপলুর পাসে বসল। একটু পরে এক প্লেট ফুসকা দিয়ে গেল মামা।
- কি ব্যাপার এক প্লেট কেন ?
- তোমার জন্য।
- তোমার টা ?
- ও আসলে ফুসকা খেলে আমার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয়। তাই আমি এই সব খাই না।
- ফুসকা খেলে তোমার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয় ???
- তেল দিয়ে ফুসকা বানায় তো। আর তেলের কিছু আমি খেতে পারি না।
- তাহলে অন্য কিছু নেও !
- আরে না আমার তেমন একটা খিদা নাই। তুমি খাও তো।
- তাহলে বলছো কেন একসাথে খাবো ?
- এই যে একসাথে বসে আছি, কথা বলছি, এই তো অনেক। আমার আব্বু বলে খাওয়ার সময় কথা বলতে নাই, খাও তো তুমি।
তারপর তাদের মাঝে কিছুক্ষণ কথা চলতে থাকল। নাবিলা বিপলুকে ফুসকা খাইয়ে দিতে চাইল কিন্তু বিপলু ফুসকা খেল না। বিপলু শুধু নাবিলার একটা হাত ওর হাতের মাঝে রেখে নাবিলাকে অনুভব করতে লাগল আর নাবিলার কথা শুনতে লাগল।
একট পরে বিপলু ফুসকার বিল (৪০টাকা) দিয়ে নাবিলার হাতে হাত রেখে ষ্টান্ডের দিকে গেল। ষ্টান্ডে গিয়ে বিপলু একটা রিকসা নিল এবং দুজনে উঠে বসল।
- কি ব্যাপার তুমি উঠস কেন ?
- তোমার সাথে যাব বলে।
- আমার সাথে যেতে হবে না। তুমি এখান থেকে বাসে উঠে বাসায় চলে যাও নাহলে তোমার বাসায় যেতে অনেক দেরি হয়ে যাবে।
- হলে হোক, চলো তো।
ওই মামা, আপনি চালান (রিকসাওয়ালাকে বলল বিপলু)
- তুমি আমার সাথে আমার বাসা পযর্ন্ত যাবা আবার ব্যাক করে বাসষ্টান্ড আসবা!! কেন এত কষ্ট করবা ??
- দূর কিসের কষ্ট। তুমি আমার হাতটা ধরো আর আমার কাধে মাথা রাখো দেখো আমার সব কষ্ট দূর হয়ে যাবে। আর তাছাড়া জীবনের শেষ মুহূর্ত পযর্ন্ত আমি তোমার পাশে থাকতে চাই আর তোমাকে অনুভব করতে চাই।
- তুমি এত পাগল কেন ?
- আমার পাগলির জন্য।
- সবসময় এই ভাবে ভালোবাসবে তো ?
- সারাজীবন…..!!!!
- তিন সত্যি (প্রমিস)
- তিন সত্যি (প্রমিস)
সারাটা পথ বিপলু নাবিলার হাত ধরে রাখল আর নাবিলা বিপলুর কাধে মাথা দিয়ে রাখল। নাবিলার কাছে বিপলুর শুধু এই চাওয়া, “বিপলুর হাতটা ধরবে আর কাধে মাথা রাখবে”। দেখতে দেখতে নাবিলার বাসা চলে আসল,
- আচ্ছা আমি তাহলে যাই ?
- যাও।
- তুমি এই রিকসায় করে চলে যাও।
মামা ওরে আবার বাসষ্টান্ডে নামিয়ে দিয়েন। (রিকসাওয়ালাকে বলল নাবিলা)
- আচ্ছা আমি যাব।, তুমি যাও।
- ওকে।
- কাল দেখা হবে।
- আবার ?
- কোচিংয়ের সামনে !!
- তুমি পারও বটে। পাগল একটা।
- Yes I’M.....
- byeee
- byeee
নাবিলার বাসায় ঢুকা পযর্ন্ত বিপলু এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল। তারপর মামাকে বলল,
- মামা কত হয়েছে ?
- ৫০ টাকা।
- (মানিব্যাগটা বের করে) এই নেন।
- কেন আপনী যাবেন না ?
- না মামা, আমার একটু কাজ আছে।
রিকসাওয়ালা চলে গেল। বিপলু মানিব্যাগটার দিকে একবার তাকালো। মানিব্যাগে মাএ ২৫ টাকা আছে। হাফ পাস দিয়ে যদি বাসে করে বাসায় যেতে হয় তাহলেও মিনিমাম ২০ টাকা লাগবে,,, তাহলে কি আর রিকসায় উঠার টাকা থাকে। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে বিপলু একটু সামনে থেকে ৫ টাকার বাদাম কিনল। তারপর কানে একটা ইয়ারফোন লাগিয়ে উল্টো পথ ধরে বাসষ্টান্ডের দিকে হাটতে শুরু করল......
কিছু কথা :অনেকেই বলে থাকে ছেলেরা ভালোবাসতে পারে না। আসলে কিছু কিছু ছেলেদের ভালোবাসা খুব কমই প্রকাশ প্রায়। ছেলেদের ভালোবাসা খুজে পাওয়া যায় তাদের কাজ-কর্মে, কথা-বার্তায়। কিন্তু যা আজকাল অনেক মেয়েই খুজে পায় না।

আরো গল্প:  

একটি ভিখারী মেয়ের গল্প


মন্ত্রির ছেলে


Reactions

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ