হযবরল ভালবাসা | একটি অদ্ভুদ ভালোবাসার গল্প

হযবরল ভালবাসা


হযবরল ভালবাসা

-Sorry ! আমি তোমাকে কখনো ওভাবে ভাবিনি। আমি তোমাকে বন্ধুর মত জানি এবং বিশ্বাস করি। (আমি)
-কি বলছ এই সব। তাহলে এতদিন আমদের সম্পর্ক কি বন্ধুর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল? (স্নেহা)
-আমার পক্ষ থেকে হ্যাঁ। বন্ধুর মতই তোমাকে দেখেছি বন্ধুর মতই তোমাকে ভালবেসেছি। বন্ধুর মত করে। আর কোন সম্পর্কে জড়িয়ে নয়। বন্ধুর মতো করে তোমাকে সাহায্য করব।(আমি)
-কি!!! (স্নেহা)
-শুধুই বন্ধু!(আমি)
-আমি তোমাকে ভালবাসি।।। প্লিজ আমাকে আর কষ্ট দিয়ো না। কেন বুঝেও না বুঝার অভিনয় কর? (স্নেহা)
-শুন, স্নেহা। কোন অভিনয় করছি না। সত্যি বলছি তুমি আমার বন্ধু ছাড়া বেশি কিছু নও। এরপর থেকে আর ভালবাসার কথা আমাকে বলা তো দূরে থাক উচ্চারণও করবে না।(আমি)
(মেয়েটা কাদঁতে কাদঁতে চলে গেল)।
আমাদের প্রথম দেখা হয় HSC পরীক্ষার হলে।কলেজে শেষ রোল আমার তাই অন্য কলেজের পক্ষ থেকে স্নেহা আমার পাশে। কলেজে আমার একটা ট্যাগ আছে "এন্টি-গার্ল"। অর্থাৎ মেয়েদের থেকে দূরে থাকি। তবে ইহা কলেজ নয় পরীক্ষার হল। তারপরও দূরত্ব বজায় রেখে প্রথম দুইটি পরীক্ষা দিয়েছি। তৃতীয় পরীক্ষার দিন, এই যে শুনছেন বলে পাশ থেকে কেউ ডাক দিল।
-হ্যাঁ বলুন।
-নৈবত্তিক অংশে একটু সাহায্য করবেন প্লিজ।
-(মনে পড়ল আম্মুর কথা, বলেছিল নিজের লেখার পাশাপাশি অন্য কেউ সাহায্য চাইলে যেন সাহায্য করি) ঠিক আছে সাহায্য করব।
-আপনাকে তো সবসময় এই যে বলে ডাকতে পারব না। আমি স্নেহা।
-আমি মারুফ।
এভাবে আস্তে আস্তে প্রতি পরীক্ষায় আমাদের দেখাদেখি হত। আর পরীক্ষা শেষে কোন দিন একটা ধন্যবাদও দেয়নি। শেষ পরিক্ষার দিন ভেবেছিলাম ধন্যবাদ দিবে কিন্তু তাও কপালে ঝুটলনা। শুধু বলল -
স্নেহা: ধন্যবাদ দিয়ে আপনার সাহায্যকে তুচ্ছ করার অধিকার আমার নেয়।
আমি: তাইলে সাহায্যটা তোলা রইল, পরবর্তীতে ফেরত নিব।
স্নেহা: ঠিক আছে। বললেই আপনার সাহায্য হাজির হব জনাব।
দুইজনেই অনেক হাসিঠাট্টা করলাম। আসার সময় বলল, আমরা কি বন্ধু হতে পারি।
এতক্ষণ আমি ঠিক ছিলাম, অপরিচিত ভেবে কথা বলে যাচ্ছিলাম। বন্ধু হওয়ার কথা শুনে এলার্জি পেয়ে বসল। আগেই বলেছিলাম এন্টি গার্ল। অনেক কষ্টে নিজেকে রাজি করালাম। ওই দিনের মত টাটা বাই বাই বলে চলে আসলাম।
অনেক দিন পর টুইটারে লগইন করলাম। পরীক্ষার আগে শেষ টুইট ছিল। অনেক নটিফিকেশনস অনেক ফলোয়িং রিকুয়েস্ট। একটা একটা করে চেক করছিলাম। নজরে আসল সৃষ্টি সবনম স্নেহা নামের রিকুয়েস্টটি। প্রোফাইল দেখে নিশ্চিত হলাম এই স্নেহাই সেই স্নেহা। রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করলাম।
পরের দিন দেখলাম স্নেহা মেসেজ পাটিয়েছে। রিপ্লে দিলাম । টুইটারে ১৪০ অক্ষরের বেশি লিখা যায় না তাই দু-চার লাইনে পোস্ট করতে হয়। তাই ঐ দু-চার লাইনের ভেতরে মনের কথা গুলোর সারসংক্ষেপ খুবই সুন্দরভাবে ফুটিয়ে ওঠে। ওঠা স্নেহার খুব পছন্দ হয়েছে তাই প্রায় সময় আমাকে মেসেজ করে। এভাবে আস্তে আস্তে চলতে থাকে আমাদের কথা ও আলাপ। একদিন স্নেহা নিজে থেকেই আমার সাথে দেখা করতে চাইলো। তবে আমি নাকচ করলাম। এভাবে বলতে বলতে একদিন দেখা করতে রাজি হলাম। এমন জায়গাই আসতে বলল শুনে কিছুক্ষণ ত হয়ে রইলাম। ভাবলাম আমি মরতে যাচ্ছি না প্রথম দেখা করতে যাচ্ছি!!! পরের দিন প্রায় ১ ঘন্টা লেটে ঠিক জায়গাই গিয়ে পৌছালাম। জায়গার নাম ডেট জোন, পাহাড়ের চূড়ায়। গিয়ে স্নেহাকে দেখে অবাক হয়ে থাকিয়ে রইলাম। পরীক্ষার হলে যে স্নেহাকে দেখেছিলাম এই সে স্নেহা বিশ্বাস করতে পারছিনা। লিখে বোঝানোর মত সামর্থ্য আমার নেই। সত্যি ব্যতিক্রম সুন্দর লাগছে থাকে।কোন মেকাপ নেয় সম্পূর্ন ন্যাচারাল লুক। আমাকে দেখে এগিয়ে এল।আমার দেরী করে আসার জন্য কোন অভিযোগই করল না। পাহাড়ের চূড়াই একটায় রেস্তোরা। দুজনে একসাথে বসলাম।
আমি: সাথে কেউ এসেছে?
স্নেহা: আমার সাথে আবার কে আসবে?
আমি: ওওও।
স্নেহা: কি অর্ডার দিব বলুন।
আমি: আপনার যা খুশি।
------ ------
স্নেহা: কেমন আছেন?
আমি: ভাল। আপনি?
-এখন খুব ভাল।
-আগে বুঝি ভাল ছিলেন না?
-তা নয়। এমনেই ভাল লাগছে।
-ও। আপনার কোন কারণ ছাড়াই ভাল লাগে!!!
-আপনি আমাকে তুমি করে বলতে পারেন না।
-আপনি ওতো আমাকে আপনি বলেন।
-আপনি বললেই তো আমি বলতেছি।
-আচ্ছা ঠিক আছে তুমি। হয়েছে?
-হ্যাঁ হয়েছে।
-খুশি তো?
-তুমি খুশি না হলে আমি কিভাবে খুশি হব?
-আমিও খুশি এখন ঠিক আছে।
-হ্যাঁ।
এভাবে প্রায় বছরখানেক কেটে গেল আমরা দুজন দুজনের ভাল মন্দ সুখ দুঃখ সবই শেয়ার করতাম(তবে আমি শুধু আনন্দ গুলো শেয়ার করতাম) বন্ধু ভেবে।। দুজনের মধ্যে একটা ভাল আন্ডারস্ট্যেন্ডিং তৈরি হয়ছে।
-------- ----------
আর আজ স্নেহা আমাকে প্রপোজ করে বসল।
তবে সত্যি বলতে আমি ওকে বন্ধুর চেয়ে বেশি কিছু এক মূহর্তের জন্যও ভেবে দেখিনি।
-রাতে স্নেহার টুইটার থেকে আমাকে মেনশন করে একটা টুইট আসল, "তোমাকে আমি জীবনের প্রতিটা অংশের সাথে জড়িয়ে ফেলেছি। চাইলেও ছুঁড়ে ফেলতে পারছিনা। তোমাকে ভুলতে হলে জীবনের মায়া ভুলতে হবে। আর জীবন যতক্ষণ আছে ততক্ষণ তা অসম্ভব।"
সাথে সাথে স্নেহার ফোনে কল করলাম। সুইচ অফ। কিছু মাথায় ঢুকছেনা কি করব। আমার টুইটারের অনেক ফলোয়ার রিপ্লে করছে ওর বাসায় গিয়ে ওকে বুঝাতে। তবে আমি অন্য আরেক জনের সাথে প্রতারনা করতে পারিনা। বেলকনিতে এসে দাড়িঁয়ে আছি। আমার মাইক্রোসসফট মোবাইলের এসিস্টেন কর্টানা বলে ওঠল "স্পেশাল ওয়ান কলিং ইউ।" দৌঁড়ে গিয়ে রিসিভ করলাম, সাথে সাথে
-তুমি ওর বাসায় যাও ওকে বুঝাও। আর শুনো ওর পছন্দের শার্টটা পড়ে যাবে। সাথে কিছু চকলেট নিয়ে যাবে। আমি রাখছি তুমি তাড়াতাড়ি যাও। সময় নষ্ট করো না। টুট টুট টুট।
কল কেটে দিল।
সাথে সাথে রেডি হয়ে ওর বাসায় দৌঁড় দিলাম।
ঢিং ঢং। ঢিং ঢং।
-কে?
-আন্টি দরজা খুলুন।
-বাবা। তুমি কে?
-আন্টি স্নেহা কোথায়? আমি ওর ব্যাচ মেট।
-ঘরে।
-আন্টি আমি একটু ভেতরে যেতে পারি।
-হ্যাঁ। আস বাবা।
-ও কোথায়?
আন্টি ওর ঘরের কাছে গিয়ে। স্নেহা মা দরজা খুল। স্নেহা স্নেহা দরজা খুল। আমি গিয়ে ডাক দিলাম। কিছুক্ষণ ডাকাডাকির পর দরজা খুলে ওর আম্মুর সামনে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাদঁতে লাগল। ওর আম্মু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ওর ঘরের ভেতরে চুরি ব্লেড দেখে বুঝলাম আরেকটু দেরি করলে দৃশ্যপট ভিন্ন হত।
ওর আম্মুকে ওর রুম থেকে বাইরে বের করে দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে ইচ্ছে মত কান্না করল। ওকে শান্ত করালাম চকলেট দিলাম। আস্তে আস্তে পরিস্তিতি স্বাভাবিক হল। আন্টিকে শুরু থেকে শেষ সব খুলে বললাম। স্নেহা পাশে বসে আছে। এই সময় ওকে কষ্ট দেয়া ঠিক হবেনা। তাই কোন মত বুঝিয়ে বাড়ি ফিরলাম। কল দিলাম স্পেশাল ওয়ান কে,
-তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
-তোমাকে সাহায্য করাই তো আমার কাজ।
-আরেকটু দেরী করলে কি হতো ভাবতেই গা চমচম করে।
-ওটা স্নেহা তাই এত সময় পাওয়ার পরও কিছু করেনি। আমি হলে কি হত নিশ্চই বুঝতে পারছ।
-কি আর হত। আমি জেলে থাকতাম আর কি।
-মোটেও না। আমি আমার ভালবাসাকে কখনো দোষারোপ করিনি ভবিষ্যতেও করব না।
-তাই তো তুমি আমার স্পেশাল ওয়ান। এখন কি করব বল?
-কি আর করবে চাকরি তো করতেছ। ঐ মেয়েটাকে বিয়ে করে পেল। দেখতেও সুন্দর মানাবে ভাল।
-ঠিক বলছ। আমিও তা ভাবছিলাম। সাহস দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
-বিয়েতে দাওয়াত দিও প্লিজ।
-ঠিক আছে দিব।
রাতটা টেনশন ফ্রি কাটল।।
ও স্পেশাল ওয়ান সম্পর্কে তো বলা হয় নি।এই হল সে যার জন্য আমি এন্টি গার্ল ছিলাম। ওর কথায় আমি স্নেহার সাথে বন্ধুত্ত্ব করি। আমি স্নেহা সাথে আমার আনন্দ গুলো শেয়ার করতাম দুঃখ গুলো এর সাথে। স্নেহার সাথে সম্পর্ক আমি শুধু বন্ধুত্ত্বে সীমাবদ্ধ রেখেছি। তা এতদূর গড়াবে ভাবতে পারিনি।
পরদিন সকালে স্নেহার টুইট, "সে আসবে ভাবিনি। কিভাবে কারো মন জয় করতে হয় তা খুব ভাল করেই জানে।তাই মরতে যেয়েও পারলাম না।"
আমি রিপ্লে করলাম,"আমার চেয়ে ভালো কাউকে এনে দিলে কি হবে? "
স্নেহার রিপ্লে, "তোমার মত বুঝতে হবে তোমার মত জানতে হব, আর তোমার মত সাধারণ হতে হবে।তাইলে হবে"
আমার রিপ্লে" যদি তাসিন কে এনে দি চলবে???"
আর কোন রিপ্লে নেয়। প্রায় ১ঘন্টা পর স্নেহার ফোন।
কান্না করছে নিশ্চিত
স্নেহা: তোমাকে পেয়ে তাসিন কে ভুলে গিয়ছিলাম। কেন আবার মনে করিয়ে দিলে?
আমি: এখনো ভালবাস তাসিনকে?
স্নেহা: ( কিছুই বলছে না)
আমি: এখনো ভালবাস?
স্নেহা: কিছুটা। তবে ওকে আমি ভুলে গিয়েছিলাম তোমাকে কাছে পেয়ে।
আমি:ওটা ভুলে যাওয়া নয়। লুকিয়ে রাখা। এভাবে আমরা দুজন কোনদিন সুখি হতে পারতাম না। তাসিন এর খোঁজ পেয়েছি। তোমাকে এখনো ভালবাসে আগের মতই। সে তো পরিবারের জন্য তোমার চোখের আড়াঁলে ছিল। এখন আবার ফিরে এসেছে। আগামীকাল ডেট জোনে আমরা দেখা করব। আসবে তো?
স্নেহা: হ্যাঁ আসব।
ভাবছেন তাসিন এলো কোথা থেকে। তাসিন স্নেহার ফার্স্ট লাভ। প্রথম ভালবাসা। বলেছিলাম, আমি স্নেহার সব সুখ দুঃখের কথা ভালভাবে শুনি। তাই তাসিন সম্পর্কেও খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারলাম। আমার চেয়ে বয়সে বছরখানিক বড়। স্নেহা আর তাসিন ছিল একে অপরের জন্য। কিন্তু একদিন তাসিনের পরিবার ঢাকায় সিফট হয়ে যায়। তখন স্নেহা ক্লাস টেনে। তাই এতটুকু সাহস হয়নি যে নাম্বার খোঁজ করে ফোন করবে। দুবছরের ভালবাসা তাসিনও ভুলেনি। ফেসবুকের চেয়ে টুইটারে মানুষের মতামত দ্রুত ছড়াই। তাই স্নেহা আর আমার টুইট গুলো ফলোয়ারদের রিটুইটের কারণে তাসিনের কাছে পৌছেছিল। তাসিন গতকাল রাতে ফোন করে সব বলেছে। তাই আজ ওদের দুজনকে মিলিয়ে দিব।
-----------------------------
আমি:কি খবর স্নেহা। আসতে অসুবিধে হয়নি তো?
স্নেহা: না। তুমি ভাল আছ?
আমি: ভালোর চেয়ে বেশি কিছু।
স্নেহা: আমাকে কাঁদিয়ে ভাল আছ তাই তো?
আমি: না কান্না থামানোর ঔষধ আছে তাই।
স্নেহা: কি?
আমি:( পাহাড়ের কোণে তাসিনকে দেখিয়ে দিলাম) ওই যে তোমার ঔষধ।
স্নেহা: তাসিন!!!
আমি স্নেহার হাত ধরে তাসিনের সামনে আনলাম।
কিছুই বলার আগে স্নেহা তাসিনকে জড়িয়ে ধরল।
কিছুক্ষণ পর স্পেশাল ওয়ান আমার পাশে দাঁড়াল।
স্নেহাকে বলল, বল স্নেহা কাকে বিয়ে করবে? তাসিন না মারুফ?
স্নেহা: আমাকে জড়িয়ে বলল, সত্যি একমাত্র তুমিই আমার সত্যিকারের বন্ধু। যে বন্ধুত্ত্বের সম্মান রাখতে পারে। সম্পর্ককে না পাল্টে। তবে তোমার পাশের মেয়েটিকে চিনলাম না।
আমি: তোমার সাথে বন্ধুত্ত্ব থেকে শুরু করে তাসিনকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেয়া পর্যন্ত পুরো স্কিপ্টের পরিচালিকা ও আমার প্রথম ও একমাত্র ভালবাসা ইফা।
মেয়ে হোক বা ছেলে প্রথম ভালবাসা সহজে ভুলতে পারে না। তাই প্রথম ভালবাসা কোন কারণে হারিয়ে গেলে নতুন ভালবাসায় না জড়িয়ে তা খুঁজে নেয়ার চেষ্টা করা ভাল। হোকনা একটু কষ্ট তারপরেও ভাল।
-কারণ "ভালবাস থাকে, যে ভালবেসে কাছে টেনে নেয় মনের মানুষকে
Reactions

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ