অবহেলিত
সত্য ঘটনা অবলম্বনে
লেখকঃ Nusrat Haq
পর্বঃ ০১
বিয়ের ১৩ বছর পরে ও যখন সন্তান হচ্ছিলো না। তখন আমার স্বামী ২য় বিবাহ করেন। এবং সে মাসেই টেস্ট করে জানতে পারলাম আমি গর্ভধারণ করেছি।।
ওই মূহুর্তে আমার মনে হয়েছে আল্লাহ দিলে যখন আর ১ টা মাস আগে দিতে।
খুব ভেঙে পড়েছিলাম আমি। বুঝতে পারছিলাম না কি করবো৷
আমার মা কে বলেছি। তিনি বলেছেন পাশে আছি যা মনে হয় করো তুমি।।
ও বিয়ে করার পর আমাকে বলেছে তোমার ইচ্ছে হলে এখানে ও থাকতে পারো।
আবার তোমার বাবার বাড়ি ও থাকতো পারো।
আমার দরজা সবসময় তোমার জন্য খোলা।
বিয়ে করার পর আমি বাবার বাড়ি যায় কিন্তুু ওখানে ঘুম আসতো না। কোনো কিছু শান্তি লাগতো না।আশেপাশে চাচীদের, আত্মীয় স্বজন এবং প্রতিবেশীদের কথা শুনে খারাপ লাগতো।
আমাকে সরাসরি কিছু বলতো না তবে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলতো।
বাপের বাড়িতে আমার কদর কমে যায় একদম।
ওখানে ২ দিন থাকার পর আবার চলে আসি।
এখানে আসলে ক*লিজা ফেটে যেতো। আমার স্বামীকে অন্য কেউ জড়িয়ে ধরছে নাস্তা দিচেছ। আমার সংসার টা সামলাচ্ছে।
আমার সাথে শশুর বাড়ির সবাই কথা বলা কমিয়ে দিলো। সবাই নতুন বউকে টাকে নিয়ে মাতামাতি করতো।
আর আমি রুমে দরজা বন্ধ করে বসে থাকতাম।।
তখন মনে হতো বাপের বাড়ি চলে যায়।
এখানে কয়েকদিন থাকার পর বাপের বাড়ি গেলে সেখানে ও ভালো লাগতো না।
আবার একা একা চলে আসতাম। কান্না ও আসতো না আমার।নামাজ কালামে ও মন বসতো না।
আমার শাশুড়ী বলতো তুই চলে যা।
সবাই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলতো চলে যাও।
গর্ভধারণ এর বিষয় টা প্রায় ১৫ দিনের এর মতো কাউকে বলিনি।
১৫ দিন পর আমার স্বামীকে জানাই।।
তিনি শুনার পর খুশি হলেন এবং বললেন আমার মোটামুটি সামর্থ্য আছে। আমি দুজনকেই চালাতে পারবো অসুবিধা নাই।।
তুমি আমার বড় বউ আর ও ছোট বউ। তোমরা দুজনেই থাকো আমার জীবনে।।
তোমাদের অনেক ভালোবাসি। তোমাদের ছাড়া আমি বাচবো না।
আমি মনে মনে হেসে বলি হা*রামজাদা তুই আমাকে ছাড়া ঠিকই বাঁ*চবি শুধু ওরে ছাড়া বাঁ*চবি সেটা বল।
তারপর উনি ভাগ করলেন আমার সাথে সপ্তাহে ২ দিন থাকবেন এবং নতুন বউয়ের সাথে বাকি দিন রাএি যাপন করবেন।
আমার ভাগে বৃহস্পতিবার আর শুক্রবার গুলো পড়ে ছিলো।
বৃহস্পতিবার আর শুক্রবার আসলে আমি আমার বাপের বাড়ি চলে যেতাম।।
আমি স্বামীকে খুব ভালোবাসি।।তবে এখনকার এই চেহারা মানুষ টাকে না।
আমার কান্না আসতো না। তবে আমার বিয়ের ছবিগুলো নিলে কান্না আসতো মাঝে মাঝে। আমি বউ সাজ অবস্থায় পাশের শেরওয়ানি পরিহিত স্বামীটাকে অনেক ভালোবাসি।
আমি তাকে ফিরে পেতে চাই।।
সুন্দর সময় ছিলো আমাদের জীবনটাতে কিন্তুু একটা সন্তান এর জন্য হাহাকার ছিলো।।
সময়ের সাথে মানুষের চেহারা, চামড়া,একই থাকলে ও চামড়ার ভিতরের নফস টা বদলে গিয়েছে।
ঘৃণা হয়।।
আমি খেতাম না কেমন শুকিয়ে কালো হয়ে গিয়েছিলাম। মার কাছে গেলে মা ফলমূল খাওয়াতো। আমি খেতাম না।।
আমার শাশুড়ী তো নতুন বউ ছাড়া কিছু বুঝতো না। আর ননদ ননস গুলো তো আরো বাড়ে।। তাদের নতুন ভাইয়ের বউ অনেক ভালো বউ।
আজীবন আমি রেঁধে বেড়ে খাওয়াইছি সেটার কোন মূল্যা নাই।
যে পাতে খেয়েছে সে পাতে মলমূত্র ত্যাগ করেছে এরকম একটা অবস্থা।।
আমার স্বামী নতুন বউকে নিয়ে ঘুরতে যেতো।। প্রায় সময়ই আর আমি সেটা দেখতাম। কান্না একটু ও আসতো না।
আমাকে জিজ্ঞেস ও করতো না,, তোমার কি খেতে মন চাই বা তুমি কি খাবে।
ওহ ভালো কথা আমার রান্না কেউ খেতো না। কারণ আমার রান্না মজা নাই আমি রান্না করতে জানি না।
এজন্য নতুন বউ আমার শাশুড়ী দের সাহায্য নিয়ে রান্না করতো।
আর আমি রুমে বসে বসে টাইমে টাইমে খেতাম।
আর মানুষ কে বলে বেড়াতো আমাকে অনেক সুখে রাখছে।
নতুন বউ বয়সে আমার চেয়ে অনেক ছোট। একদিন ও কে বলি বোন বৃষ্টি আসতেছে ছাদ থেকে কাপড়গুলো নিয়ে আয়।
আমার স্বামী তেলে বেগুনে জ্বলে উঠছে কারণ আমি তার নতুন বউকে কেন তুই করে বলেছি।।।
আল্লাহর গজব পড়ুক এমন স্বামীর উপর।।
আমি বুঝতেছিলাম না তখন কি করবো।
দেখতে দেখতে আমার ডেলিভারি টাইম আসে।। যেদিন আমার পেইন উঠে ওইদিন আমার স্বামী তার নতুন বউয়ের বাড়িতে দাওয়াত খেতে যায়। তখন মোবাইল এত সহজলভ্য ছিলো না।।
তাই খবর দিতে পারি নাই।
আমার এক চাচাত জা আমাকে মেডিকেল নিয়ে যায়। আমার সাথে আর কেউ যায় নি।
কারণ আমার শাশুড়ী বুড়ো মানুষ উনি নাকি কিছু চিনে না।
আর আমার ননদ ননস এর জামাইরা বিজি এজন্য।
আমার ডেলিভারির খরচ আমার মা বহন করে।।
আমি নরমালে ২ টি জমজ পুএ সন্তান এর জন্ম দি।।
সরকারি মেডিকেল এ ৩ দিন থাকার পর আমি আমার বাপের বাড়ি যায়।
মেডিকেল এ তিন দিন ছিলাম আমাকে শশুর বাড়ি একটা কু*ওা ও দেখতে আসে নাই।
এক বেলা ভাত নিয়ে।
আমি বাপের বাড়ি যাওয়ার ৭ দিন পর আমার জামাই খবর পাঠায় বাচ্চা দের নিয়ে ওদের ওখানে যেতে।
আমার জামাইর থেকে শরম লাগতেছে আমার বাড়িতে আসতে।।
আমি যায় না। আমি বলি এখন যাবো না আরো কয়েকদিন পর যাবো।
৯ দিন পার হওয়ার পরে ও আমি নাম রাখি নাই বাচ্চাদের। মনে করছি শশুর বাড়ির লোকেরা আসলে তখন রাখবো।
কিন্তুু কেউ আসে নাই। পরে আমার এক চাচা উনি মৌলভী।
উনি আমার বাচ্চা দের নাম রেখে দেয়।। কোনো আয়োজন অনুষ্ঠান ছাড়া।
আমার বাপের বাড়িতে সবাই ছি ছি করে। বলে বাচ্চা হয়েছে এত বছর পর অথচ কেউ দেখতে আসে না।
আমার বাপের বাড়িতে আমার মূল্যায়ন একদম কমে যায়।
আমাকে তেমন কেউ সাহায্য করতো না। বাচ্চা দের কাঁথা,জামা কাপড় সব আমি ধুয়তাম।।
মা ও কেমন যেন অবহেলা করতো।।
আমার বাচ্চাদের কেউ এক জোড়া কাপড় পযন্ত কিনে দেয় নি।।
পরে আমার ১ ভরি গয়না বিক্রি করে বাচ্চা দের প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো কিনি।
মার বাড়ি ২০ দিন থাকার পর আমি চলে যায় শশুর বাড়ি।
কারণ এখানে আমি বাচ্চা দের খরচ বহন করতে পারছিলাম না এজন্য।।
শশুর বাড়িতে যাওয়ার পর আমার স্বামী বাচ্চাদের কোলে নেয়।
আমার জামাইর নতুন বউকে ডেকে বলে দেখো তোমার ছেলেদের।
তার কোলে দিয়ে বলে এগুলো এখন থেকে তোমার সন্তান অবহেলা করো না।
আমি ওর কোল থেকে আমার বাচ্চা কেড়ে নিতে গিয়ে আমার ছোট বাচ্চা টা নিচে পড়ে যায়।।
আর সাথে সাথে কান্না করে উঠে।
আমার স্বামী ওই অবস্থায় আমাকে গা*লাগালি করে চু*ল ধরে পিঠের মধ্যে অনেক গুলো ঘু**ষি মারে।
আমি কান্না করতে করতে বলি আমার বা*চ্চা এগুলো আর কারো বা*চ্চা না।।
আমাকে কেউ একটু ধরতে ও আসে নাই যখন মা*রছিলো।।।
মানুষ কতটা অ*মানুষ এ রু*প নেয় তা আমার স্বামীকে না দেখলে বুঝতাম না।।
তারপর ওরা চলে যায় আমার রুম থেকে।। আমি আমার বাচ্চা দের নিয়ে অনেক কান্না করে বলি তোদের মা আছে আমি ম*রি নাই।
তোদের আমি ভালোবাসি।।
কয়েকদিন পর আমার স্বামী যখন আমার রুমে আসে তখন বলি আমার ছেলেদের আকিকা করাবে না।
উনি বলে এখন টাকা নাই পরে করবো। ওদের মুসলমানির সময়।।
তারপর বাচ্চাদের আদর করতে করতে আমার দিকে তাকিয়ে বলে কেমন বুড়া হয়ে গেছো। তোমার দিকে তাকাতে ও ঘৃণা লাগে। পেট টা কত বড় হয়ে গেছে।।
কেমন যেন আমার নানী নানী টাইপ হয়ে গেছো।।
আমি হেঁসে হেঁসে বলি আমার কথা বাদ দাও নাতি।। তোমার নতুন বউ নিয়ে সুখে থাকো।।
সে হেঁসে বলে মাশাআল্লাহ আমার নতুন বউ আকাশের চাঁদ।।
আমি বলি আল্লাহ তোমাদের আরো সুখ দিক।।
আমি বলি আমার বাচ্চাদের টিকা দিতে হবে কালকে।।
বলে আচ্ছা ঠিক আছে নিয়ে যাবো।।
পরেরদিন ও আর ওর নতুন বউ রেডি হয়ে আসে।। আমার বাচ্চাদের নিতে।
আমি বলি তোদের হাতে তো আমি বাচ্চা ছাড়বো না। আমার বাচ্চা আমি নিয়ে যাবো ।
আমি বাচ্চার মা।
তখন আমার স্বামী আমাকে বলে তোমার সাথে বাহিরে যেতে আমার শরম লাগে।।
আমি কিছু বলি না। বলি টাকা দাও আমার বাচ্চাকে আমি নিয়ে যাবো।
পরে আমাকে ৬০ টাকা দেয়।
আমি সরকারি মেডিকেল এ নিয়ে টিকা দিয়ে আসি।
২ বাচ্চা একসাথে কোলে নিয়ে যায় আমার সাথে কেউ যায় না।
মেডিকেল এর এক আয়া টিকা দেওয়ার সময় সাহায্য করে আমাকে।
মেডিকেল এ আমার অনেক সময় লাগে। কারণ টিকা দেওয়ার ফলে বাচ্চারা অনেক কাঁদছিলো।
সবাই বলতেছিলো আমি একা কেন।
কেউ সাথে আসে নাই কেন।।
অনেক কষ্টে বাচ্চা দের নিয়ে বাসায় আসি হেঁটে হেঁটে।
কারণ আসার আর গাড়ি ভাড়া ছিলো না।
২০ মিনিট হাটতে হয়েছিলো বাচ্চা ২ টা নিয়ে।।
যাওয়ার সময় ১০ টাকা দিয়ে রিকশা করে গিয়েছি।
আর একটা টিকার দাম২৫ টাকা।।
২ জনের ৫০ টাকা নিয়েছে।।
বাসায় এসে বাচ্চাদের রেখে একটু বাথরুমে যায়। বাথরুম থেকে শুনতে পায় আমার স্বামী আমার শাশুড়ী কে বলছে দু*ধ রোজ নিতে।
কারণ আমার স্বামীর নতুন বউ গ*র্ভধারণ করেছে।।
আমি বাথরুম থেকে বেড়িয়ে অনেক হাসি বাচ্চা দের কোলে নিয়ে।
রুমে এসে আমার স্বামী আমাকে বকা দিচ্ছে কারণ বাচ্চারা কাঁদছে কেন।
আমি নাকি মা হওয়ার যোগ্যতা রাখি না। আল্লাহ ভুল করে আমি ভুল মানুষকে বাচ্চা দান করছে।
কারণ আমার বা*চ্চারা কাঁদছে টিকার ব্যা*থায়।
সে একটু মায়া মহব্বত ও দেখালো না।
আমার নিয়তি এতটা খা*রাপ....
0 মন্তব্যসমূহ