অবহেলিত
সত্য ঘটনা অবলম্বনে
লেখকঃ Nusrat Haq
পর্বঃ ০২ (শেষ পর্ব)
শীতকাল এলো.......
আমার স্বামী আমাকে আর বাচ্চাদের তেমন একটা গুরুত্ব কিংবা টাকা পয়সা দেয় না।
কিছু কিনে ও দেয় না।
শুধু পেটে ভাতে আমার রুম টাতে থাকি।।
আমার বাচ্চাদের শীতের কাপড়চোপড় কিনতে হবে এটার জন্য টাকা চেয়েছি।
সে আমাকে ২০০ টাকা দেয়।।
আমি সে ২০০ টাকা নিয়ে কয়েকদিন এর জন্য বাপের বাড়ি বেড়াতে আসি।।
বাপের বাড়িতে আসার পর আমার সব গহনা বিক্রি করে ফেলি।
প্রায় ৩০ হাজার টাকার গহনা বিক্রি করি।।
আমার এক কাজিন আছে, ওর সাথে আমার খুব ভালো সম্পর্ক এবং ও আমার বান্ধবী হয়।
ওর কাছে ২০ হাজার টাকা জমা রাখলাম৷
আর ১০ হাজার টাকা দিয়ে ইচ্ছে মত শপিং আর খাবার কিনি।
আমার মনে যা খেতে চেয়েছে সব কিনি।
আমার বাচ্চাদের জন্য অনেক অনেক রকম কাপড় চোপড় কিনি,খেলনা কিনি,।।
মাকে এ ১ম ২ হাত ভর্তি করে বাজার করে দিয়েছি।।
বাপের বাড়ি ১ মাস ছিলাম এই ১ মাস স্বাধীন ভাবে চলছি।।
তার মধ্যে কাজিনটার কাছে গিয়ে ১২ দিন ছিলাম।
ওর একটা মেয়ে আছে। আর ওর স্বামী প্রবাসী।।
আমার যত সুখ দুঃখের কথা সব ওর কাছে ঢেলে দিতাম।
ওরে অনেক আপন মনে হতো।।
১ মাস পর শশুর বাড়ি আসি।
আমার ছেলেরা বসতে পারে অল্প হাঁটার চেষ্টা করে।।
ওরা শুধু রুম থেকে বের হয়ে যেতো।
ওদের কেউ তেমন আদর করতো না।। আবার মাঝে মাঝে দরদ উতলিয়ে ফেলতো।।
আমার ছেলেরা হামাগুড়ি দিয়ে ওদিকে গেলে শয়তানরা খাওয়ার সময় ওই তারকারি দিয়ে ভাত খাওয়াই দিতো।
বাচ্চাদের সাধারণত আমরা যেগুলো খায় ঝাল,ঝোল ওয়ালা তরকারি আমরা দি না।
ভাত দিলে নরমাল সাদা এর সাথে যে কোন সবজি পাতিল থেকে ধুয়ে তারপর দি।
কিন্তুু ওরা এটা করতো না। আমার বাচ্চা গুলো অনেক কান্না করতো ঝালের জন্য।।
আমি ওদের মানা করলে ও শুনতো না।।
দেখতে দেখতে আমার জামাই এর বউয়ের ডেলিভারির টাইম এলো।
ও সিজারে একটি কন্যা সন্তান এর সন্তান দেয়।।
তখন আমার ছোট বাচ্চা টা নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হয়।
অনেক ডাক্তার দেখানোর পরে ও যখন ভালো হচ্ছিলো না।
তখন আমি আমার বাচ্চাদের নিয়ে আমার বাপের বাড়ি চলে আসি।
এখানে আসার পর আমার কাজিন টা আমার বাচ্চাটাকে মেডিকেল ভর্তি করিয়ে দেয়।
আমার স্বামীকে বলার পরে ও দেখতে আসে নাই। কারণ ওর বাচ্চা টা নাকি অসুস্থ।
হার্টে কি একটা সমস্যা হয়েছে।
আমার বাচ্চা টা মেডিকেল এ ৩ দিন আই, সি, ইউতে থাকার পর মারা যায়৷
আমি আই, সিউর একদিনের বিল ৪ হাজার টাকা করে দিয়েছিলাম।।
আমার গহনা বিক্রি করা টাকা গুলো শেষ হয়ে যাওয়ার পর আমার ওই কাজিনটা আমার বাচ্চার মেডিকেল এর সমস্ত খরচ বহন করে।।
আমার ছেলে মারা যাওয়ার পর ও খবর পাঠানো হলে
আমাদের বলে লাশ নিয়ে চলে যেতে ওদের ওখানে।
ওরা ওখানে দাফন, কাফন করবে।
আমি আর যাই নাই।। আমি কি করম ভেঙে পড়েছি আপনাদের হয়তো বলে বোঝাতে পারবো না।
এ কষ্ট একজন সন্তান হারা মা বুঝে।
আমি আমার বাচ্চাকে শেষ বারের মত জড়িয়ে ধরে বলি বাবা তোর মা ছাড়া আর কেউ নাই।।
মা তোরে ভালো রাখতে পারি নাই। আল্লাহর কাছে ভালো থাকিস।
তোর জন্মর সময়ে ও ওরা ছিলো না মৃত্যুর সময়ে ও নাই।।
আমার ছেলেকে আমার বাপের বাড়িতে দাফন করি ওরা কেউ আসে নাই।।
আমার ছেলের শোকে আমি একদম পাগল দিশেহারা হয়ে গেছি।।
আমার ছেলের মৃত্যুর ৩ মাস পর ওদের বাড়িতে যায়।
কারণ ওর বউয়ের মেয়েটা মারা গেছে।
সেটা দেখার জন্য যে ওর কেমন ফিল হয়েছে।।
ওদের কান্না টা আমার ভালো লেগেছে।।
পৈশাচিক হাসি হেসেছে।।
আমি আমার ছেলেকে নিয়ে আমার রুমে বসে মানুষের পাঠানো খাবার গুলো খেতে থাকি।।
কারণ যে বাড়িতে মানুষ মারা যায়, সে বাড়িতে আত্মীয় স্বজনরা খাবার পাঠায়।।
ওখানে যাওয়াটা আমার কাল হয়েছে কারণ আমার পুরুষত্ব হীন কা*পুরুষ স্বামী টা আমার ছেলেটাকে কোলে নিয়ে ওর বউয়ের কোলে দিয়ে বলে এটা এখন থেকে তোমার সন্তান।।
আমি সাথে সাথে কাঠ কাটার*** দা নিয়ে বলি আমার ছেলেকে যে ধরবি তোদের কেটে ফেলবো।।
এটা আমার ছেলে তোদের না।।
তোদের মত অমানুষ এর সাথে আর থাকবো না।
আমার ছেলেটাকে কোলে নিয়ে আমি আমার কাজিন এর বাসায় চলে আসি।
সেখানে কয়েকদিন থাকার পর আমার বাপের বাড়ি যায় আবার,।।
সেখানে যাওয়ার পর আমার মা টা ও কেমন যেনো করতো।।
মাকে কান্না করে বলতাম আপনি এমন করলে কোথায় যাবো আমি।।
তারপরে ও মা কেমন করতো বলতো এত মানুষ মরে তুই মরতে পারোস না।
সাত বাঘে খেলে ও তোরে ফুরাবে না।।
আমি অতিষ্ঠ হয়ে আবার স্বামীর বাড়ি যায়।।
যেখানে যাওয়ার পর বুঝলাম স্বামী কিছু টা পরিবর্তন হয়েছে।।
আমার ছেলেটাকে আদর করতো তখন একটু একটু।।
আমার ছেলেকে চিপস এটা সেটা কিনে দিতো।
আমার সাথে তেমন খারাপ ব্যবহার করতো না।
টুকিটাকি খরচ দিতো।।
আমার ছেলেকে পোলিও টিকা খাওয়ানোর জন্য মেডিকেল নিয়ে যায় আমি।
মেডিকেল যাওয়ার পর আমার খুব মল ত্যাগের প্রয়োজন হয়।
কিন্তুু কাউকে পাচ্ছিলাম না।
আর ছেলেকে নিয়ে বাথরুম এ যাওয়া ও পসিবল না।
তখন আমি এক মহিলাকে দেখি।
জিজ্ঞেস করি আপনি এখানের কে??
। বলে আমি আয়া।।
আমি বলি খালা আমার বাচ্চা টা একটু রাখেন আমি একটু বাথরুম এ যাবো।।
উনাকে দিয়ে বাথরুম এ যায়।।।
বাথরুম থেকে এসে উনাকে ধন্যবাদ জানাই।
আমার ছেলেটাকে রাখার জন্য।
পরে উনি সহ আমি সহ হাঁটতে হাঁটতে মেডিকেল এর বাহিরে আসি।।
কথা বলে টুকিটাকি,,,, আবার বাসায় চলে আসি।।
বাসায় আসার পর গোসল করে ছেলেকে নিয়ে ঘুমায়৷।
দুপুরের দিকে আমার স্বামী আসেন আমার রুমে।
এসে আমাকে ডেকে বলে আরেকটু যাও আমি ঘুমাবো আমার ছেলের সাথে ।।
আমি কিছু বলি না।
আমি উঠে যায়। বলি ঘুমান।।
উনি বলেন তুমি উঠতেছো কেন??
আমার উনার সাথে একই বিছানায় থাকার ইচ্ছে নাই। এজন্য অযুহাত দিয়ে বলি আমার একটু কাজ আছে।
তখন উনি আমাকে কাছে পাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেন।
আমি উনাকে বানিয়ে বানিয়ে বলি আমার পিরিয়ড চলছে।।
আমি রান্না ঘরে এসে ছেলের জন্য খাবার বানাতে লাগলাম৷
তারপর ছাদে একা একা হাট হাঁটি করি অনেকখন।
রুমে এসে দেখি বাবা ছেলে কি সুন্দর ঘুমায়তেছে।
আমার ছোট সন্তান এর জন্য অনেক কান্না আসে।
আর বলি হারামজাদা আল্লাহ তোর বিচার করবেন।
আমার জামাইর বউ এসে আমার রুমে উনাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বলেন রুম থেকে বের হতে ইচ্ছে করতেছেনা।
উনার কাঁচা ঘুম ভাঙাতে অনেক রেগে যায়।।
ওরা ঝগড়া শুরু করে।
ওদের আওয়াজের শব্দ শুনে আমার ছেলেটা উঠে কান্না শুরু করে।।
আমি ছেলেকে কোলে নি।
উনি খাট থেকে নেমে ওকে মারতে শুরু করে।।
তার পর সবাই চলে আসে আমার রুমে।
আমি বলি যা করেন রুমের বাহিরে গিয়ে করেন। আমার ছেলে কান্না করতেছে।।
কয়েকদিন পর আমার ছেলে পাতলা পায়খানা করাতে আমি ডাক্তার কাছে নিয়ে যায়।।
তো লোকাল সিএনজির জন্য দাঁড়ায়।। একটা সি এন জি আসে।।
সিএনজির ভিতরে দেখি ওই খালাটা। উনাকে দেখে উনি বলেন কেমন আছো।।
আসো ভিতরে আসো।
সি এনজি তে উঠার পর উনি জিজ্ঞেস করে কোথায় যাবে।
আমি বলি মেডিকেল এ।।
তারপর আমার ছেলেকে কতখন আদর করে।।
উনি বললেন উনার অনেক খিদা লাগছে।
উনি উনার ব্যাগ থেকে একটা সিঙ্গারা বের করে খেতে লাগলেন।।
আমাকে জিজ্ঞেস করলেন খাবো কিনা।
আমি বলি হ্যা দেন খাবো।।
উনি আমাকে একটা বের করে দিলেন।।
সিঙ্গারাটা খাওয়ার পর আর কিছু মনে নাই।।
নিজেকে আবিষ্কার করি একটা গাছের নিচে। কয়েকজন মানুষ আমার মুখে পানি দিয়ে হুশ ফিরায়।
আমাকে জিজ্ঞেস করে তোমার বাড়ি কোথায় এখানে কেন আসছো।।
আমি চারপাশে খেয়াল করে দেখি এক গাছ এর নিচে আর জায়গা টা গ্রামের মধ্যে।
আমি তখন আমার বাচ্চা কোথায়।।
আমি হাউমাউ করে কান্না শুরু করি। আর সব বলি। উনারা বলেন এটা তো গ্রাম। তোমাকে এখানে দেখি পড়ে আছো।
সবাই মিলে তোমার হুশ আনলাম। পরে উনারা আমাকে ঘরে পৌঁছায় দিলো।।
আমার স্বামী এবং সবাই মিলে পুলিশ নিয়ে হাসপাতাল টাতে গেলাম।
যাওয়ার ওর উনারা সব আয়া সামনে আনলো। বললও এই আয়া গুলোর বাহিরে কোনো আয়া নাই।
আপনারা কোন প্রতারকের পাল্লায় পড়ছেন আল্লাহ জানেন।
পুলিশ এর কাছে জিডি করি। পেপারে দি। পোস্টার ছাপায়।
কিন্তুু আমার বাচ্চা টা আর পাচ্ছিলাম না।
আমি পাগল পারা অবস্থা। আমার কাজিন টা সহ অনেক খুঁজলো। আমার কাজিন টা কয়দিন এসে আমার কাছে থেকে গেছে।।
দেখতে দেখতে ১ মাস কেটে যায় আমার বাচ্চা টা আমি আর খুঁজে পায় নি।
এটা নিয়ে আমার সাথে সবাই অনেক খারাপ ব্যবহার শুরু করে।
আমি কেন বাচ্চার খেয়াল রাখতে পারলাম না হ্যান ত্যান।
আমি সন্তান হারানোর কষ্টে পাগল হয়ে গেছি।।
আমার আর বেঁচে থাকতেই ইচ্ছে হচ্ছিলো না।।
..........
এখানেই উনার কাহিনি শেষ।।।
এই পুরো ঘটনা টা উনার কাজিন আমাকে বলেছেন ।।
এবং একদিন রাতে তিনি গলায় ফাঁসি দিয়ে মারা যান।।
এটা ২০০৭ এর দিকের ঘটনা।।
উনি মারা যাওয়ার পর সকাল বেলা উনার রুমে উনার স্বামী গিয়ে দেখেন গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে আছেন।
উনাকে নামানো হয় এবং সবাইকে খবর দেওয়া হয়।।
সবাই আসে এবং জানাযা ছাড়া উনাকে এক জঙ্গলের সাইডে কবর দেওয়া হয়।।
আর উনার স্বামী আর ২য় বউয়ের এখন পযন্ত আর কোনো ছেলে মেয়ে হয়নি।।
সবাইকে শান্তি দিয়ে এক আকাশ সমান কষ্ট নিয়ে আপুটা দুনিয়া ত্যাগ করে।।
আল্লাহ উনার আজাব মাফ করুক এই দোয়া করবেন।।
আপুটার নাম ছিলো তাসলিমা খাতুন।।
0 মন্তব্যসমূহ