পাশে থাকা
সত্য ঘটনা
লেখকঃ Nusrat Haq
পর্বঃ ০১
বিয়ের ৮ মাস পর আমার জরায়ু কেটে ফেলতে হয়।। আমার ২৩ বছর বয়সে বিয়ে হয় এক প্রবাসীর সাথে। তিনি চীনে থাকেন।। পারিবারিক ভাবেই আমাদের বিয়ে হয়।
বিয়ের আগে থেকেই আমার তলপেটে খুব ব্যাথা করতো। আর আমার পিরিয়ড নিয়মিত ছিলো না। ডাক্তার দেখিয়েছিলাম কিন্তুু কখনও কোনো পরীক্ষা করা হয়নি।
এমনি ওষুধ খেতাম ভালো হয়ে যেতো। আবার শুরু হতো। এমন করেই দিন গুলো পার করেছি৷
বিয়ের পর থেকে পেটে ব্যাথা আমার অনেক তীব্র আকার ধারণ করে। যখনি শারীরিক সম্পর্ক হতো সবসময় রক্ত যেতো।
আমি খুব অসুস্থ হয়ে যায় বিয়ের ৭ দিন পরেই।
শশুর বাড়ির সবাই বলেছিলো অসুস্থ বউ এনেছে তারা।
কিন্তুু আমার স্বামী ভীষণ ভালো মানুষ ছিলো। সে সবসময় আমার টেককেয়ার করতো এবং আমাকে ওষুধ এনে দিতো ফার্মেসী থেকে।।
স্বামী ২ মাস থেকে চলে যায় চীনে। যাওয়ার সময় আমাকে বাপের বাড়িতে দিয়ে যায়৷ এবং সাথে কিছু টাকা দেয় চিকিৎসা করানোর জন্য।
বাপের বাড়িতে এসে একজন গাইনি ডাক্তার দেখায়।
তিনি আমাকে বিভিন্ন টেস্ট দেয়।
এবং টেস্ট গুলো করার পর ধরা পড়ে আমার জরায়ু তে টিউমার।।
এরপর আমি আর উনাকে না দেখিয়ে বড় নামকরা প্রফেসর গাইনি ডাক্তার কাছে যায়।
তিনি রিপোর্ট এবং আরো পরীক্ষা- নীরিক্ষা করার পর আমাকে ঢাকায় চলে যেতে বলে।
কারণ উনি ধারণা করছে জরায়ুর টিউমার গুলো থেকে ক্যান্সার টাইপ কিছু হয়েছে।
আমার পরিবার এর আলহামদুলিল্লাহ আর্থিক অবস্থা ভালো ছিলো।
তাই দেরি না করে ঢাকার বঙ্গবন্ধু মেডিকেল এ চলে যায়।। সেখানে একজন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ দেখায় উনি বলেন যত তাড়াতাড়ি পসিবল হয় জরায়ু কেটে ফেলা উচিত। আপনারা অনেক দেরি করে ফেলেছেন। আরো আগে কেন আসেন নাই। তাহলে মেয়েটার জরায়ু কাটা লাগতো না। অনেক বড় ভুল করে ফেলেছেন। না হলে এ টিউমার থেকে ক্যান্সার ছড়িয়ে যাবে। টিউমার গুলো থেকে কিছু টা ক্যান্সার এর ভাব আসছে।
ওই সময়টাতে মানসিক অবস্থা টা বুঝাতে পারবো না।
আমার স্বামী আমাকে অনেক ভালো বাসতো।
কিন্তুু এ সমস্যা টা আমি শশুর বাড়ির কাউকে বলি নি এমনকি আমার স্বামীকে ও না। সংসার ভাঙার ভয়ে।
আমার পরিবার বলে দিতে চেয়েছিলো কিন্তুু আমি বলতে দি নাই। ভয়ে যদি উনি আমাকে ছেড়ে দেন এ ভয় টা আমি পেয়েছি।
অপারেশন এর আগের দিন আমি উনি যখন আমাকে ফোন করেন আমি বলি আচ্ছা আপনি কি কখনও আমায় ভুলে যাবেন।
উনি বলেন কেন এ কথা বলছো। তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি আমি।।
কিন্তুু মনে মনে বলি সত্যি টা জানলে হয়তো আপনি ভুলে যাবেন আমাকে।
সেদিন রাতে নামাজ রত অবস্থায় রবের দরবারে অনেক কান্না কাটি করি।
আল্লাহ শুধু বলেছি আল্লা রে মানুষ টা যেন আমার জীবনে থাকে।
পরের দিন অপারেশন হয়।
আমার জরায়ু কেটে ফেলে দেয়।। আমার অপারেশন এর ৯ ঘন্টা পর সেন্স আসে৷
ডাক্তার রা আমাকে প্রতি ৪ ঘন্টা পর পর একটা একটা ইনজেকশন মারতো।।
মেডিকেল এ ১২ দিন ছিলাম।
এরপর আমরা চিটাগং এ আসি।
মাসে ১ বার ঢাকায় যেতাম চেকাপ এর জন্য।।
আমার স্বামীকে কিছু বলি নি। অপারেশন এর সময় অসুস্থ ছিলাম উনি প্রতিদিন ফোন দিতো। তখন বলতাম জ্বর উঠেছে শুয়ে আছি তাই। উনি পাগল হয়ে যেতেন।। টাকা পাঠিয়েছিলেন ডাক্তার দেখানোর জন্য ১০ হাজার।।
আমি বলেছিলাম জ্বর উঠেছে সামান্য এত টাকা পাঠাতে হবে না।
উনি বলেছেন আর গুলো দিয়ে কিছু কিনি ও তুমি।
আস্তে আস্তে আমি সুস্থ হলাম। ৫ মাস বাপের বাড়িতে ছিলাম।
৫ মাস পর শশুর বাড়িতে যায়। আমার শাশুড়ী অনেক রাগারাগি করে এত দিন কেন ছিলাম।
কিন্তুু স্বামী নিষেধ করায় উনি তেমন কিছু বলেনি।
শশুর বাড়িতে সবসময় মনমরা হয়ে থাকতাম। খেতে ইচ্ছে করতো। কিছু করতে ইচ্ছে করতো না। তারপরেও কাজ করতে হতো। লুকিয়ে লুকিয়ে ওষুধ খেতাম। কারণ উনারা দেখলে জিজ্ঞেস করবে এত ওষুধ কেন খাচ্ছি। আমার মা এসে ওষুধ শেষ হলে লুকিয়ে ওষুধ দিয়ে যেতো।
আমার মা বার বার বলেছিলো শশুর বাড়ির কাউকে না বললেও যেন জামাইকে বলে দি।
কিন্তুু আমি বলিনি উনাকে হারানোর ভয়ে।।
আমার স্বামী ২ বছর পর ছুটিতে আবার আসে ৪ মাসের জন্য।
আমার স্বামী আমাকে বলে তুমি এত শুকিয়ে গেছো কেন।
আমি হেঁসে বলি আপনার চিন্তায় চিন্তায়। আপনি এসেছেন এখন মোটা হয়ে যাবো।
উনার সাথে আমার শারীরিক সম্পর্ক করতে তেমন ইচ্ছে হতো না।
কিন্তুু কিছু বলতাম না তারপরেও।
আমি খুব ভয় পেতাম। সুযোগ পেলে উনাকে ছড়িয়ে ধরতাম সবসময় মনে হতো সত্যি টা জানলে হয়তো আমাকে ছেড়ে দিবেন।
আমার শশুর বাড়ির মানুষ জন বলে বাচ্চা নিয়ে ফেলো।।
আমার স্বামী ও চাইছিলেন একটা বাচ্চা হয়ে যাক।
আমি চুপচাপ শুনতাম কিছু বলতাম না। কারণ আমি তো জানি আমার জরায়ু নাই বাচ্চা কোথা থেকে আসবে।
এভাবে ৪ মাস শেষ হলে উনার ছুটি শেষ হয়ে যায় উনি চলে যান।
আমার শাশুড়ী পিরিয়ড হয়ছে কিনা জিজ্ঞেস করলে মিথ্যা বলি। বলি পিরিয়ড হয়ে গিয়েছে।
আমার তো পিরিয়ড ও হয়না কারণ জরায়ু নাই।
অনেক বার সুইসাইড করতে চেয়েছি। কিন্তুু পারিনি।
বাপের বাড়ি আসি উনি চলে যাওয়ার পর।
আমার তখন মনে হচ্ছিলো আমি উনাকে ঠকাচ্ছি সত্যি টা বলে দেওয়া উচিত।
আমি তখন উনাকে এসএমএস এ সব বলে দি এবং বলি আমার জরায়ু নেই আমার তো বাচ্চা হবে না।
উনি সিন করে কোনো রিপ্লাই দেয় না।
এভাবে ১ মাস কেটে যায় রিপ্লাই দেয় না।
২ মাস কেটে যায় রিপ্লাই দেয় না।
যোগাযোগ হয়না ফোন করে না।
আমি তো কান্না করতে করতে শেষ। উনাকে জীবন থেকে হারিয়ে ফেললাম।
0 মন্তব্যসমূহ