করোনা কালিন অবস্থায় বাবাকে নিয়ে আমি মেডিকেল এ ছিলাম। আমার ভাই বা ভাবি কেউ ছিলো না। কেউ ফোন করে খবর ও নেয়নি।
আত্মীয় স্বজন ভাইদের যদি যেতে বলতো ওরা বলতো মেডিকেল এ ভর্তি করার সময় তো আমাদের বলে করে নাই।
আমার বাবার যদি টাকা না থাকতো তাহলে হয়তো আমার ভাইয়েরা বাবাকে রাস্তায় ফেলে দিতো।
বাবাকে খাওয়ানো তো দূরে থাক উল্টো বাবার এত টাকা পয়সা থাকার পরে ও বাবাকে এ সম্পদ টাকা পয়সার জন্য মারধোর করেছে।
বাবা চিটাগং মেডিকেল এ থাকা অবস্থায় মেডিকেল এর এক আনসার আমাকে খুব সাহায্য করে।।
চিটাগং মেডিকেল শুধু সরকারি হাসপাতাল কিন্তুু দেওয়ালে পযন্ত টাকা খায়।
উনি আমাদের অনেক সাহায্য করে। নার্স আয়া দের বলে দেয় আমাদের থেকে যেন টাকা না নেয়। আমার বাবাকে পরিচয় দেয় এটা উনার বাবা।।
আমার ওষুধপএ যা লাগছে উনি এনে দিতেন।
উনাকে টাকা দিতাম অবশ্য ।।
কিন্তুু ভাগ্য খারাপ হওয়ায় আমার বাবা মারা যায় কভিড এর কারণে।
আমার বাবার মৃত্যুর পর ওই ভাইটা একটা সংগঠন কে ফোন করেন।।
উনারা এসে আমার বাবার দাফন কাফন সম্পন্ন করেন।
আমি উনাদের ২০ হাজার টাকা দি। তবে উনারা কোনো টাকার দাবি করে নাই। শুধু এম্বুলেন্স ভাড়া টা দাবি করে।
কিন্তুু আমি উনাদের সংগঠন কে টাকা দি। যেন মানুষ এর পাশে দাঁড়ায়। এত আন্তরিকতা নিয়ে জীবনের পরোয়ানা না করে পাশে দাঁড়িয়েছে যা নিজের ভাইয়েরা ও করে নাই।
উনাদের কাছে আমৃত্যু কৃতজ্ঞ আমি।
আমার ভাইয়েরা জানাযায় এসেছিলো। কিন্তুু বাবার কাছে যেতে পারি নি আমরা কেউ।।
আমাদের পারিবারিক কবরস্থান এ বাবাকে দাফন করা হয়।
বাবার মৃত্যুর পর ৩ দিন কবরের উপর বিলিচিং পাউডার মারতে বলছিলো এলাকা বাসী।
আমার ভাইয়েরা কেউ মারে নাই।
ওই আনসার ভাইটা এসে মারছে। আমি ঘরে ছিলাম। দীর্ঘ ২০ দিন বের হয়নি।।
বলতে ভুলে গেছি বাবার মৃত্যু আগে বাবার ২ টা দোকান আমার নামে লিখে দেয়। আর বাড়িটা সহ আমাকে হেবা করে দেয়। ।
বাবার মৃত্যুর পর বাবার বাকি জায়গা জমিন গুলো ওরা ভোগ দখল করে আছে।। ওগুলো বাবার নামে।
বাবাকে আমাকে দোকান আর বাড়ি লিখে দিছে এজন্য তারা বাকিগুলোতে আমাকে ভোগ দখল করতে দেয় না।
আমি করি না কারণ আমার এত ভেজাল করার ইচ্ছে ও নাই। ওরা ভোগ দখল করুক বিক্রি যখন করতেছে না তাই কিছু বলি না।।
আমার ভাইয়েরা এলাকায় রটায় আমি নাকি সম্পদ এর লোভে আমার বাবাকে মেরে ফেলি।
কিন্তুু কেউ বিশ্বাস করে না কারণ আমার বাবা করোনায় মারা গেছে সেটা দেশ দুনিয়ার সবাই দেখছে।
আমার সাথে শুধু ভেজাল আর ভেজাল করতেছে।
আমি সোজা থানায় গিয়ে জীবনের নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছি এর একটা জিডি করে আসি ভাইদের নামে।
সেটা আবার আমার এলাকার মেম্বার কে দিয়ে আসি।
যেন আমার ভাইদের কাছে খবর টা যায়।।
একা বেঁচে থাকা অনেক কঠিন। জীবনে এমন পরিস্থিতিতে আমি একদম একা হয়ে পড়েছিলাম শুধু কাঁদতাম আমি।।
বুঝতে পারছিলাম না কি করবো।
আর ওদিকে আনসার ভাইটা আমাকে বললেন তুমি একটা কাজ করো তুমি দোকান করো তোমার সময় ও ভালো যাবে এবং তুমি নিজে ও শক্ত হবে।।
আমি ভাইয়াকে বলি এত টাকা কুম নাই আমার।।
ভাইয়া বললও আল্লাহ ভরসা হয়ে যাবে।
উনি আমাকে ২ লাখ টাকা ধার দেন। এবং আমার গহনা ধার দেনা করে আরো ৫ লাখ জোগাড় করে কাপড়ের দোকান চালু করলাম।।
আমার ভাই ভাবি আবার মানুষ এর কাছে বলতে লাগলো আমি তো এমনি ব্যাটা হয়ে গেছি এবার ব্যাটার মতো সব করেছি।
আমার জরায়ু নাই তাই ব্যাটা ব্যাটা করতো তারা।
আনসার ভাইটা আমাকে খুব সাহায্য করতো। উনার বাড়ি ছিলো ফেনীতে। উনি উনার পরিবার আর ২ মেয়ে নিয়ে সরকারি কোয়াটার এ থাকতো।
উনার ওয়াইফ মারা গেছে মেয়ে ২য় টা হওয়ার সময়।।
উনাকে আমার শারীরিক সমস্যার কথা বলি হাসপাতালে থাকতেই।।।
আমি দোকান করতাম। আর বাসায় এসে ঘুমাতাম সময় আমার এভাবেই যেতো।।
এবং ২০২১ এর ডিসেম্বর এ উনার ২ লাখ টাকা ফেরত দি।
আমি অনেক শ্রম দি এই দোকানের পিছনে।।
আলহামদুলিল্লাহ ব্যবসা আমার ভালো যেতো।।
উনার বাবা এসে এসে মাঝে মাঝে দোকানে আমাকে কাজে সাহায্য করতো। উনার বাবা ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি আনসার ছিলেন।।
২০২১ সালে উনার বাবা মা আমাকে বিয়ে প্রস্তাব দেয়।
আমাকে বলে আমাদের তো ২ টা নাতনি আছেই। আমাদের আর নাতি বা নাতিনীর দরকার নাই। তুমি আসো আমাদের দেখা শোনা করিও।
আমি প্রস্তাব এ রাজি হয়না।
কারণ বিয়ে শাদীতে অনেক ভয় পায়। যদি একটা সময় এসব নিয়ে আমার সাথে ঝামেলা করে।
জীবন সময় এভাবে কাটে আমার।।
উনি ও আমাকে বিয়ে বা কিছুর জন্য প্রেশার করে না।
আমার এখন তেমন কেউ নাই। আত্মীয় স্বজন যারা আছে ওদের দিতে পারলে ভালো না হলে ওরা আমার নামে বদনামি করে।
এজন্য ওদের সাথে ও তেমন যোগাযোগ রাখি না।।
২০২২ এ আমাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।।
কারণ আমি নাকি ইয়াবার ব্যবসা করি। আমাকে দোকান থেকে ধরে নিয়ে যায়।
কোথায় নাকি ইয়াবার অভিযান হয়ছে ওই মামলায় আমাকে ও ঢুকায় দিছে আমি নিজে ও জানি না।
পরে বুঝতে পারি এটা আমার ভাইদের কাজ।।
আমি জেলে থাকা অবস্থা আমার জামিন এর জন্য উনি আর উনার পুরো পরিবার অনেক খাটনি করে। আমাকে প্রতিদিন লালদীঘির পাড়ে দেখতে যায়তো উনি।।
আমি জেলে থাকা অবস্থায় আমার দোকানের তালা ভেঙে সব মাল জিনিস নিয়ে যায় আমার ভাইয়েরা।
আমার দোকানে ১৫ লাখ টাকার মত কাপড় ছিলো।।
কারণ আমি তো কাপড়ের ব্যবসা করতাম।
জেল থেকে ২৭ দিন পর জামিন পায়। আর বাংলাদেশ এর আইন তো জানেন অনেক ধীর গতিতে আগায়।
আমি জেল থেকে বের হয়ে আমার ভাইদের নামে দোকান লুটপাটের মামলা করে দি।
ওয়ারেন্ট বের করি। কিন্তুু পুলিশ ওদের ধরতে পারে না।
ওরা পালিয়ে পালিয়ে থাকে।
আমি আবার শূন্য হয়ে যায়।।
কয়েকমাস উনি আবার আমাকে ব্যবসা ধরায় দেন৷ এ টাকা উনার বাবা আর উনি মিলে আমাকে ৪ লাখ টাকা দেয়।
আর আমি আবার কিছু ব্যাংক লোন আর এনজি ও থেকে লোন নি।।
মাসে মাসে হাজিরা দিতে হয় কোর্টে গিয়ে অযথা আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছে।।
জীবন চলছে আমার।। উনি পাশে আছে কোনো স্বার্থ ছাড়া। আমি উনাকে বলেছি পাশে থাকেন।।
উনি ও আমায় বলেছেন তোমার পাশে সবসময় আছি।।
জানিনা এ সম্পর্কের ফিউচার কি। তবে বিয়ে শাদীর ইচ্ছে আমার নাই।।
আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যেন ব্যবসা টা ভালো মত করতে পারি।
তবে এ বয়সে এসে একটা জিনিস বুঝলাম সবাই স্বার্থ পর হয় না।
কেউ কেউ স্বার্থ ছাড়াই পাশে দাঁড়ান।।
এমন মানুষ গুলো পৃথিবীতে অনেক দিন বেঁচে থাকুক। অনন্ত আমার মত মেয়েদের পাশে থাকার জন্য।।।
((( উনার দোকান থেকে কাপড় কেনার সময় উনার সাথে আমার পরিচয় হয় এবং উনার সম্পর্কে জানতে পারি )))
0 মন্তব্যসমূহ