পাশে থাকা - পর্ব ০২ - সত্য ঘটনা

পাশে থাকা - সত্য ঘটনা - লেখক নুসরাত হক

পাশে থাকা

সত্য ঘটনা 

লেখকঃ Nusrat Haq

পর্বঃ ০২


একদিন বিকেল ঘরের দরজা কে যেন নক করছে। 
আমার মা গিয়ে দরজা খুলে দিলো। 
দেখলাম হাত ভর্তি বাজার সদাই নিয়ে আমার শাশুড়ী মা এসেছেন। 
তিনি ঘরে ঢুকেই আমার মা আর আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। 
তারপর আমাদের নিয়ে বসলেন।। আমার মাথায় হাত দিয়ে বললেন দেখো মা কোনো কিছুতে তোমার দোষ নেই। 
সব আল্লাহ তোমার নসিবে রেখেছেন।। 
জানো মা দিন শেষে আমরা সবাই স্বার্থপর মা নিজের বেলায়। তোমার একটা সুন্দর জীবন আছে। 
ঠিক তেমনি আমার ছেলের ও সুন্দর জীবন আছে। 
মা জীবনে সংসার করতে হলে বাচ্চা কাচ্চা টা আসল। 
বেয়াইন আপনি বিচার করেন আপনার ছেলের বউয়ের এমন হলে আপনি কি করতেন। 
বিচার টা আপনার উপর ছেড়ে দিলাম। 
 এরপর আমার শাশুড়ী উঠে দাঁড়ালো এবং আমরা অনেক জোর করা শর্তে ও তিনি কিছু খেলেন না। 
আমার মা বললেন আপা তাহলে বাজার সদাই গুলো নিয়ে যান। 
কিন্তুু তিনি নিলেন না চলে গেলেন। 
আমার চোখের পানি বাঁধ মানে নাই।। 
পরেরদিন ৩ টা ভ্যান গাড়িতে আমার সব ফার্ণিচার আর আমার জামা কাপড় এবং আমার ২ ভরি গহনা ফেরত দিলেন। 
এবং বিকেলে ডিভোর্স এর নোটিশ আসে।। 
তিন মাস পর আমার ডিভোর্স হয়ে যায়। 
আমার এ জীবনে শুধু একটাই আফসোস তিনি কি শেষ বারের মতো আমার সাথে একটা বার আমার সাথে কথা বলতে পারলেন না।। 
পরে অবশ্য জানতে পারি এসএমএসগুলো দেখার পরপরই আমার বাবাকে কল দেয়।এবং আমার বাবা সব বলে দেয়। 
তিনি তার পরিবার কে জানাই। 
সংসার জীবন আমার এখানেই সমাপ্ত হয়।। 
আমি বেঁচে থেকে ও মরার মত হয়ে গিয়েছিলাম। শুধু আফসোস করেছি যদি না বলতাম তাহলে হয়তো উনার সাথে আরো কিছু বছর কাটাতে পারতাম। 
আবার এটা ও ভেবেছি আমার নসিবে যা আছে তা হয়েছে আমি কাউকে ঠকাই নি।। 
ডিভোর্স এর পর কোথাও যেতাম না। ঘরের মধ্যে থাকতাম। মার পুরো সংসার টা আমার ঘাড়ে তুলে নি। আসলে তুলে নি বলা ও যায় না থাকতে থাকতে সব দায়িত্ব আমার পালন করা হয় তাই এক প্রকার তুলে ও দেয় দায়িত্ব। 
জীবন সময় থেমে থাকে না। উনার ছবি গুলো প্রায় প্রতিদিন দেখতাম। 
আমার ২ টা  বড় ভাই। আর আমি বাবার একটা আদরের মেয়ে। 
ভাইদের বিয়ে হয় ঘরে ভাবিরা আসে। 
বাবার একটা মেয়ে হওয়া শর্তে ও তেমন আদর যত্নে থাকতাম না। ঘরের সব কাজ করতাম। 
বছর ঘুরে ভাইদের বাচ্চা হয়। তাদের বড় করার দায়িত্ব আমি নি। 
আসলে আমার বাচ্চা হবে না যখন তাই ওদের নিজের সন্তান এর মত মানুষ করার চেষ্টা।। 
জীবন এভাবেই কাটছে আমার।। আমার মা মারা যায় এর মধ্যে। 
বাবা অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ে।। বাবার দোকান ছিলো। 
সেই ব্যবসা নিয়ে ভাইদের মধ্যে মারামারি কাটাকাটি অবস্থা। 
বাবার সম্পদ নিয়ে যা তা অবস্থা। ভাইয়েরা তখন আলাদা হয়ে যায়। 
আমি বাবাকে নিয়ে আমাদের ঘরেই থাকি৷। দোকানের সব মালামাল ভাইয়েরা খেয়ে লাটে উঠায়। 
আমি বাবাকে নিয়ে মেডিকেল ডাক্তার এসব নিয়ে দৌড়াদৌড়ির মধ্যে থাকি।। 
এর মধ্যে তারা আসে বাবার ব্যাংকের টাকার ভাগ নিতে৷ 
বাবা দিতে চাই না৷ বাবাকে আর আমাকে মেরে ধরে কিছু রাখে না।। 
তখন আমি পুলিশ এর কাছে যায় বাবাকে নিয়ে। 
এবং ভাইদের নামে বাবা আর আমি বাদী হয়ে মামলা করি। 
ভাইয়েরা পালিয়ে পালিয়ে থাকে।। পুলিশ আসবে শুনলে তারা পালিয়ে যায়। 
আমাদের উপর অত্যাচার কিছু টা বন্ধ হয়।। 
ভাবিরা মানুষকে বলে বেড়াতো আমি নাকি সম্পদ এর লোভে বাবার মাথা খাচ্ছি। আমার মনে হারামি যে এজন্য আমি ব্যাটা হয়ে গেছি। 
আরো কত কথা। তাদের সুখে থাকতে দিচ্ছি না। 
এলাকায় আমার নামে অনেক বদনাম করে। 
এর মধ্যে একদিন আমার শশুর বাড়ির একজন এর সাথে দেখা হয়। 
তার কাছ থেকে শুনি আমার স্বামী আবার বিয়ে করেছে। তার ৩ টা সন্তান। 
শুনে কষ্ট লাগলো। আবার খুশি ও লাগলো।।
বুক ভরা কষ্ট নিয়ে সেখান থেকে চলে আসি।। 
আর ভাবি ডিভোর্স হয়েছিলো ২০০৬ সালে। আজ কতগুলো বছর কেটে গেলো।। 
এদিকে ভাইদের অত্যাচার আরো বেড়ে যেতে লাগলো বলার মতো।। 
এর মধ্যে আমার বাবার করোনা হয়।।

পাশে থাকা গল্পের সকল পার্ট ⇩

Reactions

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ