আমার পাপের জীবনি
সত্য ঘটনা অবলম্বনে
লেখকঃ Nusrat Haq
পর্বঃ ০৩
আপা আসার পর আমাকে কান্না করে করে বলতে লাগলেন তোর দুলাভাই অনেক বেশি বদলে গেছে। আগে এমন ছিলো না। কি হয়েছে বুঝতেছিনা৷
আমি বললাম -- কি জানি আমি ও কিছু বুঝতেছি।
অতঃপর আপার সাথে সংসারিক কাজ কর্মে লেগে পড়লাম।
আপা প্রায় সময়ই বলতো যদি একটা বাচ্চা হতো তাহলে হয়তো সব ঠিক হয়ে যেতো।
রাতে দুলাভাই ঘরে আসলে আপা দুলাভাইকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।
তুমি কেন এমন করছো আগে তো এমন ছিলে না।
কি হয়েছে তোমার আমার কোথায় দোষ একটু বলোত।
দুলাভাই-- ছাড়তো এত ডং ভালো লাগছে না।
দুলাভাই রুমে চলে যায়। আপা ও দুলাভাইর পেছন পেছন যায়।
আমি তাদের রুমের বাহিরে কাজের অযুহাতে তাদের কথা আড়ি পেতে শুনছি।।
আপা-- আগে আমাকে বুকে জড়িয়ে রাখতে। রাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে না ঘুমালে নাকি তোমার ঘুম আসতো না। সেই তুমি এখন আমাকে একটু ও জড়িয়ে কেন ধরো না।
দুলাভাই-- এতদিনে একটা বাচ্চা ও তো দিতে পারো নি।
ভালো লাগে না তোমার।
অতঃপর দুলাভাই আমাকে ডেকে ভাত দিতো বললও।
আমি টেবিলে ভাত বেড়ে দিলাম দুলাভাই কে৷
আপা দাঁড়িয়ে ছিলো তাই আর কিছু বলিনি৷ সে রাতে দুলাভাই আর আসলো না আমার রুমে।
আপা-দুলাভাইর ঝড় ঝামেলাই কেটে গেলো আরো ২ মাস।
২ মাস পর জানতে পারি আমি প্রেগন্যান্ট।।
সাথে সাথে শিমুল মানে আমার দুলাভাইকে জানাই।
তিনি আমাকে বাসা থেকে আপার কাছে মিথ্যা অযুহাত দিয়ে বের করে ডাক্তার কাছে নিয়ে গেলেন।
পরীক্ষা করার দুলাভাই সিউর হয় আমি আসলেই প্রেগন্যান্ট।।
এবার দুলাভাইকে আমি প্রেশার দিলাম বিয়ে করার জন্য।
তিনি ভয় পাচ্ছিলেন আমাকে বিয়ে করতে। কিন্তুু তারপরে ও সেদিন কাজি অফিসে গিয়ে তার সাথে আমার ৭০ হাজার টাকা দেনমোহরে বিয়ে হয়।
আমাকে একটা সোনার নাকফুল একজোড়া কানের দুল আর একটা চেইন কিনে দেয়। বিয়েতে তার কতগুলো ছোট ভাই সাক্ষী হিসেবে ছিলেন।। ওহ আমি শাড়ী পড়ে ছিলাম। কারণ বিয়েটাতো আমার ১ম ছিলো।
বাসায় আসার পর ১ম এ দুলাভাই ঘরে ঢুকে। আপা রান্না ঘরে কাজ করছিলো।
দুলাভাইকে দেখেই আপা বললও এত দেরি হলো। হাত মুখ ধুয়ে নাও তোমরা আমি ভাত দিচ্ছি।
দুলাভাই এর পিছনে আমি ঢুকলাম৷
আপা আমাকে দেখে বললও কিরে শাড়ী পড়েছিস কাহিনী কি।
দুলাভাই তখন আপাকে বললও আমরা বিয়ে করেছি।
আপা -- কি বলছো।
দুলাভাই -- হু আমি ওকে বিয়ে করেছি। ও গর্ভবতী। আমার সন্তানের মা।
আপা-- মানে কি এই তুই বল কি হয়েছে।
আমি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি।
দুলাভাই-- তোমরা দুবোন মিলেমিশে থাকো এ সংসারে তুমি তো আর বাচ্চা দিতে পারছো না।
আপা-- ছি ছি তুমি এত জঘন্য।। শেষে কিনা আমার বোনকে।
আরে তোমাকে কি বলছি তুমি তো পরের ছেলে আর আমার নিজের আপন বোন আমার সংসারে আগুন জ্বালালো।
আমি এত দিন যাকে বিশ্বাস করেছি আমার নিজের আপন বোন যাকে নিজে না পড়ে তাকে পড়িয়েছি খাইয়েছি দিনের পর দিন রেখেছি সেই বোন আমার বুকে ছুরি মারতে একটু ও হাত কাঁপলো না।
হে রে তোদের কতদিনের সম্পর্ক..
দুলাভাই -- তোমার জেনে লাভ নাই পথ ছাড়ো৷
দুলাভাই নিজের রুমে চলে গেলেন আর আমি ও নিজের রুমে চলে আসলাম।
আপা আমার পিছন পিছন এসে বললও কয় দিনের সম্পর্ক তোদের..
আমি-- শিমুল থেকে জিজ্ঞেস করো৷
বাহ বাহ নাম ধরে ও তো ডাকছোস দেখছি।
আমি-- জামাইকে নাম ধরেই ডাকে।
আপা-- আচ্ছা তোর লজ্জা করে নি আমার সংসার ভাঙতে।
আমি-- শিমুল কে জিজ্ঞেস করো।
আপা আমার গালে চড় মারে।
আমি চিৎকার করে কান্না করে উঠে বলি খবরদার আমাকে মারবি তোকে কোপাবো।
আমি গর্ভবতী।।
শিমুল রুম থেকে বেরিয়ে এসে বললও তুমি ওরে মারছো কেন। দুজনে মিলেমিশে থাকতে পারলে থাকো না হলে রাস্তা মাপো।
আমি ঝামেলা চাইনা। অচল মাল।।
আপা সাথে সাথে কান্না করে দিয়ে বললও তোদের এসব কুকীর্তি আজ বহুদিন ধরে চলছে বুঝতে পেরেছি।।
আল্লাহ তোদের বিচার করুক। তোদের মতো খারাপ প্রতারক দের সাথে আমি আর না।
আর শিমুল তুই জানোয়ার আমাকে ডিভোর্স দিবি।
এ বলে আপা তার রুমে গেলো। সে তার গহনা আর কয়েকটা জামা কাপড় নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
কোথায় গেলো সেটা আর জানি না।
আপা চলে যাওয়ার পর খুব ভালোই সময় যাচ্ছিলো আমাদের। শিমুল আমাকে খুব কেয়ার করতো৷
----+++--------++++++-------+++-------
আমি কখনও কল্পনা ও করতে পারিনি নিজের বোন আমার সাথে এ ভাবে প্রতারণা করবে৷
সত্যি কল্পনার বাহিরে ছিলো৷
এত দিন ঘরে আমি কাল সাপ পুষেছি দুধ কলা দিয়ে।
উঠলাম দুর-- সম্পর্কের এক ভাবির ঘরে।ভাবিকে সব বললাম। ভাবির আবার ৩ মেয়ে তার স্বামী মারা গেছে।
ভাবী আমাকে বললও যতদিন ইচ্ছে থাকো।
কিন্তুু ভাবীর কাছে থাকলাম না বেশি দিন। ৭ দিন এর মতো থেকে একটা বাসা ভাড়া নি।
আমার মোটামুটি ১০ ভরির মতো গহনা ছিলো। ১ ভরি বিক্রি করে বাসা ভাড়া সহ যাবতীয় সব খরচ করি৷
মানুষিক ভাবে খুব ভেঙে পড়েছিলাম।
কিন্তুু ভাবির মেয়ে গুলো এত ভালো ছিলো বলার মতো না।
ভাবিটার পাশেই বাসা ভাড়া নি। তারা ও সময় টাতে আমাকে পুরোপুরি মানুষিক সাপোর্ট দেয়।
কি করবো কিছু বুঝতেছিলাম না। কারণ কিছু একটা তো আমাকে করে খেতে হবে।
রাতে আমার ঘুম আসতো না ঘুমের ওষুধ খেয়ে খেয়ে ঘুমাতাম।
বাসার তেমন কারো সাথে যোগাযোগ করিনি৷ মাঝে মাঝে মাকে কল দিতাম।
অবশেষে অনেক চিন্তা ভাবনা করে কিছু জমানো টাকা আর কিছু গহনা বিক্রি করে একটা দোকান ভাড়া নিয়ে কসমেটিকস এর দোকান দিলাম।
ভাবির মেয়েরা এ ব্যাপারে আমাকে অনেক সাহায্য করেছে।
কেটে যায় ৩ মাস আমি ধীরে ধীরে ওই জানোয়ার টাকে ভুলতে শুরু করি।
ব্যবসা আমার খুব ভালো চলছিলো। সারাদিন নিজেকে কাজের মাঝে ডুবিয়ে রাখতাম।
------------------------------
আপা চলে যাওয়ার পর সুখেই সংসার করছিলাম৷
শিমুলকে খুব চাপ দিচ্ছিলাম আপাকে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য৷
কিন্তুু সে সেটা করছিলো না৷
আমি তাকে অনেক আত্মহত্যার ভয় দেখালে তখন সে আমাদের বিয়ের ৫ মাস পর আপাকে ডিভোর্স দেয়।
যা কার্যকর হতে ৩ মাস সময় লাগে।
৯ মাস পর আমার একটা ছেলে হয় খুব সুন্দর। শিমুল খুব খুশি আমার ছেলে হওয়াতে।
0 মন্তব্যসমূহ