আমার পাপের জীবনি
সত্য ঘটনা অবলম্বনে
লেখকঃ Nusrat Haq
পর্বঃ ০৪
আমার দোকান টা খুব ভালো চলছে। ডিভোর্স পেপার যখন পেয়েছিলাম হাতে একটুও খারাপ লাগে নি। কারণ ও না দিলে ও পরের মাসে আমি দিয়ে দিতাম৷ আল্লাহ একটা জানোয়ারের হাত থেকে আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।
ও যদি আমার বোনের সাথে এসব কুকাজ না করে বাহিরের কারো সাথে করতো মনকে বুঝ দিতে পারতাম আসলে দোষ টা আমারই একটা উপযুক্ত মেয়েকে ঘরে রাখা। দয়া করে কেউ কখনও এমন করবেন না। আমি ওই জানোয়ার টাকে নিজের থেকে বেশি বিশ্বাস করতাম। কিন্তুু স্বরূপ এ প্রতিদান পেয়েছি আমি।।
জানোয়ার টাকে ছেড়ে আসার ১ টা বছর পার হলো। মাকে মাসে মাকে টাকা পাঠাই। মেজ বোনটার একটা মেয়ে হয়েছে। তার জন্য মাসে মাসে কিছু দি কিন্তুু তাদের সাথে আমি দেখা করি না।
আমার পাশের দোকানটা একটা সনি টিভির শো রুম ওখানে এসি টিভি সমগ্র ইলেকট্রনিকের জিনিস ওরা সেল করে।।
তাদের সাথে সম্পর্ক আমার ভালো। দোকান টা আমার সামনা সামনি ছিলো। তাদের দোকানটা পুরোটা গ্লাসের ছিলো। তারা ভিতর থেকে সব দেখতে পেতো।
কিন্তুু আমি বাহির থেকে তেমন কিছু দেখতে পেতাম না।
আর আমার ওদিকে তাকানোর ও কোন ইচ্ছে ছিলো না।
ইদানীং একটা পুরুষ বয়স ৪২ এর মতো হবে।। তাকে আগে তেমন দেখিনি।
কিন্তুু দেখি আমার সামনের দোকানটার ক্যাশে বসে থাকেন।
আর তিনি দরজা খোলা রাখেন।
তো বিষয় টা আমি তেমন আমলে নি না। প্রায় সময়ই তিনি আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন৷
তো একদিন সকালে দোকান খোলার সময় ওই দোকানের একটা ছেলেকে জিজ্ঞেস করি ইদানীং যেই লোকটা বসে থাকেন উনি কে হোন।
তখন তিনি বলেন শো রুম টা উনার টাকা দিয়ে চলে। কিন্তুু উনি দেশের বাহিরে থাকেন।
দেশে এসেছে ২ বছর পর।
উনি দেশে আসলে মাঝে মাঝে বসেন। কিন্তুু এবার একটু বেশি কেন বসছে বুঝতেছিনা।
আমি আর কথা বাড়ালাম না। কারণ আমার কাস্টমার এসেছে তাই।
এদিকে আমার দোকানে কিছু মাল কিনতে হবে আমার কাছে তেমন টাকা নেই।
আমার মেজ বোনের জামাই আমাকে ধার হিসেবে ২ লাখ টাকা দিলো।
এ টাকা দিয়ে আমি দোকানে আরো অনেক মাল তুললাম।
----------------------
বাচ্চা হওয়ার পর ভালো আছি। কিন্তুু আত্মীয় স্বজনদের কাছে মুখ দেখাতে পারি না। সেটা শশুর বাড়ি কিংবা বাপের বাড়ি।
সবাই বলে বোনের সংসার ভেঙে আমি সংসার করছি।
আমার টাকা পয়সার অভাব নেই কিন্তুু সুখের বড্ড অভাব।
আমার সব আছে কিন্তুু মানুষিক শান্তি না। আমার মা আমার সাথে কথা বলে না মেজো আপা বলে দিয়েছে তার সাথে যেন কখনও যোগাযোগ না করি কিংবা তার বাড়িতে না যায়।।
আমি ও যাওয়ার চেষ্টা করিনি কখনও।
শিমুল কে বাচ্চা উপহার দিয়েছি সেই বাবদে আমি তার থেকে বাড়িটা আমার নামে লিখিয়ে নিয়েছি।
ইদানিং খেয়াল করি আমার বাচ্চা টা একটু অন্যরকম। একটু শব্দ হলে কিংবা কোন আওয়াজ হলে বাচ্চা আমার সেদিকে তাকাই না৷
আর ৫, ১০ টা বাচ্চার মতো তার আচরণ না৷
সে তেমন কান্না ও করে না। মুখ দিয়ে কোন শব্দ ও করে না।
ডাক্তার দেখায়। ডাক্তার বলে মনে হয় বোবা হবে। তারপরে ও দেখেন অনেকে বয়সের সাথে সাথে পরিবর্তন হয়।
দিন যায় মাস যায় বাচ্চা কিন্তুু নরমাল হয়না। অনেক ডাক্তার আর চিকিৎসা দেওয়ার পরে ও ডাক্তাররা বলে দিয়েছে সে স্পেশাল চাইল্ড।।
কি আর করার আমি হতভাগ্য মা মেনে নিতে পারি না।
বিভিন্ন হুজুর কবিরাজ ঝাড়ফুঁক করাই কিন্তুু লাভ হয়না।
আসলে যে জন্মগত ভাবে এমন আল্লাহ না চাইলে সে কখনও স্বাভাবিক বাচ্চা হতে পারে না।
সবাই বলে এগুলো নাকি আমার বোনের অভিশাপ।
কিন্তুু আমি এগুলো বিশ্বাস করি না কারণ পাছে লোকে অনেক কিছুই বলে তাদের কথা বিশ্বাস করতে নাই।
আর আমি ও করি না। আল্লাহর হুকুম ছাড়া কোন কিছু হয়না।
বাচ্চা টা আমার এভাবেই বড় হতে লাগলো। আর আমি ও ২য় বাচ্চার জন্য চেষ্টা করতে লাগলাম।
কিন্তু হচ্ছিলো না।
এরমধ্যে আমার শিমুলের কাশির সাথে রক্ত যেতে লাগলো হঠাৎ করে।।
আমি মনে করেছি এমনি৷
সে শুধু ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ আনে। কিন্তুু কোন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে না।
দিন যায় মাস যায় সমস্যা টা বাড়তেই থাকে।
তারপর একদিন সে ডাক্তার কাছে যায়। ডাক্তার তাকে অনেক গুলো টেস্ট দেয়।
টেস্ট গুলোতে ধরা পড়ে খাদ্যনালীতে ক্যান্সার হয়েছে।
রিপোর্ট টা দেখার পর আমার পায়ের নিচে মাটি নাই৷
আমি আবার ওই মাসে গর্ভবতী হয়।
এ যেন মরার উপরে খাঁড়ার ঘা।
একদিকে তার চিকিৎসার জন্য দৌঁড়ানো অন্যদিকে আমার গর্ভকালীন সময়।
তার কাছে ক্যাশ টাকা যা ছিলো সব শেষ করে ফেলেছে।
অবশেষে একটা জমি বিক্রি করে।
আর আমার বাচ্চা যেন এবার সুস্থ হয় তাই আমি কোন কিছুতে কমতি রাখি না। ভালো ভালো খাই ভালো ভালো ডাক্তার দেখাই ভিটামিন নি।
ঝাড়ফুঁক করি। হাতে গলায় তাবিজ যাতে একটা সুস্থ বাচ্চা হয় আমার।
------------+++++--------------
আমার দোকানের সামনের লোকটা এক দিন আমার দোকানে আসে সাথে আরোও কয়েকজন লোক তারা বিয়ের বাজার করতে এসেছে। তাই কসমেটিকস কিনতে এসেছে।
সেদিন আমার খুব লাভ হয়।
এরপর থেকে লোকটা প্রায়ই আমার দোকান থেকে এটা সেটা কিনতো।
কথার ছলে একদিন লোকটার নাম জানতে পারি আসলাম।
আমি আর ব্যাপারটা গুরুত্ব দি না।
২ দিন পর পর লোকটা অনেক গুলে কাস্টমার নিয়ে আসতো আমার দোকান থেকে বিয়ের কসমেটিকস কেনার জন্য।।
তো লোকটার সাথে সম্পর্ক টা আমার সহজ হয় টুকিটাকি কথা হয়।
তার স্ত্রী বাচ্চা জন্ম দেওয়ার সময় মারা যায়।
তাও ৭ বছর আগে। এখনও বিয়ে করেন নি।
এরকম তার পারিবারিক কথা বলতে লাগলো আমি শুনতে লাগলাম।
কারণ বিষয় টা আমি তেমন আমলে নি না।
ওমা লোকটা একদিন আমার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। আমার বাড়ির ঠিকানা কিভাবে পাই সেটা আমি জানি না।
কিন্তুু আমার মায়ের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।
আর লোকটা আমাকে দেখার জন্যই দোকানে বসে থাকতো।
আমি বিয়ে করতে চাই না। তাকে সরাসরি না করে দিয়েছি।
আসলেই আমি আর কখনও বিয়ে করতে চাই না।
পুরুষ দের আর বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়না।
তিনি সিঙ্গাপুর চলে গেলেন। তিনি সিঙ্গাপুর প্রবাসী ছিলেন।
এর পর তার বিষয়টা একদম মাথা থেকেই চলে যায়।
একদিন রাত ৩ টার দিকে আমার ফোনে একটা কল আসে বিদেশি নাম্বার।
রিসিভ করি তখন তিনি পরিচয় দেন তিনি আসলাম।
তখন সিঙ্গাপুরে সকাল।
তো আমি তাকে ঝাড়ি দিয়ে বলি এত রাতে কেউ কল দেই আমাকে কল দিবেন না।
তিনি দিনের পর দিন আমাকে কল দেয় আমি রিসিভ করি না।
এভাবে কেটে যায় ১ বছর। তারপরেও তিনি আমাকে কল দিতেন।
আস্তে আস্তে তার সাথে ভালো ভাবে টুকিটাকি কথা বলা শুরু করি। এবং আমি ও এক পর্যায়ে তার সাথে বিয়ের জন্য রাজি হয়ে যায়।
আমাদের বিয়েটা মোবাইলে হয়।
তিনি ৩ মাস পর দেশে আসবেন। আমাকে পাসপোর্ট করতে বললেন।
আমি পাসপোর্ট কপি সহ কাবিন এবং প্রয়োজনীয় সব কিছু তাকে এক লোকের মাধ্যমে বিদেশে পাঠায়।
তিনি সাথে সাথে আমার ভিসা লাগিয়ে ফেললেন। এবং ৩ মাস পর দেশে আসলেন আমার ভিসা সহ নিয়ে।
-----------
আল্লাহর অশেষ রহমতে আবার আরেকটা পুএ সন্তান জন্ম দিলাম।
কিন্তুু আমার স্বামীর অবস্থা দিন দিন খারাপ থেকে খারাপ তরো হয়ে যাচ্ছে।
শেষে তিনি আরো ২ টা জমি বিক্রি করে ভারতে গেলেন ক্যান্সারের চিকিৎসা করাতে।।
১ বছর থাকবেন সেখানে।
0 মন্তব্যসমূহ