লাভ গেমস্ - পর্ব ৩০

লাভ গেমস্ - পর্ব ৩০

লাভ গেমস্

লেখকঃ Sanjida Afrin Shetu

পর্বঃ ৩০

সোমার ঘুম ভাঙল ভোরের দিকে,চোখ মেলে তাকাতেই নিজেকে আবিষ্কার করল শোয়েবের বুকের উপর।ছেলেটা এক হাতে ওর কোমড় পেঁচিয়ে রেখেছে আর আরেক হাত সোমার চুলের রাজ্যে ডুব দিয়েছে।তারমানে ও সারাটা রাত আমার মাথায় হাত বুলিয়েছে!নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করল সোমা তারপর ভাবতে লাগল রাতে ঠিক কি কি হয়েছে...
"আমিতো ঘুমাচ্ছিলাম আর শোয়েব তখনও ফেরেনি,তারপর ও কখন আসলো?আর এভাবে আমাকে বুকে জড়িয়ে ঘুমানো,মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়া এসব কখন হল?আমি কিছু বুঝতে পারলাম না কেন!"
আনমনে এসব খাবতে ভাবতেই শোয়েবের ঘুমন্ত মুখটার দিকে চোখ পড়ল।কি নিষ্পাপ,শান্ত-শিষ্ট লাগছে ওকে,মনে হচ্ছে অনেকদিন পর এমন প্রশান্তির ঘুম দিয়েছে,সোমাকে অজানা একটা শক্তি যেন শোয়েবের দিকে টানছে বার বার।তাই না চাইতেও ওর দিকে আরও একটু ঝুঁকে পড়ল সোমা তারপর কপালে আলতো করে একটা ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়েই উঠে পড়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ল।আলতো হাতে শোয়েবের বাহুবন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত করে ফেলল,বিছানা থেকে নামতে গেল কিন্তু পারলো না কারণ তার আগেই শোয়েব ওর শাড়ীর আঁচলটা টেনে ধরেছে...
সোমা: (মনে মনে)এক্ষুণি আমি যা করলাম,ওকি বুঝতে পেরেছে?ছি!ছি!কি লজ্জা!এখন কি করি?হ্যাঁ এক কাজ করি ওর উপর একটু রাগ দেখাই...
সোমা বড় বড় চোখ করে শোয়েবের দিকে তাকালো,ওকে তাকাতে দেখেই শোয়েব দাঁত বের করে হাসতে লাগলো আর তাতে সোমা আরও রেগে গেল...
সোমা: এসব কি হচ্ছে?ছাড়..ছাড় বলছি আমাকে...
শোয়েব: আমিতো তোমাকে ধরিইনি তাহলে ছাড়ব কি করে?
সোমা: (আরও রেগে গিয়ে)একদম না বোঝার ভান করবে না,শাড়িটা ছাড়...
(শোয়েব শাড়িটা না ছেড়ে বরং পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে নিজের দিকে নিয়ে আসতে লাগল,সোমাকেও তাই বাধ্য হয়ে শোয়েবের দিকে এগোতে হল।সোমা যখন শোয়েবের থেকে মাত্র এক হাত দূরে তখনই শোয়েবের মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি আসলো।শোয়েব সোমার শাড়িটা হাতের মধ্যে ভাল করে পেঁচিয়ে একটা হ্যাঁচকা টান দিল,সোমা তাল সামলাতে না পেরে শোয়েবের উপরেই পড়ে গেল।শোয়েব খুব নীবিড়ভাবে সোমার কোমড় পেঁচিয়ে ওকে নিজের আরো কাছে টেনে নিল তারপর ওর ঘাড়ে আর গলায় নাক ঘষতে ঘষতে পেটে স্লাইড করতে লাগল...সোমা এবার সত্যি সত্যিই রেগে গেল,দাঁতে দাঁত চেপে বলল...
সোমা: Stop it Shoyeb...
শোয়েব: উহু
সোমা: কি করছো এসব?ছাড় বলছি...
শোয়েব: না ছাড়ব না
সোমা: এবার কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে,তুমি কিন্তু আমার সাথে জোরাজুরি করছো...
শোয়েব: এটা জোরোজুরি!তাহলে একটু আগে তুমি যা করছিলে সেটা কি ছিল?
সোমা: মাম...মানে?কি..ক..কি করছিলাম আমি?
শোয়েব: কি করছিলে?একটা অসহায় অবলা ছেলেকে একা পেয়ে...
সোমা: আ..আমি কি..ক কিছু করিনি...
শোয়েব: তাই?আপনি কিছু করেননি?তাহলে একটু আগে আমার কপালে ওটা কার ছোঁয়া ছাল?
সোমা: সেটা আমি কি করে জানবো?
শোয়েব: তাইতো আপনারতো জানার কথা না...
সোমা: অনেক হয়েছে,এবার ছাড় প্লিজ...
শোয়েব: এত সকালে উঠে কি করবে?আমরাতো এখন বাড়িতে নেই,হানিমুনে এসেছি আর হানিমুনে এসে মানুষ ঘুমায় আর রোমান্স করে কিন্তু তুমি...
সোমা: পাগলামি না করে ছাড়তো,আমার কিন্তু এসব একদম ভাল লাগছে না...
(শোয়েবের একটু মন খারাপ হয়ে গেল,সোমাকে আস্তে আস্তে ছেড়ে দিল তারপর মন খারাপ করে বলল...)
শোয়েব: আরেকটু থাকোনা প্লিজ...সারাটা রাততো আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমালাম এবার কি তুমি উল্টোটা করতে পারো না?
শোয়েবের কণ্ঠে কেমন যেন একটা আঁকুতি মেশানো ছিল,সোমার বুকের ভেতরটায় মোচড় দিয়ে উঠল।ও আর এক মুহূর্ত দেরি না করে শোয়েবকে শক্ত করে বুকের মধ্যে আঁকড়ে ধরল,শোয়েবও ওকে আরও নীবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরল...
অনেক্ষণ হয়ে গেছে ওরা দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে,কারো মুখেই কোন কথা নেই যেন নিস্তব্ধ-নির্বাক থাকার প্রতিজ্ঞা করেছে দুজনে।অনেক্ষণ পর শোয়েব মুখ তুলে তাকালো,সোমার দিকে একবার তাকিয়ে দেখল তারপর আস্তে আস্তে ওর আরো কাছে অগ্রসর হল।শোয়েবের হাতদুটো সোমার কোমড় ছেড়ে পিঠের দিকে অগ্রসর হচ্ছে আর ঠোঁটজোড়া ওর ঠোঁটের দখল নিতে চাইছে।সোমা এতক্ষণ চোখ বন্ধ করে ছিল তাই কিছুই বুঝতে পারেনি,ঠোঁটে কারো স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠল।এক মুহূর্ত লাগল কি হচ্ছে তা বোঝার জন্য তারপরই শোয়েবকে গায়ের জোরে একটা ধাক্বা দিয়ে নিজেকে এক ঝটকায় ওর কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিল তারপর বিছানা থেকে নেমেই ওয়াশরুমে গিয়ে ঢুকল,শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।
কান্নাটা আসলে কষ্টের নয়,কান্নাটা রাগের আর অভিমানের।অভিমানটা শোয়েবের উপর,ও কেন বার বার ওকে জোর করছে তার জন্য।ও কেন বুঝতে পারছে না যে আমার আরেকটু সময় দরকার...নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করল সোমা তার পর পরই নিজের উপরে আরো রেগে গেল।মনে মনে বলল...
"আচ্ছা আমি কি বদলে গেছি?শোয়েবের সাথে এমন কেন করছি আমি!ওকেতো আমি ভালোবাসি তাহলে ওকে কাছে টানতে পারছি না কেন?ওতো আমার থেকে বেশিকিছু দাবি করছে না,আমি ওর স্ত্রী আর ও আমাকে ভালোবাসে তাইতো আমাকে একান্ত আপন করে নিতে চাইছে।তাহলে আমি এমন করছি কেন?তবে কি আমি আর ওকে ভালোবাসি না!নাকি অন্যকিছু..."
এদিকে ঘটনার আকস্মিকতায় শোয়েব পুরোপুরি অবাক হয়ে গেছে,তখন সোমা যেভাবে ওর কাছে এসেছিল ওর কেন জানি মনে হয়েছিল যে হয়তো ও আর আপত্তি করবে না তাই নিজে থেকেই এগিয়ে গিয়েছিল কিন্তু ওতো...
সোমার উপর রাগ করে বেরিয়ে যাচ্ছিলো তখনই ওয়াশরুম থেকে ওর কান্নার আওয়াজ শুনে থমকে দাঁড়ালো।বুকে চিনচিনে একটা ব্যথা অনুভব করছে আর তারসাথে একরাশ খারাপ লাগা এসে ভর করছে।নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে,কেন যে মেয়েটাকে বার বার এভাবে কষ্ট দেয়?কাল রাতেইতো ও আরেকটু সময় চেয়েছিল তাহলে আবার কেন যে ওর সাথে এমন জোরাজুরি করতে গেল...
অনেক্ষণ পর সোমা ওয়াশরুম থেকে বের হল,কিন্তু শোয়েবকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।রুমে,বারান্দায় কোথাও নেই,সোমার এখনও অনেক খারাপ লাগছে।ওকে না দেখতে পেয়ে খারাপ লাগাটা আরো বেড়ে গেল,সন খারাপ করে বিছানায় গিয়ে বসতেই দেখল একটা কাগজ ভাঁজ করে পেপারওয়েট দিয়ে চাপা দেয়া আছে।পেপারওয়েটটা সরাতেই দেখল বেশ বড় বড় করে লেখ...
"সোমা কাগজটা খোল..."
সোমা কাঁপা কাঁপা হাতে কাগজটা মেলে ধরল।গোঁটা গোঁটা হাতে মাত্র একটা লাইনই লেখা আছে...
"I am so sorry jan,আর কক্ষণও এমন হবে না।সব দোষ আমার তুমি প্লিজ মন খারাপ কোরো না..."
হাতের লেখাটা যে শোয়েবের সেটা বুঝতে সোমার একটুও সময় লাগল না,চিঠিটা হাতে নিয়ে নিরবে চোখের জল ফেলতে লাগলো...
.
দুপুর হয়ে এলো,শোয়েব এখনও ফেরেনি,সোমাও মন খারাপ করে রুমেই বসে আছে,কোথাও বের হতে ইচ্ছে করছে না।ঘড়িতে দুপুর একটার ঘণ্টা পড়ল,সোমা চমকে উঠে ঘড়ির দিকে তাকালো...
সোমা: ১টা বাজে!ও এখনও আসলো না কেন?কোন বিপদ-আপদ হল নাতো?আমি এখন কি করি...
রুমের ল্যাণ্ডলাইন থেকে শোয়েবের নাম্বার ডায়াল করতে গেল তখনই মনে হল ওর এখানকার নাম্বার তো ওর জানা  নেই।ঝটপট হোটেলের রিসিপশনে ফোন করল,কিন্তু ওরাও জানালো যে শোয়েবের নাম্বার ওদের কাছেও নেই...
টেনশনে সোমার মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় হয়েছে,ঘরময় শুধু পায়চারী করছে আর একটু পর পর ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে।প্রতিটা মুহুর্তকে মনে হচ্ছে যেন এক একটা বছর...
হঠাৎই রুমের ল্যাণ্ডলাইনে একটা কল আসলো,সোমা ছুটে গিয়ে রিসিভারটা তুলে নিল তারপর হাঁপাতে হাঁপাতে বলল...
সোমা: হ্যা..হ্যালো...
(ওপাশ থেকে শুনতে পেলো)
-সোমা আমি শোয়েব বলছিলাম...
(শোয়েবের নাম শুনে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সোমা তারপরই জমানো অভিমানগুলো কথার বৃষ্টি হয়ে ঝরতে লাগলো)
সোমা: তুমি কি মানুষ!সকাল থেকে কোন খোঁজ-খবর নেই,আমাকে কিছু না জানিয়েই বেরিয়ে গেছো,টেনশনে আমার কি অবস্থা হয়েছিল জানো?তাতো জানবাই না,এই বিদেশ বিভুঁইয়ে আমি একা একটা মেয়ে কি অবস্থায় আছি সেই খেয়াল আছে তোমার?কোন কমনসেন্স নেই তোমার?আরেকটু হলেতো আমার হার্ট-এ্যাটাক....
শোয়েব: শাট আপ সোমা,আর কক্ষণও এমন কথা মুখেও আনবে না বলে দিচ্ছি...
সোমা: হুহ সারাদিন এত কষ্ট দিয়ে এখন আবার দরদ দেখানো হচ্ছে!!
শোয়েব: সোমা...একটু শান্ত হও প্লিজ...আমার কথাটা একটু মন দিয়ে শোন...
সোমা: হুম বলেন কি বলবেন...
শোয়েব: যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রেডি হয়ে হোটেলের লবিতে চলে আসো কুইক...
সোমা: কেন?তুমি কি হোটেলেই আছো?তাহলে রুমে আসছো না কেন?
শোয়েব: একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছো,একটাবার চুপচাপ আমার কথামত কাজ করলে কি এমন ক্ষতি হয়ে যাবে শুনি?আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ রেডি হয়ে নিচে আসো কুইক...
(শোয়েব ফোন রেখে দিল)
সোমা: (বিড় বিড় করে)চুপচাপ রেডি হয়ে আসো কুইক!!বলল আর হয়ে গেল!আমাকে সকাল থেকে এত টেনশনে রেখে আবার এখন আমার উপরেই রাগ দেখানো হচ্ছে!রাক্ষস একটা।শুধু রাক্ষস না ও হচ্ছে একটা শিম্পাঞ্জী,উল্লুক,ছাগল না না রামছাগল,গাধা,ভেড়া আর..আর..আরতো কিছু মনে পড়ছে না...ওহ্ হ্যাঁ লেজকাটা হনুমান হিহিহি
(তখনই ল্যাণ্ডফোনে একটা ভয়েজ কল আসলো)
"আমাকে গালি দেয়া কি শেষ নাকি স্টকে আরো গালি অবশিষ্ট আছে?শেষ হলে এবারতো রেডি হও,প্লিজ বউ একটু তাড়াতাড়ি আসো আমি ওয়েট করছি তো..."
ভয়েজ মেসেজটা শুনেই চমকে উঠল সোমা মনে মনে বলল...
সোমা: ও কি করে জানলো যে আমি ওকে গালাগালি করছি?এই ছেলে কি মাইণ্ডরিড করতে পারে নাকি!!!
সোমা ঝটপট রেডি হয়ে নিল,একটা ডিপ মেরুন রঙের হালকা জরি আর স্টোনের কাজ করা শাড়ি,তার সাথে ম্যাচিং দুল আর চুড়ি।চোখে গাঢ় করে কাজল আঁকল,ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক আর কপালে ছোট্ট একটা টিপ।আয়নায় নিজেকে একবার দেখে নিল,নাহ্ খুব একটা খারাপ লাগছে না।কাজ শেষ করে পার্সটা হাতে নিয়ে ডোরলক করে বেরিয়ে পড়ল...
হোটেলের লবিতে আসতেই শোয়েবকে দেখতে পেল সোমা,ওকে দেখেতো শোয়েব চোখের পাতা ফেলতে পারছে না।মনে মনে ভাবছে...
শোয়েব: আমার বৌটা এত সুন্দর কেন?এই মেয়েতো দেখছি ওর সৌন্দর্য দিয়েই আমাকে মেরে ফেলবে!
সোমা: চোখ দিয়েই কি গিলে খেয়ে ফেলবে নাকি?
শোয়েব: (চমকে উঠে)না মানে...You are looking beautiful...
সোমা: হয়েছে হয়েছে আর কিছু বলতে হবে না,এখন কোথায় যাবেন চলেন...
শোয়েব: ওহ্ হ্যাঁ চলো তোমাকে আজকে একটা স্পেশাল জায়গায় লাঞ্চ করাব... 
সোমা: কোথায়?
শোয়েব: সি-বীচে
সোমা: কিন্তু সেখানে আবার স্পেশাল কিভাবে...
শোয়েব: এই মেয়ে তুমি কি প্রশ্ন ছাড়া কোন কাজ করতে পারো না?একটাবার চুপ করে আমার কথামত কাজ করে দেখতো...
সোমা: ঠিক আছে ঠিক আছে আর জ্ঞান দিতে হবে না চলেন কোথায় যাবেন....
সি-বীচে পা রাখতেই সোমার যেন হার্টবিট বন্ধ হয়ে গেল,ওর সামনে এমন দুজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে যাদের দেখে সোমার আর মুখ দিয়ে কথাই বের হচ্ছে না,অবাক হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে...
(প্রোমা আপু বলে সোমাকে জড়িয়ে ধরল,সোমা আনন্দে কেঁদেই ফেলল)
সোমা: তুই এখানে?
প্রোমা: হুম আপু কেমন আছিস তুই?
সোমা: আমি ভাল আছি তুই কেমন আছিস?
প্রোমা: অনেক অনেক ভাল আছি রে...
সোমা: তোরা হঠাৎ এখানে কিভাবে!
প্রোমা: সবই ভাইয়ার জন্য...
(সোমা অবাক হয়ে শোয়েবের দিকে তাকালো)
শোয়েব: দিস ইজ ইয়োর সেকেণ্ড সারপ্রাইজ ডিয়ার...
(সোমা ছুটে গিয়ে শোয়েবকে জড়িয়ে ধরল,শোয়েবও ওকে শক্ত করে ধরে রাখল)
সোমা: (কাঁদতে কাঁদতে)তুমি এসব কখন...
তুহিন: সব কথা কি এখানে দাঁড়িয়েই বলবে নাকি কোথাও গিয়ে বসবে?
শোয়েব: ওহ হ্যাঁ চল কোথাও গিয়ে বসে কথা বলি,লাঞ্চ টাইমও হয়ে গেছে...
ওরা একটা রেস্টুরেন্টে এসে বসল,খাবার অর্ডার করে আবারও গল্প জুড়ে দিল।কথায় কথায় জানতে পারল প্রোমা আর তুহিন এখানে এসেছে আরো এক সপ্তাহ আগে,ওরাও হানিমুনে এসেছে।সব ব্যবস্থা শোয়েবই করে দিয়েছে,সোমা কৃতজ্ঞ নয়নে শোয়েবের দিকে তাকিয়ে আছে।খাবার চলে এসেছে,সোমা ভাবছিল এখানকার কোন খাবার অর্ডার করেছে কিন্তু না সবই বাঙ্গালী খাবার দেখে খুব অবাক হয়ে গেল..
শোয়েব: ওভাবে কি দেখছো?খাওয়া শুরু কর...
সোমা: এখানে বাঙালী খাবার কিভাবে...
শোয়েব: আগে থেকেই অর্ডার দিয়ে রেখেছিলাম ম্যাডাম...
সোমা: তারমানে তুমি আগে থেকেই সবকিছু...
শোয়েব: অনেকদিন ধরেই প্ল্যানিংটা করে রেখেছিলাম,শেষ মুহুর্তে তোমার উল্টোপাল্টা কাজের জন্য কিছুটা চেঞ্জ করতে হয়েছে এই আর কি...
ওরা খাওয়া শুরু করেছে,সোমা তেমন কিছুই খাচ্ছে না কারণ এতদিন পর প্রোমাকে নিজ হাতে খাওয়ানোর সুযোগ পেয়েছে তাই এই সুযোগটাকে হাতছাড়া করতে চাইছে না।প্রোমাকে খাবারে হাতও লাগাতে দিচ্ছে না,নিজ হাতে মেখে ওকে খাইয়ে দিচ্ছে।সোমার চোখে মুখে অন্যরকম একটা তৃপ্তি ফুটে উঠছে,প্রোমাকেও অনেক খুশি লাগছে।শোয়েব আর তুহিন ওদের দুবোনের হাসিমাখা মুখটা দেখে সব দুঃখ ভুলে গেল,খাওয়া ফেলে মন ভরে ওদেরকে দেখতে লাগলো...
বিয়ের পরে এই প্রথম সোমাকে এতটা খুশি হতে দেখল শোয়েব,ওর মুখের 
হাসি দেখে প্রাণ ভরে গেল...
(সন্ধ্যায়)
সারাদিনের ঘোরাঘুরি শেষে এবার ফেরার পালা,ওরা ডিনারটা একটু আগে ভাগেই করে নিল।দুপুরের মত এবারও সোমা তেমন কিছুই খেল না,শোয়েব সবি দেখল কিন্তু কিছু বলল না।
যাওয়ার সময় প্রোমা সোমার সাথে একটু আলাদাভাবে কথা বলতে চাইল...
শোয়েব আর তুহিন একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো
সোমা: কিরে কি এমন জরুরী কথা বলবি শুনি?
প্রোমা: আপু তোর আর ভাইইয়ার মধ্যে সবকিছু ঠিক আছেতো?
সোমা: হুম
প্রোমা: আমার কিন্তু অন্যরকম মনে হচ্ছে
সোমা: আরে না না,তেমন কিছু না...
প্রোমা: আপু একটা কথা বলব?
সোমা: বল
প্রোমা: তোদের বিয়েটা কেন আর কিভাবে হয়েছে আমি কিন্তু সবই জানি?
সোমা: (চমকে উঠে)কি..ক..কি জানিস?
প্রোমা: শোয়েব ভাইয়া আমাকে সবই বলেছে
সোমা:....
প্রোমা: আপু শোন,ভাইয়া আগে কেমন ছিল আমি জানিনা কিন্তু এটা জানি যে আমি এখন যে শোয়েব ভাইয়াকে চিনি তিনি অনেক ভাল একজন মানুষ যে তোকে অনেক অনেক ভালোবাসে
সোমা: হুম
প্রোমা: উনি আগের মতই আছেন নাকি চেঞ্জ হয়ে গেছেন?হলে কতটা হয়েছেন এসব তুই ই আমার থেকে ভাল বুঝবি।নিজেকে প্রশ্ন কর উত্তর টা পেয়ে যাবি।আর একটা রিকুয়েস্ট যদি তোর মনে হয় যে ভাইয়া বদলে গেছেন তাহলে প্লিজ উনাকে ক্ষমা করে দিস...আর কোন কষ্ট দিস না,তাহলে উনিতো কষ্ট পাবেনই সেই সাথে তুইও অনেক কষ্ট পাবি কারণ আমি আমার বোনকে চিনি,সে তার হাজবেণ্ডকে অনেক ভালোবাসে....
(প্রোমারা চলে গেল,ওরা দুজন হোটেলে ফিরে আসলো)
শোয়েব ঝটপট চেঞ্জ করে নিয়ে সোমাকেও চেঞ্জ করে নিতে বলল।সোমা চেঞ্জ করে বের হতেই দেখল শোয়েব একগাঁদি খাবার সাজিয়ে বসে আছে
সোমা: এসব কি?
শোয়েব: দেখতেইতো পাচ্ছো কি তাহলে জিজ্ঞেস করছো কেন?
সোমা: হ্যাঁ কিন্তু এসব আবার কেন?
শোয়েব: আমরা এখন খাব তাই
সোমা: কিন্তু আমিতো কিছু খাব না,একটু আগেইতো খেলাম...
শোয়েব: হুম কি যে খেলেন সেটাতো নিজ চোখেই দেখলাম।খাওয়ার চেয়েতো প্রোমাকে খাওয়ানোতেই বিজি ছিলেন
সোমা: আসলে এতদিন পর ওকে পেয়ে...
শোয়েব: আমি জানি তাইতো আলাদা করে খাবার অর্ডার করেছি,এখন কথা না বলে এখানে এসে বসতো...
(সোমা শোয়েবের সামনে গিয়ে বসলো,প্লেটে খাবার তুলতে যাবে কিন্তু শোয়েব ওর হাত চেপে ধরল)
সোমা: কি হল?
শোয়েব: এই মেয়ে তোমাকে কি কিছু করতে বলেছি?
সোমা: না...কিন্তু আমি তাহলে খাব কিভাবে?
শোয়েব: কেন?৫ ফুট ১১ ইঞ্চির এই জলজ্যান্ত মানুষটাকে কি আপনার চোখে পড়ে না?
(সোমা অবাক হয়ে শোয়েবের দিকে তাকালো)
শোয়েব: এভাবে তাকাচ্ছো কেন?হা করো আমি খাইয়ে দিচ্ছি...
সোমা: আ..আমি একাই পারবতো...
শোয়েব: (ধমক দিয়ে)চুপ একদম চুপ,আমি কি বলেছি তুমি পারবে না?এখন চুপচাপ যা বলছি কর আর কোন কথা আমি শুনতে চাই না।তাড়াতাড়ি খাও আমারওতো ক্ষুধা পেয়েছে তাইনা...
সোমা আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ শোয়েবের কথামত কাজ করতে লাগল।শোয়েব খুব যত্ন নিয়ে ওকে খাওয়াচ্ছে আর সোমা চুপচাপ খাচ্ছে,দুজনের কেউই কোন কথা বলছে না।সোমাকে খাইয়ে দিয়ে ন্যাপকিন দিয়ে ওর মুখটা ভাল করে মুছে দিল শোয়েব তারপর নিজেও খেয়ে নিল তারপর সোমাকে রেস্ট করতে বলে একটা কাজে বেরিয়ে গেল।শোয়েবকে যত দেখছে ততই যেন অবাক হয়ে যাচ্ছে সোমা,প্রোমার কথাগুলো কানে বাজছে।মুচকি হেসে মনে মনে বলতে লাগলো...
সোমা: তুমি সত্যিই অনেক বদলে গেছো,আর কোন কষ্ট দিব না তোমাকে।আজ রাতে তুমি যা চাইবে তাই পাবে,নিচেকে উজাড় করে দিয়ে তোমাকে ভালোবাসবো আজকে...
কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই মনে মনে ব্লাশিং হতে লাগলো সোমা,হঠাৎই শোয়েবের ফোনটা বেজে উঠল।দুবার রিং হলেও রিসিভ করল না সোমা,কিন্তু তৃতীয় বার একরকম বিরক্ত হয়েই ফোনটা রিসিভ করবে বলে হাতে নিল।কিন্তু কলারের নামটা দেখেই বুকের ভেতরটা ধ্বক করে উঠল ওর।ফোনস্ক্রিনে উজ্জ্বলভাবে ফুটে আছে...
"Calling Shija....."

Reactions

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ