লাভ গেমস্ - পর্ব ০২

 

লাভ গেমস্ - পর্ব ০২

লাভ গেমস্

লেখকঃ Sanjida Afrin Shetu

পর্বঃ ০২

.
শোয়েবের সাথে সোমার পরিচয় আজ থেকে বছর দুয়েক আগে।সোমা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এক গ্রাম্য পরিবেশে বোড়ে ওঠা সিম্পল,সাদা-সিধে একটা মেয়ে।ছোট থেকেই লেখাপড়ায় ভাল হওয়ার সুবাদে কলেজ লেভেল শেষ করার পর অনেকটা ওর জেদের কারণেই বাবা ওকে শহরের বেশ নামকরা এক প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি করে দেন।বাড়ি ছেড়ে এতদূরে থাকার কথা ভেবে প্রথমে একটু ভয় পেলেও বাড়ির এত এত রেস্ট্রিকশন থেকে মুক্তি মিলবে এই কথাটা মনে পড়তেই সব ভয় দূর হয়ে গেল,মনের আনন্দে চলল শহরপানে,থাকার ব্যবস্থা হল ভার্সিটিরই হোস্টেলে।বাবা আর ছোট মামা মিলে যখন ওকে হোস্টেলে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলেন তখন আবার সমস্ত ভয় জাঁকিয়ে ধরল,নতুন জায়গার সাথে খাঁপ খাইয়ে নিতে পারবে কিনা?একা একা এত বড় শহরে কি করে চলবে!রুমমেটগুলো কেমন হবে?ওরা ওকে পছন্দ করবে কিনা এমন হাজারো চিন্তা এসে মনের মধ্যে ভর করে ফেলল।
হোস্টেল সুপার যখন একজন মহিলাকে ডেকে বললেন একে ২২২ নম্বর রুমে নিয়ে যাও তখন যেন চিন্তাটা আরও হাজার গুণ বেড়ে গেল।সব চিন্তাকে পাশ কাটিয়ে গুঁটি গুঁটি পায়ে এগুলো মহিলাটার পিছু পিছু।মহিলাটা দোতলায় উঠে সিঁড়ির পাশের একটা রুমের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল,রুমটার দরজার উপরে বেশ বড় বড় করে লেখা 'রুম নং-২২২'।
দরজায় নক করতেই একটা মিষ্টি মেয়ে দরজা খুলে দিল,ভেতরে ঢুকেই দেখল রুমের মধ্যে ছোট-খাট মিষ্টি চেহারার আরেকটা মমেয়ে ববসে আছে।মাঝারী সাইজের রুমটাতে মোট তিনটা বেড,প্রতিটা বেডের সাথেই একটা করে লাগোয়া জানালা,এছাড়া প্রতিটা বেডের সাথেই একটা করে টেবিল চেয়ার আর একপাশে দেয়ালের সাথে লাগানো তিনটে লকার,রুমে আর তেমন কিছুই নেই।ঐ মহিলাটা সোমার জিনিসপত্র সব রুমে রেখে চলে যেতেই মেয়ে দুটো ওর দিকে এগিয়ে আসল।
-হাই,আমি ফারিয়া আর ও হল জেরিন,আমরা দুজনেই এই ইউনিভার্সিটিতে নতুন ভর্তি হয়েছি।তুমিও নিশ্চয় নতুন?
সোমা: (অবাক হয়ে)হ্যাঁ আমিও নতুন কিন্তু...
ফারিয়া: আচ্ছা তুমি এত অবাক হচ্ছো কেন বলতো...
সোমা: আসলে আমি ভেবেছিলাম আমার রুমমেটরা অনেক সিনিয়র হবে কিন্তু তোমরাতো...
জেরিন: (একটু হেসে)ও এই কথা?আরে বাবা সেম ইয়ার হওয়ায়তো ভাল,সিনিয়র মানেই ঝামেলা
সোমা: কিন্তু নরমালিতো সেম ইয়ার সবাইকে একরুমে দেয় না তাহলে আমাদের ক্ষেত্রে...
ফারিয়া: আমাদেরকেও দেয়নি
সোমা: তাহলে?
জেরিন: আসলে আমাকে শুধু এই রুমে দিয়েছিল আর ফারিয়াকে অন্য একটা রুমে।এই রুমে যেই আপুটা ছিল উনি ওকে এই রুমে দিয়ে নিজে ওখানে শিফ্ট করেছেন তাই এখন এই রুমে আমরা সব কয়টাই ইয়ারমেট
সোমা: যাক বাবা,কোন সিনিয়র আপু নেই।মনে মনে যে কি পরিমাণ ভয়টা পাচ্ছিলাম!ভালই হল তিনজনে মিলে ভালই এনজয় করা যাবে,কি বল?
জেরিন: যা বলেছ...
(পরদিন সকালে)
সকাল সকাল উঠে তিনজনের জন্য নাস্তা রেডি করেই ফ্রেশ হয়ে নিল সোমা,গতকাল রাতে ডাইনিং এ ডিনাে করতে গিয়েই বিঝেছে যে এভাবে খাওয়া যাবে না তাই নিজেরাই রান্না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে।সোমার সেই ছোটবেলা থেকেই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস তাই সকালে উঠে যখন ওদের দুজনকে ঘুমাতে দেখল তখন আর কাউকেই ডাকেনি নিজেই টুকটাক কিছু রান্না করে ফেলেছে।রান্নার হাত খুব একটা ভাল না ওর,বলতে গেলে একেবারে আনকোরা বললেও ভুর হবে না কিন্তু তবুও একেবারে অখাদ্যও হয়নি।নিজের রান্না টেস্ট করে নিজের মনেই এ কথা স্বীকার করল সোমা।তারপর জেরিন আর ফারিয়াকে ঘুম থেকে উঠিয়ে দিয়ে ঝটপট রেডি হয়ে বেরিয়ে নিল।
আজ ভার্সিটিতে ওদের ফার্স্ট ক্লাস,তাই আজ ড্রেসাপ এর ব্যাপারে সবাই একটু বেশিই কেয়ারফুল।সোমা পরেছে একটা হোয়াইট টপস যার হাত আর নিচের দিকে গাঢ় সবুজ সুতা দিয়ে এমব্রয়ডারি করা,তা সাথে ম্যাচ করে সবুজ রঙের একটা ওড়না আর চুড়িদার চোশ পায়জামা।কানে সবুজ স্টোন বসানো ছোট্ট একটা ঝুমকো,চোখে হালকা করে কাজল দিয়ে চুলটা একটু উঁচু করে পনিটেইল করে বেঁধে নিল।সাজগোজ বলতে এটুকুই,মুখে নেই কোন প্রসাধনীর ছাঁপ আর না আছে আর্টিফিশিয়াল কোনকিছুর ছোঁয়া।কিন্তু তবুও মেয়েটাকে দেখতে বেশ প্রাণবন্ত আর সজীব লাগছে,কি ভাবছেন অন্যসব গল্পের নায়িকাদের মত সোমাও দেখতে অসম্ভব সুন্দরী তাইতো?নাহ্ আহামরি সুন্দরী বলতে যা বোঝায় সোমা তা নয়,বলতে গেলে আর দশটা সাধারণ মেয়ের মত চেহারায় কিছু ভাল দিক আছে আর কিছু খারাপ।ভালর মধ্যে সবচেয়ে ভাল দিক হল ওর চোখজোড়া,অসম্ভব সুন্দর টানা টানা দুটো চোখ আর তার উপরে জোড়া ভ্রু আর খারাপের মধ্যে রয়েছে ওর নাকটা।কেউ না বললেও সোমা জানে ওর নাকটা প্রয়োজনের তুলনায় একটু বেশিই মোটা।গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামলা,ফর্সাও বলা চলে,ঠোঁটজোড়া খুব মোটাও না আবার চিকনও না,মাথায় একরাশি কোঁকড়া চুল মোটামোটি কোমড় পেরিয়ে গেছে।সোমার কাছে সবচেয়ে আক্ষেপের বিষয় হল ওর চুল,ছোট থেকেই ওর লম্বা চুলের প্রতি প্রচণ্ড রকমের ঝোঁক কিন্তু এই কোঁকড়া চুলের কল্যাণে ওর লম্বা চুলের স্বপ্নটা পুরোপুরিই অধরা থেকে গেছে।ভেজা অবস্থায় চুলগুলো যতটা লম্বা লাগে শুকানোর পর দৈর্ঘ্যটা একেবারেই তার অর্ধেকে পরিণত হয়।সোমার মাঝে মাঝেই ইচ্ছে করে এই অসহ্য চুলগুলোকে কেটে একেবারে বয়কাট করে ফেলা কিন্তু মায়ের ভয়ে আর লম্বা চুলের প্রতি আকর্ষণের কারণে সেটা হয়ে ওঠে না...
.
সোমাকে বের হতে দেখেই ফারিয়া চিৎকার করে উঠল...
ফারিয়া: ইয়ার জেরি,মনে হচ্ছে আমাদের সোমা ম্যাডাম আজকে ভার্সিটির সব কয়টা ছেলের মাথা খেয়ে তবেই দম নেবে
জেরিন: ঠিক বলেছিস ফারু
সোমা: এই তোমরা কি যা-তা বলছ বলতো...
ফারিয়া: এই মেয়ে,তুমি কি আমাদের ফ্রেণ্ড বলে মনে কর না নাকি?
সোমা: (কনফিউজড হয়ে)একথা কেন বলছ?
জেরিন: কারণ আপনি এখনও আমাদের তুমি করে বলছেন,ফ্রেণ্ড ভাবলে তো তুই করেই বলতেন ঠিক আমাদের মত...
সোমা: স্যরি স্যরি স্যরি,আমি আসলে তুই বলাতে অভ্যস্ত নই তাই একটু আনইজি লাগছে...
ফারিয়া: আবে ইয়ার,তুই একবার ট্রাইতো কর,দেখবি আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে
সোমা: আচ্ছা ঠিক আছে করব
জেরিন: করব মানে কি?এখন থেকেই শুরু কর
সোমা: (ঘাবড়ে গিয়ে)এ...এখনি!!
ফারিয়া: এখন নয়তো কখন?
সোমা: আচ্ছা তোরা কি এভাবেই কথা বলে টাইমওয়েস্ট করবি নাকি!ক'টা বাজে খেয়াল আছে?যা তাড়াতিড়ি রেডি হয়ে নে নাহলে ফার্স্ট ডে তেই লেট লতিফের খেতাব মিলে যাবে...
জেরিন: দ্যাটস লাইক এ গুড গার্ল
ফারিয়া: লাভ ইউ দোস্ত
(বলেই ফারিয়া আর জেরিন সোমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরল)
(ভার্সিটিতে)
রীতিমত দৌড়-ঝাঁপ করে তিন রুমমেট ভার্সিটিতে ঢুকল,ফাযলামি করতে করতে অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে তাই এত তাড়াহুড়ো।আসার সময় তিনজনেই র্যাগিং নিয়ে অনেক গল্প করতে করতে এসেছে,সোমা আগে কখনও শহরে আসেনি তাই শহরের ভার্সিটি আর কলেজগুলোতে সিনিয়রদের এত অত্যাচার সহ্য করতে হয় শুনে আপনা-এনি গলাটা শুকিয়ে আসল ওর।ভার্সিটিতে ঢুকতেই ফারিয়া আর জেরিন ওর থেকে আলাদা হয়ে গেল,ওরা ওদের নিজ নিজ ডিপার্টমেন্টের উদ্দেশ্যে চলে গেল।ওদের ছাড়া সোমার ভয়টা আরো বেড়ে গেল,ভয়ে ভয়ে সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতেই ইকোনমিক্স ডিপার্টমেন্টের করিডোর ধরে হাঁটতে লাগল।চারপাশটা দেখতে দেখতে হাঁটছিলো তাই কোনকিছুর দিকেই খেয়াল ছিল না,হঠাৎই কারো সাথে ধাক্কা লাগাতে চমকে উঠে সামনের দিকে তাকালো।সামনে কাউকে দেখতে না পেয়ে নিচের দিকে তাকাতেই পুরো ব্যাপারটা ক্লিয়ার হয়ে গেল।ওর ঠিক পায়ের কাছেই এক গুচ্ছ বই এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে আর একটা ছেলে বসে সেগুলোকে জড় করতে ব্যস্ত।ছেলেটার চোখে ইয়া বড় বড় গ্লাস লাগানো একটা মোটা ফ্রেমের চশমা,চেহারায় একটা পড়ুয়া পড়ুয়া ভাব স্পষ্ট ফুটে রয়েছে।সোমা আর দেরি না করে ঝটপট ছেলেটার সামনেই বসে পড়ল তারপর ওকে বইগুলো গোছাতে সাহায্য করতে করতে বলল...
সোমা: আই এ্যাম...আই এ্যাম সো স্যরি,আমি আসলে খেয়াল করিনি আপনি....
ছেলেটা: ই...ইট'স ওকে,আসলে আমারি দোষ,এতগুলো বই নিয়ে হাঁটছিলাম তাই সামনে কিছু আছে কিনা দেখতে পাচ্ছিলাম না...
সোমা: ঠিক আছে,আপনি এখন কোথায় যাবেন?চলুন আমি আপনাকে হেল্প করছি
ছেলেটা: ইট'স ওকে,আমার কোন হেল্প লাগবে না।আমি একটু সেমিনার লাইব্রেরিতে যাব,আপনার মনে হয় ক্লাসের টাইম হয়ে গেছে আপনি বরং ক্লাসেই যান।আই উইল ম্যানেজ ইট মাইসেল্ফ...
(বলেই ছেলেটা হাঁটতে শুরু করল,সোমাকে কিছু বলার সুযোগও দিল না!)
সোমা: (মনে মনে)কি আজিব পাবলিক রে বাবা!নামটা পর্যন্ত বলল না,ঠিকমত স্যরিটাও বলতে দিল না!হেল্প করতে চাইলাম তাও করতে দিল না...কি জানি বাবা,হয়ত মাথায় কোন প্রবলেম আছে...
মনে মনে এসব বিড়বিড় করতে করতেই ক্লাসরুমের সামনে চলে গেল সোমা।ঢুকতে যাবে তখনই দেখল ডায়াসের উপর অত্যন্ত হ্যাণ্ডসাম একজন দাঁড়িয়ে আছে।মানুষটাকে লোকটা বলবে নাকি ছেলেটা বলবে বুঝতে পারছে না।উনার কথা-বার্তা আর চাল-চলন দেখে মনে হচ্ছে ওদের স্যার কিন্তু ভার্সিটির প্রফেসর হিসেবে বয়সটা নিতান্তই কম বলে মনে হচ্ছে।দেখে মনে হচ্ছে ওদের থেকে মাত্র কয়েক বছরের বড় হবে,চোখের চশমাটা খুলে ফেললে হয়ত সেটাও মনে হবে না।ক্লাসে আসতে এমনিতেই এতটা দেরি হয়ে গেছে তাই আর এসব চিন্তা করে সময় নষ্ট করতে চাইল না সোমা তাই অনেক শক্তি সঞ্চয় করে বলল...
সোমা: মে আই কাম ইন,স্যার? 
স্যার: ইউ শুড নটা বাট ফার্স্ট ডে তাই একটু কনসিডার করছি,ইয়েস কাম ইন...
(সোমা চুপচাপ ক্লাসে ঢুকে সিটের দিকে এগিয়ে যেতেই আবার শুনতে পেল...)
স্যার:এক্সকিউজ মি মিস...?
সোমা: সোমা স্যার
স্যার: তো মিস সোমা,আজ ফার্স্ট ক্লাস তাই সবাই সবার পরিচয় দিচ্ছে,কুড ইউ প্লিজ ডু দ্য সেম,ম্যাম?
(সোমা ভয়ে ভয়ে সামনে এসে দাঁড়াল,তারপর আস্তে আস্তে বলতে লাগল)
সোমা: কি...ক..কি বলব স্যার?
স্যার: কি আর বলবেন,আপনার নাম পরিচয়,কোথা থেকে এসেছেন এসব আর কি...
সোমা: আ...আমার নাম নাঈমা আক্তার সোমা,আমার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর।বাড়িতে আমার বাবা-মা আর ছোট্ট একটা বোন আছে।এই প্রথম বাড়ি ছেড়ে বাইরে এসেছি তাই একটু ভয় ভয় পাচ্ছি...
স্যার: ভয় কেন পাচ্ছেন ম্যাম?আমরা কি বাঘ নাকি ভাল্লুক?
সোমা: (অবাক হয়ে)জ্বি স্যার?
স্যার: কিছু না আপনি সিটে গিয়ে বসুন...
সোমা চুপচাপ ফাঁকা দেখে একটা সিটে গিয়ে বসল।ক্লাসের বাঁকি সময়টা ওর কেন জানি মনে হল একজোড়া চোখ সারাক্ষণ ওর দিকেই তাকিয়ে রয়েছে।তাছাড়া স্যার যা পড়াচ্ছেন তার কোন কিছুই যেন ওর মাথায় ঢুকছে না,কেন জানি ওর মনে হচ্ছে এসব বিষয় ওদের সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত না।অনেকগুলো টপিকতো ওর কাছে ইকোনমিক্স সাবজেক্টেরই অন্তর্ভুক্ত বলে মনে হল না তবুও অনেক কষ্টে কনসেনট্রেট করার চেষ্টা করছে।ক্লাস শেষ হওয়ার বেল পড়তেই স্যার ইশারায় ওকে সামনে ডাকল,সোমা ভয়ে ভয়ে সামনে এগিয়ে গেল।ও স্যারের কাছে পৌঁছতেই স্যার সামনের রো তে বসা একটা ছেলেকে কিছু একটা বলে ইশারা করতেই ছেলেটা উঠে এসে ওর হাতে একটা লাইটার ধরিয়ে দিল আর স্যারের মুখের সামনে একটা সিগারেট এগিয়ে দিল।স্যার সিগারেটটা দুই ঠোঁটের মাঝখানে নিয়েই সোমাকে ইশারায় লাইটারটা জ্বালাতে বলল।সোমার সেদিকে কোন খেয়ালই নেই,ও তো অবাক হয়ে ওদের কাণ্ড দেখে যাচ্ছে,ওর মাথায় কি হচ্ছে কিছুই ঢুকছে না।স্যার ওকে অন্যমনস্ক দেখে আবারও তাড়া দিল,হঠাৎই সামনের সারি থেকে একটা ছেলে বলে উঠল...
-কি রে দোস্ত?ও কি তোর কথা শুনছে না নাকি?যদি না শোনে বল এক্কেবারে সাইজ করে দিব...
(সোমা ভয় পেয়ে ক্লাসরুমের দিকে ফিরে তাকালো দেখল হাতে গোনা কয়েকজন ছেলেমেয়ে জড়োসড়ো হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে আর সামনের সারিতে বসে থাকা প্রায় সবাই উঠে ডায়াসের চারপাশে ভিড় করে দাঁড়িয়েছে।সোমার আর বুঝতে বাঁকি রইল না এরা কারা,আর এতক্ষণে ও বুঝতে পারছে পুরোটা সময় ওর কেন মনে হচ্ছিল একজোড়া চোখ ওর দিকে তাকিয়ে আছে,আসলে একজোড়া না,অগনিত চোখ ওর দিকে তাকিয়ে ছিল এতক্ষণ,কেউ হিংসায় কেউবা কৌতুহলে আবার কেউবা নিতান্তই মজা নেবার জন্যে।সোমা ভয়ে একবার ঢোঁক গিলেই কথিত স্যারের দিকে অসহায়ভাবে তাকালো।ওর দেরি দেখে আবারও কেউ হাঁক ছেড়ে বলল...)
-কি হল ম্যাডাম?কথা কি কানে যাচ্ছে না?নাকি নতুন কোন থেরাপি দিতে হবে?
(ছেলেটার কথা শুনে ডায়াসের উপর দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা মুচকি একটা হাসি দিয়ে আঙ্গুল দিয়ে ঠোঁটের দিকে ইশারা করল।তাই দেখে সোমা আর এক মুহুর্তো দেরি না করে কাঁপা কাঁপা হাতে লাইটারটা জ্বালিয়ে উনার সামনে ধরল।মানুষটা সিগারেটটা জ্বালিয়ে নিয়ে তাতে একটা টান দিয়ে একরাশ ধোঁয়া সোমার মুখের উপর ছেড়ে দিয়েই হন হন করে বেরিয়ে গেল।ডায়াসের চারপাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেগুলো উচ্চস্বরে একটা উল্লাসধ্বনি দিয়ে তারাও হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল।পুরো ক্লাসরুমটা তখনও একেবারে চুপচাপ,সোমার পায়ে আর দাঁড়িয়ে থাকার মতও কোন শক্তি অবশিষ্ট নেই,ডায়াসের উপর দাঁড়িয়েই
থরথর করে কাঁপছে,নিজের জায়গায় গিয়ে বসবার মত শক্তি বা সাহস কোনটাই পাচ্ছে না,ভয়ে গলাটাও শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে তাই ওখানেই বসে পড়ল সোমা,ভয়ে হাঁফাতে লাগল।হঠাৎই কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে পেছনে ফিরে তাকালো,দেখল সেই চশমা পরা পড়ুয়া ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে।ওর একহাতে এখনও বেশ কয়েকটা বই ধরে রেখেছে আর অন্যহাতে একটা হাফ লিটারের পানির বোতল ধরা।ছেলেটা ওর মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি করে একটা হাসি দিয়ে ওর দিকে পানির বোতলটা বাড়িয়ে ধরল তারপর বলল...)
-পানিটা ধরো,একটু পানি খাও তাহলে ভাল লাগবে...


Reactions

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ