লাভ গেমস্ - পর্ব ০৭

লাভ গেমস্ - পর্ব ০৭

লাভ গেমস্

লেখকঃ Sanjida Afrin Shetu

পর্বঃ ০৭

(রাত ১২টা)
সোমা নিজের রুমে চুপচাপ বসে আছে,পরনে এখনও সেই শাড়িটা যেটা মা ওকে বিকালে নিজ হাতে পরিয়ে দিয়েছিলেন।বিছানার এক কোণে পা ঝুলয়ে দিয়ে বসে আছে সোমা,একমনে উদাসভঙ্গীতে কোনদিকে তাকিয়ে আছে,ঠিক কোনদিকে তাকিয়ে আছে বোঝা মুশকিল।রুমের লাইটটা বন্ধ তাই পুরো রুমটাই অন্ধকার শুধু জানালা দিয়ে চাঁদের মৃদু আলো এসে রুমটাকে আরো রহস্যময় করে তুলেছে যেন কোন আলো-আঁধারীর খেলা চলছে।বেডের পাশের টেবিলল্যাম্পটা একটু পর পর একটু করে জ্বলেই আবার নিভে যাচ্ছে,আসলে সোমা নিজেই লাইটটা একবার অন করছে আবার অফ করে দিচ্ছে।মনটা প্রচণ্ড রকমে বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে,মন থেকে কিছুতেই এই এংগেজমেন্টটাকে মেনে নিতে পারছে না।কি করে মানবে,শোয়েবকে প্রতি যতই ঘৃণা পোষণ করে রাখুক না কেন,মন কে যতই বোঝাক না কেন যে ও শোয়েবকে ঘৃণা করে,ও একটা ঠক,ওকে এর উচিত শিক্ষা দিতে হবে কিন্তু ও যে মন থেকে শুধু শোয়েবকেই ভালোবাসে।ওর প্রতি শোয়েবের ভালোবাসাটা লোক দেখানো আর স্বার্থান্বেষী হলেও শোয়েবের প্রতি কিন্তু ওর ভালোবাসাটা একেবারেই পিওর ছিল,মনে-প্রাণে ও শোয়েবকেই নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে চেয়ে এসেছে এতদিন।কিন্তু এই একদিনের একটা ঘটনায় যে সবকিছু এভাবে বদলে যাবে কখনও ভাবতেও পারেনি সোমা...
নাহ্ শোয়েবকে আর ভুলেও নিজের জীবনের সাথে জড়াতে চায় না সোমা কিন্তু তাই বলে এত তাড়াতাড়ি অন্য একজনকে শোয়েবের জায়গায় বসাবে,ওকে ভুলে অন্য একজনের সাথে নিজের জীবনটাকে জড়িয়ে ফেলতে পারবে এমন শক্ত মেয়ে ও নয়।শোয়েবের সামনে যতই নিজেকে শক্ত প্রমান করার অভিনয় করুক না কেন ভেতরে ভেতরে একেবারেই অসহায় হয়ে পড়েছে,ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে গেছে আর মনটা ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেছে।জাফির যেদিন ওকে বলেছিল শোয়েব ওকে ধোঁকা দিচ্ছে,ও কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারেনি,এমন উল্টো-পাল্টা কথা বলার জন্য একরকম ঝগড়াই করেছিল ওর সাথে।জাফির ওর বেস্টফ্রেণ্ড কিন্তু এই কথাটা বলার অপরাধে বেশকিছুদিন ওর সাথে কথাও বলেনি।কিন্তু জাফির হাল ছাড়েনি,সোমা যখন শোয়েবকে ওর প্রেগনেন্সির কথাটা বলল তখনও ওর মনে হচ্ছিল ও বিয়েতে রাজি হয়ে যাবে।বলবে,"বিয়েটা যখন করতেই হবে তখন একটু আগেভাগেই করে ফেলি,গার্জিয়ানদের পরেও ম্যানেজ করা যাবে।"
সোমা ভেবেছিল শোয়েব রাজি হলেও বিয়েটা এখনি করবে না,আগে নিজেদের ক্যারিয়ারটা বিল্ড আপ করে তবেই বিয়ের ব্যাপারে ডিসিশন নেবে কিন্তু শোয়েবতো...
সে যাই হোক,ওর মনে ঠিক কি ছিল তা তো ওর কাছে ক্লিয়ার হয়ে গেছে!ভালই হয়েছে সময় থাকতে থাকতেই সব জেনে গেছে,আরো কিছুদিন ওর সাথে থাকলে হয়ত নিজেকে আর সামলানো সম্ভব হত না....
চোখ মেলে তাকালো সোমা,নিজের আর শোয়েবের কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতেই পারেনি।জানালা দিয়ে ভোরের আলো দেখা যাচ্ছে,নামায পড়তে হবে তাই বিছানা থেকে ঝটপট নেমে দাঁড়ালো,পরনের শাড়িটা পাল্টে একটা নরমাল থ্রি-পিস পরে নিল তারপর ওযু করে নামায আদায় করে নিল।সারাটা রাত বালিশে হেলান দিয়ে বসে ঘুমানোর কারণে ঘাড়ের দিকটা একটু ব্যথা ব্যথা করছে,মাথাটাও একটু ধরেছে মনে হচ্ছে।
রুমের বাইরে গিয়েই দেখল বাবা বারান্দায় বসে চা খাচ্ছে,ওকে দেখেই বাবা মুচকি একটা হাসি দিয়ে ওকে নিজের কাছে ডাকলেন,পাশে বসিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন
বাবা: কি রে মা,রাতে ঠিকমত ঘুম হয়েছে তো?
সোমা: হ্যাঁ বাবা
বাবা: (একটু থেমে)তুই আমার উপর অনেক রেগে আছিস তাইনা?
সোমা: (অবাক হয়ে)কেন বাবা?তোমার উপর রাগ কেন করতে যাব?
বাবা: এই যে তোকে না জানিয়ে তোর জীবনের এতবড় একটা ডিসিশন নিয়ে নিলাম...
সোমা:.....
বাবা: দেখ মা,বাবা-মা কখনও সন্তানের খারাপ কিছু চায় না।বিশ্বাস কর,আমি যা করেছি তোর ভালর জন্যেই করেছি..
সোমা: আমি জানি বাবা
বাবা: তবুও তোর কোন পছন্দ আছে কিনা আমার জেনে নেয়া উচিত ছিল।তবে এখনও দেরি হয়ে যায় নি,তুই যদি কাউকে পছন্দ করিস তাহলে আমাকে বলতে পারিস আমি তুহিনের বাবার সাথে কথা বলে নিব...
সোমা: কাল সকাল পর্যন্তও ছিল কিন্তু এখন নেই(মনে মনে) না বাবা,আমার কোন পছন্দ নেই।তোমরা যা ভাল বোঝ কর আমার কোন আপত্তি নেই
বাবা: (খুশিতে চিৎকার করে)তুই সত্যি বলছিস মা?
সোমা: হ্যাঁ বাবা
বাবা: কই গো...আমার সোমা মায়ের চা কই?মেয়েটা যে এখনও কিছুই মুখে দেয় নি সেই খেয়াল আছে?
(সোমার মা চা নিয়ে ছুটতে ছুটতে চলে আসলেন,মেয়েকে দেখে তার চোখে মুখেও যেন খুশির ঝলক দেখা দিল।বাবা-মাকে এমন হাসি-খুশি দেখে আনন্দে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল চোখ বেয়ে,যাতে ওরা দেখতে না পায় তাই চা টা নিয়েই রুমে চলে আসল সোমা।আসার আগে আবারও পেছন ফিরে বাবা-মায়ের হাসিমাখা মুখটা দেখে নিল,ওদের মুখের এই হাসিটা ধরে রাখার জন্য হলে এই বিয়েটা ওকে করতেই হবে,মনে মনে এই কথাটায় নিজেকে বোঝাল সোমা)
রুমে ঢুকতেই দেখল ফোনটা বাজছে,আননোন নাম্বার দেখে রিসিভ করল না।কিন্তু বেশ কয়েকবার কল আসার পর একরকম বাধ্য হয়েই রিসিভ করল,ভাবল হয়ত জরুরী কোন দরকারে কেউ ফোন দিচ্ছে...
সোমা: হ্যালো আসসালামু আলাইকুম
(ওপাশ থেকে খুব সফ্ট একটা ছেলেকণ্ঠ ভেসে আসল)
-ওয়া আলাইকুম আসসালাম।কেমন আছেন সোমা?
সোমা: আমি ভাল আছি,আপনি কে বলছেন?আর আমার নাম্বার আপনি কোথায় পেয়েছেন?এই নাম্বারটাতো আমি গতকালকেই নিয়েছি তাই কারো তো জানার কথা না
-এক মিনিট এক মিনিট,একটু নিঃশ্বাসতো ফেলুন নাহলেতো দম বন্ধ হয়ে যাবে।আচ্ছা ঠিক আছে আপনার প্রথম প্রশ্নের উত্তরটা আমি দিচ্ছি,আমার নাম তুহিন...
(তুহিন নামটা শুনে যেন বড় সড় একটা ধাক্কা খেল সোমা,না চাইতেও চুপ হয়ে গেল কিছুই বলতে পারল না)
তুহিন: লিসেন,আপনার প্রথম প্রশ্নের উত্তর আমি দিয়েছি,এখন আপনি একটু দম নিন,দ্বিতীয় প্রশ্নটার উত্তর নাহয় একটু পরেই জানলেন...
সোমা: (নিজেকে সামলে নিয়ে)না না আপনি বলুন আমি শুনছি
তুহিন: না ম্যাডাম,পরে একসময় বলব এখন আপনি একটু ধাতস্থ হোন
সোমা: (রেগে গিয়ে)আপনাকে বলতে বলেছি বলেন,এত ঢং করার কি দরকার?
তুহিন: ওরেব্বাবা,বিয়ে না হতেই অর্ডার করা শুরু করেছেন দেখছি
সোমা: এত প্যাঁচাল পাড়ছেন কেন বলেন তো?আজাইরা প্যাঁচাল আমার একদম পছন্দ না...
তুহিন: আচ্ছা ঠিক আছে বলছি,আপনার নাম্বারটা আমাকে প্রোমা দিয়েছে
সোমা: অসম্ভব
তুহিন: কেন?
সোমা: প্রোমা নিজেইতো আমার নাম্বার জানেনা তাহলে ও কি করে...
তুহিন: কারো নাম্বার কাউকে দিতে হলে তার নাম্বার যে মুখস্ত থাকতেই হবে এমন কি কোন ধরা-বাঁধা নিয়ম আছে নাকি?
সোমা: মানে?
তুহিন: মানে খুব ইজি,নাম্বার জানা
না থাকলেও নাম্বার দেয়া যায়
সোমা: হেঁয়ালি না করে পরিষ্কার করে বলেন তো...
তুহিন: আচ্ছা ঠিক আছে বলছি,প্রোমা আমাকে আপনার নাম্বার থেকে কল দিয়েছিল
সোমা: কিন্তু...
তুহিন: কোন কিন্তু না,বিয়ের আগেই এত জেরা করছেন তাহলে বিয়েটা হয়ে গেলে না জানি আরও কত কি করবেন!!!
সোমা: সব কথায় এই বিয়েটাকে টানছেন কেন?এটা ছাড়া কি আর কোন টপিক নেই?
তুহিন: থাকবে না কেন,অনেক টপিক আছে কিন্তু বিয়েটা নিয়ে কথা বলতে ভাল লাগছে।এই এক মিনিট এক মিনিট আপনি বিয়ের কথা শুনলেই এমন রেগে যাচ্ছেন কেন বলুনতো?
সোমা: না মানে এমনি
তুহিন: সত্যি করে বলেনতো বিয়েটাতে কি আপনি রাজি না?আপনাকে কি কেউ ফোর্স করছে?
সোমা: না না,ফোর্স কেন করবে?
তুহিন: দেখুন সোমা,আপনি আমাকে ফ্রিলি বলতে পারেন।আমাদের সবেমাত্র এংগেজমেন্ট হয়েছে,বিয়েতো আর হয়নি।আমি চাইনা আমাদের বিয়েটা কোন কম্প্রোমাইজ এর উপর টিকে থাকুক তাহলে আমরা কেউই কখনও সুখী হতে পারব না।আমি চাই আপনি স্বেচ্ছায় অামাকে বিয়ে করুন,জানি এত তাড়াতাড়ি ভালোবাসা যায় না তাই ভালোবাসতে বলব না,ওটা নাহয় বিয়ের পরেই হবে।তাই আপনার যদি বিন্দুমাত্রও কোন সংশয় বা আপত্তি থাকে আমাকে বলতে পারেন...
সোমা: ঠিক আপত্তি নেই তবে...
তুহিন: তবে?
সোমা: আসলে সবকিছু এত তাড়াহুড়ো করে হয়ে গেল যে...আসলে আমরাতো কেউ কারো সম্পর্কে তেমন কিছুই জানিনা,ভাল করে দুই চারটা কথাও বলতে পারিনি তার আগেই...
তুহিন: ও...এই কথা?আচ্ছা ঠিক আছে,কখন দেখা করবেন আর কোথায় আমাকে বলেন এই বান্দা ঠিক আপনার সামনে হাজির হয়ে যাবে
সোমা: আপনিতো খুব মজার মজার কথা বলেন
তুহিন: এ আর এমন কি আস্তে আস্তে আরও অনেককিছুই দেখতে পাবেন।এখন আসল কথায় আসি?
সোমা: আসল কথা মানে?
তুহিন: ঐ যে দেখা করার ব্যাপারটা
সোমা: এমা ওটাতো আমি এমনিই বলেছি,আপনি দেখি সিরিয়ালি নিয়ে নিয়েছেন
তুহিন: আপনি মুখ ফুটে একটা জিনিস চেয়েছেন,সেটা কি না করে পারি?
সোমা: কিন্তু..
তুহিন: কোন কিন্তু না,আমি বলছিতো I will manage everything,you should not worry about it..
সোমা: Are you serious?
তুহিন: Yea
সোমা: ওকে
তুহিন: ঠিক আছে,তাহলে মিস সোমা সি ইউ সুন এন্ড টিল দেন টেক গুড কেয়ার অফ ইউ...
তুহিনের সাথে সোমার কথা ঐ পর্যন্তই হয়েছে,ছেলেটার সাথে কথা বলে খুব অবাক লাগছে ওর,এত ইজিলি একটা অপরিচিত মেয়ের সাথে কিভাবে কথা বলতে পারে!ফোনটা হাতে নিয়ে এক মনে এই কথাগুলোই ভাবছিল সোমা,তখনই প্রোমা হাঁপাতে হাঁপাতে ঘরে ঢুকল
প্রোমা: এই আপু,একটু আমার সাথে চল না...
সোমা: কোথায়?
প্রোমা: একটু ঐদিক টায়,তোকে একটা মজার জিনিস দেখাব
সোমা: তুই আগে একটু এদিকে আয়
(প্রোমা সোমার দিকে এগিয়ে যেতেই সোমা ওর কান টেনে ধরল)
প্রোমা: আহ্ আপু কি করছিস?লাগছে তো...
সোমা: লাগুক লাগার জন্যেই তো ধরেছি
প্রোমা: কেন আমি কি করেছি?
সোমা: তুই ঐ লোকটাকে আমার ফোন নাম্বার দিয়েছিস কেন?
প্রোমা: কোন লোকটাকে?
সোমা: কোন লোকটাকে মানে?তুই কতজনকে আমার নাম্বার দিয়েছিস!
প্রোমা: স্যরি স্যরি আমি একজনকেই তোর নাম্বার দিয়েছি আর সে তোর হবু বর
সোমা: বর বর করবি নাতো আগে বল কেন দিয়েছিস?
প্রোমা: আমি কি করব?হবু দুলাভাই বলে কথা,এত করে চাইছিল তাই...আর তাছাড়া...
সোমা: তাছাড়া কি?
প্রোমা: আমাকে এত্তগুলো চকলেট কিনে দিয়েছে,আইসক্রিমও দেবে কলেছে
সোমা: (আরও জোরে কান টেনে ধরে)ছি!প্রোমা,তুই সামান্য কটা চকলেটের লোভে এমন একটা কাজ করতে পারলি!
প্রোমা: সামান্য কটা না,অনেকগুলো।আরও দেবে বলেছে
সোমা: তাই বলে তুই...
প্রোমা: আহ আপু রাগ করছিস কেন?তোর ভাগটাও রেখে দিয়েছি তো...
সোমা: তবে রে...ওই পাঁজি দাঁড়া বলছি,পালিয়ে আর কই যাবি,একবার খালি নাগালের মধ্যে পাই তারপর মজা টের পাবি...
(কে শোনে কার কথা প্রোমা তার আগেই ছুটে বেরিয়ে গেছে,কিছুদূর গিয়েই ওর মনে পড়ল আপুকেতো আসল কথাটায় বলা হয়নি।চুপি চুপি ফিরে এসে দরজার বাইরে থেকেই উঁকি দিয়ে বলল...)
প্রোমা: আপু পাড়ার ঐ চৌরাস্তার মোড়ে পুতুল নাচ দেখাচ্ছে,তোর না খুব পছন্দ,চল গিয়ে দেখি আসি।
সোমা: (একটু থেমে)আমি যাব না,তুই যা
প্রোমা: চল না আপু,এমন করছিস কেন?তুই না কোথাও পুতুলনাচ হলে কখনই মিস করতি না তাহলে এখন...
সোমা: আমার ভাল লাগছে না প্রোমা,তুই যা আমাকে আর বিরক্ত করিস না...
প্রোমা: তুই খুব পঁচা,তোর সাথে আর কথা নেই হুহ্...
প্রোমা রাগ করে চলে গেল,ও ঠিকই বলেছে পুতুলনাচ সোমার খুবই ফেভারিট।ছোটবেলা থেকেই যেখানেই পুতুলনাচ হত ও সেখানেই ছুটে যেত।কিন্তু আজ পুতুলনাচের কথা শুনতেই মনটা বিষাদে পরিপূর্ণ হয়ে উঠল কারণ শোয়েব আর ওর কাছে আসার পেছনে এই পুতুলনাচের বেশ বড় একটা ভূমিকা আছে।প্রোমার মুখে পুতুলনাচের কথা শুনতেই সোমা আবারও সেই ভাবনার জগতে হারিয়ে গেল...
শোয়েবের সাথে সব ঝামেলা অনেক আগেই মিটে গেছে সোমার,ভার্সিটি  লাইফে পা দেয়াটাও প্রায় ছয়মাস পেরিয়ে গেছে।একটা সেমিস্টার ফাইনাল হয়ে গেছে,আরেকটার প্রিপারেশন চলছে,গায়ে লেগে থাকা ফ্রেশার ফ্রেশার গন্ধটাও চলে গেছে।এমনই এক দুপুরে ক্লাসের ফাঁকে ওরা কয়েকজন মাঠের দক্ষিণদিকের কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে বসে আড্ডা দিচ্ছিল,কোথা থেকে আঁখি ছুটতে ছুটতে আসল ওদের দিকে
আঁখি: এই তোরা লেটেস্ট নিউজটা শুনেছিস?
জাফির: কি নিউজ?
আঁখি: ভার্সিটিতে ইন্ট্রা ইউনিভার্সিটি ট্যালেন্ট হান্ট কম্পিটিশন হবে
সোমা: ওহ্,কিন্তু এতে এত এক্সাইটেড হওয়ার কি আছে?
আঁখি: তুই বুঝতে পারছিস না,শুধু ফার্স্ট ইয়ার না সব ডিপার্টমেন্টের সব ইয়ারের স্টুডেন্টদের মধ্যে কম্পিটিশনটা হবে।জিততে পারলে বেশ বড় এ্যামাউন্টের প্রাইজবন্ড পাওয়া যাবে আর সেই সাথে ইন্টার ইউনিভার্সিটি লেভেলে পার্টিসিপেট করার সুযোগতো আছেই..
তালহা: তা তুই কিসে পার্টিসিপেট করবি?
আঁখি: আমার আর সেই কপাল আছে?কম্পিটিশনের জন্য গ্রুপ ওয়াইজ রেজিস্ট্রেশন করতে হবে,গ্রুপে মিনিমাম চারজন মেম্বার থাকতে হবে...
কানন: তো টেনশন নিচ্ছিস কেন?আমরা তো আছিই,গ্রুপ ফর্ম করে নেব।তার আগে ভাবতে হবে আমরা এক্স্যাক্টলি কি করব...
আঁখি: রিয়েলি!আচ্ছা তাহলে চল,ব্যাপারটা ভেবে দেখি...
তালহা: কি রে,তোরা কিছু করবি না?
জাফির: আমিতো পড়া ছাড়া আর কিছুই পারিনা তাই আমাকে দিয়ে হবে না,সোমার ব্যাপারে কিছু জানিনা
সোমা: আরে না না,আমিও তেমন কিছুই পারিনা
কানন: আচ্ছা ঠিক আছে তোরা তাহলে থাক,আমরা গেলাম...
(সন্ধ্যার পর হোস্টেলে)
ফারিয়া: ইয়ার জেরু,এই ট্যালেন্ট হান্ট কম্পিটিশনটা নিয়ে কিছু একটা ভাবতে হবে
জেরিন: রিয়েলি!তুইও পার্টিসিপেট করবি তাহলে?
ফারিয়া: তুইও মানে?তুই কি করবি?
জেরিন: আমারতো একটাই ট্যালেন্ট টুকটাক নাচতে পারি এই আর কি
ফারিয়া: সত্যি!আমিওতো ওই নাচটাই পারি
জেরিন: তাহলেতো ভালই হল,আমরা দুজনতো হয়েই গেলাম।আর মাত্র দুজনকে খুঁজে বের করতে হবে
(এমন সময় সোমা রুমে ঢুকল,ওরা তুজনেই ওর দিকে ছুটে আসল)
ফারিয়া: দোস্ত প্লিজ বল তুই নাচ জানিস...
সোমা: নাচ আর আমি!ইম্পসিবল
জেরিন: কেন?
সোমা: জীবনেও ট্রাই করিনি,ওসব আমাকে দিয়ে হবে না
(ওর কথা শুনে ওরা দুজনেই বেশ হতাশ হয়ে গেল,হঠাৎই জেরিনের চোখদুটো চকচক করে উঠল)
জেরিন: এই সোমা,তুইতো ভাল গান গাইতে পারিস তাইনা?
সোমা: ওই একটু আধটু আরকি
(ওরা দুজনেই আনন্দে চিৎকার দিয়ে উঠল)
ফারিয়া: ব্যাস ওতেই হবে
সোমা: আচ্ছা তোরা হঠাৎ এসব নিয়ে পড়লি কেন বলতো?
ফারিয়া: ট্যালেন্ট হান্ট কম্পিটিশনেরর জন্য
সোমা: কিন্তু আমিতো...
জেরিন: কোন কিন্তু না,কালকেই আমরা রেজিস্ট্রেশন করব
ফারিয়া: কিন্তু এখনওতো একজন মেম্বার কম আছে
জেরিন: তাইতো
ফারিয়া: কোন ব্যাপার না ঠিক ম্যানেজ করে নেব
সোমা: কিন্তু আমিতো এসবে...
ফারিয়া: চুপ,একদম চুপ।তুুই কোন কথা বলবি না।আমরা পার্টিসিপেট করছি আর এটাই ফাইনাল
(সোমাকে কোন কথা বলতে না দিয়েই ওরা দুজনে চলে গেল)
(পরদিন ভার্সিটিতে)
জাফির: তাহলে আমাদের সোমা ম্যাডাম পার্টিসিপেট করছে?
সোমা: আর বলিস না,ফারু আর জেরু আমার কোন কথাই শুনছে না
জাফির: ফারু আর জেরু!বাহ্ খুব ইন্টারেস্টিং নাম তো...
সোমা: ফারিয়া আর জেরিন শর্ট করে ফারু আর জেরু
জাফির: ওহ্ বুঝলাম
সোমা: এখন তুইই বল এভাবে কম্পিটিশনে নাম লেখানোটা কি ঠিক হল?তখন আবার নাক-মুখ কাটা না যায়
জাফির: সম্ভাবনা আছে কিন্তু
সোমা: মানে?
জাফির: এখানকার কম্পিটিশনটা কিন্তু খুব টাফ হয়,বেশ কয়েকটা স্ট্রং টিম আছে।অনেক ইউনিক পারফর্মেন্স থাকে তাই নরমাল গান আর নাচ দিলে সবাই হাসবে
সোমা: তুই কিভাবে জানিস?
জাফির: ভাইয়ার সাথে এর আগে অনেকবার এসেছি
সোমা: তাহলে এখন উপায়?
জাফির: আমি তোকে একজনের কাছে নিয়ে যাচ্ছি,আমার খুব ক্লোজ ফ্রেণ্ড ও আবার এসব বিষয়ে এক্সপার্ট।ও তোদের জন্যে ঠিক একটা উপায় খুঁজে বের করবে...
(লাঞ্চ টাইম)
সোমা,ফারিয়া আর জেরিন ক্যান্টিনের একটা টেবিলে বসে আছে,ওদের ঠিক সামনেই একটা মেয়ে বসে আছে।মেয়েটার নাম লোপা,জাফিরের ফ্রেণ্ড।জাফিরের একটা কাজ থাকায় ও আসতে পারেনি।মেয়েটা অসম্ভব সুন্দরী আর স্মার্ট,সোমা যেন ওর দিক থেকে চোখই ফেরাতে পারছে না
লোপা: হুম বুঝলাম কিন্তু তোমাদের এই পারফর্মেন্স দিয়ে জিততে পারবে না
ফারিয়া: কেন?
লোপা: আসলে এখানে অনেক হাইক্লাস ড্যান্সার আছে,ওরা হিপহপ,ব্যালে,বেলিডান্স,লকিং এন্ড পপিং,সালসা এসব সবরকম ডান্সই পারে তাই নরমাল ডান্স দিয়ে ওদের হারানো যাবে না
জেরিন: তুমি এতক্ষণ যেগুলো বললে সেগুলো সব ডান্সের নাম!
লোপা: (একটু হেসে)হুম আর এগুলো সব ওয়ার্ল্ড ক্লাস ডান্স
ফারিয়া: তুমি এগুলো পার?
লোপা: সবগুলো পারিনা,তবে কয়েকটা পারি
জেরিন: তাহলে তুমি পার্টিসিপেট করছ না কেন?
লোপা: বাসা থেকে এ্যালাউ করে না তাই কোরিওগ্রাফি করি মাঝে মাঝে
ফারিয়া: তাহলে এখন আমরা কি করব?
লোপা: ইউনিক কিছু ভাবতে হবে তবে সেটা কি হবে তাই চিন্তা করছি
ফারিয়া: আরেহ্ এই সোমা মেয়েটা আবার কই গেল?
পুরো ক্যান্টিন খুঁজেও ওরা কোথাও সোমাকে খুঁজে পেল না,বাইরে এসে আশেপাশে একটু খুঁজতেই পুকুরপাড়ের নারিকেল গাছটার নিচে ওদের চোখ আটকে গেল।ওরা যা দেখল তাতে নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছে না....

Reactions

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ