লাভ গেমস্ - পর্ব ০৫

লাভ গেমস্ - পর্ব ০৫

লাভ গেমস্

লেখকঃ Sanjida Afrin Shetu

পর্বঃ ০৫

সোমা: আমাকে একটু হোস্টেল পর্যন্ত এগিয়ে দিবি?
(সোমার মুখে কথাটা শুনে অবাক হয়ে একবার ওর দিকে তাকালো জাফির,ইদানিং সোমার কথা আর বিহেভ খুব অদ্ভূত লাগছে জাফিরের কাছে,ওর কেন জানি মনে হচ্ছে মেয়েটা কোনকিছু নিয়ে খুব ভয় পাচ্ছে)
জাফির: (অবাক হয়ে)এই তোর কি হয়েছে বলতো?
সোমা: আ..আমার আবার কি হবে?কিছু হয়নিতো
জাফির: তাহলে আমাকে এভাবে তোকে এগিয়ে দিতে বলছিস কেন?
সোমা: ওহ্ আচ্ছা তোকে এগিয়ে দিতে হবে না,আমি একাই যেতে পারব
জাফির: তুই এমন রেগে যাচ্ছিস কেন?আমি কি বলেছি তোকে এগিয়ে দিতে পারব না?আমিতো এমনিই....এই সোমা দাঁড়া বলছি...
একরকম দৌঁড়ে সোমার কাছে গিয়ে পৌঁছল জাফির,শোয়েবের সাথে সোমার ঝামেলাটার প্রায় এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে,এই কয়দিনে জাফিরের সাথে সোমার বন্ধুত্বটাও আরো একটু গাঢ় হয়েছে।ঘটনার সাতদিন হয়ে গেলেও সোমা ব্যাপারটা কিছুতেই ভুলতে পারছে না,ওর কেন যেন মনে হচ্ছে অনেকগুলো চোখ ওর দিকে নজর রাখছে।শোয়েবের বন্ধুদের ওর আশেপাশে দেখলেই ওর মনে হয় ওরা হয়ত ওর জন্যই অপেক্ষা করছে,সুযোগ পেলেই আবারও ছোঁ মেরে তুলে নিয়ে যাবে।
সেদিনও ক্লাস শেষে হোস্টেলের দিকে ফিরছিল সোমা,প্রতিদিনের মত আজকেও জাফির ওকে হোস্টেল পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে যেতে এসেছে।পার্কিং স্লটের পূর্ব পাশে আসতেই পেছন থেকে কেউ একজন জাফিরের নাম ধরে ডাকল।এই ছেলেটাকে আগে কখনও দেখেনি সোমা কিন্তু জাফিরকে দেখে মনে হল ছেলেটা ওর খুবই ক্লোজ কেউ।খানিক্ষণ কথা বলার পর জাফির সোমার দিকে তাকিয়ে বলল...
জাফির: সোমা,ও হচ্ছে আমার ভাইয়া।তোকে বলেছিলাম না জিসান ভাইয়ার কথা?
(জিসান নামটা শুনেই সোমা আবার ভয়ে কুঁকড়ে গেল,জিসান মানেতো শোয়েবের বেস্ট ফ্রেণ্ড!এখন ও কি করবে?ইচ্ছে করছে এক দৌঁড়ে হোস্টেলে চলে যায় কিন্তু তবুও মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল...)
সোমা: কেমন আছেন ভাইয়া?আপনাকে আগে কখনও দেখিনি তাই চিনতে পারি নি।স্যরি ফর দ্যাট...
জিসান: তুমিও তার মানে সোমা?
সোমা: (অবাক হয়ে)আপনি আমাকে চিনেন?
জিসান: তোমার ব্যাপারে এত কথা শুনেছি যে মনে মনে চেহারাও এঁকে ফেলেছিলাম আর আশ্চর্যভাবে হুবহু মিলেও গেছে...
সোমা: আ...আপনি আমার কথা শুনেছেন!কিন্তু....
জিসান: (একটু হেসে)আরে এত চাপ নিও না তো,তোমার এই গুণধর বন্ধুটি থাকতে আমাকে আর অন্য কারো থেকে শোনা লাগবে!!!
(জিসানের কথা শুনে সোমা একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল আর জাফির অবাক হয়ে জিসানের দিকে তাকালো)
জিসান: স্যরি আপু,জাফিরকে একটু আমার সাথে নিয়ে যেতে হবে।আসলে একটা খুব জরুরী কাজ পড়ে গেছে তাই...
সোমা: ইট'স ওকে ভাইয়া,আমি একাই চলে যেতে পারব....
জিসান: অাচ্ছা ঠিক আছে সোমা,আমরা তাহলে আসছি এখন,তুমি সময় করে একদিন আমাদের বাসায় এসো কেমন?
সোমা: আচ্ছা ভাইয়া...
জাফির: তুই একা যেতে পারবি তো?আমি নাহয় তোকে রেখে তারপর ভাইয়ার সাথে যাচ্ছি...
সোমা: ওই আমি কি কচি খুকি নাকি?আমি একাই চলে যাব তুই যা তো...
জাফির: আচ্ছা ঠিক আছে বাই...
সোমা: টা টা...
(জাফির ছুটে জিসানের কাছে চলে গেল,যেতে যেতে বলল)
জাফির: আচ্ছা ভাইয়া,আমি আবার কখন তোকে সোমার ব্যাপারে বললাম রে?
জিসান: কই বলসনি তো...
জাফির: তাহলে যে তুই তখন....
জিসান: (হেসে)তুই এখনও বাচ্চা তাি বুঝিস নি,একটু বড় হ ঠিক বুঝতে পারবি...
(গাড়িতে বসেই জিসান ওর ফোনটা বের করে শোয়েবের নাম্বারে একটা মেসেজ সেন্ড করল,"কাজ হয়ে গেছে,now it's your turn bro...."
অনেক্ষণ ধরে মিডনাইট ক্যাফের কর্ণারেে টেবিলটাতে ওয়েট করছে পিয়াল,টয়ার আসার কথা সন্ধ্যার দিকে কিন্তু সন্ধ্যার পর দুই ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও তার আসার কোন নাম নেই।এতদিন অনেক মেয়েকে নিজের পেছন পেছন ঘুরিয়েছে পিয়াল কিন্তু এই প্রথম কোন মেয়ের জন্য এতটা সময় ধরে ওয়েট করছে।কখনই ভাবেনি কোন মেয়ের জন্য ও এতটা ডেসপারেট হয়ে যাবে যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তার জন্য ওয়েট করতেও কষ্টই হবে না।কিন্তু এতটা সময় ওয়েট করার পর আর ধৈর্য্য ধরে রাখতে পারছে না পিয়াল,ওয়েটার এই নিয়ে চারবার এসে জিজ্ঞেস করে গেছে কি কি অর্ডার করবে।পাঁচবারের বার ওয়েটার আসতে মেজাজটা চরম রকমে খারাপ হয়ে গেল পিয়ালের,কিছু বলার আগেই হাতের পাঁচ আঙ্গুল বেচারা ওয়েটারের গালে,, বসে গেল।একেই বোধহয় বলে একের রাগ অন্যের উপর ঝাড়া,বেচারা ওয়েটার হটনার আকস্মিকতায় এতটাই অবাক হয়ে গেল যে কি রিয়্যাকশন দিবে বুঝতেই পারল না চুপচাপ চলে গেল।শেষমেষ অনেক ভেবে চিন্তে দুটো অরেঞ্জ জুস অর্ডার করল,ওয়েটার জুস দিয়ে যেতেই অটোমেটিক হাতটা পকেটে চলে গেল পিয়ালেে।ছোট ছোট দুটো টেবলেট বের করে কিছু্ক্ষণ কিছু একটা চিন্তা করল তারপর একটু হেসে টেবলোট দুটো একটা গ্লাসের জুসে মিশিয়ে দিল।এখন শুধু কিছু সময়ের অপেক্ষা,ফাঁদ পেতে বসে আছে এখন শুধু চিড়িয়ার জন্য অপেক্ষা।যদিও শোয়েব শুনলে প্রচণ্ড রেগে যাবে,ও বারবার ধৈর্য্য ধরার কথা বলছিল কিন্তু টয়ার মত একটা মেয়ে চোখের সামনে থাকলে ধৈর্য্য ধরাটা যে কতটা কঠিন সেটা এইমুহূর্তে পিয়ালের থেকে ভাল আর কেউই বুঝতে পারবে না।
পিয়াল: (মনে মনে)সবসময় শোয়েব যা বলবে তাই শুনতে হবে!আমি কি ওর কেনা গোলাম নাকি?আমার যখন যা মন চাইবে তাই করব,আমি কারো বাবার খাইও না পরিও না তাই আমার যা মন চায় আমি তাই করব....
.
জাফির চলে যাওয়ার পর প্রায় আধা ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে,সোমা এখনও পার্কিংয়ের সামনে ঐ একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।হোস্টেলের দিকে যাওয়ার সাহস হচ্ছে কারণ এই ভর দুপুরবেলা ওদিকটার রাস্তাটা একেবারেই ফাঁকা থাকে।এই কয়দিন জাফির সঙ্গে যেত তাই শোয়েবের নামটা প্রায় ভুলেই গিয়েছিল কিন্তু আজ এই মুহূর্তে ঐ নামটা আর তার ভয়টা যেন হাজার গুণ বড় হয়ে দেখা দিয়েছে ওর মনে।ওর ভাবনায় ছেদ পড়ল দূরে কোন বাইকের আওয়াজ শুনে,বাইকের কথা মনে হতেই ভয়টা আরো বেড়ে গেল সোমার,কাঁধের ব্যাগটা হাতে নিয়েই হোস্টেলের দিকে ছুটতে লাগল সোমা।
কিছুদূর যেতেই আবারও থমকে দাঁড়াতে হল ওকে,মেরুন কালারের সেই কারটা আচমকায় ওর সামনে এসে দাঁড়াল আর কারের দরজা খুলে শোয়েব বেরিয়ে এল।একটা হোয়াইট ফোল্ডিং শার্ট আর ব্লু জিন্স পরে আছে,বরাবরের মতই ওকে ড্যাসিং আর হ্যান্ডসাম লাগছে।সোমা মনে মনে না মেনে পারল না যে ছেলেটা আসলেই একটা লেডি কিলার,চোখে মুখে শোয়েবের জন্যে ভয় থাকলেও মনে মনে এক মুহূর্তের জন্যে হলেও ওর উপর ফিদা হয়ে গেল সোমা।সম্বিৎ ফিরতেই নিজেকে ধিক্কার দিল ও আর সাথে সাথেই আগের ভয়টা আবারও গ্রাস করতে লাগল।আশে পাশে তাকিয়ে দেখল রাস্তায় একটা জনমানুষের অস্তিত্বও নেই,ভয়ে ভয়ে একটা ঢোঁক গিলেই হোস্টেলের দিকে দৌঁড় দিল।কিন্তু খুব বেশি দূর এগোতে পারল না,খানিক বাদেই হাতে একটা টান অনুভব করল,তাকিয়ে দেখল শোয়েব ওর হাতটা টেনে ধরেছে।
সোমা: (ঢোঁক গিলে)এ..একি,আ..আপনি আমার হাত ধরেছেন কেন?ছা..ছাড়ুন বলছি...
শোয়েব: সোমা...আমার কথাটা শোন প্লিজ...
সোমা: আপ...নি আমার হাতটা ছাড়ুন প্লিজ...নাহলে কিন্তু আমি চিৎকার করব
শোয়েব: চাইলে করতে পার,কোন লাভ হবে না।শুধু শুধু এনার্জি লস করে লাভ কি?তাই বলছি চুপচাপ আমার কথাটা শোন
সোমা: আহ্ লাগছে...হাতটা ছাড়ুন প্লিজ...
শোয়েব: (হাত ছেড়ে দিয়ে)উফ্!আই এম স্যরি আই এম স্যরি
(শোয়েব হাত ছাড়তেই সুযোগ বুঝে আবার দৌঁড় দিল সোমা কিন্তু শোয়েব আগে থেকেই রেডি ছিল এমন কিছুর জন্য তাই এক ঝটকায় সোমাকে টেনে নিজের একদম কাছে নিয়ে আসলো।সোমা ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল)
শোয়েব: এই মেয়ে,প্রবলেম কি তোমার?আমি কি তোমাকে ভয় পাওয়ার মত কিছু বলেছি?
সোমা: (তোতলাতে তোতলাতে)ন...ন..না...
শোয়েব: তাহলে এভাবে পালাচ্ছিলে কেন?
সোমা: আ..আমি...মা...ম...মানে...
শোয়েব: (রেগে গিয়ে)ভেবেছিলাম ঠাণ্ডা মাথায় তোমাকে বুঝিয়ে বলব কিন্তু তুমিতো...মনে হচ্ছে সোজা আঙ্গুলে ঘি উঠবে না,এই মেয়ে চল আমার সাথে
(সোমার হাত ধরে টানতে টানতে গাড়ির দিকে নিয়ে যেতে থাকে)
সোমা: কি করছেন?ছাড়ুন বলছি...এই যে..আপনাকে বলছি ভাল হচ্ছে না কিন্তু,আমি কিন্তু....
(আর কিছুই বলতে পারল না সোমা কারণ ততক্ষণে শোয়েব ওর মুখে একটা কসটেপ আটকে দিয়েছে আর দুইহাত পেছনে নিয়ে বেঁধেও ফেলেছে)
শোয়েব: চুপ একদম চুপ,কখন থেকে বলছি চুপ করে থাকতে কিন্তু তুমিতো...এখন বোঝ ঠেলা,আমার কথামত চললে তো এসব সহ্য করতে হত না...
শোয়েবের কারটা সোজা এসে ক্লাব হাউজের সামনে এসে দাঁড়ালো,একরকম জোর করেই সোমাকে টেনে গাড়ি থেকে নামালো শোয়েব তারপর কার লক করে সোমাকে টেনে ভেতরে নিয়ে যেতে লাগল।সোমা কিছুতেই ভেতরে যেতে চাইছিল না তাই বাধ্য হয়েই ওকে কোলে তুলে নিল,মেয়েটা কিছু বলতে পারছে না কিন্তু খুব জোরে জোরে হাত-পা ছুড়ছে।ষোয়েবের মাঝে মাঝে ইচ্ছে করছে ওর গালে কষে দুইটা থাপ্পড় লাগিয়ে দিতে কিন্তু অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে রেখেছে,এই মুহূর্তে মাথা গরম করলে কিছুতেই চলবে না যেভাবেই হোক সিচুয়েশন আন্ডার কনট্রোলে নিয়ে আসতে হবে।
ক্লাব হাউজের ভেতরে গিয়ে সোমাকে নিচে নামিয়ে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিল শোয়েব তারপর ওর একদম কাছে গিয়ে আস্তে আস্তে মুখে লাগানো টেপটা খুলে দিল।ভয়ে হাত-পা কাঁপছে সোমার,গলাটাও শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে কিন্তু ব্যাপারটা ঐ শয়তানটাকে বুঝতে দেয়া যাবে না।মনে মনে কয়েকবার নিজেকে বোঝাল সোমা,"ভয় পাস না সোমা,ভয় পেলে শয়তানটা আরো পেয়ে বসবে তাই যেভাবেই হোক নিজেকে শক্ত রাখতে হবে।"তারপর অনেক শক্তি সঞ্চয় করে বলল...
সোমা: অসভ্য,ইতর আমাকে এভাবে তুলে আনার মানেটা কি?
শোয়েব: (হেসে)সোমা...প্লিজ একটু শান্ত হও
সোমা: শান্ত হব!আপনার এত্ত বাড়াবাড়ির পরও মাথাটা কি শান্ত রাখা যায়?
শোয়েব: আমার কথাটা একটু শোন প্লিজ...
সোমা: কি শুনব হ্যাঁ,শোনার মত কোনকিছু বাঁক রেখেছেন আপনি?ভালই ভালই বলছি আমাকে যেতে দিন নাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে? দিলাম...
শোয়েব: কুল ডাউন ম্যাডাম,আমাকে কিছু বলার সুযোগতো দাও...
সোমা: কিচ্ছু শুনতে চাই না আমি,শুধু এখান থেকে বের হতে চাই,প্লিজ আমাকে যেতে দিন...
(এই বলে সোজা দরজার দিকে এগিয়ে গেল সোমা,শোয়েব ছুটে গিয়ে ওকে ধরল তারপর ধাক্কা দিয়ে একদম ওয়ালের সাথে দাঁড় করাল।নিজের দুহাত ওর দুইপাশে দিয়ে একদম ওর গা ঘেঁষে দাঁড়ালো তারপর দাঁতে দাঁত চেপে কলল... 
শোয়েব: এই মেয়ে এত কথা বল কেন তুমি?কখন থেকে বলছি আমার কথাটা একবার শোন,একবার শুনলে কি এমন ক্ষতি হয়ে যাবে শুনি?
সোমা: (ভয়ে কুঁকড়ে গিয়ে)আ..আপনি একটু দূরে সরে দাঁড়ান প্লিজ...
শোয়েব: কেন?আমি এখানে থাকলে কি তোমার গায়ে ফোসকা পড়ছে?
সোমা: আ...আমার খুব আনইজি লাগছে
শোয়েব: কিন্তু তোমাকে ছেড়ে দিলেইতো তুমি পালানোর ট্রাই করবে
সোমা: আর করব না,প্লিস সরে দাঁড়ান...
(শোয়েব হাত সরিয়ে নিল,সোমাও একটু সরে গিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়াল)
সোমা: এবার বলুন কি বলকে চান
শোয়েব: সোম আমি আসলে সেদিনের ঘটনার হন্যে অনেক অনেক স্যরি
(সোমা অবাক হয়ে শোয়েবের দিকে তাকালো)
শোয়েব: আমি জানি আমার মুখে এই কথা শুনে তোমার খুব অবাক লাগছে,কিন্তু বিশ্বাস কর এটাই সত্যি।আমি যখন খুব ছোট তখন আমার মা মারা যান আর বাবা বিজনেস নিয়ে এতটাই বিজি ছিল যে আমি কি করছি না করছি সেদিকে খেয়াল রাখার সময়ও তার ছিল না।তাই আমি বড় হওয়ার সাথে সাথে আস্তে আস্তে সবার কনট্রোলের বাইরে চলে যাই,কখন যে লমিট ক্রস করে ফেলেছি বুঝতেও পারিনি।আসলে এই ভার্সিটিতে আমার ভুল,আমার দোষগুলো ধরিয়ে দেয়ার মত কেউ ছিল না,আমি যাই করতাম সবাই তাতেই সায় দিত।সেদিন যখন তুমি আমাকে থাপ্পড়টা দিলে আর সেই সাথে ঐ কথাগুলো বললে সেদিনই আমি বুঝতে পেরেছি আমি কতটা খারাপ।
সোমা:.....
শোয়েব: (একটু থেমে)আসলে সেদিনের ঐ থাপ্পড়টা আমার জন্য খুবই দরকার ছিল,মা বেঁচে থাকলে হয়ত উনি এই কাজটা অনেক আগেই করে ফেলতেন কিন্তু....
সে যাই হোক তোমাকে অনেক অনেক থ্যাঙ্কস আমাকে উচিত শিক্ষাটা দেয়ার জন্য আর আমার সেদিনের বিহেভের জন্য আমি সত্যিই অনেক স্যরি আর লজ্জিত,পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।
(সোমা যেন পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য নিজের চোখের সামনে দেখছে তাই মুখে কিছুই বলতে পারছে না,আসলে কি বলবে মাথায় আসছেও না)
সোমা: ভাইয়া,আমি কি এখন যেতে পারি?
শোয়েব: ও হ্যাঁ যেতে পার,আর শোন
(সোমা চলেই যাচ্ছিল,আবার থমকে দাঁড়াল)
সোমা: জ্বি ভাইয়া?
শোয়েব: কোন হেল্প লাগলে নিঃসংকোচে আমাকে জানাবে কিন্তু...
সোমা: জ্বি...
সোমা চলে গেল,হঠাৎ ক্লাব হাউজের পেছনের দিকে বিভিন্ন জায়গা থেকে শোয়েবের বন্ধুরা বেরিয়ে আসল।শোয়েব হেসে ওদের দিকে এগিয়ে গেল
শোয়েব: কিরে,কেমন দিলাম?
রিকি: ফার্স্ট ক্লাস ব্রো
শোয়েব: কাজ হবে বলছিস?
জিসান: আরে হবে না মানে!বল হয়ে গেছে,মেয়েটাতো তোর সব কথাই বিশ্বাস করে নিয়েছে
রিকি: নেবে নাই বা কেন?আফটার অল শোয়েব দ্য গ্রেটের পারফরমেন্স বলে কথা।বাস্তব নাকি অভিনয় কারো ধরার সাধ্য আছে নাকি?
শোয়েব: হয়েছে হয়েছে,এবার চল যাওয়া যাক।চিড়িয়া খাঁচায় ধরা দেবে কিনা সেটা সময় হলেই বোঝা যাবে এটা নিয়ে এত ভেবে লাভ নেই...
হঠাৎই দরজার কাছে দাঁড়িয়ে কেউ হাততালি দিল,ওরা সবাই ওইদিকে ফিরে তাকালো,দেখল রিশান দাঁত বের করে হাসছে।হাততালি দিতে দিতেই ও ওদের দিকে এগিয়ে আসল...
শোয়েব: তুই এখানে?
রিশান: অপজিসন পার্টির মুভমেন্টের দিকে খেয়াল রাখছিলাম
শোয়েব: তা কি বুঝলি?
রিশান: মানতেই হচ্ছে ভেরি ইন্টেলিজেন্ট মুভ বাট...
শোয়েব: বাট হোয়াট?
রিশান: আশে পাশে কি হচ্ছে কেউ আছে কিনা সেদিকেও একটু খেয়াল রাখা উচিত ছিল
শোয়েব: কি বলতে চাইছিস?
(রিশান ফোনটা বের করে একটা ভিডিও অন করে ওদের দিকে ধরল যাতে এতক্ষণ শোয়েব আর ওর ফ্রেণ্ডরা যা যা বলছিল সব রেকর্ড হয়ে গেছে।শোয়েব আর ওর ফ্রেণ্ডরা ছুটে গিয়ে ওর ফোনটা কেড়ে নিতে গেল)
রিশান: (হেসে)ভুলেও এই কাজ করিস না,করে কোন লাভও হবে না
শোয়েব: মানে?
রিশান: ভিডিওটা আমি অলরেডি কয়েকজনকে এম এম এস করে দিয়েছি সো এই ফোন ভেঙ্গে ফেললেও কোন লাভ হবে না
শোয়েব: রিশান,কাজটা কিন্তু তুই ঠিক করলি না
রিশান: Everything is fair in love and war and it's an war for me.সো এই ওয়্যারটা জেতার জন্যে যা করতে হয় আমি সব করব
শোয়েব: রিশান ভুলে যাস না,এই ক্যাম্পাসের আমিই রাজা আর রাজার সাথে পাঙ্গা নিতে আসলে তুইও আর আস্ত থাকবি না...
রিশান: কে রাজা আর কে প্রজা সেটা সময় আসলেই দেখা যাবে
শোয়েব: (রেগে গিয়ে)You will have to pay for this Rishan...
রিশান: তোর আর আমার মধ্যে পার্থক্য কি জানিস?
শোয়েব: কি?
রিশান: তুই কথা বেশি বলিস বাট কাজ করিস কম আর আমি ঠিক তোর উল্টোটা।এতদিন তোর সাথে টক্কর দেয়ার মত কেউ ছিল না বলেই তুই নিজেকে রাজা ভেবে বসে আছিস কিন্তু এখন আমি আছি so be ware of it....

Reactions

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ