লাভ গেমস্
লেখকঃ Sanjida Afrin Shetu
পর্বঃ ০৯
ফরিদপুর খুব ছোট্ট একটা শহর তাই এখানে তেমন লাক্সারিয়াস কোন রেস্টুরেন্ট খুবই রেয়ার।সোমা যেই রেস্টুরেন্ট টাতে বসে আছে সেটা ওর খুব ফেভারিট,কলেজে থাকতে বন্ধুদের সাথে খেতে আসলে এখানেই আসত,একই রেস্টুরেন্টে বার বার খেতে আসতে ওরা আপত্তি করলেও সোমার জিদের কাছে হার মানতে বাধ্য হত।ওর কাছে এখানকার যে জিনিসটা বেশি ভাল লাগে সেটা হল জায়গাটা খুব নিরিবিলি আর খুব টিপটপ করে সাজানো,তুহিনের সাথে দেখা করার জন্যও তাই এই রেস্টুরেন্ট টাই বেছে নিয়েছে সোমা,কে জানে বিয়ের পর হয়ত আর কখনই এখানে এভাবে আসা সম্ভব হবে না,তখন হয়ত হাজবেন্ডের ইচ্ছেমত তার কোন পছন্দের রেস্টুরেন্টেই যেতে হবে😞
সোমার এখানে আসা এক ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে কিন্তু তুহিনের এখনও কোন দেখাই নেই।সোমা এসেই ওকে ফোন দিয়েছিল,তুহিন বলেছিল আসছে তারপর আর কোন কথা হয়নি।সোমার আর ফোন দিতে ইচ্ছে করছে না তাই এক কোণায় চুপচাপ বসে আছে।আরও কিছু্ক্ষণ পর তুহিন হন্ত দন্ত হয়ে ছুটে আসল
তুহিন: স্যরি স্যরি স্যরি,আসলে ঢাকা শহরের জ্যামের কি অবস্হা তাতো আপনি জানেনই তাই....
সোমা: (অবাক হয়ে)আপনি কি এখন ঢাকা থেকে আসছেন?
তুহিন: হ্যাঁ আসলে আজ রাত ২টায় আমার ফ্লাইট,লাস্ট ফর্মালিটিজ গুলো পূরণ করার জন্যেই....
সোমা: এমা তাহলে আপনি আমাকে বললেন না কেন?
তুহিন: আপনি দেখা করতে চাইলেন আর আমি নিষেধ করব!
সোমা: কিন্তু তাই বলে আমার জন্যে এত কষ্ট করলেন কেন?
তুহিন: এই প্রথম আপনি আমার থেকে কিছু চাইলে,আপনার জন্যে যদি এটুকুও করতে না পারি তাহলে বিয়ের পরে আপনার সব চাওয়া পূরণ করব কিভাবে?
(সোমা অবাক হয়ে তুহিনের দিকে তাকালো,মনে মনে বলল নাহ্ এই মানুষটাকে কষ্ট দিতে পারব না,আগে ভাগেই সব সত্যি বলে দিতে হবে)
সোমা: দেখুন তুহিন আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই...
তুহিন: আমাকে?কি বলবেন বলেন...
সোমা: (একটু নার্ভাস হয়ে)আ..আসলে আমি আমা..দের বি..য়ের ব্যাপারে...
তুহিন: (গালে হাত দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে)তাই!আচ্ছা ঠিক আছে,বলেন কি বলবেন...
(তুহিনকে এভাবে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সোমা আরও নার্ভাস হয়ে গেল,ভয়ে গলা শুকিয়ে আসল আর দরদর করে ঘামতে লাগল)
তুহিন: (অবাক হয়ে)আরে,আপনি এত ভয় পাচ্ছেন কেন?আমি কি বাঘ নাকি ভাল্লুক যে আমাকে এত ভয় পেতে হবে!(বলেই অট্টহাসি দিতে লাগল)
সোমা: (লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল)
তুহিন: কি আশ্চর্য!আপনি এমন লজ্জা পাচ্ছেন কেন?আমাদের বিয়েটাতো এখনও হয়নি,হলে নাহয় নতুন বৌ হিসেবে লজ্জা পাওয়ার দরকার ছিল,এখন ওটার কোন দরকার নেই,ওটা আলমারিতেই তুলে রাখুন😉
সোমা: আ..আসলে আমি...
তুহিন: ওয়েট ওয়েট,এই আপনি বিয়েটা ভাঙ্গতে চাইছেন নাতো?(আবারও জোরে জোরে হাসতে লাগল)
সোমা: (অবাক হয়ে তুহিনের দিকে তাকিয়ে)উনি জানলেন কি করে?(মনে মনে)
(সোমার মুখের দিকে তাকিয়ে তুহিনও ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে)
তুহিন: স্যরি মিস সোমা,ফাইজলামিটা মনে হয় একটু বেশিই হয়ে গেছে😒
সোমা: মাম..মানে?
তুহিন: মানে আমিতো জাস্ট একটু ফান করছিলাম কিন্তু আপনি মনে হয় ব্যাপারটাকে খুব সিরিয়ালি নিয়েছেন...
সোমা: না মানে আসলে আমি...
তুহিন: ইট'স ওকে,আচ্ছা ওসব বাদ দেন এখন বলেন আপনি কি বলতে চাইছিলেন
(সোমা আবারও নার্ভাস হয়ে গেল,তুহিন বুঝতে পেরে বলল)
তুহিন: কি হল বল...
(সোমার তুহিনের চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস হল না তাই মাথা নিচু করেই কথা বলা শুরু করল)
সোমা: আ..আসলে এই বিয়ের জন্যে আমি রেডি না,মানে বিয়েটা আমি করব কিনা বুঝতেই পারছি না।দেখুন মি.তুহিন আমারর আসলে I need some time আসলে বিয়েটা সারাজীবনের একটা বন্ধন,জীবনের সবচেয়ে বড় ডিসিশন তাই এমন হুটহাট করে আমি সিদ্ধান্ত নিতে চাই না।আপনার সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা,আপনাকে কখনও দেখিনি পর্যন্ত বিয়ের আগে আমি আপনার ব্যাপারে সবকিছু জানতে চাই,আপনাকে বুঝতে চাই তারপর একটা ডিসিশন নিতে চাই।আমি চাই না বিয়ের পর নিজের নেয়া ডিসিশনে আমার বিন্দুমাত্র আফসোস হোক,I need to be clear about it...
(কথা শেষ করে বেশ কিছু্ক্ষণ ওভাবেই মাথা নিচু করে থাকল সোমা কিন্তু তুহিনের কোন সাড়া-শব্দ না পেয়ে মাথা তুলে তাকালো।কিন্তু কোথায় তুহিন?সামনের চেয়ারটা একেবারে খালি,ওকেতো কোথাও দেখা যাচ্ছে না।সোমা চোখ বড় বড় করে চারপাশে দেখতে লাগল)
সোমা: (মনে মনে)তারমানে কি উনি আমার সব কথা শুনে চলে গেলেন!
তুহিন: স্যরি স্যরি স্যরি,আমার একটা আরজেন্ট ফোন এসেছিল তাই...
সোমা: তারমানে আপনি কিছুই শোনেননি?
তুহিন: কি শুনব?আপনি কি কিছু বলছিলেন?
সোমা: হ্যাঁ মানে না মানে...
তুহিন: কি মানে মানে করছেন?আচ্ছা শোনেন,আমারও আপনাকে কিছু বলার ছিল...ক্যান আই?
(সোমা সম্মতি দিল)
তুহিন: সোমা,আপনি কি জানেন আমাদের এংগেজমেন্টটা এত তড়িঘড়ি করে কেন হয়ে গেল?
সোমা: না তো...
তুহিন: কখনও জানতে ইচ্ছে করেনি?
সোমা: না
তুহিন: আসলে যেদিন আপনার ছোট মামা আমাদের বাড়িতে আপনার ছবিটা নিয়ে আসলো আমি একবার দেখেই চিনতে পেরেছিলাম আপনিই সে যাকে আমি এতদিন ধরে খুঁজছিলাম
সোমা: খুঁজছিলেন মানে?
তুহিন: বুঝতে পারলেন না তাইতো?আচ্ছা আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি।আপনাকে আমি প্রথম দেখেছি বছর খানেক আগে
সোমা: (অবাক হয়ে)কোথায়?আমিতো কিছুই জানিনা
তুহিন: আপনি জানবেন কিভাবে?আপনিতো আর আমাকে দেখেননি...
সোমা: তাহলে?
তুহিন: বছর খানেক আগে একটা প্রোজেক্টের কাজে আমি যশোর যাচ্ছিলাম,কুষ্টিয়ার কাছাকাছি একটা জায়গায় ট্রাফিক জ্যামে পড়ে আমাদের বাসটা বেশ খানিক্ষণ আটকা পড়ে ছিল।হঠাৎই আমার চোখটা আটকে গেল অপজিট ডাইরেকশন থেকে আসা একটা বাসের জানালায়।সাদা জামা পরা একটা মেয়ে চুপচাপ বাইরে তাকিয়ে আছে,গরমে ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে কিন্তু তবুও আমি চোখ ফেরাতে পারছিলাম না।মেয়েটা কে ছিল জানেন?
সোমা: আমি?
তুহিন: হুম।কিন্তু সময়টা যেন খুব দ্রুতই চলে গেল,ট্রাফিক ক্লিয়ার হওয়ার সাথে সাথেই আপনি আমার চোখের আড়ালে চলে গেলেন।সেদিন থেকে আমি প্রতিটা মুহূর্তে আপনাকে অনুভব করেছি,সারাক্ষণ সব জায়গায় খুঁজেছি আপনাকে কিন্তু কোত্থাও পাইনি...
(তুহিনের কথা শুনে সোমা একেবারে স্তব্ধ হয়ে গেছে,কি বলা উচিত বুঝতে পারছে না)
তুহিন: স্যরি আমি শুধু নিজের কথাই বলে যাচ্ছি,আপনি কি যেন বলতে চাইছিলেন সেটাতো জানাই হল না...
সোমা: আসলে আমার আর কিছু বলার নেই
তুহিন: কেন?
সোমা: যা জানার ছিল সব জানা হয়ে গেছে,আর কিছু জানতেও চাইনা কিছু বলতেও চাইনা...
(তুহিনের ফোনটা আবারও ভাইব্রেট করে উঠল)
তুহিন: স্যরি আই হেভ টু রিসিভ দিস কল ইট'স আরজেন্ট
সোমা: ওকে...
(তুহিন কথা শেষ করে আবারও চেয়ারে এসে বসল)
সোমা: আই থিঙ্ক আপনার এখন ঢাকায় ফেরা উচিত,শেষে ইমিগ্রেশনের কাজে কোন ঝামেলা না হয়ে যায়...
তুহিন: যেতে তো ইচ্ছে করছে না কিন্তু তবুও যেতে হবে।টেনশন নিয়েন না,কয়েকদিন পরেইতো ফিরে আসব আর এসেইতো আমাদের বিয়ে...
.
(দুদিন পর)
রাজধানীর একটি বিলাসবহুল হোটেলে বসে আছে পিয়াল,ওর ঠিক সামনের চেয়ারটাতেই বসেছে টয়া।পিয়ালের সাথে ওর রিলেশনশিপটার আজকে দুই বছর পূর্ণ হল,সেদিনের পর থেকে আর একদিনও টয়ার কোন ক্ষতি করার চেষ্টা করেনি পিয়াল,কখনও খারাপ নজরে ওর দিকে তাকায়নি পর্যন্ত।কিন্তু আজকে কিছু একটা করতেই হবে তাই এই হোটেলেরই দ্বিতীয় তলায় একটা লাক্সারিয়াস স্যুইট বুকিং দিয়েছে ও যার ব্যাপারে টয়ার বিন্দুমাত্রও ধারণা নেই।
লাঞ্চের মেইন কোর্স শেষ করতেই ওয়েটার ডেজার্ট আর তার সাথে ফ্রুটজুস নিয়ে আসল,টয়া ওর ফেভারিট পাইনএ্যাপেল জুসে একটা চুমুক দিতেই পিয়ালের মুখে হাসি ফুটল।কয়েক সেকেণ্ডের মধ্যেই টয়া সেন্সলেস হয়ে গেল আসলে ওয়েটারকে বলে আগে থেকেই টয়ার জুসে কড়া ডোজের ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে দিয়েছিল।
টয়া সেন্সলেস হতেই পিয়াল শয়তানির হাসি হেসে ওকে কোলে তুলে নিল তারপর সোজা চলে গেল নিজেদের স্যুইটে।ডোর লক করে টয়াকে নিয়ে সোজা বিছানায় চলে গেল,মুচকি হেসে গলায় পেঁচিয়ে রাখা ওড়নাটা একটাতে খুলে ছুড়ে ফেলে দিল তারপর আস্তে আস্তে ওর দিকে এগিয়ে গেল।গায়ের কামিজটা অর্ধেক খুলেই আবার থেমে গেল পিয়াল,টয়ার নিষ্পাপ মুখটার দিকে চোখ পড়তেই থমকে দাঁড়াল,এই দুই বছরে মেয়েটাকে সত্যি সত্যিই অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছে তাই ওর কোন ক্ষতি করা এখন আর ওর পক্ষে সম্ভব নয়।
কিন্তু আজকেও যদি কিছু না করতে পারে তাহলে শোয়েব,জিসান,রিকি আর ওর অন্যসব বন্ধু ওকে আবারও লুজার বলে ক্ষেপাবে,বলবে একটা মেয়ের কেনা গোলাম হয়ে গেছে,ওর পুরুষত্বের উপর আঙ্গুল তুলবে এটা কিছুতেই হতে দেয়া যাবে না...
টয়ার পাশ থেকে উঠে বেশ কয়েকবার রুমের এপাশ থেকে ওপাশে পায়চারী করল তারপর কিছু একটা ভেবে আবারও টয়ার কাছে ফিরে গেল।পরনের শার্ট আর প্যান্ট খুলে শুধুমাত্র একটা থ্রি-কোয়ার্টার পরে টয়ার পাশে শুয়ে পড়ল।ক্যামেরাটার অটো টাইমার অন করে টয়ার পরনের জামাটা একটু এলোমেলো করে দিয়ে বেশ অন্তরঙগভাবে কয়েকটা ছবি তুলল তারপর ক্যামেরা অফ করে টয়ার পাশেই শুয়ে পড়ল।অপলক নয়নে ওর ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকল...
টয়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে সময়টা যে কখন পেরিয়ে গেল কিছুই বুঝল না পিয়াল,ঘড়িতে সন্ধ্যা ৭টা বাজতেই মনে পড়ল আর ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই টয়ার ঘুম ভেঙ্গে যাবে।ঝটপট নিজে রেডি হয়ে ওকেও রেডি করে ফেলল পিয়াল তারপর সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে ওকে কোলে করেই বেরিয়ে গেল।গাড়ির কাছে গিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে ওকে পাশের সিটে বসিয়ে দিল তারপর খুব রোমান্টিক একটা গান প্লে করে দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল।কিছুক্ষণের মধ্যেই টয়ার ঘুম ভেঙ্গে গেল,মাথাটা কেমন যেন ঝিম ঝিম করছে,ও গাড়িতে কখন আসল কিছুতেই মনে পড়ছে না।লাস্ট যে কথাটা মনে আছে সেটা হচ্ছে ওরা দুজনে লাঞ্চ করছিল,এখনতো সন্ধ্যা তাহলে এতটা সময় ও কি করছিল!এমন হাজারো প্রশ্ন মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে টয়ার...
পিয়াল: গুড মর্নিং স্যুইটহার্ট,এখন কেমন আছো?
টয়া: কেন আমার আবার কি হবে?আচ্ছা পিয়াল আমি এখানে কখন আসলাম আমিতো তোমার সাথে লাঞ্চ করছিলাম তাহলে...
পিয়াল: ওহ্ ওয়েটার ভুল করে আমাদের টেবিলে এ্যাপেল জুসের বদলে ওয়াইন দিয়ে দিয়েছিল আর তুমি ভুল করে ওটা খেয়ে নিয়েছিলে আর তারপরই...
টয়া: কিন্তু আমিতো কখনও এ্যাপেল জুস খাইনা,আমিতো শুধু পাইনএ্যাপেল জুস খাই...
পিয়াল: সেটাতো আমিও ভাবছি,তুমি হঠাৎ আজকে এ্যাপেল জুসটাই খেতে চাইলে কেন!
টয়া: আই কান্ট বিলিভ দিস
পিয়াল: তবে কি আমি মিথ্যে বলছি?
টয়া: এই না না,তুমি কেন মিথ্যে বলতে যাবে,হয়ত আমিই ভুলে গেছি জানোতো আমার মাথাটা এখনও কেমন ভারি ভারি লাগছে আর হালকা ঝিম ঝিম করছে
পিয়াল: ওয়েট...এটা ধর
টয়া: এটা কি?
পিয়াল: লেবু আর তেঁতুল
টয়া: এটা দিয়ে কি হবে?
পিয়াল: রুমে গিয়ে শরবত করে খাবে তাহলেই সব ঠিক হয়ে যাবে...
(রাত ১টা)
রেডরোজ বারে শোয়েব আর ওর সব বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিচ্ছে,একটা মেয়ে খুব শর্ট একটা ড্রেস পরে ডান্স করছে সবাই সেদিকে তাকিয়ে একের পর এক পেগ শেষ করছে।ঠিক ঐ সময়ই ওখানে পিয়াল আসল
শোয়েব: কি রে এত লেট করলি যে
পিয়াল: ঐ টয়াকে নামিয়ে দিয়ে বাসায় যেতে দেরি হয়ে গিয়েছিল তাই...
রিকি: শালা তোর মত লুজার আমি একটাও দেখিনাই
জিসান: তুই আমাদের গ্রুপটার মান সম্মান সব ধুলায় মিশিয়ে দিল ছি ছি ছি
পিয়াল: কেন কি করেছি আমি?
রিকি: কি করিসনি বল,সামান্য একটা মেয়ের জন্য এমন পাগল হয়ে গেলি!তুই তো পুরুষ নামের কলঙ্ক...
পিয়াল: মুখ সামলে কথা বল রিকি
সানি: ও মুখ সামলে কথা বলবে কেন?ওই সালা,দুই বছর ধরে এক মাইয়ার পেছন পেছন ঘুরছিস তোর জায়গায় আমি হলে এতদিনে আরও দুই চারটা জিএফ হয়ে যেত
পিয়াল: কিন্তু আমিতো ওকে অনেক ভালোবাসি তাই আর কাউকে দরকার নেই
রিকি: ওই সালা তুই বাইর হ আর কক্ষণও আমাদের গ্রুপে আসবি না
শোয়েব: আহ্ রিকি,একটু থামতো
সানি: কেন ও তো ঠিকই বলেছে,ওই ব্যাটা ভালোবাসিস ভাল কথা কিন্তু তাি বলে এখনও ওই মেয়েরে বিছানায় নিতে পারলি না!তোর জায়গায় আমি হলে কবেই...
পিয়াল: কি যা-তা বলছিস!
জিসান: ও...তোর কাছে এখন এসব যা-তা লাগছে তাইনা?তুই আসলেই একটা লুজার আমারতো তোর পুরুষত্ব নিয়ে সন্দেহ হচ্ছে
পিয়াল: জিসান..😡😡
সানি: ওর উপর চিল্লালেই কি সবার মুখ বন্ধ করতে পারবি?তুই কি আমরা সবাই জেনে গেছি,এখানে এসেছিস কেন?যা টয়ার ওড়নার নিচে লুকিয়ে পড়...
(পিয়াল রেগে মেগে ক্যামেরাটা বের করল,ও জানত এরা আজকে ওর সাথে এমনই করবে।গত কয়েকদিন ধরেই সবাই ওকে এভাবেই ক্ষেপাচ্ছিল আর ওদের মুখ বন্ধ করতেই আজকে এতকিছু করতে হয়েছে ওকে।ক্যামেরাটা বের করে শোয়েবের হাতে ধরিয়ে দুল পিয়াল)
পিয়াল: (রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে)নে দেখ,আমার পুরুষত্বে না তোদের সন্দেহ আছে,এবার দেখ আমি কি...
(ক্যামেরার ছবিগুলো একটা একটা করে সরিয়ে দেখেই পিয়ালকে জড়িয়ে ধরল)
শোয়েব: আরে মেরে শের,বুকে আয় দোস্ত,এতদিনে তুই আমার লেভেল ছুঁয়ে ফেললি আজ আমি অনেক অনেক খুশি...
(শোয়েবের কথা শুনে সবাই বেশ অবাক হয়ে গেল,শোয়েব ওদের দিকে ক্যামেরাটা এগিয়ে দিল।সবাই একবার করে ছবিগুলো দেখেই পিয়ালকে সাবাশি দিতে লাগল)
শোয়েব: সাইলেন্স সাইলেন্স,আজ এই বারে যার যত বিল আসবে সব আমি দিব,আমাদের প্রিয় বন্ধু পিয়ালের জন্য আজ ডাবল সেলিব্রেশন হবে
(সবাই আনন্দে চিৎকার করে উঠল)
(পরদিন ভার্সিটিতে)
মাঠের এক কোণায় শোয়েবরা আড্ডা দিচ্ছে
জিসান: দোস্ত শুনলাম সোমারর নাকি দুদিন পরেই বিয়ে?
শোয়েব: কই শুনলি?
জিসান: তুই বোধহয় জাফিরের কথা ভুলে যাচ্ছিস
শোয়েব: ওহ হ্যাঁ তোর ছোট ভাইতো আবার ওর বেস্টফ্রেণ্ড
জিসান: হ্যাঁ ও কালকেই সোমাদের বাড়ি রওনা দেবে
শোয়েব: হুম ভাল
পিয়াল: দোস্ত তোর কি কিছুই মনে হচ্ছে না?
শোয়েব: কোন ব্যাপারে?
পিয়াল: মেয়েটার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে তাই বলছিলাম হাজারহোক ও তো তোর জিএফ ছিল তাইনা?
শোয়েব: শাট আপ পিয়াল,ওই রকম জিএফ আমার আরও ডজন খানেক ছিল বুঝেছিস?
পিয়াল: ওহ্
শোয়েব: তবে হ্যাঁ এই মেয়েটা একটু অন্যরকম ছিল,বাঁকিদের থেকে একেবারেই আলাদা তাই ওকে পটাতেই আমাকে সবচেয়ে বেশি কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে
পিয়াল: তাহলে?
শোয়েব: তাহলে আর কি ওর কাছে আমার যা পাওয়ার ছিল আমি পেয়ে গেছি তাই এখন ওর কি হল না হল আমার ওসব জানার দরকার নেই
আর তাছাড়া সোমা প্রেগনেন্ট আর এত তাড়াতাড়ি বাচ্চার বাবা হওয়ার কোন ইচ্ছেই আমার নেই বুঝলি?ওর দেহটাকে পেতে চেয়েছিলাম,পেয়ে গেছি এখন আর ওকে আমার দরকার নেই..
(হঠাৎ পেছন থেকে)
রিশান: তুই মুখে বললেই তো আর আমি বিশ্বাস করছি না
(সবাই রিশানকে দেখে উঠে দাঁড়ালো)
শোয়েব: কি বলতে চাইছিস তুই?
রিশান: একটা কাজে কয়েকদিন ঢাকার বাইরে ছিলাম তাই কিছুই জানতে পারিনি,আজ ক্যাম্পাসে আসতেই শুনলাম তোর আর সোমার কথা
শোয়েব: (হেসে)হুম তা শর্তের কথাটা মনে আছে তো?
রিশান: তা আছে কিন্তু...
শোয়েব: কিন্তু কি?দেখ রিশান বাজিতে তুই হেরে গেছিস সো...
রিশান: তুই বললেইতো আর সবকিছু মেনে নেয়া যায় না,এমনও তো হতে পারে তোদের মধ্যে কিছুই হয়নি তুই সব বানিয়ে বানিয়ে...ইউ নো শোয়েব আই ওয়ান্ট প্রুফ
শোয়েব: (হেসে)আমি জানতাম তুই এই কথাই বলবি,ওকে ফাইন প্রমাণ তুই কাল সকালেই পেয়ে যাবি
রিশান: ওকে আই উইল ওয়েট ফর দ্যাট
শোয়েব: আর শোন,টাকা রেডি রাখিস কিন্তু আমি আবার বার বার চাইতে পারব না...
(রিশান চলে গেল)
জিসান: আচ্ছা তুই কোন প্রমাণের কথা বলছিলি রে?
শোয়েব: বলছি...তোর মনে আছে তোর বার্থডেতে যেই রুমটাতে আমি সোমাকে নিয়ে গিয়েছিলাম সেই রুমটাতে আমি আগের রাতে দুজন লোককে নিয়ে গিয়েছিলাম?
জিসান: হ্যাঁ মনে আছে
শোয়েব: ওরা কেন গিয়েছিল জানিস?
জিসান: কেন?
শোয়েব: ওই রুমে একটা হিডেন ক্যামেরা ফিট করার জন্য
জিসান: হোয়াট😮
শোয়েব: হুম আমি জানতাম রিশান প্রমাণ চাইবে তাই...
রিকি: ওয়াও ম্যান..ইউ আর জাস্ট আনবিলভেবল
শোয়েব: জিসান,চলতো...
জিসান: কোথায়?
শোয়েব: তোর বাসায়,ভিডিও ক্লিপটা নিয়ে আসি।কাল সকালেই ওই রিশানটার মুখের উপর ছুড়ে দিব...
0 মন্তব্যসমূহ