লাভ গেমস্ - পর্ব ০৪

লাভ গেমস্ - পর্ব ০৪

লাভ গেমস্

লেখকঃ Sanjida Afrin Shetu

পর্বঃ ০৪

হোস্টেলে পৌঁছে নিজের রুমে ঢুকেই মেঝেতে বসে পড়ল সোমা,তারপর পাশে রাখা পানির বোতলটা নিয়ে এক নিঃশ্বাসে পুরো পানিটা শেষ করে ফেলল।ওর কাণ্ড দেখে ফারিয়া আর জেরিনতো পুরো অবাক,ওরা ছুটে এসে ওকে চেপে ধরল
ফারিয়া: কিরে,তুই হঠাৎ এমন করছিস কেন?কি হয়েছে?
(সোমা কিছুই বলতে পারছে না শুধু জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছে)
জেরিন: কি রে,কথা বলছিস না কেন?কি হয়েছে?কেউ কিছু বলেছে তোকে?
সোমা: ও...ওই শো...শো..য়েব ভা...ভাই...য়া...
(শোয়েব নামটা শুনেই ফারিয়া আর জেরিন যেন চমকে উঠল।নিউ কামার হিসেবে ওদেরকেও যে আজ শোয়েব আর ওর পুরো গ্যাংয়ের অত্যাটার সহ্য করতে হয়েছে...)
জেরিন: উ..উনি কি তোর সাথে খা..রাপ কিছু করেছেন?
সোমা: চেষ্টা করেছিল বাট পারেনি
ফারিয়া: চেষ্টা করেছিল মানে?কি হয়েছে বলতো...
(সোমা ওদেরকে পুরো ঘটনা সব খুলে বলল,সব শুনে ফারিয়াতো রেগে মেগে অস্থির পারলে এখনই শোয়েবকে কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলে,অবস্থা বেগতিক দেখে জেরিন আর সোমা ওক শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে)
ফারিয়া: ওই তোরা আমাকে ছাড়,ঐ বেয়াদপটাকে তো আজকে আমি শিক্ষা দিয়েই ছাড়ব,মেয়েদের সাথে অসভ্যতামি!কত্ত বড় সাহস!সোমা তুই একদম চিন্তা করবি নে,ঐ ছেলেকে এর উচিত শিক্ষা দিয়ে তবেই আমি দম নিব...
সোমা: তুই কোত্থাও যাবি না,আমার যা বলার আমি ওকে বলে এসেছি তাই তোদেরকে এসবের মধ্যে না জড়ালেও চলবে
ফারিয়া: না চলবে না,এই ছেলেকে তো আমি শিক্ষা দিয়ে তবেই ছাড়ব।
সোমা: তুই একটু বোঝার চেষ্টা কর প্লিজ,এই জেরিন ওকে একটু বোঝা না প্লিজ...
জেরিন: ফারিয়া,তুই একটু শান্ত হ প্লিজ।দেখ যা হয়ে গেছে তা নিয়ে আর বেশি ঘেঁটে লাভ নেই
ফারিয়া: (অবাক হয়ে)মানে?ওকে কি এভাবেই ছেড়ে দেব!
জেরিন: আমি ছাড়তে বলছি না,দেখ সোমার যা বলার ওকে বলে এসেছে।এমনকি একটা থাপ্পড়ও দিয়ে এসেছে তাই বলছি আর বাড়াবাড়ি করিস না
ফারিয়া: কিন্তু...
জেরিন: কোন কিন্তু না,আপাতত এই ঘটনা এখানেই শেষ।তবে হ্যাঁ  এরপর যদি উনি বাড়াবাড়ি করেন তাহলে আমরাও আর উনাকে ছেড়ে কথা বলব না...
ফারিয়া: ওক্বে তাই হবে।আরে সোমা মেরি জান,তুই আর অমন মন খারাপ করে থাকিস নাতো।তুই কোন চিন্তা করিস না,আমরাতো আছিই তোর পাশে কেউ আর তোর কোন ক্ষতি করতে পারবে না...
(রাতে)
রাত ঠিক কয়টা বাজে জানা নেই শোয়েবের,কিন্তু বুঝতে পারছে গভীর রাত।এত রাত অবধি নরমালি কখনই জেগে থাকে না ও কিন্তু আজকের ব্যাপারটা অনেকটা গোলমেলে,সেই কখন থেকে বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না।চোখটা বন্ধ করলেই সেই দৃশ্যটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে আর কানেও থাপ্পড়ের বিকট শব্দটা বাজছে।একটা মেয়ে ওকে সবার সামনে থাপ্পড় মেরেছে ব্যাপারটা ও কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।আরো কিছু্ক্ষণ এপাশ ওপাশ করে বিছানায় উঠে বসল শোয়েব,তারপর নেমে বেলকনির দিকে এগিয়ে গেল।দূরে কোথাও থেকে আযানের মিষ্টি ধ্বনি ভেসে আসছে,শোয়েব দূরের ঐ আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল...
"মিস সোমা,তুমি ভেব না তোমাকে আমি এমনি এমনি ছেড়ে দিব।এই একটা ভুলের মাসুল তোমাকে সারাজীবন ধরে দিতে হবে।আজ এই মুহুর্তে অামি প্রতিজ্ঞা করছি যেই গালে তুমি আজ হাত তুলেছো সেই গালেই তুমি স্বেচ্ছায় তোমার ঠোঁটের পরশ বুলাবে এবং তা খুব শীঘ্রই আর যেই ওড়নাটা তোমার বুক থেকে নামানোর অপরাধে এত্ত কাহিনী করলে সেই ওড়নাটাই তুমি নিজ হাতে খুলে নিজেকে আমার কাছে সমর্পণ করবে।আর তখন আমি খুবলে খুবলে খাব তোমাকে,তুমি বুঝতেই পারবে না কখন তুমি আমার পাতা ফাঁদে পা দিয়ে দিয়েছ...."
(সকালে)
ফারিয়া আর জেরিন সকাল সকাল ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে বসে আছে কিন্তু সোমার মধ্যে কোন তাড়া দেখা যাচ্ছে না।বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে টাইমপাস করে যাচ্ছে,মনে হচ্ছে যেন ক্লাসে যাওয়ার কোন ইচ্ছেই ওর নেই।ওর এমন দেরি দেখি ফারিয়া আর জেরিন এগিয়ে গিয়ে ওর কাঁধে হাত রাখল
জেরিন: কি রে,রেডি হচ্ছিস না কেন?
ফারিয়া: আমরা কিন্তু জানি তুই কি ভাবছিস...
(সোমা এবার মুখ তুলে ওদের দাকে তাকালো)
ফারিয়া: (মুচকি হেসে)তুই শোয়েবকে নিয়ে ভয় পাচ্ছিস না রে?
সোমা: না মানে...হ্যাঁ...
ফারিয়া: একদম ভয় পাবি না,আমরা তো আছি নাকি?
জেরিন: হুম,কেউ তোর গায়ে একটা আঁচড় দিয়ে তো দেখুক আমরা কাউকে ছাড়ব না...
সোমা: কেন কি করবি তোরা?
ফারিয়া: কি করব না করব সেটা পরে দেখিস,স্কুলে থাকতে আমি কিন্তু কারাটেতে পিঙ্ক বেল্ট পেয়েছিলাম।সো 
ডোন্ট আন্ডার ইস্টিমেট দ্য পাওয়ার অব  ফারিয়া...
(ফারিয়ার কথা শুনে সোমা আর জেরিন দুজনেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল তারপর হাসি থামিয়ে জেরিন বলল)
জেরিন: হয়েছে হয়েছে,আর হাসতে হবে না।এবার কি ম্যাডাম রেডি হয়ে আসবেন,নাকি আজকেও লেট লতিফের তকমাটা আমাদের কপালেই জুটবে?
(ভার্সিটিতে)
চুপচাপ মেইনগেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়লো ওরা,তিনজনের একজনও কোন কথা বলছে না।কেউ না বললেও আমরা ঠিকই বুঝতে পারছিল যে তিনজনই অসম্ভব ভয় পাচ্ছে।ভয়ে ভয়ে আরো কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে যখন নিজ নিজ ডিপার্টমেন্টের দিকে যাওয়ার দরকার হল তখনও জেরিন আর ফারিয়া সোমাকে ছেড়ে গেল না,ওকে ওর ক্লাসরুম পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে তবেই ফেরার পথ ধরল।সোমাকে ক্লাসরুমে রেখে দরজা দিয়ে বের হতেই কারো সাথে ফারিয়ার ধাক্কা লাগল...
ফারিয়া: ওই মিয়া,দেখে চলতে পারেন না?নাকি মেয়ে মানুষ দেখলেই আর মাথার ঠিক থাকে না?হুমড়ি খেয়ে গায়ের উপর পড়তে ইচ্ছে করে,এই যে শোনেন আমার সামনে কিন্তু এসব চলবে না বলে দিলাম।বেশি বাড়াবাড়ি করতে আসলে মেরে একেবারে তক্তা বানিয়ে দিব...
(ফারিয়া যে এত কড়া কড়া কথা বলল,কিন্তু ছেলেটা টু শব্দটি করল না!একমনে ফ্লোরে পড়ে যাওয়া বইগুলো দুহাতে গুছিয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়াল তারপর বলল)
জাফির: স্যরি মিস,আপনি কি আমাকে কিছু বলছিলেন?
ফারিয়া: এই যে শুনুন,একদম সেয়ানাগিরি করবেন না বলে দিচ্ছি।ন্যাকামি করার আর জায়গা পাচ্ছেন না!যার সামনে যত ন্যাকামি করার ইচ্ছে হয় করেন বাট আমার সামনে এসব করতে আসবেন না।নাহলে কিন্তু কুরুক্ষেত্র বাঁধিয়ে দিব...
জাফির: আচ্ছা আমার ফল্ট টা কি বলবেন?আমি না কিছুই বুঝতে পারছি না...
ফারিয়া: এখন কিছুই বোঝেন না তাইনা?ওলে আমার কচি খোকা লে,অবুঝ শিশু কিছুই বোঝেনা...
জাফির: (কাঁদ কাঁদ হয়ে)আপনি আমার সাথে এভাবে কথা বলছেন কেন?আমি কি খারাপ কিছু করেছি?করলে বলেন আমি ক্ষমা চেয়ে নিব...
ফারিয়া: চুপ একদম চুপ,আর একটা কথা বললে না এক ঘুষিতে আপনার ৩২ টা দাঁতই খুলে নেব
জাফির: কিন্তু আমারতো এখনও ২৮ টা দাঁত,৩২ টা তো এখনই হয়নি...
ফারিয়া: তবে রে,আমার সাথে বিটলামি!দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা...
জাফির: (জেরিনের দিকে তাকিয়ে)আপু আপনি একটু উনাকে বুঝান না,উনি খামোকা এভাবে রেগে যাচ্ছেন কেন আমি না কিছুই বুঝতে পারছি না...
ফারিয়া: (আরো রেগে গিয়ে)বুঝতে পারছিস না তাইনা?দু-চার ঘা পিঠে পড়লেই সব পানির মত পরিষ্কার হয়ে যাবে
জাফির: আপি আমার সাথে এভাবে তুই তোকারি করছেন কেন?
ফারিয়া: তো কি করব কোলে তুলে নাচব?
জাফির: আমার সাথে কেউ কখনও এভাবে কথা বলেনি,আমি কিন্তু এবার কেঁদেই দিব..
ফারিয়া: কি!একটা থাপ্পড়...
জেরিন: আহ্ ফারু,হচ্ছে টা কি?
ফারিয়া: দেখছিস না কি হচ্ছে?ওই পোলা...
জেরিন: চুপ একদম চুপ,আর একটা কথাও বলবি না তুই।(জাফিরের দিকে তাকিয়ে)ভাইয়া আপনি যান তো,ওকে আমি দেখছি...
(জাফির আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ চলে গেল)
ফারিয়া: তুই এইটা কি করলি?আজ তুই না থাকলে ওটার চৌদ্দটা বাজিয়ে ছাড়তাম
জেরিন: ওই ছুড়ি,সারাক্ষণ এত মারকুটে মুড নিয়ে থাকিস কেন রে?একটু ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করতে পারিস না!
ফারিয়া: কিসের মাথা ঠাণ্ডা হুহ?তুই চিনিস না এদের,এই টাইপের ছেলেগুলোকে আমার খুব ভাল করেই চেনা আছে।দেখলে মনে হবে ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে জানে না অথচ তলে তলে একেকটা সেই সেয়ানা বাঘ...
জেরিন: তুই চুপ কর তো,কত্ত ইনোসেন্ট একটা ছেলে আর তুই কিনা ওর উপরেই...
ফারিয়া: ইনোসেন্ট মাই ফুট,তুই না থাকলে এতক্ষণে...
জেরিন: তুই না সবকিছু রিয়ে  অলয়েজ বাড়াবাড়ি করিস
ফারিয়া: এখানে বাড়াবাড়ির কি দেখলি?
জেরিন: কিছু দেখি নাই,সব ঠিক আছে,এবার খুশি?
ফারিয়া: তুই কিন্তু...
জেরিন: কত বেলা হয়েছে দেখেছিস?এখন চুপচাপ ক্লাসে চল নাহলে কিন্তু...
ফারিয়া: আচ্ছা আচ্ছা চল...
(জাফির ক্লাসরুমে ঢুকেই সোমার পাশের সিটে গিয়ে বসে পড়ল,বেচারার মুখটা কেমন শুকিয়ে আছে।সোমা ওকে দেখে শুকনো একটা হাসি দিয়ে বলল...)
সোমা: কি রে,মুখটা অমন বাংলার পাঁচের মত করে রেখেছিস কেন?কি হয়েছে?
জাফির: কি আর হবে,মেইনগেটে একটা অসভ্য আপুর সাথে দেখা হয়ে গিয়েছিল উনার ব্যবহারের জন্যই আমার মুড অফ
সোমা: (হেসে)অসভ্যও বলছিস আবার আপুও বলছিস!তুই পারিসও বাবা...
জাফির: কি করব বল,উনি আমার সিনিয়র নাকি ইয়ারমেট জানিনা তো তাই আপুই বললাম
সোমা: আর অসভ্য বলার কারণ?
জাফির: তা নয়তো কি বলব?জানিস সামান্য একটু ধাক্কা লাগা নিয়ে উনি আমাকে যা মুখে এসেছে তাই বলে গালি দিয়েছে!একটা মেয়েও যে এমন বাজে ভাষায় কথা বলতে পারে উনাকে না দেখলে আমার বিশ্বাসই হত না...
সোমা: হুম বুঝলাম,সকাল সকাল তোর উপর দিয়ে বিশাল একটা ঝড় বয়ে গেছে
জাফির: ঝড় না রে দোস্ত,বল সুনামি...
(দুজনেই একসাথে হেসে উঠল)
সোমা: (ব্যাগ হাতে নিয়ে)এখন চল
জাফির: কোথায়?
সোমা: ক্যান্টিনে,ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছে
জাফির: কিন্তু এখনতো ক্লাস...
সোমা: হবে না
জাফির: মানে?
সোমা: মানে স্যার অসুস্থ তাই ক্লাস নেবে না
জাফির: ওহ্ শিট!আগে জানলে আরেকটা চ্যাপ্টার শেষ করে আসতাম
সোমা: ওই বান্দর তুই কি পড়া ছাড়া কিছুই বুঝিস না?
জাফির: কেন আর কি বুঝব?
সোমা: তুই আসলেই একটা আঁতেল(বলেই সোমা হাঁটা শুরু করল)
জাফির: ওই বান্দরনী দাঁড়া বলছি,তুই কথায় কথায় এত রেগে যাস কেন রে?দাঁড়া আমিও আসছি(বলেই জাফির সোমার পিছু পিছু ছুটতে লাগল)
(ফুচকার দোকানে)
জাফির আর সোমা দুই প্লেট ফুচকা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,সোমা তেঁতুল গোলা পানিতে ফুচকার খোলটা ডুবিয়ে একের পর এক খেয়েই যাচ্ছে আর জাফির হা করে ওর তাকিয়ে দেখছে।
সোমা: কি রে,তুই না খেয়ে এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেন?
জাফির: ভাবছি তোরা মেয়েরা এই অখাদ্য জিনিসটাকে এমন রাক্ষসের মত খাস কিভাবে?
সোমা: (রেগে গিয়ে)ওই জাফু,দেখ আমাকে যা বলার বল কিন্তু আমার ফুচকার ব্যাপারে কোন বাজে কথা হবে না...
জাফির: আচ্ছা বাবা স্যরি,তাহলে আমারটাও তুই ই খা,আমি খেতে পারছি না
সোমা: (খুশি হয়ে)তাই নাকি?তুই এত্তগুলা ভল,আমার স্যুইট কিউট লিটিল ভোলাভালা দোস্ত...
জাফির: হয়েছে আর পাম দিকে হবে না,নে ধর তোর ফুচকা...
সোমা জাফিরের হাত থেকে ফুচকার প্লেটটা নিয়ে যেই একটা মুখে দিতে যাবে তখনই ওর চোখ চলে গেল দোকানটার সামনের কদমগাছটার দিকে।গাছটা দোকানটা থেকে খুব বেশি দূরে না,ওদিকে চোখ পড়তেই সোমার গলাটা একেবারে শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল।গাছটার ঠিক নিচেই দুটো বাইক পার্ক করে তার উপরে কয়েকটা ছেলে বসে বসে সিগারেটে টান দিচ্ছে আর একটানা ওর উপরে চোখ রেখে যাচ্ছে।ছেলেগুলোকে দেখেই চিনতে পারল সোমা,গতকাল ক্লাবহাউজে এদের সবাইকেই ও দেখেছে।ভয়ের একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল সোমার শিড়দাঁড়া বেয়ে,জোরে একটা ঢোক গিলে জাফিরের দিকে তাকিয়ে বলল...
সোমা: জা.. জাফু,চল ক্লাসে যাই
জাফির: কিন্তু তুই ই তো বললি এখন ক্লাস হবে না তাহলে শুধু শুধু ক্লাসে গিয়ে কি করবি?
সোমা: আ..আমার একদম ভাল লাগছে না,চল না প্লিজ...
জাফির: ওই তুই এমন তোতলাচ্ছিস কেন?তোর শরীর ঠিক আছে তো?
সোমা: আ..আমি ঠিকই আছি,তু..ত..তুই যাবি নাকি আমি একাই চলে যাব?
জাফির: আরে আরে,তুই এমন রেগে যাচ্ছিস কেন?আমি কি বলেছি যাব না?তুই তোর ফেভারিট ফুচকাটা শেষ কর তারপর যাচ্ছি...
সোমা: না আমার আর ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছে না
জাফির: (অবাক হয়ে)আমি কি ঠিক শুনলাম?তুই খাবিনা ফুচকা!!!
সোমা: (রেগে গিয়ে)তুই এখানে দাঁড়িয়ে বক বক করতে থাক আমি গেলাম
জাফির: এই সোমা,দাঁড়া আমিও আসছি...
(জাফির ঝটপট ফুচকার বিল মিটিয়ে দৌড়ে সোমার কাছে চলে গেল)
সোমাদের ক্লাস সেদিন খুব বেশি হয়নি,একটা মাত্র ক্লাস হয়েই ছুটি হয়ে গেল।জাফিরের কাছে একটা জিনিস খুব অদ্ভূত লাগছে সোমা কেমন যেন মনমরা হয়ে আছে,পুরো ক্লাসে একটুও কনসেনট্রেট করতে পারেনি শুধু এক পলকে হোয়াইট বোর্ডটার দিকে তাকিয়ে আছে।জাফির তখন থেকে ওর সাথে কতবার কথা বলার চেষ্টা করেছে কিন্তু কিছুতেই কোন লাভ হয়নি,মেয়েটা যেন নিজের মুখে তালা মেরে রেখেছে।এখন ক্লাস শেষে দুজনে একসাথেই ক্লাসরুম থেকে বের হয়ে এসে করিডোর ধরে হাঁটছে।জাফির এখনও সোমাকে একটু হাসানোর,আর কথা বলানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে কিন্তু ও কোন রেসপন্সই করছে না।জাফির কিছুতেই বুঝতে পারছে
না হঠাৎ করে সোমার হল টা কি!
হাঁটতে হাঁটতে পার্কিংয়ের দিকে চলে এসেছে ওরা,এখান থেকেই আলাদা যেতে হবে ওদের।জাফির উত্তরদিকের রাস্তাটা ধরে বাইরের দিকে যাবে আর সোমা পূর্ব পাশটা ধরে হেঁটে হোস্টেলের দিকে চলে যাবে।জাফির চলে যাওয়ার পর আনমনেই পূর্বদিকের রাস্তাটা ধরে হাঁটতে লাগল সোমা কিন্তু কিছুদূর যেতেই আবার থমকে দাঁড়াল।পার্কিংয়ের পূর্বপাশের একটা গাড়ির দিকে চোখ পড়তেই ভয়ে আবারও গলাটা শুকিয়ে আসল সোমার।মেরুন রঙের গাড়িটার সামনেই শোয়েব দাঁড়িয়ে আছে,ওর দিকে অপলকে চেয়ে আছে।সেই চোখের দৃষ্টিটা সোমার কাছে মনে হল একেবারে শীতল আর ভাবলেষবিহীন।আর সামনে এগোনোর সাহস হল না সোমার,পেছন ফিরে একবার আশে পাশে তাকাতেই জাফিরকে দেখতে পেল।খুব বেশি দূরে যায় নি এখনও,সোমা আর কিছু না ভেবেই একটা দৌঁড় দিল ওর দিকে।জাফিরের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে হাঁফাতে লাগল।জাফিরতো ওকে দেখে পুরো অবাক,বুঝতে পারছে না মেয়েটার আজকে কি হয়েছে এমন অদ্ভূত বিহেভ কেন করছে...
জাফির: ওই কি হয়েছে রে তোর,এমন ছুটতে ছুটতে আসলি যে!কি হয়েছে?তুই ঠিক আছিস তো?
(নিজেকে সামলে নিয়ে ম্লান একটা হাসি হেসে সোমা বলল)
সোমা: তুই থামবি?গাধার মত এত প্রশ্ন করিস কেন সবসময়?
জাফির: দেখ সোমা,আর যাই বলিস আমাকে গাধা বলবি না কখনও
সোমা: (জাফিরের থুতনিতে হাত দিয়ে)ও লে বাবা লে,জনাব দেখি রাগও করতে পারে...
জাফির: ওই তুই থামবি?
সোমা: আচ্ছা বাবা থামলাম
জাফির: এখন বল এভাবে ছুটতে ছুটতে আসলি কেন?
সোমা: (একটু ভেবে)আসলে ভেবে দেখলাম তখন থেকে তোর সাথে ঠিকমত কথা বলিনি,একরকম এ্যাভয়েডই করেছি বলা চলে তাই...
জাফির: তাই কি?
সোমা: তাই এখন একটু তোর সাথে টাইম স্পেন্ড করব
জাফির: ফাইজলামি বাদ দিয়ে রুমে যা
সোমা: ফাইজলামি না,আই এম সিরিয়াস
জাফির: দেখ সোমা,আমার অনেকগুলো পড়া বাঁকি আছে।বাসায় গিয়ে সব শেষ করতে হবে
সোমা: (মন খারাপ করে)বুঝছি আমি কারো ফ্রেন্ড না,বই ই তার আসল ফ্রেন্ড।আচ্ছা ঠিক আছে বাই,কাল দেখা হবে
জাফির: ওই বান্দরনী কই যাস,কোথায় যাবি বল
সোমা: কোথাও না,আপনি বাসায় যান পড়্শোনা করেন
জাফির: আচ্ছা বাবা স্যরি,এবারতো চল...
সোমা: (খুশি হয়ে)আচ্ছা চল,আজকে পুরো ক্যাম্পাসটা ঘুরে দেখব আর ক্যান্টিনে কোল্ড কফিটা আমার তরফ থেকে ট্রিট,ওকে?
জাফির: জো হুকুম মালকিন...
সোমা: হাট নটাংকি...
জাফির সোমাকে নিয়ে ক্যান্টিনের দিকে এহোতে লাগল,সোমা আড়চোখে আরেকবার পার্কিংয়ের দিকে তাকালো।শোয়েব এখনও গাড়িটার সাথে হেলান দিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে,ওর চোখ থেকে যেন আগুন ঝরে পড়ছে।সোমা আর ওদিকে তাকিয়ে থাকতে পারল না,চোখ ঘুরিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে জাফিরের পাশাপাশি হেঁটে যেতে লাগল....

Reactions

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ